Sumita Chakrabarti

Inspirational Others

2.5  

Sumita Chakrabarti

Inspirational Others

লকডাউন ও কিছু উপলব্ধি

লকডাউন ও কিছু উপলব্ধি

3 mins
70


কথাটা প্রথমে ঠিক মাথায় ঢুকছিলনা | আর "লকডাউন " শব্দটাইতো শুনিনি আগে | পরে পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাথায় যেন বাজ পড়েছিল - একি সাংঘাতিক নিয়ম জারি হোলো | অনির্দিষ্ট কালের জন্য এভাবে ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে ! অনেকদিন ধরেই অবশ্য নিউসপেপারে দেখছিলাম - পশ্চিমের দেশগুলোতে ' করোনা ' নামে একটা নতুন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে | কিন্তু তখন মনকে সান্তনা দিয়েছিলাম - আমাদের ভারতবর্ষে এসব কিছু হবেনা | তারপর করোনা সারা বিশ্বে প্রায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো আর ভীষণ দুঃখের সঙ্গে লকডাউনকে মেনে নিতে বাধ্য হলাম |                                      পরিচিত মহলে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলাম - মানুষকে কেন ঘরবন্দী হয়ে থাকতে হবে, কাজকর্ম শিকেয় তুলে? নানা প্রশ্ন ভিড় করেছিল মনে - সাধারণ মানুষের রোজগারের কি ব্যবস্থা হবে, পরিবহন বন্ধ হলে ঘরে কেউ অসুস্থ হলে হসপিটালে নিয়ে যাবো কিভাবে, ঘরবন্দী মানুষ খাবে কি, কতদিন এরকম চলবে, সরকার কি কিছু ব্যবস্থা করতে পারবেনা, এই রোগের ভ্যাকসিন তৈরী করা যায়না - এইসব অনেক প্রশ্ন, ভয়, অনিশ্চয়তাতে বিহবল হয়ে পড়েছিলাম | তারপর যত দিন গেছে, কর্মহীন বন্দী জীবনে একটা ভয়ঙ্কর একাকিত্ব গ্রাস করতে থাকে আমাকে | টিভি দেখা, ফোনে কথা বলা, মোবাইল নিয়ে সময় কাটানো কিছুই যেন ভালো লাগছিলোনা | তারপর একদিন টেনে বার করলাম আমার অনেকদিন আগের কিছু লেখা, যেগুলো প্রকাশের আলো দেখেনি | সাহস করে সেগুলো থেকেই কিছু লেখা পাঠিয়ে দিলাম কয়েকটা অনলাইন পত্রিকায় | পাঠকের ভালো লাগায় অভিভূত হলাম | ভাবিইনি যে লেখাগুলো কোনো পত্রিকায় স্থান পাবে | এবারে পেলাম নতুন উৎসাহ - অনেক লিখতে থাকলাম |


আমার বুকের ভেতরে যে এতো কথা জমেছিলো - নিজেই জানতামনা | এটা সত্যি যে এই অবসর না থাকলে হয়তো লেখার জগতে আসা হতোনা আমার | প্রতিদিন খবর দেখি - লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমন | বাড়তে থাকে উদ্বেগ, চলতে থাকে লেখাও | ভাবি - কিছুইতো আমাদের হাতে নেই | এইভাবে কবে নিজের অজান্তেই বন্দী জীবনটাতে মানিয়ে নিয়েছিলাম | আসলে নতুন পরিবেশে অভিযোজন করে নেওয়াইতো সব প্রাণী জগতের ধর্ম |  তারপর শুনছি মানুষ ঘরবন্দী হওয়াতে নাকি প্রকৃতির দূষণ কমে গেছে অনেকটাই | নদীগুলোর চেহারাও পাল্টে গেছে | আমরাই তাহলে যত নষ্টের গোড়া !


প্রকৃতিকে রক্ষা করার জন্যই কি বিশ্ব বিধাতার এই বিধান - কে জানে !  আমি বা আমাদের মতো কিছু মানুষ হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হইনি আর্থিক দিক থেকে| কিন্তু সাধারণ মানুষ- যারা দিন আনে, দিন খায় তারা, অনেক ব্যাবসায়ী, দোকানি, আরও নানান পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দারুণ ভাবে | এটা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক ক্ষতি | দিনে এই ক্ষতি হয়ে চলেছে প্রায় কয়েক হাজার কোটি টাকার | জানিনা কিভাবে এই ক্ষতি পূরণ হবে |তবে কোনো কিছুইতো স্থায়ী নয় এই জগতে | করোনা সংক্রমনও থেমে যাবে একদিন | আর ভ্যাকসিনতো বেরিয়ে গেছে, শুধু সফল ভাবে বাজারে আসার অপেক্ষা | তাই অবশ্যই কেটে যাবে এই দুর্যোগ, প্রকৃতি ফিরবে তার স্বাভাবিক ছন্দে | থেকে যাবে কিছু স্মৃতি - এরকম একটা কঠিন সময় আমরা কাটিয়েছিলাম | যে সময় বেশি করে কাটিয়েছি নিজের সঙ্গে, অনেক ভালো ভালো সাহিত্য পড়েছি, আর নিজেকে প্রকাশ করেছি লেখার মধ্যে দিয়ে | 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational