Sumita Chakrabarti

Crime Others

4.0  

Sumita Chakrabarti

Crime Others

এখানে পিঞ্জর

এখানে পিঞ্জর

5 mins
498


মনে মনে হাসে কবিতা. এই অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার. এর মধ্যে কবে কখন আর সে নিজের কথা ভেবেছে আর নিজের শরীরের যত্ন করেছে. তবু এর মধ্যেই কবিতার সারা শরীর জুড়ে আজও যৌবনের ঘনঘটা. নন্তু দার বৌ সে কথাই বলছিলো আজ কবিতাকে. রোজকার মতো আজও রাস্তার কলে স্নান করছিলো কবিতা. বেলার দিকে কল ফাঁকা দেখে সে বুকের কাপড় সরিয়ে সাবান ঘষছিল. কখন যে নন্তু দার বৌ পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে, খেয়াল করেনি সে. চমক ভাঙলো বৌটার কথায় "বাব্বা তোমার বুক দুটোতো ভারি সুন্দর!. দুটো বাচ্চা হবার পরও এমন টান টান শরীর রাখো কিভাবে? আমরা তো পারিনা." কবিতা লজ্জা পেয়ে গায়ের আঁচল টেনে বলে "কি যে বলো বৌদি, তোমরা কত সুন্দর. তোমাদের সাথে কি আমার তুলনা হয় !" ম


নে মনে অবশ্য কবিতা জানে তার শরীরের একটা আলাদা টান আছে. আর ওই টানেই তো পোড়ারমুখো মিনসে গুলো ছোঁকছোঁক করে. নতুন যে বাড়িটার কাজ ধরেছে কবিতা, সেই বাড়ির পুরুষ মানুষ টাকে দেখলে হাসি আসে কবিতার. বৌয়ের সামনে একেবারে গরুচোর, যেন কবিতাকে চেনেই না. বৌ না থাকলেই লোকটা ফাঁকা পেলেই কবিতাকে কাছে ডাকে, ওর শরীরটা ঘাঁটাঘাঁটি করে. আর সেও তেমনি লোভী. একটা ভালো শাড়ি কিংবা কিছু টাকার লোভ দেখালেই কবিতা ধরা দেয়. সত্যিই তার লোভটা বড্ড বেশি. কি করবে সে. ভগবান যে তাকে এমন ধারা তৈরী করেছে. ছোট বেলায় পড়ালেখার সুযোগ কবিতা পায়নি. নিদারুন অভাবের সংসারে একটু বড়ো হতেই তার বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো. এসে পড়লো এইখানে. এখানেও সেই লড়াই অভাবের সঙ্গে. এতে তার আদিম বৃত্তি গুলোই জোরালো হয়ে উঠেছে. জীবনের অন্য দিক নিয়ে ভাবার সময় কোথায় তার. ইদানিং আবার একটু নতুন ঝামেলা শুরু হয়েছে. পাড়ার বিষ্ণু বাবু প্রায়ই কবিতাদের বাড়ি এসে হাজির হচ্ছে. এটা সেটা সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে নানা ছুতোয় কবিতার গায়ে হাত দিচ্ছে. কবিতা কিছু বলছেনা.


বিষ্ণু বাবু আগে এগ্রামের সরকারি স্কুলের হেড মাস্টার ছিল. পাড়ার লোকে ওকে খুব মান্যি গন্যি করে. আর যার স্বামী আজ তিন বছর বিছানায় পরে, ছেলে মেয়ে স্বামীর মুখে অন্ন জোগাড় করতে যাকে লোকের বাড়ি কাজ করতে হয় তার আবার কিসের ইজ্জত ! বিষ্ণু বাবু এলে কবিতা আজকাল বড্ডো ব্যস্ত হয়ে পরে. কোথায় বসাবে তেনাকে. তারতো মোটে দুটো মাটির ঘর. তার একটায় তার পঙ্গু বরটা শুয়ে থাকে. আরেকটায় ছেলে মেয়ে নিয়ে সে থাকে. বাইরে একফালি দাওয়া. তার এককোনে সে রান্না করে. ছেলে মেয়ে গুলোতো বড়ো হচ্ছে. ওরা যদি বিষ্ণু বাবুর মতলব ধরে ফেলে. ছিঃ কি লজ্জা! . কালীর আজ সকালে টিউশন পড়া ছিল. ফিরে এসেই বলল "মা খেতে দে, বড্ডো খিদে লাগছে." মেয়ের দিকে তাকায় কবিতা ---বেশ ডাগর হয়েছে মেয়েটা. তা হবে নাই বা কেন, বয়স তো চোদ্দ হলো. আর কবছরের মধ্যে তো বিয়ে দিতে হবে. কোথা থেকে যে বিয়ের টাকা জোগাড় হবে-- ভাবতে ভাবতে মেয়েকে খেতে দেয় কবিতা. খেতে খেতে কালী বকেই চলে, ওর যে কত কথা ! আর ছেলে অজয় হয়েছে একেবারে চুপচাপ, ঠিক ওর বাবার মতো. ওর বাবাও আগে এমনি সুঠাম ছিল. মিলে কাজ করত. কিন্ত এক দিন হঠাৎ রেল লাইন পেরোতে গিয়ে ট্রেনে দুটো পা কাটা গেলো. তারপর থেকে বিছানায় শোয়া.সবই কপাল !দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে কবিতা..


আজ বিষ্ণু বাবু এসেছে. কবিতা তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখলো পাশের ঘরে ওর স্বামী ঝিমিয়ে আছে. ও ওই ঘরের দরজাটা পিছন থেকে টেনে দিল. তারপর বিষ্ণু বাবুর কাছে এলো এক গ্লাস শরবত নিয়ে. লেবু, নুন, আর চিনি দিয়ে শরবত বানিয়েছে সে বিষ্ণু বাবুর জন্য. ভাগ্যিস ছেলে মেয়ে গুলো স্কুলে গেছে ভাবল কবিতা. আর শরবত খেতে খেতে বিষ্ণু বাবুর চোখ ঘুরতে লাগল

কবিতার শরীরের আনাচে কানাচে. শরবত শেষ করে কবিতাকে কাছে টানলো বিষ্ণু বাবু. ফিস ফিস করে বললো "কবিতা, তুই কতো সুন্দর জানিস !".

অমনি কবিতা একটা আদুরে বিড়ালের মতো বিষ্ণু বাবুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো "আপনি তো শুধু আমার রূপ দ্যাখেন, আর আমার কতো চিন্তা তাকি জানেন? আমার বিটি যে চোদ্দ তে পড়লো, ওর বিয়ে কিভাবে দেবো বলুনতো." বিষ্ণু বাবু হেসে বলে "আরে এত ভাবছিস কেন, তোর কালীর বিয়ে আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেবো." . বিকেলে বিষ্ণু বাবু গাঁয়ের একটা লোক কে দিয়ে কবিতার জন্য একটা ছাপার শাড়ি আর বাড়ির সবার জন্য এক কেজি মুরগির মাংস কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন. তাই অনেক দিন পরে ওদের বাড়িতে আজ মাংস রান্না হচ্ছে. বড়ো কড়াইতে মাকে মাংস কষাতে দেখে কালী এসে ওর গা ঘেঁষে দাঁড়ায়. নাক টেনে গন্ধ নিয়ে বলে, "কি সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে মা, খিদে পেয়ে গেল." কবিতার ব্যাটা কিন্তু এসেই বলল "আজ হঠাৎ মাংস? ও বিষ্ণু বাবু টাকা দিয়েছেন বুঝি? লোকটা একটা ভন্ড শয়তান তুমি জানোনা মা " কবিতা ধমক দেয় ছেলেকে "চুপ কর, তোর বাবা ঘুমাচ্ছে."অজয় ক্ষোভের সঙ্গে বলে "হ্যাঁ বাবাতো ঘুমিয়েই থাকে " তারপর গলা নামিয়ে বলে "আমাকে কটা দিন সময় দাও মা.পার্টির এক দাদাকে ধরেছি, বাবার মিলে আমার একটা কাজ হয়ে যাবে."ছেলের দিকে অবাক হয়ে তাকায় কবিতা -- কবে ওর ব্যাটা এতো বড়ো হয়ে গেলো !আজ রাতে বিছানায় শুয়ে বুক ঠেলে কান্না উঠে এলো কবিতার.স্বামীকে খেতে দিতে গিয়ে গালাগালি শুনতে হয়েছে তাকে. মনে পড়লো স্বামীর কথা গুলো --"অসভ্য মেয়ে ছেলে, এই মাংস কোথা থেকে আসছে বুঝিনা ভেবেছিস? মাগী তোর লোভটা এবার কমা নাহলে কিন্তু বিপদে পরে যাবি"



কতদিন ধরে একনাগাড়ে মানুষ টার সেবা করছে কবিতা, অথচ পান থেকে চুন খসলেই অকথ্যগালি সেওতো মানুষ, তারতো কিছু চাহিদা থাকতে পারে . দুপুরে এদিকটা বড়ো নিস্তব্ধ. কবিতাদের বাড়ির পাশের জঙ্গল টা থেকে একটা পাখি কুব কুব কুব কুব করে ডেকে চলেছে একনাগাড়ে. আজ আবার ওরা ঘনিষ্ট হয়েছে --ও আর বিষ্ণু বাবু. কতক্ষন এভাবে কেটে গেছে কবিতা জানতে পারেনি. হঠাৎ খসখস একটা শব্দে চমকে দরজার দিকে তাকায় কবিতা. দ্যাখে দরজায় দাঁড়িয়ে অজয়, ওর হাত দুটো পেছনে, চোখ দুটো লাল. ভয়ে হিম হয়ে যায় কবিতার শরীর. ভাবে ওকি সব দেখেছে? এসব ভাবতে ভাবতেই ঘটে যায় সাংঘাতিক একটা ব্যাপার. অজয় ওর পিছনে রাখা হাত দুটো সামনে আনে. দুহাতে সে ধরে আছে ঘরের ধারালো কাটারিটা. তারপর মুহূর্তের মধ্যে সেটা বসিয়ে দেয় বিষ্ণু বাবুর গলায়. উহঃ কি বীভৎস !চোখ বোজে কবিতা


জ্ঞান হবার পরে কবিতা দ্যাখে ওদের ঘর ভর্তি লোক. সে শুয়ে আছে দাওয়ায়. ও কোনোমতে জিজ্ঞাসা করলো "অজয় কোথায়? " পাশে বসে থাকা মহিলারা প্রায় একসঙ্গে বলে উঠলো "তোমার ব্যাটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, বাব্বা যা কান্ড করলো !"কবিতা আবার চোখ বোজে, ওর মনে পড়লো ওর স্বামীর কথা গুলো "মাগী, তোর লোভটা কমা..... " কবিতার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকলো---একটু ভালো ভাবে বাঁচতে কেন দেবেনা ভগবান ওকে !




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime