Rima Goswami

Abstract Others

3  

Rima Goswami

Abstract Others

এক বনবাসী নারী

এক বনবাসী নারী

3 mins
313



শবরী ...আসলে একজন বনবাসী নারী...নাম হতে পারত অন্যকিছু...কিন্তু বনের গন্ধ যাতে পরবর্তী মানুষ না ভুলে যায় তাই ঋষি বাল্মীকি বারবার ওঁকে শবরী বলেই উল্লেখ করেছেন। একজন জ্ঞান অন্বেষণকারী মানুষ ছিলেন শবরী। তাই অন্যরা যখন সাধারণ সংসারজীবনযাপন করতে ব্যস্ত শবরী জ্ঞান অন্বেষণ করতে বেরিয়ে দেখা পেলেন ঋষি মাতঙ্গের। ব্রহ্মজ্ঞানপিপাসু অন্য মানুষের মতোই গুরুর সেবা ও গুরুর উপদেশ লাভ চলতে লাগলো...তবু যেন মনে শান্তি নেই । যেন আরও মহৎ কিছুর জন্যই অপেক্ষা...

        একদিন এলো এক চরম ক্ষণ...গুরু মাতঙ্গের শরীর ত্যাগের সময়...ঋষি সেই চরম ক্ষণেও আনন্দে বিভোর...শান্ত ...সমাহিত। শবরী গুরুকে প্রশ্ন করেন সমস্ত জ্ঞানই তো আপনার উপদেশে লাভ হলো ...তাহলেও ...তাহলেও আপনার মতো আনন্দে বুঁদ হতে পারলাম না কেন ? আমি তো আপনার বাধ্য শিষ্যই ছিলাম ...আপনার উপদেশ পালন করে জ্ঞানমার্গে পথ হেঁটেছি...তাহলে আনন্দে উপনীত হওয়ার জন্য এখনো কেন অপেক্ষা প্রভু ? প্রিয় শিষ্যকে ঋষি উপদেশ দেন, নিজেকে সমর্পণের পথ হাঁটা বাকি আছে তোমার...সেই পথে তোমাকে নিয়ে যেতে আসবেন অগতির গতি শ্রীরামচন্দ্র...তখন তোমার অপেক্ষার অবসান হবে। এই বলে পদ্মাসনে অপ্রয়োজনীয় খোলসের মতো দেহকে ত্যাগ করেন পরমজ্ঞানী মাতঙ্গ।

          তারপর...সূর্য্যকে প্রদক্ষিণ করে এসেছে পৃথিবীর কতবার সে হিসেব রাখেননি তপোবনের বাসিন্দা শবরী। প্রতীক্ষা করে গেছেন গুরুনির্দিষ্ট পথপ্রদর্শকের। মনে মনে ভেবেছেন সেই পরমপুরুষ এলে কীভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা করবেন ! তিনি যে বনচারিনী! রাজার রাজা এলে যোগ্য অভ্যর্থনা করবেন কিভাবে?অপেক্ষা ছাড়া জীবনে অন্য কোনো লক্ষ্য নেই...অপেক্ষার পথ ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই তাঁর। সন্তানধারণ না করলেও শবরী তখন মা শবরী...মা যেমন সন্তানকে সমস্ত জিনিস নিজে আগে পরখ করে তারপর শ্রেষ্ঠ জিনিসটি মুখে তুলে দেন..সেরকমই অপেক্ষার রাস্তা ধরে হেঁটে বনের ফল তুলে আগে নিজে পরখ করেন তিনি ...সুস্বাদু হলে তবেই তা সংরক্ষণ করেন আরাধ্যের জন্য।

         অবশেষে এলো সেই পরম ক্ষণ...মর্য্যাদা পুরুষোত্তম শ্রীরাম এলেন সেই তপোবনে...বহু ব্রহ্মজ্ঞানপিপাসু ঋষিদের পর্ণকুটীর সেখানে...রাজার রাজা কি সেখানে গেলেন ? না ...তিনি অত অত ধার্মিক , জ্ঞানী, তেজস্বী , তাপসদের মাঝখান দিয়ে হেঁটে এসে পৌঁছলেন বনবাসী মায়ের পর্ণকুটীরে।

     জ্ঞান তখন হৃদয়কে খালি করে দিয়েছে তাঁর...হৃদয় পূর্ণ শ্রীরামের জন্য শুধুই ভালোবাসা দিয়ে ...সবচেয়ে কঠিন পথ! জ্ঞান অর্জন করা যায় চেষ্টা করলে ...ভালো বাসা অকারণেই আসে হৃদয়ে।

অপেক্ষার রাস্তা দিয়ে আসে সে...রোজ রোজ শ্রীরামচন্দ্রের পথ চেয়ে অতি যত্নে তৈরি বৃক্ষপত্রের পাত্রে পরম মমতায় সংগৃহীত বুনো ফল ...যা আগে নিজে দাঁতে কেটে দেখেছেন মিষ্টি কিনা ...তার মূল্য আর কেউ বোঝেনি ...ভাই লক্ষ্মণ তো বারণই করেছিলেন অচেনা নারীর এঁটো ফল না খেতে ...কিন্তু তিনি তো রাজার রাজা...তিনি তো ভক্তের আশ্রয়...তিনি এঁটো ফল কি করে না খেয়ে থাকেন ? সেগুলো অর্পণের পিছনে যে নিজেকে সম্পূর্ণ সমর্পণ করা হৃদয় রয়েছে তা তো তিনি নিজের হৃদয়ের মধ্যে অনুভব করেছেন...! ! ! শবরী জিজ্ঞেস করেছেন ...প্রিয় রাজা তোমায় তো সেরকম কিছু দিয়ে সেবা করতে পারলাম না ...বনের ফল আর নদীর জল ...বনবাসীদের আর কিই বা আছে ...ফল মিষ্টি তো ? রাম বলেছেন পৃথিবীতে সমর্পিত হৃদয়ের মতো মিষ্টি আর কিছুই নেই মা ...এই ফলের প্রতিটি বিন্দুতে তার অনুভব পাচ্ছি...

     তারপর ? তারপর শবরী রামের দেখানোর পথে হেঁটে পরম শান্তি লাভ করেন ...কি ভাবছেন রাম জনক রাজার মতোই ব্র্হ্মজ্ঞানের পাঠ দিয়েছিলেন? মোটেই না ...শবরীর হৃদয়ে ভালোবাসা এনেছিলেন ...অপেক্ষার পথ ধরে কখন যে হৃদয়ে মহার্ঘ্য ভালোবাসা এসে জমেছিলো ...শ্রীরামচন্দ্র কেবল তাকে চিনে নিয়েছিলেন ...খুঁজে নিয়েছিলেন ...তাঁকে মর্য্যাদা দিয়েছিলেন ....বনবাসী শবরী তাই অপেক্ষার প্রতীক হয়ে আজও মানুষকে মনে করান ভালোবাসার কথা ...আর শ্রীরামচন্দ্র? ...

''যে জন প্রেমের ভাব জানে না ...তার সনে নাই লেনা দেনা ''....

       সবাই খাঁটি প্রেম চিনে নিতে পারে না...উনি তাই রামচন্দ্র...এমন মানুষ যিনি ভালোবাসার কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারেন...বিলিয়ে দেওয়াও সহজ নয় ...



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract