এই তো জীবন
এই তো জীবন
'একটা কাজও কি তুমি ঠিকমতো করতে পারো না? এই বাসনটা কি এখানে রাখা হয় ? এতদিন সংসার করছো, কোন জিনিসটা কোথায় রাখা হয় তাও জানোনা ? এটা কি ধরণের বাজার করে এনেছো | এই সব্জিগুলো দিয়ে আমি কি রান্না করবো ? একটু বুদ্ধি করে তো বাজার করবে | কোন সবজির সাথে কোনটা মেলালে একটা সুন্দর তরকারি তৈরি করা যায় সেটা বোঝার ক্ষমতা আর কবে হবে ? তিনকাল গিয়ে তো এককালে ঠেকেছে | বলি মা-বাবা কি একটুও সাংসারিক বুদ্ধি, বৈষয়িক বুদ্ধি শেখাতে পারেন নি | সব দায়িত্ব কি আমার | সংসার কি আমার একার যে সব কিছু আমাকেই দেখেশুনে রাখতে হবে | এই যে বললাম টবের গাছগুলোতে একটু জল দিয়ে দিও - তা এমন জল দিলে যে পুরো বারান্দাটাই জলে কাদায় একেবারে মাখামাখি হয়ে গেলো | একটু মন দিয়ে, চোখ কান খোলা রেখে কাজ করতে পারো না' ?
এটা প্রতিদিনের রোজনামচা | সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমোতে যাবার আগে
পর্য্যন্ত আমাকে এই ব্যর্থতার পাঁচালী শুনতেই হবে | এখন অবশ্য একদম গা সওয়া হয়ে গেছে কথাগুলো। প্রতিদিন একই ধরণের অভিযোগ শুনতে শুনতে আগের মতো আর মন খারাপ হয় না, বিরক্তিও আসে না। এখন এক ধরণের অবসাদ ভিড় করে আসে। নিজেকে প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, সত্যিই কি আমি কোনো কাজের উপযুক্তই নই। রাগ না এলেও ভেতরে ভেতরে একটা কষ্ট তো নিশ্চয়ই হয়। দুঃখ লাগে এই জন্য যে, অফিসে যতদিন কাজ করেছি, সবাই বলেছে মিস্টার মুখার্জি, আপনি এতো সুন্দর ভাবে গুছিয়ে কাজ করেন যা আমরা করতে তো পারবোই না এমনকি চিন্তাতেও আনতে পারবো না | আমার বস, মিস্টার দত্ত, আমার কাজ নিয়ে তো বেজায় খুশি | বলেন, মিস্টার মুখার্জির মতো লোক আমার বিভাগে আছেন বলেই না কাজের ব্যাপারে সমস্ত দায়িত্ব ওনার ওপর ছেড়ে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকতে পারি | কিন্তু জীবনটাই বড় আশ্চর্য্যের, আমার সবচেয়ে কাছের লোকেই আমার ভালোটা দেখতেই পায় না |