Manik Goswami

Classics Inspirational

4  

Manik Goswami

Classics Inspirational

স্বার্থান্বেষী

স্বার্থান্বেষী

3 mins
277


স্বার্থান্বেষী

                                                মানিক চন্দ্র গোস্বামী

কর্মব্যস্ত পৃথিবীতে আমিই কর্মহীন | ঘরে বসে থেকে, আধশোয়া হয়েই কেটে যাচ্ছে দিন | কাজ নেই বলে নয়, কাজ খুঁজে নেবার অভ্যাসও নেই | অলস বললে ভুল বলা হবে, কেননা যেখানে কাজই নেই সেখানে অলস শব্দটাই অর্থহীন | খোলা চোখে কিছুই দেখতে পাইনা যেটাকে কাজে পরিবর্তিত করা যায়। ঘরের কোথাও মাকড়সার জাল তৈরী হয়েছে ? না, চোখে পড়ছে না। বইয়ের তাকটার ধুলোটুলো ঝেড়ে একটু তো পরিষ্কার রাখা যায়। না, ধুলো তো চোখেই পড়ে না, পরিষ্কার করবো কি ? ঘরদোর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন তো করতে পারি। না, কোনো কাজই চোখে পড়ছে না। কাজ যখন নেইই, তখন কাজ করে নিজেকে ব্যতিব্যস্ত রাখার কোনো মানেই হয় না। অথচ, ঘরের অন্য সদস্য, যে আমার সাথে গাঁটছড়া বেঁধেছে বহু বছর আগেই; মা-বাবাকে ছেড়ে, নিজের পরিচিত গন্ডির বাইরে চলে এসেছে, তার তো অফুরান কাজ, ফুরসতের সময়ই নেই | রান্না-বান্না, ঘর মোছা, কাপড় কাঁচা, বাসন মাজা - এগুলো তো নৈমিত্তিক কাজ | তাছাড়া কাজ খুঁজে নেবার প্রবণতাও রয়ে গেছে তার | আসবাবপত্রের ধুলো পরিষ্কার করা, রান্নার পরে রান্না ঘর পরিষ্কার করা, পূজার্চনা করা, সুইচবোর্ড পরিষ্কার করা, ফ্যানের ব্লেড পরিষ্কার রাখা, ঘরে ঝুল জমতে না দেওয়া, বাচ্চাদের তৈরী করে স্কুলে পাঠানো, সংসারের সকলের জন্য সময়মতো খাবারের জোগান দেওয়া ইত্যাদি......শেষ নেই কাজের | বিশ্রামের অবকাশ নেই | অবসরে শাড়ির ফল লাগানো থেকে শুরু করে জামা-কাপড় আইরন করা | আবার তারই মাঝে রামায়ণ, মহাভারত বা গীতা পাঠ -- সবই তার কাজের মধ্যেই পড়ে | ওরে বাবা, করার মতো এতো কাজ আছে পৃথিবীতে। অথচ চোখেই পড়ে না। সেদিন আমার এক বন্ধুর সাথে এই কাজকর্ম নিয়েই কথা হচ্ছিলো। বন্ধু বলছিলো, আসলে আমরা পুরুষ মানুষরা কাজের সজ্ঞাটাকে নিজেদের মতো করে পাল্টে নিয়েছি। দৈনন্দিন একটু বাজার করে আনার মধ্যে দিয়ে আমরা আমাদের কর্মদক্ষতা বা কর্ম কুশলতা বোঝানোর চেষ্টা করি। আমাদের কাছে, টিভিতে খেলা বা সিনেমা দেখাটা একটা কাজ, মোবাইল দেখাটা একটা কাজের মধ্যেই পড়ে। আর সেখানে বাড়ির মেয়েরা এই গুলোকে একটু বিনোদনের মধ্যেই ধরে, ঘর সংসারের বিস্তর কাজের ফাঁকে একটু আরাম করার, একটু বিশ্রাম করার উপাদান হিসেবেই মনে করে নেয়। আমরা ভাবি, বন্ধুদের সঙ্গে একটু আড্ডা মেরে এলাম, একটু রাজনীতির চর্চা করে এলাম মানে প্রচুর কাজ করে এলাম। অন্যদিকে ঘরের মেয়েরা যখন পড়শীর সাথে গল্প করে, আমরা রাগারাগি করি, অথচ সেটা করে কিন্তু সমস্ত কাজকর্ম সেরে, অবসর সময় দেখে। আসলে, ঘরের খুঁটিনাটি সমস্ত কাজ এমনভাবে তারা সম্পূর্ণ করে রাখে যে আমরা মানে পুরুষেরা আর ঘরে কোনো কাজ থাকতে পারে বলে মনেই করি না। অবশ্য ব্যতিক্রম যে নেই এমন নয়। অনেক পুরুষ মানুষ আছে যাদের নিজেদের কাজ নিজেকেই করে নিতে হয়। তবু আমরা যারা কর্মহীন, চোখে দেখেও বুঝতে পারি না কর্ম কাকে বলে -- তারাই, হ্যাঁ তারাই, ছড়ি ঘোরাই তাদের ওপর যারা একদিন কাজ বন্ধ করলেই সংসার অচল | আরামপ্রিয় মানসিকতার দৰ্প চূর্ণ হবে যদি একবেলাও খাবার না ওঠে মুখে | আসলে আমরা স্বার্থপর | নিজের স্বার্থ পূর্ণ হলেই সব ঠিক, পৃথিবী শান্ত | অন্যের খাটুনি বা কষ্টের পরিমাপ করতে আমরা কেউ চাই না | স্বার্থান্বেষী, বিবেক হারিয়ে স্বার্থ রক্ষায় তৎপর |


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics