Aparna Chaudhuri

Abstract Others

3  

Aparna Chaudhuri

Abstract Others

এ এক নতুন কাশী

এ এক নতুন কাশী

3 mins
220


কাশী বলতেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে সরু সরু গলি, ষাঁড়, ভিড়, গঙ্গা আর ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’। কিন্তু এবার গিয়ে কাশীর এক নতুন চেহারা দেখে এলাম। তৈরি হচ্ছে শ্রী কাশী বিশ্বনাথ হেরিটেজ জোন। উদ্দেশ্য হল কাশী বিশ্বনাথ মন্দির থেকে মণিকর্ণিকা আর ললিতা ঘাট অবধি এলাকাকে খালি করে দেওয়া। যাতে গঙ্গার ঘাট থেকে বাবা বিশ্বনাথের মন্দির দেখা যায়। বিশ্বনাথ মন্দিরের আশপাশের নীলকণ্ঠ, ব্রহ্মনাল আর লাহোরিটোলা এলাকার প্রায় ১৬০ টি বাড়ী ভেঙে ফেলা হয়েছে। সেই বাড়ীগুলির মধ্যে থেকে বেরিয়েছে পঞ্চাশটারও বেশী মন্দির। যেগুলোর শিল্পমূল্য আর ঐতিহাসিক গুরুত্ব দুইই অপরিসীম। শোনা যায় ঔরঙ্গজেবের আক্রমণ থেকে বাঁচানোর জন্য মন্দিরগুলিকে বাড়ীর মধ্যে লুকিয়ে ফেলেন ওখানকার বাসিন্দারা। এখন এতো বছর বাদে আবার ওই মন্দিরগুলি পুনঃআবিষ্কৃত হয়েছে। জনসাধারণের দর্শনের জন্য শিগগিরই খুলে দেওয়া হবে।

তবে যারা জানতে চান কিভাবে এই খননের কাজ চলছে। কিভাবে একটা একটা করে মন্দিরকে বের করে আনা হচ্ছে ওই পুরনো বাড়ীগুলোর ভিতর থেকে তারা এখনও যেতে পারেন।

এই প্রজেক্টের কর্ণধার মিঃ বিশাল সিংহের কাছে অনুমতি নিয়ে গাইডের সঙ্গে ভিতরে যেতে হবে। তাহলেই দেখতে পাবেন কিভাবে পুনরুজ্জীবিত করা হচ্ছে ভারতবর্ষের ইতিহাস। মন্দিরগুলি এতো পুরনো এবং ভঙ্গুর যে বাড়ীগুলি ভাঙ্গার জন্য যন্ত্রের ব্যবহার করা যাচ্ছে না। রাস্তা এতো সরু এবং অসমান যে ভেঙে ফেলা ইট বালি ট্রাকে করে সরানো সম্ভব নয় তাই ব্যাবহার করা হচ্ছে গাধা বা খচ্চর। খুবই ধীরে ধীরে অত্যন্ত ধৈর্য সহকারে এক একটি মন্দির, তার আশপাশের কারুকার্য ইত্যাদি বার করে আনা হচ্ছে। এখনও দেখা যাচ্ছে কোনও মন্দিরের গা দিয়ে গাঁথা হয়েছিল ওপরের তলায় যাবার সিঁড়ি, কোনও মন্দির লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল রান্নাঘরের পিছনে। খুব শিগগির এই মন্দিরগুলির ভাঙা অংশগুলো মেরামত হয়ে যাবে, নতুন রঙ চড়বে দেয়ালে, ভাঙাচোরা গলিগুলো চাপা পড়ে যাবে নতুন রাস্তা আর সিঁড়ির তলায়। ঝাঁ চকচকে কাশী করিডোর দেখে সবাই বাহবা দেবে। কিন্তু এই মন্দিরগুলোর গায়ে যে পুরনো ইতিহাসের গন্ধ মাখা আছে এখনও, সেটা হয়তো আর পাওয়া যাবেনা।    

উল্লেখযোগ্য মন্দিরের মধ্যে আছে –

শ্রী কূম্ভমহাদেব মন্দির - ৫০০ বছরের পুরনো এই মন্দিরের দেয়ালে খোদাই করা রয়েছে শিব পার্বতীর বিয়ের দৃশ্য, সমুদ্রমন্থন, মা দুর্গার নানা রূপ ইত্যাদি নানা দেব দেবীর মূর্তি।

শ্রী বালমুকুন্দেশ্বর মহাদেব মন্দির - অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে শ্রী হরিনারায়ণ শেঠজির পুরবপুরুষরা এই মন্দির নির্মাণ করেন।

শ্রী ব্রহ্মেশ্বর মহাদেব মন্দির - যার লিঙ্গ আর অর্ঘ্য একটিমাত্র পাথরখণ্ড থেকে খোদাই করে তৈরি। লোকে বিশ্বাস করে এনার পুজো করলে মানুষ তার সমস্ত পাপ থেকে মুক্তিলাভ করে।

শ্রী চন্দ্রগুপ্ত মহাদেব মন্দির - এটি গুপ্ত যুগে সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত বানিয়েছিলেন। লোকে বিশ্বাস করে এই মহাদেব দর্শন করলেই সমস্ত মনকামনা পূর্ণ হয়, তাই এই মন্দিরের আরেক নাম মনকামেশ্বর মহাদেব মন্দির।

শ্রী নীলকণ্ঠ মহাদেব মন্দির – লোকে বিশ্বাস করে এই স্বয়ম্ভু মহাদেব কাশী নগরী স্থাপনার সময় থেকে বিরাজমান। এনার স্বরূপ একটিমাত্র শিলাখণ্ড থেকে খোদাই করা হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জমির স্তর উঁচু হয়েছে, তাই এখন এই মন্দিরের গর্ভগৃহ জমির থেকে ২৫ ফুট নিচে। প্রতি বছর মা গঙ্গার জলস্তর যখন বাড়ে তখন জল গর্ভগৃহ অবধি পৌঁছে যায়।

এছাড়া রয়েছে শ্রী আদিবিশ্বেশ্বর মহাদেব মন্দির, শ্রী গঙ্গেশ্বর মহাদেব মন্দির, শ্রী অমৃতেশ্বর মহাদেব মন্দির, শ্রী জৌবিনায়ক মন্দির, শ্রী স্বরগদ্বারেশ্বর মহাদেব মন্দির, শ্রী রাম মন্দির, শ্রী চিন্তামণি মহাদেব মন্দির, শ্রী আনন্দকালী মন্দির, শ্রী মহাকাল মন্দিরের মত আরও অসংখ্য মন্দির।       

যাবেন নাকি ইতিহাসের পাতায় হাঁটতে?


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract