দুর্ঘটনার সেই রাত
দুর্ঘটনার সেই রাত
একটু হলেই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসটা মিস করে যাচ্ছিল গৌতম। তবে হতে পারে শীতকালের হিমেল রাত্রি,তবে ব্যাপারটা অদ্ভুতভাবে রহস্যজনক। ও ছাড়া কামরায় আর কোনো যাত্রী নেই,আর কামরাটাও কেমন যেন অদ্ভুতভাবে শীতল। সমস্ত জগতের শীতলতা যেন বিরাজ করছে এই কামরায়। হাওড়া থেকে এই ট্রেনটা ধরেছে সে,এবার ক্রিস্টমাসের ছুটিতে বেড়াতে যাচ্ছে সে ছত্তিশগড়ের পাহাড় ও শাল অরণ্য অধ্যুষিত অঞ্চল বিলাসপুর। বেশ একটা অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার ফিল হচ্ছে। কিন্তু সারা কামরাতে গুটিকয়েক লোক,তারাই বা এতো অদ্ভুত আচরণ করছে কেন। কি এত গোপন করছে তারা! এক অবাঙালী যুগল আছে,তারা যেন যুগ যুগ ধরে প্রেমালাপেই ব্যস্ত। আর খড়গপুর স্টেশন থেকে উঠেছে এক রহস্যময় বৃদ্ধ,এখন তার সামনে বসে আছে। বৃদ্ধটা অবাঙালী নিশ্চয়ই ,খালি এক কথা "বাবুজি আপকো কাঁহা পে উতর না হ্যায়। ইয়ে রাস্তা অউর আজ কি রাত দোনো হি শ্রাপিত হ্যায় বাবু। কৃপয়া কর উতর যাইয়ে ট্রেন সে।" বিরক্তি লাগছিল গৌতমের। মনের মধ্যে এক লালিত স্বপ্ন ছিল,শীতের রাতে শাল সেগুনের জঙ্গলের মধ্য দিয়ে এই জার্নি কতোই না অ্যাডভেঞ্চারাস হবে! এখন যা দেখা যাচ্ছে,সারা আনন্দটাই যেন মাটি হতে চলেছে। কে জানত,এরকম এক বিচিত্র সহযাত্রী লেখা আছে তার ভাগ্যে। বৃদ্ধের আকুতি যেন বাড়ছে,রাগ সীমা ছাড়াচ্ছে গৌতমের।
সরডিহা স্টেশন পেরোতেই ট্রেনের কামরা প্রচণ্ডভাবে দুলতে শুরু করল,সাথে এক বিশ্রী হঙ্কিং এর শব্দ। বিরক্ত হল গৌতম। এরকম তো হবার কথা ছিল না।
এতক্ষণ নিজেদের আপাদমস্তক চাদর দিয়ে ঢেকে রেখেছিল গৌতমের সাথে ঐ কামরায় থাকা যাত্রীরা। এখন তারা সেই চাদর খুলে ফেলেছে,গৌতম দেখছে কারোর চোখ উপড়ে গেছে,কারোর মাথার খুলি বেরিয়ে এসেছে,কারোর মাথার চুলের কাছে চাপ চাপ জমাট বাঁধা রক্ত,কারোর চোখমুখ এতোটাই বিকৃত হয়ে আছে যে দেখলেই ভয়ের উদ্রেগ হবে। তারা গৌতমের দিকে তাকিয়ে বিকটভাবে হাসতে শুরু করেছে।
বুঝতে পারল গৌতম,আজ সে সত্যিই জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস মিস করেছে। এটা মুম্বইগামী জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস নয়,এটা সেই অভিশপ্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস,ঠিক চার বছর আগে আজকের রাতে যার মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছিল এই সরডিহা আর খেমাশুলির মাঝখানে। আজও কখনো গভীর রাতে কোনো অজানা প্ল্যাটফর্ম থেকে মৃত্যুর উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় সেই ট্রেন,দেখা দেয় মৃত্যুপথযাত্রীদের । যাদের অদৃষ্টে নিয়তি সুনিশ্চিত করেছে দুর্ঘটনায় বা অপঘাতে মৃত্যু।