ডায়রির ছেঁড়া পাতা
ডায়রির ছেঁড়া পাতা
প্রিয় ঋদ্ধিমান,
তুমি তো জানতে আমি তোমায় কতটা বিশ্বাস করতাম, তার পরেও তুমি আমার মন নিয়ে এভাবে খেলতে পারলে? কী দোষ ছিল আমার? তোমাকে ভালোবেসে ছিলাম, তোমাকে সবার থেকে অন্য চোখে দেখতাম সেটাই কী আমার দোষ? তুমিও আজ বুঝিয়ে দিলে আমায় যে তুমি সত্যিই অন্যদের থেকে আলাদা। সবার থেকে বেশী বিশ্বাস আমি তোমাকে করেছিলাম, আর তাই বোধহয় তুমি সবার থেকে বড় আঘাত টা দিলে আমায়। যখন মনুষ্যত্ব বোধ থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে ছিলাম আমি, তখন তুমি আমার জীবনে এসেছিলে। তোমার সাথে কথা বলে, মনে হয়েছিল তোমায় বিশ্বাস করা যেতেই পারে। একটা মানুষ জলে ডুবে যাওয়ার আগে যেমন প্রাণপণে যা কিছু পায় তা আঁকড়ে ধরে উপরে উঠতে চায়, তেমনি আমার সেই অন্ধকারময় জীবন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমি প্রাণপণে তোমায় ধরতে চেয়েছিলাম। তুমি সাহায্যের হাতও বাড়িয়ে দিয়েছিলে আমায়। তোমার সেই হাত আমি প্রাণপণে আঁকড়ে ধরে ছিলাম, চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করেছিলাম তোমায়। তুমি আমার আশ্রয় হয়ে উঠেছিলে ধীরে ধীরে। ভালোবেসে ফেলেছিলাম তোমায় গভীর ভাবে। ভেবেছিলাম হয়তো সারা জীবন তুমি এভাবেই আমার হাতটা ধরে আমার পাশে থাকবে। কিন্তু ইস্, কী বোকা আমি! কী করে ভেবে ছিলাম যে তোমার মত হাই ক্লাস ডাক্তারি পড়া ছেলে ... আমার মত একটা অতি সাধারণ মেয়েকে ভালোবাসতে পারে? তুমি শুধু আশ্রয় দিয়েছিলে আমায়। তোমার একটা মেয়ে বন্ধুর দরকার ছিল জীবনে, একজন গার্লফ্রেন্ডের। তোমাদের কলেজে সব ছেলের গার্লফ্রেন্ড ছিল, শুধু তুমি একটু মুখচোরা হওয়ায়, তোমার ছিল না। তাই তুমি ভাবলে, একটা অল্পবয়সী মেয়ে যখন তোমার প্রেমে এত পাগল, তখন তুমিই বা তার কাছ থেকে কিছুই না নিয়ে, তাকে শুধু শুধু আশ্রয় দেবে কেন? তাও আবার সে নিজে এসে যখন তোমাকে বিশ্বাস করেছে, তোমায় ভালোবেসেছে। তোমার তো কোনো দোষ নেই এতে! তুমি তো আর বলনি তাকে বিশ্বাস করতে! সে করেছে, তার দোষ! দেখলে যখন মজা নিতে পারছি, তখন ছেড়ে দেব কেন? তোমার আমার জন্য অতিরিক্ত খেয়াল রাখা, সব খবর জানতে চাওয়া দেখে আমি ভেবেছিলাম তুমিও হয়তো আমায় ভালো বেসে ফেলেছ। তোমায় প্রেমের প্রস্তাব ও দিলাম, কিন্তু তুমি নাকচ করে দিলে, বললে শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে। আমার অসুবিধা ছিলও না শুধু বন্ধু হয়ে থাকতে।
কিন্তু তুমি ! ছিঃ! কী করে করতে পারলে এরকম? একবারও আমার কথা ভাবলে না, আমার বিশ্বাসের কথা ভাবলে না! মুখে বললে বন্ধু বললেও হাবভাব এমন দেখাতে যেন আমি তোমার প্রেমিকা। রোজ আমার মেসেজের অপেক্ষা করা, দেখা করতে বলার কথা, মাকে পড়ার বাহানা দিয়ে তোমার বাড়িতে গিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে যাওয়ার কথা, সারাদিনে তোমার ব্যাপারে কতক্ষণ ভাবি জানতে চাওয়া, তোমার কেন প্রেম করা হল না সে কথা, আমি বিয়ে নিয়ে কী ভাবি সেসব জানতে চাওয়া, জন্মদিনে উইশ, গুড মর্নিং, গুড নাইট মেসেজ করা, ফোনে কথা বলা রাতে...... এসব বন্ধুদের কে করে? এসব তো প্রেমিকাদের জন্য হয়। ভেবেছিলাম তোমার হয়তো ভাবার জন্য সময় দরকার, তাই অপেক্ষায় ছিলাম.... যে হয়তো তুমি আসবে আমার কাছে একদিন। কিন্তু ভুল ছিলাম আমি। তুমি কোনোদিনই আমায় তোমার প্রেমিকা বা স্ত্রী এর স্থানটা দেবে না। শুধু মজা করেছিলে কদিন আমায় নিয়ে। আমি বোকা ছিলাম, তাই হয়তো মজাগুলোকে মজা হিসেবে নিতে পারিনি, কল্পনা করে ফেলেছিলাম অনেক কিছু তোমার আমার মাঝে, ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে নিয়েছিলাম তোমার সাথে। তোমার জন্য সাজিয়ে তুলতাম নিজেকে রোজ। পড়াশোনা, পরিবার, বন্ধু -বান্ধব সব ভুলে গেছিলাম আমি। শুধু তোমাকে বুঝতাম আর কিছু বুঝতাম না! কিন্তু আজ বুঝতে পারি তোমার কাছে আমার ভালোবাসার কোনো মূল্যই ছিল না। আমার ভালোবাসার নাম ছিল তোমার কাছে 'পাগলামি' মাত্র। সেটা হওয়ায় স্বাভাবিক অবশ্য। একটা আঠারো বছরের মেয়ে, জীবনে তেমন ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয় , তেমন কিছু সুন্দরীও নয়, সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না, ভয় পায় ছোটো ছোটো জিনিসে। এরকম একটা মেয়ে তোমায় যতই ভালোবাসুক না কেন, সে তোমার প্রেমিকা হওয়ার ঠিক যোগ্য নয়। তোমার মত সুশ্রী, ডাক্তারি পড়া ছেলের পাশে একজন সুন্দরী, ডাক্তার মেয়েকেই মানায় বোধহয়। আমার মত একজন অতি সাধারণ মেয়ের সাথে শুধু প্রেমের মজাই করা যায় কদিনের জন্য, তাকে জীবনসঙ্গী ভাবা যায় না কখনো কোনোভাবেই।
একটা জিনিস মনে রেখো, আজ যেটাকে অতি সাধারণ, তুচ্ছ বলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ, একদিন এই অতি সাধারণের জন্যই কাঁদতে হবে তোমায়। কিন্তু সেদিন শত চেষ্টা করলেও আর আমায় ফিরে পাবে না। আমরা মেয়েরা হয়তো ছেলেদের তুলনায় বেশী আবেগপ্রবণ, অনুভূতিপ্রবণ... কিন্তু মেয়ে মানেই দুর্বল, তা কিন্তু নয়। মেয়েদের সহন শক্তি ছেলেদের তুলনায় অনেক বেশি। মেয়েরা চাইলে সব করতে পারে, মেয়েদের নিয়ে খেলা এত সহজ নয়। আজ না হয় তুমি আমায় নিয়ে খেললে, কিন্তু মনে রেখো একদিন আমারও খেলার পালা আসবে। পৃথিবীটা গোল, যে যা করছে.... তার কাছে সেটা ফিরে আসবেই।
ইতি,
একটি অতি সাধারণ মেয়ে

