না মেলা উত্তর
না মেলা উত্তর
প্রিয় অরুণ,
একটা সময় ছিল যখন তুমি আমার সব থেকে প্রিয় মানুষ ছিলে। আর এখন তুমি আমার সব থেকে অপ্রিয় মানুষ। আর এই অপ্রিয় হওয়ার কারণ তুমি নিজেই। আমি যখন তোমায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, তখন আমার এমন কোনো শর্ত ছিল না যে তোমাকেও আমাকে ভালোবাসতে হবে, যেমন আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি শুধু বন্ধু হয়ে থাকলেও আমার কোনো অসুবিধা ছিল না... সে কথাও তোমাকে জানিয়েছিলাম। তুমি যথারীতি আমায় নাকচ করে দিলে। আমার খারাপ লেগেছিল ঠিকই, কিন্তু ততটা ভেঙে পড়িনি... যতটা তার পরে তোমার দেওয়া ব্যাথাই ভেঙে পড়েছিলাম। তুমি আমায় নাকচ করার পর আমি শুধু তোমার সাথে বন্ধু হয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। এতে অসুবিধাও হত না কোনো, যদি তুমি একটা সীমা রেখে আমার বন্ধু হয়ে থাকতে।
কিন্তু তুমি, একবার যখন জেনে গিয়েছিলে আমি তোমায় ভালোবাসি, তখন তুমি আমার সেই ভালোবাসার গভীরতা পরখ করতে লাগলে। আমাকে গুড মর্নিং, গুড নাইট বলা, আমি কথা বলতে বা একান্তে দেখা করতে বললে... আমার সেই কথায় সম্মতি দেওয়া... এমনকী তোমার বাড়িতেও মাকে পড়ার বাহানা দিয়ে তোমার সাথে দেখা করতে বলা....তোমার কখনো মনে হয়নি এগুলো করে তুমি বন্ধুত্বের সীমা পার করে দিয়েছিলে? আমি তোমায় চেয়েছিলাম, আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছিলাম... ঠিকই.. কিন্তু তার মানে এও নয় যে তুমি আমায় বন্ধু হয়ে থাকতে বলার পরও, আমার ভালোবাসা পরখ করার জন্য সেই বন্ধুত্বের গন্ডি পার করে দেবে! তোমার ব্যাপারে সারাদিনে কতক্ষণ ভাবি, আমার দিদির বিয়েতে আমি শাড়ি কেন পরলাম না, ... তারপর বারবার জিজ্ঞাসা করা আমি তোমার জন্য সেই একই অনুভূতি রাখি কী না... এসব প্রশ্ন তোমার কাছে সাধারণ হলেও, আমায় এগুলো অনেক মিথ্যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল। রোজ আমার সাথে কথা বলে, আমার খোঁজ নেওয়া, আমি তোমার খোঁজ নেওয়া।আমাদের কথা বলাটা যেন একটা অভ্যেসে দাঁড়িয়ে গেছিল। তুমি বলেছিলে আমি যেন ভুলে না যায় আমাদের দেখা করার কথা। তুমি বলেছিলে তোমার নাকি সবার সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না, কিন্তু আমার সাথে ভালো লাগে, আমি নাকি অন্য মেয়েদের থেকে আলাদা। অথচ পরে তোমায় সেসব কথা মনে করানো হলে তুমি বলেছিলে তুমি নাকি আমার অনুরোধ রাখার জন্য আমাকে কথা বলা আর দেখা করার সম্মতি দিয়েছিলে, তুমি নাকি কিছুই চাও না। আচ্ছা আমি তো তোমায় কখনো বলিনি আমার অনুরোধ রাখতে, আমি তো সব সময়ই বলেছিলাম তুমি যদি চাও, কখনো তোমায় জোর করিনি... তাহলে যখন তোমার কিছু চাওয়ার ছিল না, শুধুমাত্র আমার অনুরোধ রাখতে আমাকে সম্মতি না দিলেই পারতে! তারপর পড়াশোনার সূত্রে বাড়ির বাইরে চলে এলে, আমায় ফোনে কথা বলতে বলা ... এটা তুমিই প্রথম বলেছিলে, পরে আমি সম্মতি দিয়েছিলাম। তুমি আমায় বলেছিলে তোমার নাকি কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই। অথচ এত কিছু যে করেছিলে আমার সাথে, সব শুধু বন্ধুত্বের নামে... নিজেকে কখনো সমর্পণ করতে চাওনি আমার ভালোবাসায়। কারণ তোমার মনে অন্য কেউ ছিল, আমি কখনোই ছিলাম না... এটা আমি পরে বুঝেছি।'লগ যা গলে' গানটা গেয়ে আমায় পাঠিয়েছিলে একদিন.. জানতে চেয়েছিলে কেমন হয়েছে..অথচ গানটি উৎসর্গ ছিল অন্য কারোর জন্য....হয়তো যাকে তুমি পছন্দ করতে তার জন্য। আচ্ছা তোমার মনে যদি অন্য কেউ ছিল... তাহলে বন্ধুত্বের নাম দিয়ে তোমার আমার সাথে এতটা এগোনো নিশ্চয়ই উচিত হয়নি, শুধুমাত্র আমার ভালোবাসা যাচাই করতে!
তুমি আসলে অন্য কাউকে ভালোবাসতে, অন্য কেউ ছিল তোমার প্রথম পছন্দ। পরে বুঝেছি আমি ছিলাম তোমার কাছে শুধু একটা বিকল্প, সেই মেয়েটির জায়গায় , কোনোদিন আমি তোমার প্রথম পছন্দ ছিলাম না। তারপর একদিন যখন তুমি আবার নতুন কাউকে পেলে তোমার জীবনে, (হয়তো সে আগের থেকেই ছিল তোমার জীবনে) আস্তে আস্তে তোমার জীবন থেকে সরিয়ে দিলে আমায় ... দূরত্ব বাড়িয়ে দিলে আমার সাথে, সব ভুলে গেলে... এতদিনের এত কথা সব।
তুমি কখনো বুঝতে পারবে না তুমি আমায় কতটা আঘাত করেছ। এখন তুমি আর আমার মনে সেই স্থানে নেই, যে স্থানে আগে ছিলে... আর তার কারণ তুমি নিজেই। তোমায় এতটা ভালোবাসার পরও তুমি আমায় এতটা তুচ্ছ করে দিয়েছিলে, যে তোমায় ভালোবাসার জন্য আমার নিজের নিজের বড্ড বোকা মনে হত, পাগল মনে হত,... ঠিক যেমন তুমি ভেবেছিলে আমার ভালোবাসাকে 'পাগলামি'... অথচ আমার এই তোমার প্রতি 'পাগল' হয়ে যাওয়ায় তোমারও যে সম্মতি ছিল, সে কথা কখনো তোমার ভীরু মন স্বীকার করতে চাইনি। এমন একটি ভাব দেখাতে যেন, তুমি না চাইতেও আমি তোমার পিছনে পড়ে আছি। আমি এখন একটা জিনিস বুঝেছি, তুমি আমার ভালোবাসা তো নয়ই, এমনকী আমার বন্ধুত্ব পাবারও যোগ্যই ছিলে না কোনোদিন। অল্প বয়সে আমি বড্ড আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলাম, তাই তোমার মত একজন ভুল মানুষকে আমার ভালোবাসা বোঝাতে গেছিলাম।
এখন আমি বুঝতে পারি, আমি নিজেকে কতটা নীচে নামিয়ে ফেলেছিলাম, নিজেকে আর নিজের আত্মসম্মানকে কতটা তুচ্ছ করে ফেলেছিলাম এমন একটি মানুষকে ভালোবাসতে গিয়ে যার জীবনে আমি ছিলাম শুধুমাত্র একটি বিকল্প।তুমি যা করে নষ্ট করেছ আমার মানসিক শান্তি, আমার জীবনের তিনটি বছর, যেভাবে বিষাদগ্রস্ত করে দিয়েছিলে তুমি আমায়, তুমি ক্ষমা চেয়ে নিলেও সেসব কখনোই ঠিক করতে বা ফিরিয়ে দিতে পারবে না। আমি এও জানি তোমার মত ভীরু ও দায়িত্বজ্ঞানহীন একটি ছেলে যতই ভুল করে থাকুক, ভুলের জন্য ক্ষমা চাওয়ার সাহস তার থাকে না, সে শুধু অন্যের ঘাড়ে সব চাপিয়ে দিতে জানে।
তোমায় ভালোবাসতাম, অন্য চোখে দেখতাম বলে তুমি ভাবতে আমি হয়তো সেরকম দামি নয়... চাইলেই আমাকে পাওয়া যায়। কিন্তু তুমি হয়তো কোনোদিনই জানবে না, আমার কাছে অনেক মানুষ থাকার সত্ত্বেও আমি তোমাকেই চেয়েছিলাম তখন মন প্রাণ দিয়ে। যখন তোমায় ভালোবাসতাম, তখন, ভগবানের কাছে আমি সবসময় তোমার মঙ্গল কামনা করতাম। তোমার একটু কোথাও আঘাত লাগলে, আমার কষ্ট হত এত যে বারবার খোঁজ না নিয়ে থাকতে পারতাম না। আর, সেই তুমিই আমায় আমার জীবনের সব থেকে বড় আঘাত টা দিয়ে চলে গেলে। তুমি, ক্ষমা তো দূরের কথা, ঘৃণারও যোগ্য নয়।
শুধু আজ কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই আমি তোমায়। যখন তোমার মনে অন্য কেউ ছিল, তাও আমার এতটা কাছে আসার কী সত্যিই তোমার খুব দরকার ছিল? কী পেলে এসব করে? কী পেলে আমার জীবনের কয়েকটি বছর নষ্ট করে? জানি এসব প্রশ্নের উত্তর না মেলায় থেকে যাবে আমার কাছে! কিন্তু কখনো সময় পেলে ভেবে দেখো, আমার কাছে উত্তর না দিতে হলেও, নিজের বিবেকের কাছে উত্তর দিতে পারবে তো এসব প্রশ্নের???? ! ভেবে দেখো কখনো.....
ইতি,
অরুন্ধতী

