দ্বিতীয় প্রেম
দ্বিতীয় প্রেম
লীনা আর অরুণের বন্ধুত্ব হয় অনলাইনে। তাদের পরিচয় হওয়ার এক মাসের মধ্যেই লীনা বুঝতে পারে তার আর অরুণের জীবন সম্পর্কে অনেকটা একই রকমের দৃষ্টিভঙ্গি আছে। লীনার দার্শনিক কথাবার্তা, জীবন সম্পর্কে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গি তার বয়সী অনেকেই বুঝতে পারত না। কিন্তু অরুণ অল্প দিনের চেনা হলেও, লীনার দার্শনিক দিকটা যেন বুঝেছিল। লীনার মনে হয়েছিল, এত মানুষের ভিড়ে একজন অন্ততঃ আছে যে তার মনের ভাষাটি সঠিকভাবে বুঝেছে। তার মন চাইত অরুণকে আরো কাছ থেকে জানতে, তার সাথে আরো কথা বলতে। তার মনে হত, হয়তো অরুণকে আরো কাছের থেকে জানতে পারলে তারা ভালো বন্ধু হতে পারবে, কারণ দুজনের মনের ভাষা তো একটাই।
কিন্তু, যতবারই লীনার মন চেয়েছে অরুণকে কাছ থেকে জানতে, প্রতিবারই সে তার মনকে থামিয়ে নিয়েছে অরুণের কাছাকাছি যাবার থেকে। অরুণের কাছাকাছি যেতে চাইলেই, তার মনে পড়ে যায় তার নিষ্ঠুর অতীতের কথা। সেই অতীত, যার সর্বস্ব জুড়ে ছিল শুধু তুহিন। তুহিনের সাথেও লীনার পরিচয় হয়েছিল একই ভাবে। খুব অল্প সময়েই দুজনের মধ্যে খুব গাঢ় বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল। লীনা খুব সহজেই তুহিনকে বলে দিত তার মনের সব কথা। তার দুঃখ, সুখ, ভালোলাগা, মন্দ লাগা , তার জীবনের সবরকমের কথার সাক্ষী ছিল তুহিন। এমন কোনো জিনিস ছিল না লীনার জীবনে যা তুহিনের কাছে অজানা ছিল। অন্ধের মত বিশ্বাস করত লীনা তুহিনকে। ভালোবেসে ফেলেছিল লীনা তুহিনকে গভীর ভাবে। লীনার অনুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিল না তুহিনও।
হঠাৎই একদিন, লীনার চোখ তার স্বপ্নের রঙিন দুনিয়া ছাড়িয়ে, কঠিন বাস্তবের সম্মুখীন হয়। সে বুঝতে পারে, তুহিনের জীবনে তার বিশেষ কোনো স্থান ছিল না কোনোদিনই। তুহিন দিনের পর দিন নিয়ম করে তার সাথে কথা বলে গেছে শুধু মাত্র একাকীত্ব কাটানোর জন্য। সেদিন থেকে তার রঙীন জীবনটা যেন একটা সাদা কালো ক্যানভাসে পরিণত হয়েছিল, যেই ক্যানভাসে রঙ দিতে চাইলেও আর রঙ দেওয়া যেত না।এরপর থেকে লীনার হৃদয়টি যেন পরিণত হয়েছিল এক অন্ধকূপে, যেখানে চাইলেও আর কেউ প্রবেশ করতে পারত না। চাইলেও, আর কেউ সেই কূপে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়নি।
কিন্তু, লীনার জীবনে অরুণ আসার পর, লীনার সেই অন্ধকার হৃদয়ে যেন বহুদিন পর এক চিলতে রোদ্দুর দেখা দিয়েছিল। লীনার খুব ইচ্ছে হত জানার যে যেমনভাবে তার জীবনে অরুণের আগমনে, তার হৃদয়ে এক চিলতে আলোর দেখা দিয়েছে.... সেরকম ভাবেই সে যদি অরুণের আরো কাছাকাছি যায়, অরুণ কী পারবে লীনার সাদাকালো জীবনটাকে নানা রঙে ভরিয়ে দিতে?? নাকি অরুণও তুহিনের মত লীনাকে ব্যবহার করে.........নিজের কাজ শেষ হয়ে গেলে, তাকে আরও বড় এক অন্ধকার গহ্বরে ফেলে দিয়ে চলে যাবে??!! এইসব প্রশ্নের উত্তর লীনার জানা নেই। উত্তর জানতে হলে তো লীনাকে অরুণের কাছাকাছি যেতে হবে। আর, কাছাকাছি যাবার পর অরুণ যদি তুহিনের মত লীনাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এক গভীর অন্ধকার খাদে, লীনা যে সেখান থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারবে না। তখন সারা জীবন ধরে তাকে একটি ভুল মানুষের উপর বিশ্বাস করার শাস্তি ভুগতে হবে। তার থেকে এই ভালো.........অরুণ তার জীবনে এক চিলতে রোদ হয়েই থেকে যাক, তাকে আর লীনার বেরঙীন জীবনে রঙ ভরার অধিকার দিতে পারবে না লীনা। তার রঙ বিহীন জীবনটায় না হয় সে নিজে একদিন নিজের হাত দিয়েই রঙ ভরিয়ে নেবে।

