Rita De

Abstract Others

3.3  

Rita De

Abstract Others

ড. রীতা দে-র কবিতা ওপর টীকা

ড. রীতা দে-র কবিতা ওপর টীকা

4 mins
230



    আজকাল হাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলি

    বুঝলাম 

    এতদিনে ঠিক পা'টা ফেলা হ'ল ।

               


         বাগর্থ - 


কবি আত্মসমীক্ষা করছেন । হাসি কান্নায় দোলদোলানো এ জীবন । জীবনটা বুঝি হাসি কান্নার ঢেউ- এ ভাসতে ভাসতে চলেছে। কখনও হাসি, হাসির ঢেউ- এ জীবনটা ওঠে আর তার পরে কান্নার তরঙ্গে জীবনটা দোলে । আপাতদৃষ্টিতেহাসি কান্না দুটি বিচ্ছিন্ন ব্যাপার । কান্নার আঘাতে জীবনটা ডুবতে বসে , তখন আমরা আকুলি বিকুলি করি । কান্নাতে আমাদের বড়ো ভয় ।আর তাই কান্নাকে সবরকমভাবে বয়কট করে আমরা শুধু হাসির স্রোতে ভাসতে চাই । আর ঠিক এই কারণেই হ্যাপি প্রিন্সের গল্প আর ভগবান সিদ্ধার্থ বুদ্ধের গল্প , পাছে সংসারের দুঃখ রাজপুত্র সিদ্ধার্থ - এর গায়ে আঁচড় কাটে তাই শুদ্ধোধন রাজপুত্রের চারদিকে হাসি খুশীর দেওয়াল তৈরী করেছিলেন । ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রাসাদ বদল হোত । পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর শীতকালে কলকাতায় থাকতেন আর গ্রীষ্মকালে দার্জিলিং- এ।আর ভোগবিলাসের ঢেউ তার ইন্দ্রিয়গুলোতে আছড়ে আছড়ে পড়তো।ভারতবর্ষের কিছু শহরে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ভিখিরির প্রবেশ নিষেধ তেমনি শুদ্ধোধনের হুকুমে রাজপুত্র নগর পরিক্রমায় যাবেন তখন নগরীতে দুঃখ জরা মৃত্যুর প্রবেশ নিষেধ । কিন্তু তা বললে হয় ? দেবতারা ষড়যন্ত্র করে একটি জরাগ্রস্ত লোক কিম্বা একটি শবদেহ সিদ্ধার্থের নগর পরিক্রমার পথে উপস্থাপন করলেন ।আর যদি কান্না বা বিরহ এবং দুঃখই সকল সুখের অনিবার্য পরিণতি হয়, তবে তো সুখকে অবিলম্বে ত্যাগ করা উচিৎ ।সুখের কুসুমাস্তীর্ণ পথে দুঃখের আগুন উপনীত হওয়া প্রমাণ করে জাগতিক সকল সুখ অন্তঃসারশূন্য।          আর ঠিক একইভাবে হ্যাপি প্রিন্স একজন খুশী রাজপুত্র । জীবনে দুঃখ দেখে নি । একদিন হ্যাপি প্রিন্সের মৃত্যু হল।তার স্মৃতিতে একটা মূর্ত্তি গড়া হ'ল। সীসে দিয়ে তৈরী হ'ল মূর্ত্তির কাঠামো। আর তার ওপরে বসানো হ'ল হীরে চুনী পান্না । নীল পাথর তার চোখে বসানো হ'ল। শহরের ঠিক মাঝখানে একটা বড়ো থামের ওপর মূর্ত্তিটাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হ'ল যাতে শহরের সব মানুষ ঐ রাজপুত্রকে দেখতে পায় এবং স্মরণ করে । তো একবার একটা সোয়ালো পাখী মূর্ত্তিটার তলায় আশ্রয় নিল ।রাত্রিবেলা পাখীটা যখন ঘুমোতে যাচ্ছে তখন একফোঁটা জল পাখীটার গায়ে এসে পড়লো ।পাখীটা অনুসন্ধান করে দেখলো যে ঐ রাজপুত্রটা কাঁদছে। পাখীটা রাজপুত্রের মূর্ত্তিটাকে জিজ্ঞেস করলো - বলি, কাঁদছো কেন ? কান্নার কি হয়েছে ? রাজপুত্র বললো - আমি তো চিরকাল সুখই দেখেছি । আজ দুঃখ দেখতে পাচ্ছি । পাখীটা অবাক হয়ে গেল, সে প্রশ্ন করলো , রাজপুত্র, তুমি কি দেখলে ? মূর্ত্তিটা বললো - দূরে একজন গরীব মানুষ থাকে, তার ছেলেটার খুব অসুখ , ক তাকে ডাক্তার বা ওষুধ কিনে দেবার পয়সা বাপের নেই । থাকবে কি করে ? সে নিজেই খেতে পায়নি তিনদিন ।রাজপুত্র পাখীকে বললো - তুমি আমার একটা উপকার করবে ভাই ।আমার এই তলোয়ারে গাঁথা পাথরটাকে ঠোঁটে করে তুলে নিয়ে যাও । রেখে এসো ঐ গরীব মানুষটার ভিটেতে ।এইবারে সেই গরীব লোকটা ঐ মূল্যবান পাথর বিক্রি করে নিজেও যেমন খেল তেমনি ছেলেকেও পরিচর্যা করলো। এদিকে শীত পড়েছে । রাজপুত্রকে পাখী জিজ্ঞেস করলো - তোমার ঠাণ্ডা লাগছে না। রাজপুত্র বললো - অপরকে সাহায্য করে বেশ গরম লাগছে । শীতের কাঁপুনি কেটে গেছে।  

     অর্থাৎ সংসারের সকল হাসির শূন্যগর্ভতা দেখে সিদ্ধার্থ যখন গৃহত্যাগী হলেন তখন অবারণ হাসিখুশির চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে হ্যাপি প্রিন্স পাথর হয়ে গেল ।অপরের দুঃখে নিজের মূল্যবান ঐশ্বর্য্য বিলিয়ে দিয়ে তবেই তার আর এক ধরনের সুখ হ'ল ।তার মানে একটা সুখ থেকে আর একটা সুখ সবসময় একরকম নয় ।সংসার ত্যাগ করে বুদ্ধ বিমুক্তি সুখে উপনীত হলেন।বিমুক্তি সুখ আর রাজপ্রাসাদের সুখ এক নয় ।

      রীতা বলে - "আজকাল হাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলি '। তার মানে আগে সে যখন হাসতো কাঁদতো না । হাসির দেওয়াল ভেঙ্গে ঝড় বইতো না ।আবার কান্না যখন আসে তখন হাসির হাল্কা হাওয়া তাকে রুখতে পারে না। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই । আর আমরাও সেইজন্যে সবসময় কান্নাকে এড়িয়ে চলতে চাই ।কিন্তু তাই কি হয় ?

আমরা যখন সূখের গল্প করি তখন ভয় হয় এই সুখের বাতাবরণ না চৌপাট হয়ে যায় । এমনও হতে পারে যে গল্পের পাত্রপাত্রীর সুখ দেখে আমাদের হিংসে হয় আর তাই ভয় হয় তাদের সুখ নিমেষে কান্নায় পরিণত হবে না তো ! কিন্তু সে কথা থাক্ । আমরা জীবনটাকে কখনও বহতা হিসেবে দেখতে পাই না । সবকিছুকেই আমরা সময় ও দূরত্বে বিচ্ছিন্ন স্থির হিসেবে দেখি । আমি দেখতে পাই না সুরমা বুড়ি হচ্ছে । আমি 1968 সালে সুরমাকে যখন দেখেছিলাম তখন তার ভরা যৌবন । 2008 সালে যখন তাকে দেখলাম তখন তার একটাও দাঁত নেই , মাথায় টাক । কিন্তু সুরমাকে বুড়ি হতে দেখি নি । ঠিক একইভাবে আমরা জীবনটাকে সূখ ও দুঃখের বহতা হিসেবে দেখতে পাই না । কখনও আমাদের সূখ হয় কখনও আমাদের দুঃখ হয় । কিন্তু সুখ দুঃখ পরস্পর বিচ্ছিন্ন নয় ।সুখের গর্ভমন্দিরে আমরা প্রবেশ করলে দেখতে পাই সেখানে দুঃখের দেবতা অনিষ্ঠিত ।আর দুঃখের আগুনে প্রবেশ করলে আমরা খুঁজে পাই সুখের স্নিগ্ধ শীতলতা । তাই রীতা যখন বলেন - হাসতে গিয়ে কেঁদে ফেলি কিম্বা কাঁদতে গিয়ে হেসে উঠি তখন ঠিক ঠিক পা ফেলা হ'ল । গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন - স্থিতপ্রঙ্গ যিনি তিনি সুখ ও দুঃখকে সমান চোখে দেখেন , সুখে দুঃখে সমে কৃত্বা / লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ ... ইত্যাদি । কিন্তু তাই বলে তিনি হাসবেন না কাঁদবেন না একথা বলা হয় নি, তাহলে তিনি সংসারেই থাকতে পারবেন না । সংসারে থাকতে গেলে আর দশজনের সঙ্গে হাসতেও হবে কাঁদতেও হবে । কিন্তু যারা জানে - জানা মানে তত্ত্ব হিসেবে নয়।

আপন সত্ত্বা দিয়ে জানেন সুখের মধ্যেই দুঃখ, আর দুঃখের মধ্যে সুখে । তারা হাসতে গিয়ে কাঁদে , কাঁদতে গিয়ে হেসে ওঠে ।স্থিতপ্রঙ্গ মানে এমন কোনো মানুষ নয় যে সে সুখ দুঃখ দুটোকে অবজ্ঞা করে। স্থিতপ্রঙ্গ মানে যে হাসতে গিয়ে কাঁদে আর কাঁদতে গিয়ে হেসে ফেলে ।

 


(Poem written by Dr.Rita De & Explication by Dr. Ramesh Chandra Mukhopadhyaya)


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract