ড রীতা দে- কবিতার
ড রীতা দে- কবিতার


ঠিক বেলা বারোটায় পায়ের গোড়ালিতে মুখ ফেরাতেই
লাগোয়া ছোট্ট ছায়াটা বলে ওঠে-
সূর্যের মত হ ' ।
ড. রীতা দে
বাগর্থ - ড. রমেশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায়
সূর্য যখন মাথার ওপর ওঠে তখন বেলা বারোটা , বেলা বারোটা হ'ল সন্ধিলগ্ন।এখানে সকাল আর বিকেল মিলিত হয় একটি সঙ্গমে , যে কোনো সঙ্গম অমেয় শক্তি বিকিরণ করে । বিজ্ঞানীরা বলেন বস্তু আর প্রতিবস্ত ম্যাটার আর অ্যান্টিম্যাটার যদি কখনো হ্যান্ডশেক বা করমর্দন করে তাহলে যে অমেয় শক্তির বিস্ফোরণ ঘটবে তাতে সারা ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাবে ।আর্যরা তাই এই মধ্যাহ্নকালে এই সন্ধিলগ্নে সন্ধ্যার উপাসনায় আপনাকে মগ্ন রাখে ।
আমাদের কবি দ্বিপ্রহরে এই মধ্যাহ্নকালে নিরাশ্রয় পথ চলছে । এখন তিনি গাছের ছায়ায় বসে নেই ।কোনো ফ্ল্যাটে বন্ধ নেই । সবাই যখন জলে স্নান করছে তখন তিনি রোদ্দুরে স্নান করছেন। মাথার ওপরে রোদ্দুর।চারদিকে তাকানো যায় না, চোখ ঝলসে যায় । তাই
আপনার অনবধানতাবশত: পায়ের গোড়ালির দিকে তাকালেন ।
রোদ্দুর যেহেতু মাথার ওপর ছায়া দীর্ঘ নয় ।গোড়ালির কাছে একটা ছোট্ট ছায়া কবির সঙ্গে চলেছে ।
ঐ ছায়াটা কবিকে বলল - তুই সূর্যের মতো হ '। সূর্যের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে পায়ের দিকে তাকাতেই ছায়াটা বলল , তুই সূর্যের মত হ' । অর্থাৎ সূর্য থেকে পালিয়ে যাওয়া কখনই বিচক্ষণতার কাজ নয়। সূর্য এবং সূর্যের তাপ সত্যের স্বরূপ । শুধু তাকে মোকাবেলা করলেই চলবে না । পায়ের দিকে না তাকিয়ে শুধু রোদের উৎসমুখের দিকে না নিজেকেই সূর্য হয়ে উঠতে হবে । সকল ছায়া বুঝি এই আলোর কথাই বলে, আলোর সঙ্গে একাত্ম হয় ।সূর্য বুঝি সেই ভর্গদেব যাঁর প্রথম উপাসনা করেছিলেন মুনি বিশ্বামিত্র ।
ভর্জতি ইতি ভর্গঃ অর্থাৎ যা ভাজা ভাজা করে ফেলে তাকেই ভর্গদেব বলে। ভর্গদেবের উপাসনা করলে আমাদের মধ্যে যা কিছু স্থূল আছে তা ভাজা ভাজা হয়ে যায় এবঃ আমরা আমাদের শরীর এবং সকল স্থূলতাকে উত্তরণ করে সূর্য হ'য়ে উঠি। প্রকৃতপ্রস্তাবে এই ছোট্ট চার লাইনের এই কবিতাটি বুঝি গায়ত্রী মন্ত্রের আর একটি রৃপ। জগতে যত দুঃখ কষ্ট পাপ থাকে তারা সকলেই তো আমাদের শরীর এবং মনকে অবলম্বন করে তীব্র রৌদ্রালোকে ছায়ার স্বরূপ এবং এই দূঃখ কষ্ট অপরাধের গ্লানি আমাদের বারংবার মনে করিয়ে দেয় সূর্যের সঙ্গে একাত্ম হওয়া আমাদের অন্বিষ্ঠ।