STORYMIRROR

Tanuchhaya Mukherjee

Abstract Crime Others

4.0  

Tanuchhaya Mukherjee

Abstract Crime Others

চরিত্রের দুটো দিক

চরিত্রের দুটো দিক

4 mins
203


নিবেদিতার বাবার প্রথম স্ট্রোকটা যখন হল। তখন তার দাদা সমীরের বন্ধু দীপেন ওদের পরিবারের পাশে থেকে কত সাহায্য করেছিল। আত্মীয়স্বজনরা তো প্রথম প্রথম খবর নিত তারপর আস্তে আস্তে ওদের সাথে যোগাযোগ রাখা বন্ধ করে দিল। পাছে অর্থ সাহায্য দিতে হয় এইভেবে হয়ত। আসলে নিবেদিতা এখনোও পড়াশোনা করছে। সমীর সবে বেসরকারী কোম্পানিতে চাকরি পেয়েছে।সমীরের বাবা অবসর নিয়েছেন অনেকদিন হল। জমানো টাকা দিয়ে তাঁর কলকাতার ভালে নার্সিংহোমে রেখে চিকিৎসা চালাতে চালাতে টাকা প্রায় শেষ।বাড়ি নিয়ে এসেও নিয়মিত ফিজিওথেরাপি করে বাবাকে মোটামুটি সুস্থ করতে সমীরের দুবছর লেগে গিয়েছিল। ঐ সময় সমীরের বন্ধু দীপেন আর্থিক সাহায্য না করলে যে কি হত? দীপেনের না বড় ব্যবসা আছে টাকাটা তার কাছে কোনো ফ্যাক্টর নয়, তাহলেও টাকা থাকলেও বা, আজকের দিনে কে কাকে দেয়? তাছাড়া দীপেন যেভাবে সমীরকে মেন্টালি সাপোর্ট করেছিল সেটা ভাবা যায় না। সমীর একটু নার্ভাস প্রকৃতির বলে ডাক্তারের সাথে কথা বলতে ওর খুব নার্ভাস লাগত। সমীর যখন বলত, "দীপেন, আমার সাথে একটু নার্সিংহোমে যাবি ডাক্তারের সাথে কথা বলতে হবে?"দীপেন ওর জরুরী কাজ থাকলেও বলত, "নিশ্চই যাব। চিন্তা করিস না তোর পাশে আমি আছি রে।" সমীর তখন বলত, "তোর মত বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। গত জন্মে তুই আমার দাদা বা ভাই ছিলিস হয়ত। আড়াল থেকে নিবেদিতা এসব কথা শুনত, দীপেন দার প্রতি শ্রদ্ধায় তার মন ভরে যেত।


সমীরের বাবা এখন অনেকটাই সুস্থ। দীপেন মাঝেমাঝে তাঁকে এসে দেখে যায়। কি নম্র ব্যবহার ছেলেটার। দীপেনকে বলতেন সমীরের বাবা, "তুমি পাশে না থাকলে যে কি হত? বাঁচতামই না হয়ত।"দীপেন তখন বলত ওকথা বলছেন কেন মেসোমশাই। আপনি সুস্থ হয়েছেন এটাই বড় কথা।" সমীর যখন বলত, টাকাটা শোধ করতে একটু সময় লাগবে রে। সব টাকা তোর শোধ করতে পারব কিনা জানি না।" দীপেন বলত ঐ নিয়ে তুই একদম ভাবিস না। ভালো করে মন দিয়ে চাকরিটা কর। নিবেদিতা ওদের জন্য মায়ের বানানো ভেজিটিবিল পকোড়া আর চা নিয়ে তখন ঘরে ঢুকে দীপেনের হাতে পকোড়ার প্লেট আর চা তুলে দিত। দীপেন বলত, "কিরে নিবু(নিবেদিতার ডাকনাম)পড়াশোনা ভালো করছিস? কি সাবজেক্টে যেন এম. এ. করছিস।" নিবেদিতা মনে মনে ভাবত, "কি আন্তরিক ভাবে কথা বলে দীপেন দা।" নিবেদিতা তখন বলত, "মর্ডান হিস্ট্রি নিয়ে করছি। ফার্স্ট ইয়ার।" "খুব ভালো সাবজেক্ট মার্ক্সটা ভালো তুলতে হবে বুঝলি। মন দিয়ে পড়।" দীপেন চলে যাবার পর সমীরের মা বলতেন, "ছেলেটার মনটা খুব নরম। ওকে ছোটোবেলা থেকে দেখছি তো। পরের উপকার করে।" সমীর তখন বলত,"শুধু আমার নয় মা, ও যে কত জনকে উপকার করেছে। ভিখারি দেখলেই টাকা দেয়, কেউ সাহায্য চাইলে তাকে ফেরায় না। কেমিস্ট হওয়ায় পর ওষুধ তৈরির ফ্যাক্টরি খুলে ব্যবসা শুরু করে আজ নিজের চেষ্টায় ব্যবসাটা দাঁড় করিয়েছে। ভালো মনের মানুষ বলেই তো ভগবান ওর দিকে মুখ তুলে চেয়েছে।" নিবেদিতা বলত, "ঠিক বলেছিস দাদা।"


আজ রবিবার খবরের কাগজটা দিতে বড় দেরী করছে। সমীরের বাবা ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কাগজটা আসলেই প্রথমেই তাঁর পড়া চাই। আজ আসতে দেরী করছে বলে, মেয়েকে বললেন, "এখনও কেন কাগজ দিল না বলত? ছেলেটার কি হল?" নিবেদিতা বলল, "দিতে দেরী করছে কোনো কারণে, এত ব্যস্ত হচ্ছ কেন?" বাবা বললেন, "এতক্ষণে মনে হয় দিয়ে গেছে। একবার গিয়ে দেখ না মা।" নিবেদিতা যাচ্ছি বলে বাইরে গিয়ে দেখল বাড়ির বাইরে গেটে মধ্যে খবরের কাগজ আটকানো। মনে মনে ভাবল,"এতক্ষনে বাবা শান্তি পাবে। যাই খবরের কাগজটা বাবাকে দিয়ে আসি।" খবরের কাগজটা তুলে সেটাকে খুলে হেড লাইনগুলো চোখ বোলাতে বোলাতে বাবার ঘরের দিকে হাঁটা লাগাল।


কাগজের নীচে একটা হেড লাইন পড়ে তার পায়ের তলার মাটিটা যেন ক্রমশ সরে যেতে লাগল। হেডলাইনটা ছিল - জাল ঔষধ তৈরি করার অপরাধে ধৃত বিখ্যাত ব্যবসায়ী দীপেন সেন। নিবেদিতা ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল। মনে মনে বলল, "এ হতে পারে না। দীপেন দার মত মানুষ এই ঘৃণ্য কাজ কখনও করতে পারে না। একটা মানুষের দুটো চরিত্র হতে পারে না।নিশ্চই কোথাও ভুল হচ্ছে। দীপেন দাকে কেউ ফাঁসিয়েছে।"কাগজটা সে আর বাবাকে দিল না। কারণ খবরটা তাঁর চোখে পড়লে মন ভেঙে যাবে। সদ্য ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে একটু ভালো হয়েছেন তিনি। বাবাকে গিয়ে বলল, "বাবা কাগজতো দেয়নি। বোধ হয় অলক দার (যে কাগজ দেয় রোজ) কোনো অসুবিধায় পড়েছে।"


সমীর খবরটা জেনেই গেছে। কারণ সে বাইরে বেরোয়। বন্ধুদের থেকে হয়ত জেনেছে। তার মনের অবস্থা নিবেদিতার থেকেও খারাপ। কারণ দীপেন যে তার কোন ছোটোবেলাকার বন্ধু। তার মন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। মনে মনে ভাবল, "দীপেনের পাপের টাকা শেষপর্যন্ত বাবার ট্রিটমেন্টের কাজে লাগল। কেন আমি ওর টাকানিলাম। আমি একটা অপদার্থ, এমনি চাকরি করি নিজের বাবাকে পুরো টাকায় ট্রিটমেন্ট করানোর ক্ষমতাও আমার নেই।"


দীপেন অনেকদিন না আসায় সমীরের বাবা ব্যস্ত হয়ে সমীরকে বললেন, "ছেলেটা অনেকদিন আসে নি। শরীরখারাপ করল নাকি। খবর নিয়েছিস?" সমীর কিছু বলতে যাচ্ছিল। নিবেদিতা সেখানে ছিল, দাদাকে নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে কিছু এ ব্যাপারে বাবাকে না কথা বলতে ইঙ্গিত করল। সমীর বোনের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে বাবাকে বলল,"ওর খুব কাজের প্রেশার তাই হয়ত আসতে পারছে না।"


ভাই বোন হয়ত চেয়েছিল বাবা,মার চোখে দীপেন যেমন আছে তেমন থাক। শুধুশুধু সত্য বলে ওদের মনে কষ্ট না দেওয়াই ভালো। তবে সত্য বা মিথ্যা খবর কোনোদিনও চাপা থাকেনা। ওদের বাবা মা খবরটা একদিন নিশ্চই জানতে পারবে হয়ত এখন না হলেও পরে। খুব কষ্টও পাবেন।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract