STORYMIRROR

Tanuchhaya Mukherjee

Abstract Fantasy Others

3  

Tanuchhaya Mukherjee

Abstract Fantasy Others

#বংশীবদনের ডাক#

#বংশীবদনের ডাক#

3 mins
176


আশি বছরের বৃদ্ধা বিধবা মৃণালিনী দেবীর শ্বশুরগৃহে রাধামাধবের মন্দির আছে। চারপুরুষ ধরে রাধামাধবের সেবা রায় চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা করে আসছে। বর্তমানে মন্দিরে পুরোহিত চারবেলা ওনার পুজো করলেও শ্বশুরগৃহে পদার্পণের সময় থেকে মৃণালিনী দেবী নিজেকে রাধামাধবের সেবায় মন প্রাণ সঁপে দিয়েছিলেন। । এই বয়সে পৌঁওছেও তিনি নিজের হাতে রাধা মাধবের ভোগ রান্না করেন। বৌমারা জোগাড় দিয়ে থাকে।


 রাধা মাধবের কৃপায় ওনার সংসার বেশ সুখের বলা চলে। চার ছেলে চার বৌমা নাতিদের নিয়ে ভরপুর সংসার ওনার। এত দিন সধবা থেকে সদ্য স্বামীকে হারিয়েছেন। কালের নিয়মে সবাইকেই একদিন পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। তবে যে যার কাজ সম্পন্ন করে একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর তা হলে তাতে দুঃখ কম। রাধা মাধবের কৃপায় মৃণালিনী দেবীর সংসারে আজ পর্যন্ত পরিবারের লোকজনের অকাল মৃত্যু ঘটেনি। ওনার শ্বশুরমশাই,শাশুড়িমা, স্বামী নিদৃষ্ট বয়সে পরলোক গমন করেছেন।


রায় চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা শুধু রাধামাধবের সেবা করে তাই না তারা দীন,দরিদ্র,আর্তের সেবা করে থাকে নিজেদের ক্ষমতা অনুয়ায়ী। 


মৃণালিনী দেবীর একটা অলৌকিক ক্ষমতা আছে। তিনি সেটা মনে মনে উপলব্ধি করেছেন যবে থেকে তিনি রাধামাধবের সেবায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। । কিন্তু আজ পর্যন্ত কারোকে এই ব্যাপারটা তিনি জানতে দেন নি। 


তিনি একটা বিশেষ সময়ে নিশুতি রাতে বাঁশির শব্দ শুনতে পান। মনোমুগ্ধকর বাঁশির ধ্বনি শুনে তাঁর মন প্রাণ যেন জুড়িয়ে যায় সাথে প্রিয়জনকে হারানোর উৎকণ্ঠা তাঁকে বিচলিত করে।প্রথমে তিনি যখন এই বাঁশির ধ্বনি শোনেন তার পরের দিনই ওনার অসুস্থ শ্বশুর মশাই নব্বই বছর বয়সে সংসারের মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি দেন। শাশুড়িমায়ের ক্ষেত্রে, নিজের স্বামীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। 


তাই মনকাড়া বাঁশির শব্দ শোনার সাথে সাথে তাঁর মনে প্রিয়জনকে হারানোর উৎকণ্ঠা জাগলেও তিনি নিশ্চিত অকাল মৃত্যু তাঁর পরিবারে কোনো দিনও ঘটবে না। 


সংসার সুখের হলেও মৃণালিনী দেবীর একটাই আফসোস চার বৌমা তিনি ছাড়া এই পরিবারের একটিও কন্যা নেই। ওনার নিজের কোনো কন্যা সন্তান নেই। এই কষ্ট ছাড়া ওনার মনে আর কোনো কষ্ট বা দুঃখ নেই। তিনি রাধামাধবের কাছে মনে মনে মিনতি করে বলতেন, হে রাধামাধব আমার কোলে কোনো মেয়ে দিলে না আমার বৌমাদেরও দিলেনা। অন্তত একজন নাত বৌমার কোলে কন্যা সন্তান দিয়ে আমার আশা পূর্ণ কর।


ওনার বড় নাতির শুধু বিয়ে হয়েছে। বাকিদের সম্বন্ধ দেখা হচ্ছে। 


মৃণালিনী দেবীর একমাস যাবত শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। মাথা ঝিমঝিম করে সব সময় শুয়ে থাকতে ইচ্ছা জাগে। তবুও তিনি ছেলে বৌমাদের কোনো কথা না শুনে নিজের কাজে অবিচল থাকেন। ওনাকে নিয়ে ছেলেরা, বৌমারা বেশ চিন্তায় আছে। এদিকে বাড়িতে খুশির খবর। ওনার নাত বৌমা সন্তান সম্ভবা হয়েছে। কদিন আগে খুশির খবরটা সবাই পেয়েছে। মৃণালিনী দেবী আশায় আছেন। 


কিছুদিন পরের ঘটনা-


সেদিন রাতে আবার মৃণালিনী দেবী আবার মনকাড়া সেই বাঁশির ধ্বনি শুনতে পান।তিনি বেশ বুঝতে পারলেন তাঁর সময় ঘনিয়ে এসছে। মনে মনে প্রার্থনা জানালেন একজনের কাছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি তোমার চরণে ঠাঁই পাওয়ার সময় হয়েছে। আমি ধন্য প্রভু। কিন্তু আমার মনে যে একটা বড় সাধ জাগছে। সেই সাধ তুমি পূরণ কর হে রাধামাধব। 


পরের দিন থেকে সেই বাঁশির ধ্বনি তিনি আর শুনতে পেলেন না। ওনার শরীরটাও আগের চেয়ে অনেকটাই সুস্থ্য হয়ে উঠল। ছেলে বৌমারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। 


তিনি আবার শরীর মনে শক্তি পেলেন। রাধামাধবের জন্য নিত্যনতুন ভোগ রান্না করতে থাকলেন। 

নির্দিষ্ট দিনে নাত বৌমার কোলে জুড়ে একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তান জন্মাল। রায়চৌধুরী বাড়িতে আনন্দের ঢল নামলো। কতদিন পর বংশে কন্যা সন্তান জন্মগ্রহন করল। মৃণালিনী দেবীর খুশি আর ধরে না। উনি কৃষ্ণা বলেই ওকে ডাকতে লাগলেন। ওর মা বাবা কিন্তু ওর একটা আধুনিক নাম দিল। কিছুদিন পর পুতনিকে কোলে বসিয়ে যখন "আমার কৃষ্ণা কই গো" বলে উনি ডাকতেন, কৃষ্ণা খিলখিল করে হেসে উঠত। মৃণালিনী দেবীর মন প্রাণ যেন জুড়িয়ে যেত প্রথম যখন তিনি বাঁশির ধ্বনি শুনতে পেয়েছিলেন ঠিক সেইরকম মনোমুগ্ধকর অনুভূতি । 


দেখতে দেখতে কৃষ্ণার অন্নপ্রাশনের দিন চলে এল। পুতনিকে চারগাছা ছোট্ট ছোট্ট সোনার চুড়ি দুহাতে পরিয়ে দিলেন। আগে কৃষ্ণার মুখে রাধা মাধবের পায়েস ভোগ মুখে দেওয়া হল। 


 এর কিছুদিন পর একদিন রাতে বিছানায় শোবার আগে চুপ করে বসে দুচোখ বন্ধ করে রাধামাধব কে নিত্যদিনের মতো রাধামাধবকে নমস্কার করলেন। মনে মনে আবার মিনতি জানিয়ে বললেন, আমার কথা তুমি রেখেছ হে রাধামাধব। হে বংশীবদন এবার শোনাও তোমার বাঁশি। এবার আমি প্রস্তুত,তোমার চরণে ঠাঁই দাও। 


পরের দিন সকালে ছেলে বৌমা নাতিদের নাতবৌকে ডেকে বললেন, "কথা দে তোরা আমি চলে গেলেও রাধামাধবের সেবা যেন বজায় থাকে সাথে তোদের সততা,, দীন দরীদ্রের সেবা।" কথা দিল সবাই। 


সেদিন নিশুতি রাতে আবার সেই মনকাড়া বাঁশির ধ্বনি। সেদিন উৎকণ্ঠা বিচলিত করেনি মৃণালিনী দেবীকে ।তিনি শুধু শরীর মন এক করে দুচোখ বন্ধ করে মনকাড়া বাঁশির ধ্বনি শুনছিলেন। এবার শুধু অপেক্ষা আর অপেক্ষা।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract