STORYMIRROR

Tanuchhaya Mukherjee

Abstract Inspirational Others

3  

Tanuchhaya Mukherjee

Abstract Inspirational Others

শিক্ষা

শিক্ষা

3 mins
162

সেদিন মিলির হাত থেকে গরম দুধের ডেকচিটা পড়ে গেল। গরম দুধের কিছুটা ওর ডান পায়ের আঙুলগুলোর ওপর পড়ল। মিলি ওভেন থেকে ন্যাকড়া দিয়ে দুধের ডেকচির দুপাশটা ধরে আনছিল ডাইনিং টেবিলের ওপর রাখবে বলে। হাত ফসকে ওটা মেঝেতে পড়ে গেল। ডান পায়ের আঙুলগুলো পুড়ে গেল। শাশুড়ি মা শোভনা দেবী দেখে বলল, যা আ! সব দুধ পড়ে গেল! মিলির যে পাটা পুড়ে গেছে সেদিকে তাঁর লক্ষ্য নেই বরং দুইটা নষ্ট হল সেই নিয়ে হাহুতাশ করতে লাগলেন।


মিলি মনে মনে ভাবলো, আমার পাটা যে পুড়লো সেটা ওনার চোখেই পড়ল না। তখন দুজন ছাড়াও ওখানে কাজের লোক সবিতা ছিল। ও মিলিকে বলল, বৌদি একটু বরফ লাগাও। জ্বালা কমে যাবে। মিলি তাই করল। তারপর সোফ্রামাইসিন মলম নিয়ে নিজেই পায়ের আঙুলে লাগালো। পায়ের আঙুলে মিলির ফোস্কা পড়ে গিয়েছিল। সারতে সময় লেগেছিল।


আর একদিন, সেদিন ছুটির দিন ছিল, মিলি দুধ জালে বসিয়ে বর সুতনুকে সেটা দেখতে বলে বাথরুমে গেল।কিছুক্ষণ পর বাথরুম থেকে বেরল।ইতিমধ্যে দুধ ফুটে গেছে। সুতনুকে মিলি বলল, দুধের ডেকচিটা নিয়ে এসে টেবিলের ওপর রাখ। সুতনু ন্যাকড়া দিয়ে ধরে দুধের ডেকচি আনছিল। ঠিক ওই সময় শোভনা দেবী বললেন, ওহ! বাবু তুই আনছিস কেন? বৌমাতো বাথরুম থেকে বেরিয়ে পড়েছে। ও আনতো। পায়ে যদি পড়ে তোর পাটাতো পুড়বে।ভালো করে ধরে সাবধানে আন বাবা। ইতিমধ্যে সুতনু দুধের ডেকচিটা টেবিলে রেখে দিয়েছিল। মায়ের কথায় উত্তর দিল না।

মিলির কথাটা শুনে মাথাটা গরম হয়ে গেল। উত্তর না দিয়ে পারল না। বলল, মা, সেদিন আমার পায়ে দুধ পড়ে যে আঙুলগুলো পুড়ল সেই দিকে আপনার কোনো লক্ষ্যই ছিল না। বরং দুধটা নষ্ট হবে বলে আপনি হাহুতাশ করছিলেন। আজ দুধ পড়ে নষ্ট হওয়ার থেকেও ছেলের পায়ে দুধ টা পড়ে যদি পা পুড়ে যায় সেই ভয় পাচ্ছিলেন।


শোভনা দেবী অমনি বৌমার কথার যথার্থ উত্তর না দিয়ে বললেন, ওর অভ্যাস নেই এসব কাজ করার তাই সাবধানে আনতে বলছিলাম। এতে এত কথা কিসের?মিলির এই কথা শুনে আরো মাথা গরম হয়ে গেল। বলল, আপনার ছেলে বাচ্চা নাকি? আর আমি যেদিন থেকে বিয়ে হয়ে এসেছি এ বাড়িতে সংসারের বেশির ভাগ কাজ আমার ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দিয়েতো বেশ নিশ্চিন্ত ছিলেন। একবারওতো আপনার মনে হত না বৌমা কি করে চাকরি সামলে এত কাজ করবে! এমন কি আপনার ছেলের মনেও এ কথাএকবারও আসত না।


শোভনা দেবী রাগ দেখিয়ে বললেন, তুমি বড্ড মুখরা।মেয়েরা জন্ম থেকে সংসারে যেকোনো কাজ করবার সহজাত গুণ নিয়ে জন্মায়। মেয়েদের জন্মই সংসারে কাজ করার জন্য।


মিলি এই কথা শুনে বলল, মা, আমিও বাবা মায়ের একটা মেয়ে। বিয়ের আগে মা আমাকে দিয়ে সেরকম কাজ করাত না। কিন্তু এখানে করতে হচ্ছে। কারণ সমাজ মেয়েদের গায়ে তকমা লাগিয়ে দিয়েছে মেয়েরা নাকি জলের মত, যে পাত্রে থাকে তার আকার ধারণ করে। সব পরিবেশকে মানিয়ে নিতে মেয়েরা পারে। কিন্তু শুধু মেয়েরা কেন! ছেলেরা কেন নয়? মেয়েরা যে কাজটা পারে ছেলেরা সেটা পারবে না কেন? আপনি ছেলেকে এমন ভাবে মানুষ করেছেন, এককাপ চাও সে করতে পারে না। সে নাকি রোজগার করে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। আমিও তো মা, চাকরি করেও রান্না বান্না বাজার দোকান সব করি। শোভনা দেবী বললেন, বাপরে! মুখে খই ফুটছে যেন। একসময় আমিওতো সব সংসারের কাজ একা হাতে করতাম। তোমার শ্বশুরের গায়ে আঁচ লাগতে দিতাম না। এই কথা শুনে মিলি বলল,করতেন কেন? তাছাড়া আপনাদের যুগ আলাদা ছিল।কিন্তু এখনকার যুগ আলাদা। প্রাচীন ধ্যানধারণা ত্যাগ করুন। ছেলে মেয়ের কাজের বিভেদটা আর করবেন না।


সুতনু এতক্ষণ দুজনের কথা শুনছিল। পরিবেশটা কে হালকা করার জন্য বলল,এবার থেকে আমি চা করা শিখব। এখন চুপ কর।


মিলি বলল, শুধু চা নয় একটু আধটু কাজ চালানোর মত রান্নাও তোমাকে শিখতে হবে।কারণ কখন্ কি কাজ প্রয়োজনে লাগে তা বলা যায় না। সুতনু বলল, তাই হবে। আমি মাঝেমাঝে ফিল করি ব্যাপারটা।শোভনা দেবী ছেলের মুখে অন্য কথা আশা করেছিলেন,আশাহত হয়ে মুখটা বেজার করে আর কোনো কথা না বলে ওখান থেকে চলে গেলেন।




Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract