মোহ#
মোহ#
"লাবণি, বলি জলখাবারটা কি পাব সোনা, দশ টা যে বেজে গেল। পেটে ছুঁচোর ডন মারছে যে। রেডি আছে, "এই ছবিটা আপডেট করেই দিচ্ছি গো।"
এই হচ্ছে আমার বউ লাবণি। ও ইদানীং একটা জিনিসের ভীষণ মোহে পরে গেছে। সেটা হচ্ছে ফেসবুকের মোহ। এই মোহটা ওর আগে ছিল না। যবে থেকে স্মার্ট ফোন হাতে এসেছে, এবং ফেসবুকের একাউন্ট খোলার পর থেকেই যেন ওর ফোনের প্রতি আসক্তিটা বেড়ে গেছে। সব থেকে বড় নেশা হচ্ছে দুদিন অন্তর অন্তর ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করা।নারী পুরুষ মিলিয়ে ভার্চুয়াল ফ্রেন্ডের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। অবশ্য শুধু ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড বললে ভুল হবে, নিজের বন্ধু, আত্মীরাও ওর ফ্রেন্ড লিস্টের মধ্যে পরে। সব চেয়ে বড় কথা আমার পরে ফেসবুক খুললো, আমার এখনো বন্ধু সংখ্যা তিনশোও ক্রশ করে নি। লাবণি তো বলে ও যেচে কারোকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় না। ও নাকি বেছে বেছে ফ্রেন্ডদের টাইম লাইন দেখে রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করে। যে সব পুরুষ বন্ধুরা তাকে চ্যাটে বেশী বিরক্ত করে তাদের নাকি সে ব্লক করে দেয়। তাতেও লাবণির এত বন্ধু। যাই হোক ওসব প্রসঙ্গে না গিয়ে লাবণির আসল আসক্তির কথা বলি। সেটা অবশ্য আগেই বলেছি। এখন বিস্তারিতভাবে বলছি -
লাবণি সুশ্রী। মুখটা বেশ মিষ্টি। তবে ডানাকাটা পরী নয়। রোজ দেখি সেজেগুজে কোথাও যাওয়ার আগেই একটা সেল্ফি তুলে নিল। তারপর সঙ্গে সঙ্গে ছবিটা ফেসবুকে প্রোফাইল পিকচার হিসাবে আপডেট করে ফেলল। আমি রাত্রি বেলায় ফেসবুক খুলে দেখি লাবণির প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ। আর ছবি গুলো ওর এত ফর্সা আর মুখের চামড়াটাও এত ফ্ল লেস হয় কি করে কে জানে,একেবারে সিনেমার হিরোইন দের মত। ও তো এত ফর্সা নয়। হিরোইনরা না অনেক মেকাপ করে। লাবণি তো সেটা না করেই ছবি তোলে। যাইহোক দেখলাম তিনশোটা লাইক,একশোটা কমেন্টস । কমেন্টসগুলো বলছি, অসাধারণ, অপূর্ব, কলেজের বন্ধুর কাছ থেকে কমেন্ট -দিন দিন সুন্দরী হচ্ছিস, অপরূপা, কে আবার কাব্যি করে ওর সৌন্দর্যের বর্ণনা করেছে।সেটা আমার ঠিক মনে নেই। আমাকেও লাইক কমেন্ট দিতে হয়, তা না হলে লাবণির মুখ ভার হয়ে যায়।
আমি একদিন লাবণিকে জিজ্ঞাসা করলাম, লাবণি তোমার প্রোফাইল পিকচারগুলোয় তোমাকে এত ফর্সা লাগে কেন,না মানে তুমি সুন্দরী ঠিকই কিন্তু ছবির মত অতটাও ----
আমাকে কথা শেষ করতে হল না,তার মধ্যেই লাবণি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে বলল, জানি তো তোমার হিংসা হচ্ছে আমার অতগুলো এডমায়ারার দেখে। তোমাকে আমি এখনি ব্লক করে দেব। মনে মনে ভাবলাম "হায়রে! যে ফোনটা কিনে দিল, যে ফেসবুকের একাউন্ট খুলে দিল, তার কি দুর্ভাগ্য,বউ তাকে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে ব্লক করে দেবে বলছে।" গতিক মন্দ দেখে লাবণিকে একটু আদর করে কথাটা ঘুরিয়ে দিতেই ওর রাগ নিমিষে গলে জল হয়ে গেল। বড্ড সরল বউ আমার, নিজেই বলল, "সিক্রেট মশাই, তবে বলছি তোমাকে, ক্যামেরায় বিউটিপ্লাস অফসানটা আছে। সেটাতে ফর্সা লাগে, মুখের স্কিনটা ফ্ল লেস লাগে, আর এজটাও কেমন যেন কম লাগে। সেই কারণেই তো সেল্ফি তোলা, আর তা ফেসবুকে পোস্ট করা নেশার মত হয়ে গেছে। জানি গো আমাকে ছবির মত অত সুন্দরও দেখতে নয়, তবুও বন্ধুদের কাছে আমার রপের প্রশংসা পাব বলে দুদিন অন্তর প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করাটা আমার একটা মোহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে আগে তো আমার রূপ নিয়ে কেউ এত কিছু বলেনি।"
লাবণির অকপট স্বীকারোক্তিতে আমি অবাক হয়ে গেলাম। ভাবলাম আমার বউটা এত সরল। আমি লাবণিকে জড়িয়ে ধরে বললাম বেশ কর। মনে মনে ভাবলাম সময়ের সাথে এই মোহটা একদিন কেটে যাবে। সুতরাং সংসারের প্রতি সম্পূর্ণ কর্তব্য করে এই নিয়ে যদি ও সুখ পায় পাক না,তাতে কোনো ক্ষতি নেই।
