Tanuchhaya Mukherjee

Crime Others

4  

Tanuchhaya Mukherjee

Crime Others

ধর্মের কল বাতাসে নড়ে

ধর্মের কল বাতাসে নড়ে

5 mins
290


আর সুছন্দাকে অর্ণবের সহ্য হচ্ছে না। দশ বছর ধরে সুগারে ভুগছে। ইনসুলিন নেয়। তার ওপর হাই প্রেসার। একটার পর একটা অসুখে ভুগে চলেছে। আজ জ্বর, কাল পেটের ইনফেক্সন। অণর্ব ওকে নিয়ে যেন জেরবার হয়ে যাচ্ছে। আর তার ভালো লাগছে না। ভালো লাগবেই বা কি করে? কি তার বয়স? কিন্তু সুছন্দা রোগের কারণে ওকে শারীরিকভাবে সন্তুষ্ট রাখতে পারে না। সুগারে ভুগে ভুগে চেহারার যৌলুশটাও কমে গেছে সুছন্দার। যত না বয়স তার চেয়ে বয়সের একটা ছাপ এসে গেছে। শরীরটা শীর্ণ হয়ে গেছে। ওষুধের সাইড এফেক্টে চুলগুলো সব প্রায় সাদা। অর্ণব কত বলে চুলে একটু কালার করার জন্য, কিন্তু সুছন্দার শরীরের জন্য সেটা করতে ভালো লাগেনা। তাছাড়া সুছন্দার একটুতেই ঠাণ্ডা লেগে যায় সেটা কি অর্ণব বোঝে না? কালার করলে মাথা ভিজে যায়।ভিজে মাথায় থাকতে গিয়ে এক বিপত্তি হয়, সুছন্দার সর্দি কাশি শুরু হয়ে যায়।  অথচ অর্ণব কেমন নিজেকে ফিটফাট রেখে চলেছে। পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হল তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই। সুছন্দা চুয়াল্লিশেই বৃদ্ধা। অথচ এই সুছন্দার রূপে মুগ্ধ হয়ে একদিন অর্ণব ওর প্রেমে পড়েছিল।আজ সুছন্দার অসুস্থতার কারণে শীর্ণকায় শরীরটা আর অর্ণবকে আকর্ষণ করেনা।


অর্ণবের এখন ফেসবুক থেকে নতুন বান্ধবী হয়েছে। ঋতুপর্ণা ডিভোর্সি। সুন্দরী। বিয়ের পরই নাকই তার ডিভোর্স হয়ে যায়। কোনো সন্তান নেই। চাকরি করে। আর বিয়ে করে নি। বাপের বাড়িতে মায়ের সাথে থাকে। অর্ণব প্রায় তার সাথে দেখা করে। প্রেমটা বেশ জমে উঠেছে। কিন্তু পথের একটাই কাঁটা সুছন্দা।সুছন্দার প্রতি ব্যবহার ক্রমশই অর্ণবের পাল্টে যাচ্ছে। সে যেন সুছন্দা কে সহ্যই করতে পারছে না। অফিস থেকে প্রায়দিন ঋতুপর্ণার সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরত। সুছন্দা বেশ বুঝতে পারত সে সংসারে ব্রাত্য হয়ে গেছে। তবুও একমাত্র ছেলে অভির মুখ চেয়ে তার বেঁচে থাকা। সুছন্দা ভাবত, "আজ আমার রূপ চলে গেছে বলে অর্ণবের ভালোবাসাও কি আমার থেকে চলে গেছে? কিন্তু কেন? শরীরটাই কি সব মনের ভালোবাসা বলে কিছু নেই। আমার জায়গায় যদি অর্ণব হত ওর প্রতি আমার ভালোবাসা একচুলও নষ্ট হত না।" রান্নার লোক খাকলেও কি রান্না হবে, অর্ণব কি ভালোবাসে, অভি কি ভালোবাসে সেই মত রান্না রান্নার লোককে ও নিজের হাতে শিখিয়েছে। বসে থেকে রান্নালোককে পরামর্শ দিয়ে করায়। অর্ণব অফিসে কি শার্ট পরে যাবে গুছিয়ে রাখে। অভিকে স্কুলের জন্য রেডি করে। মাঝে মাঝে তার শরীরটা কেমন যেন অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন যেন কিছু ভালোলাগেনা। চেহারাই বা এত কেন ভেঙে গেল ?এসব কথা সুছন্দা ভাবে। তবুও বাঁচার কি অদম্য ইচ্ছা সংসারটাকে আঁকড়ে রেখে।


একদিন সুছন্দার ডান হাতের বুড়ো অাঙুলটা কেটে গেল। নিজের ইনসুলিন সে নিজেই নিত। অর্ণবকে বলল ইনসুলিনটা দিয়ে দিতে। অর্ণবরের হাতে সুবর্ণ সুযোগ এসে গেল সুছন্দাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার। অর্ণব সুযোগ খুঁজছিল। অর্ণব দিনের শুরু করত সুছন্দার মৃত্যু কামনা করে। সে যে ঋতুপর্ণার সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছে। ঋতুপর্ণা বারবার সুছন্দাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবার জন্য অর্ণবকে চাপ দিতে থাকে। সুছন্দার সঙ্গে অর্ণবের এক বাড়ির ছাদের তলায় প্রতিদিন কাটানো টা হল সাপের ছুঁচো গেলা অবস্থার মত।


অর্ণব আজ সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে। অভি ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়ে। রাতে ডিনারের আগে ইনসুলিনের ডোজ টা ইচ্ছা করে অনেকটাই সুছন্দার বাড়িয়ে দিল অর্ণব। সুছন্দা প্রচণ্ড ঘামতে লাগল। সে বুঝতে পারছে অর্ণব তাকে নিশ্চই সরিয়ে ফেলার জন্য এই জঘন্য কাজটা করল।কেননা ইদানীং অর্ণবের ব্যবহারে সে তার মনেভাব বুঝতে পেরেছিল। অর্ণবের ফোনে অর্ণবের অনুপস্থিতিতে ঋতুপর্ণার সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠ ছবি দেখেথিল। ঘৃণায় তার মন ভরে গেল। চোখের সামনে অন্ধকার দেখতে লাগল। যাহোক করে হাত বাড়িয়ে খাটের সামনে টেবিলে রাখা গ্লুকোজটা নিয়ে খেতে গেল, অর্ণব ওর হাত থেকে কেড়ে নিল। সুগার ফল করে, হার্ট ব্লক হয়ে সুছন্দা সাধের সংসার ছেড়ে, একমাত্র ছেলে অভিকে ছেড়ে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পৃথিবী থেকে বিদায় নিল।অর্ণব নিজের স্ত্রীকে খুন করার জন্য কোনো শাস্তি পেল না। ডাক্তারকে টাকা খাইয়ে ডেড সার্টিফিকেট টা আদায় করল। দীর্ঘ দিনের সুগার তার ওপরে হাই প্রেশার হার্ট এটাকে মৃত্যু। সময় দিল না। হতেই পারে।


আর একটা বাধা অভিকে বোডিং এ দিতে চেয়েছিল ,কিন্তু অভির দিদা, মামারা দুই এ দুই এ চার যোগফল টা মিলিয়ে নিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারলেও সুছন্দার মৃত্যুর পর অভিকে সেই যে নিজেদের কাছে এনে রেখেছিল, আর তার বাবা আর সৎ মায়ের কাছে পাঠায় নি। অভিও অবশ্য যেতে চাই নি। বাচ্চাদের মন যে সব বোঝে।


তিন বছর ধরে অর্ণব ও ঋতুপর্ণা প্রেমের জোয়ারে গা ভাসিয়ে সুখে সংসার করে।বয়সে অনেকটাই ছোটো অর্ণবের থেকে ঋতুপর্ণা। প্রায় বারো বছর হবে। ঋতুপর্ণার লাস্যময়ী শরীরী উন্মত্ততায় অর্ণব যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলত। তিন বছর যে কোথা দিয়ে কেটে গেল। এরপর অর্ণব যতবারই সন্তানের কথা বলত ঋতুপর্ণা কিছুতেই মা হতে চাইত না। কেমন যেন এড়িয়ে যেত। অর্ণবের তখন অভির কথা মনে পড়ত। বড় দেখতে ইচ্ছা করত। হাজার হোক নিজের রক্ত। কিন্তু সে যে পাপ করেছে হয়ত অভিকে কোনো দিনই সে দেখতে পাবেনা।



কয়েকদিন ধরেই অর্ণবের কেমন ঋতুপর্ণা কে সন্দেহ হতে লাগল। অর্ণব কে কেমন যেন সে গ্রাহ্য করেনা। রাত করে বাড়ি ফেরে। ফোনে সারাক্ষণ কার সাথে কথা বলে। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই বলে, "মায়ের সাথে কথা বলছি।"অর্ণব বেশ বুঝতে পারে ঋতুপর্ণা পুরো মিথ্যা কথা বলছে। অর্ণবের যেন মনে হয়, ওর হাই প্রোফাইলের চাকরির লোভে ঋতুপর্ণা ওকে ভালোবেসেছিল। তা না হলে এত বয়সের ডিফারেন্স তার ওপর বিবাহিত, সব জেনে অর্ণবকে ভালোবাসতে রাজি হলই বা কেন? সামান্য প্রাইভেট ফার্মে চাকরি করা ডিভোর্সি কাছে এর চেয়ে বেটার অফসান কিছু ছিল না হয়ত। অর্ণবের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্সে নিজেকে নমিনি করে নিয়েছে। কারণ মামারা চায় নি তাদের দিদিকে যে খুন করেছে সেই পাপের টাকা অভি পাক।বেশ কিছুদিন ধরে অর্ণব সর্দি কাশিতে ভুগছিল। তারপর জ্বর। নিউমোনিয়া ধরা পড়ল। নিউমোনিয়া থেকে উদ্ধার পেলেও। অর্ণবের লান্সটার খুব ক্ষতি হয়। হাঁপানি ধরে গেল। প্রায় শ্বাসকষ্ট হত। এরজন্য তাকে ইনহেলার নিতে হত।


একদিন অর্ণব একইভাবে সুছন্দা যেমন যেনে ছিল তার সাথে ঋতুপর্ণার সম্পর্কটা সেও জানতে পারল ।একদিন রবিবার ঋতুপর্ণা ভুলবশত ফোনটা ফেলে বাথরুমে ঢুকেছিল। অর্ণব এমনিতেই ওকে সন্দেহ করত। সন্দেহের বশে ফোনটা নিয়ে একটি পুরুষের সাথে ঋতুপর্ণার অন্তরঙ্গ ছবি দেখল। ঋতুপর্ণা বেরোতে প্রচণ্ড অশান্তি শুরু হল। সুছন্দা কিন্তু সব জেনেও কিছু অর্ণবকে বলেনি, তাও তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।


কথা কাটাকাটি শুরু হল। ঋতুপর্ণা সরাসরি জানাল তার মত বুড়ো হেঁপো রুগীর সাথে ঘর করা সম্ভব নয়। অর্ণব উত্তেজিত হয়ে বলল, "তা তো বলবেই, তোমার তো তো সব গুছিয়ে নেওয়া হয়ে গেছে। লোভী মেয়েছেলে, নোংরা মেয়েছেলে, পুরুষদের শরীরী মায়ার জালে জড়াও। শ্বাসটান শুরু হল অর্ণবের। এখনি মনে হচ্ছে দমটা বেড়িয়ে আসবে। ঋতুপর্ণাকে ইশারায় বলল, ইনহেলারটা দিতে। ঋতুপর্ণা দিল না।আজ ধর্মের কল বাতাসে নড়ল। অর্ণব হাঁপাতে হাঁপাতে মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ল।



ঋতুপর্ণার শাস্তি হয়ত এইভাবে একদিন হবে। পাপ করলে এক দিন না একদিন তার ফল ভোগ করতেই হবে।


তনুচ্ছায়া মুখার্জী -


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime