Rima Goswami

Comedy Romance

3  

Rima Goswami

Comedy Romance

চারুলতা

চারুলতা

5 mins
224


"বাইরে ভীষণ বৃষ্টি , ছাটে ভিজে একাকার সে

কে সে ! সে আমাদের চারুলতা ।

ওমা ! তাকে ভিজতে দিচ্ছ কেন ?

বৃষ্টি তার যে বড্ড প্রিয় তাই ।"


চারুলতা আমাদের শান্তশিষ্ট লেজ বিশিষ্ট বান্ধবী । তাকে নিয়ে স্কুল লাইফে চলেছে বেদম ইয়ার্কি ঠাট্টা । তারপর কলেজে সবাই যে যার মত ভাগ হয়ে গেল । থার্ড ইয়ার আচমকা দেখি চারু বিয়ে করে ফেলেছে । আর পরীক্ষা মাথায় নিয়ে বিয়ের ঝড় সামলে বেশ আসছে ও রানীসায়রের গার্লস কলেজে পরীক্ষা দিতে । জিজ্ঞাসা করলাম কি রে বলা নেই কওয়া নেই ! স্বভাব মত চারু মিষ্টি করে হাসলো কেবল । কোন উত্তর সে দিলো না । আমরা ও সরে যেতেই খিল্লি আরম্ভ করলাম । তারপর কেটে গেছে বারোটা বছর । ভুলেই গিয়েছিলাম চারুলতাকে । একদিন টিভিতে দেখি এক স্বনামধন্য লেখিকার ইন্টারভিউ চলছে । টিভির রিমোট ঘুরিয়ে দিতাম চোখ আটকে গেল লেখিকাকে দেখে । আরে এতো সেই ক্যাবলা চারু ! বউকে ডাকলাম বললাম শিগগিরই এসো আমার বন্ধুকে দেখো নামকরা লেখিকা । বউ কটমট করে তাকালো আমার দিকে , যেন ভস্ম করে দেবে এখনই । বললো তোমার মত মামদবাজ আবার লেখিকার বন্ধু হয় নাকি ? গুল দেবার জায়গা পাওনা ? ওনাকে আমি কবে থেকে ফলো করছি ওনার অফিসিয়াল একাউন্টে কই কোনদিন তো শুনিনি ওনার কথা তোমার কাছে । আমরাও ততক্ষনে জেদ চেপে গেছে । আমি দুম দুম করে হেঁটে গেলাম মায়ের কাছে । মা পানে দোক্তা দিচ্ছিল । আমাকে দেখেই ফোকলা মুখে হেসে বললো , বাবু পান খাবি ?


আমি বললাম ছোটবেলার জন্মদিনের ছবি গুলো কৈ মা ? মায়ের বয়স হয়েছে অর্ধেক কথা ভুলে যায় । মা মাথা চুলকে বললো তোর জন্মদিন ! ছবি ! হ্যাঁ ছিল তো বৌমাকে জিজ্ঞাসা কর । আমি বললাম না মা তোমার ট্যাঙ্কে আছে হয়ত দেখো । মা আমাকে তার আঁচল থেকে চাবিটা খুলে হাতে দিয়ে বললো নিজে দেখে নিতে । আমি তখন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধর প্রস্তুতি নিচ্ছি মনে মনে । বিবি কো মজা চাখানা হে ভাব আমার । মায়ের প্যান্ডোরার বক্স খুলে দেখি কি নেই তাতে ? থরে থরে আমসত্ত্ব , শুকনো খেজুর আবার ওতেই সাবান , শ্যাম্পুর পাতা , শাড়ি , আয়না , চিরুনি । এ সব কে রাখে ট্রাঙ্কে ! আমি আপাতত মায়ের সঙ্গে বচসা করতে রাজি না তাই তাড়াতাড়ি ওসব সরিয়ে নিজের খান্না তল্লাশি চালানো স্টার্ট করলাম । পেলুম আমার জন্মদিনের সেই পুরোনো এলবাম । তিনটে ছোট ছোট এলবাম তাতে আমার কয়েক বছরের জন্মদিন উৎযাপনের ছবি । প্রতিটা উল্টে সেই এক ছবি তাতে আমি একটা সেপলেস বিচ্ছিরি কেক কাটছি , চারদিকে আঙুরের সাইজের বেলুন লাগানো । সবাই মিলে খাচ্ছি বন্ধুরা । সেই চিরদিনের এভারগ্রীন মেনু কুকুরের কানের ন্যায় লুচি , ঘুগনি , মিষ্টি আর পায়েস । এগুলো বউ দেখলেই বলবে দুচার কথা কিন্তু উপায় নেই আপাতত আমি দেখাতে চাই এই মেয়েটিকে যে আমার পাশে ক্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছে । তার নামই চারুলতা । বয়স বেড়ে গেছে তবুও মুখটি সেই এক আছে । ছবি নিয়ে গেলাম বউয়ের কাছে প্রমান হাতে তাই বিজয়ের হাসি । বউকে দেখলাম আমার এই চাড্ডি ফ্রেন্ড আজকের লেখিকা ম্যাডাম । বউ কিন্তু একটুও টসকালো না । সে তাড়াতাড়ি বললো , এত ভালো বন্ধু থাকতে কাদের সঙ্গে মেলামেশা করো তুমি গো ? খালি খৈনি আর বিড়িখোর বন্ধু তোমার । চলো ঠাকুরঝির সঙ্গে দেখা করে আসি । আমি থতমত খেয়ে বললাম কে ঠাকুরঝি ? বউ ক্যাজুয়াল হয়েই বললো ওই যে চারু গো ।


আমি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করতে নামছিলাম নিজেই যুদ্ধে বন্দি হয়ে গেলাম । যাকে সারাজীবন খিল্লি দিলাম তাকে এখন গিয়ে যদি বলি যে ওরে চারু আমি তোর বন্ধু মদন রে ... ও দেবে কেন আমাকে পাত্তা ? বউকে বললাম না সম্ভব নয় । ও বললো তবে না হয় কিচেন ধর্মঘট চলুক । পড়লাম মহা ফ্যাসাদে ! আমি না হয় বাইরে হোটেলে খেয়ে বাঁচব কিন্তু আমার ফোকলা মা ? গম্ভীর গলায় বললাম দেখছি । অনেক গুগুল করে দেখলাম চারুর উত্থান গাথা । আমরা যখন ওকে নিয়ে খিল্লি দিতাম ও প্রকৃতি দেখত , আমরা যখন ওকে খেপি বা বুচকি বলে খেপাতাম ও মনে মনে কবিতা লিখত । শৈশব থেকেই কবি স্বত্বা ওর মধ্যে ছিল তাই হয়ত ও ছিল একটু ইন্ট্রোভাট । কলেজে পড়তে পড়তে বিয়ে হবার পরে স্বামীর প্রেরণা ওকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে । কালকের বোকা চারুলতা আজ স্মার্ট বোল্ড লেখিকা । তার লম্বা দুটো বিনুনি এখন স্ট্রেটনিং করানো পনিটেল । আগে যে বান্ধবীরা গালে রুজ ঘষে সুন্দরী ছিল আজ তাদের চোখের কোনে চর্বি জমেছে আর ওই মেয়েটা যার নাম চারু তার লাবণ্য যেন কবিগুরুর চারুলতার মতোই । আজকের যে ইন্টারভিউতে ওকে আবিষ্কার করেছিলাম সেটা তো দেখা হয়নি ! আমি নিজের ইন্টারনেট সার্ফিং করে সেই ইন্টারভিউ খুলে দেখতে শুরু করলাম । পিছনে দেখি বউ ও দাঁড়িয়ে আছে ইন্টারভিউটা দেখতে ।

সাংবাদিক চারুকে প্রশ্ন করছে মুক্তর মত হাসি দিয়ে চারু উত্তর দিচ্ছে ....

সাংবাদিক : ম্যাম আপনার লেখার নিয়ে তো বলার কিছুই নেই । আজ কিছু গুগলি প্রশ্ন করবো । আপনি সঙ্গে সঙ্গে মাথায় যা আসবে উত্তর দেবেন । আপনার সমন্ধে এই পাঠককুলের সকলে উৎসাহিত ।

চারু : কেন নয় দেবদত্ত ? বলো আমি এই টক শোতে যখন এসেছি উত্তর তো দেব ডেফিনেটলি ।

সাংবাদিক : আপনার প্রিয় লেখক

চারু : নীললোহিত

সাংবাদিক : আপনার এক হারানো প্রেম

চারু : মদন ... আমার স্কুল ফ্রেন্ড

সাংবাদিক : সব থেকে ইম্পর্টেন্ট মানুষ

চারু : স্বামী বলা উচিত কারণ সে ছিল বলেই স্যঃ আমি এখানে কিন্তু উত্তরটা আসলে বাবা ।

সাংবাদিক : এখন কি শিখতে হয় আপনাকে লেখার জন্য ?

চারু : স্লাগ ল্যাঙ্গুয়েজ বা সহজ কথায় গালাগালি ।

সাংবাদিক : আপনার শখ , ফেভারিট জব

চারু : সেক্স

সাংবাদিক বিষম খেল যেন একটু । বউ আগেই খেয়েছে । আমিও খেয়েছি খুব বিষম । দরকার নেই ইন্টারভিউর ভিডিও বন্ধ করে দিলাম । ঘর সেই বউ নিয়েই যখন করতে হবে আর অশান্তি বাড়িয়ে কাজ নেই । কথায় আছে না কপালে নেইকো ঘি , ঠকঠকালে হবে কি ?

চারুএ প্রেম আমি হয়েও হতে পারলাম না ?

বউ লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লো আর বলল , দরকার নেই চারুলতার সাথে দেখা করার । বড়োই নাককাটা মেয়ে দেখছি ।

আমি মনে মনে হাসলাম ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy