🍀বরাহ- অবতার🌍✍ ঈপ্সিতা দেব

  বরাহ- অবতার

হাজার হাজার বছর আগের কথা ,সময়টা সঠিকভাবে কেউ বলতে পারে না। তাই সঠিকভাবে যুগে নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না ।ঘটনাটি হল হিরণ্যাক্ষ নামে এক দৈত‍্য রসাতলে রাজত্ব করত। সে পৃথিবীকে হরণ করে রসাতলে নিয়ে গেল ।এই পৃথিবীর হরণের ফলে পৃথিবীতে ঘোরতর দুর্দ্দিন উপস্থিত হলো। ব্রহ্মা পৃথিবীর সৃষ্টি এই সুন্দর পৃথিবীর শোভা নষ্ট হতে লাগল। সমস্ত জীব জন্তুরা অনাহারে মারা যেতে শুরু করল ।এই চরম অবস্থায় পৃথিবীতে আবারো মহাপ্রলয় এর সূচনা হলো। পৃথিবীর অবশিষ্টটুকু শ্রী মহাপ্রলয় প্রচন্ড কাঁপুনি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল। চারিদিকে ঘোর অন্ধকার এল - আর সেই ভীষণ অন্ধকারের মধ্যে প্রচন্ড জলস্রোতে চারিদিক প্লাবিত হলো।এমন অবস্থায় ব্রহ্মা দেখলেন তার সৃষ্টি ধ্বংসপ্রাপ্ত হতে চলেছে। চারিদিকে ঘন অন্ধকার ও আলো ব্রহ্মার সৃষ্ট জগতে জীবজন্তু বন-জঙ্গল ফুল ফল প্রায় নিঃশেষ। ব্রহ্মা নিজ সৃষ্ট জগতের এই সর্বনাশ দেখে বুঝলেন ধ্বংসের পরিস্থিতি আসন্ন। তাই তিনি সৃষ্টি করার জন্য পুনরায় ধ্যানস্থ হলেন; ধ্যান অবস্থায় মন থেকে একটি নর-নারীর সৃষ্টি হল।মন থেকে জন্ম হলে বলে নাম রাখা হলো মনু। কিন্তু ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু থেকে মানবের সৃষ্টি হলো।কিন্তু এখন এই নর-নারী থাকবে কোথায় ? চারিদিকে শুধু জলরাশি কোথাও একটু স্থল নেই, ব্রহ্মা পড়লেন মহাঝামেলায়! কিভাবে পৃথিবীকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে ।রসাতল থেকে পৃথিবীকে উদ্ধার করা না গেলে সব ধ্বংস হয়ে যাবে।কিন্তু কে সেই কাজ করবে?সেইজন্যে তিনি ধ‍্যানমগ্ন হলেন। 

ধ‍্যানমগ্ন অবস্থায় তিনি দেখেন একমাত্র নারায়ণ শক্তিশালী,তিনি পৃথিবীকে রসাতল থেকে উদ্ধার করে আনতে পারবেন। ব্রহ্মদেব পুনরায় ধ‍্যান মগ্ন হলেন।তখন ব্রহ্মদেবের নাসিকার ছিদ্র থেকে ক্ষুদ্র বরাহের আবির্ভাব হলো।ক্ষণকালের মধ্যে সেই বরাহ প্রকান্ড আকার ধারন করল।

সেই বরাহের পায়ের আঘাতে আকাশে বিদ্যুৎ চমকাতে শুরু করলো।সঙ্গে সেই বরাহ দীর্ঘ দন্ত দ্বারা আকাশকে ক্ষতবিক্ষত করল,ঠিক যেমন রাখল লাঙ্গলের ফলার দ্বারা মাটি ক্ষতবিক্ষত হয়ে থাকে।চতুর্ভূজ এই বড় মূর্তি দেখে দেবতা পুষ্প বৃষ্টি করতে শুরু করলেন।

ব্রহ্মদেব ও স্পষ্ট বুঝলেন ভগবান বিষ্ণুই এই চতুর্ভূজ রূপ ধারন করেছেন।এই মূর্তি ধারণ করে জীবজগতকে রক্ষা করতে এসেছেন।এই ভাবেই নারায়ণ বারংবার আবির্ভূত হয়ে অধর্মের নাশ করে।

কৃষ্ণবর্ণের চতুর্ভুজধারণকারী বরাহের অকস্মাৎ দৈহিক পরিবর্তনে ব্রহ্মা সহ সকল দেবগণ মগ্ন হয়ে দেখলেন।এরপর সবাই প্রণাম করলেন।

আর এদিকে ক্রোধিত হয়ে বরাহ তার তীক্ষ্ম দাঁত দুটো সমুদ্রের জলে প্রবিষ্ট করে সমুদ্রের জলকে দুধারে ভাগ করে সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করলেন।এরপরতিনি রসাতলে পৌঁছে গেলেন; হিরণাক্ষের সঙ্গে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করে পৃথিবীকে রক্ষা করাই একমাত্র লক্ষ্য।

এদিকে পৃথিবী মাতা বরাহরূপী প্রভুর রূপ দেখে ভীত হলে পরমেশ্বর তাকে নিজের পরিচয় দিয়ে অভয় দিলেন।

বহুরূপী ভগবান বিষ্ণুর বন্দিনী পৃথিবীকে বললেন -" তুমি ভীত হয়েও না!তুমি নিশ্চিন্ত হও। তিনি আরো জানান যে -"রসাতল থেকে পৃথিবীরকে উদ্ধার করার জন্যেই এই বরাহ অবতার গ্রহণ করেছেন।।"

দুরাত্মা হিরণাক্ষের কবল থেকে আর রক্ষা করবার জন্যই আমি বরাহ মূর্তি ধারণ করেছি।তাই দেবী তুমি আমার দাঁতের উপর বসে থাকো।অত্যাচার অনাচার ও অবিচারের দ্বারা পৃথিবী যখন নিপীড়িত হবে তখনই আমি ন‍্যায় ও সত্যের প্রতিষ্ঠা করার জন্য পৃথিবীতে আসবো এখন তুমি নিশ্চিন্ত হও।

অভয় বাক‍্য শোনার পর পৃথিবী মাতা তখন নিশ্চিন্ত হয়ে পরমেশ্বরের চরণে নমস্কার করলেন। বরাহ রূপী পরমেশ্বর ভগবানের আশ্বাস পেয়ে পৃথিবী তাকে প্রণাম করে একটি দাঁতের উপর উঠে বসলেন।

এদিকে পৃথিবীকে বরাহের সঙ্গে যেতে দেখে হিরণাক্ষ প্রচন্ড রেগে গেলেন।হিরণাক্ষ আক্রমণ করলেন কিন্তু বরাহের আঘাতে হিরণাক্ষের দেহ খন্ড বিখন্ড হয়ে গেল ।

তখন পৃথিবী হাতজোড় করে ভগবান কে বললেন, ভগবান হিরণাক্ষের কবল থেকে আমাকে মুক্ত করার জন্যে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি অসীম করুণাময়,এই সংসারে আপনার মতো কেউ নেই।আপনি আমার প্রতি যে করুণা দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছেন তার জন্যে অসংখ্য ধন্যবাদ। দয়া করে আমাকে আপনার কিছু সেবা করার সুযোগ দিন।এই ভাবে আপনার সেবা করে আমাকে ধন্য করুন।

ভগবান পৃথিবীর কথায় রাজি হলেন। পৃথিবী এই ভাবে কিছুকাল বরাহরূপী ভগবানকে সেবা করলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে করেন কিছুকাল বাস করে।তখন বহুরূপী বিষ্ণুর অংশ পৃথিবীর এক পৃথিবীর পুত্রের জন্ম হলো।তার নাম রাখা হয় নরকাসুর ।এই নরকাসুরের মতো শ্রেষ্ঠ কেউ ছিল না। তার সমকক্ষ যোদ্ধার হাতে কেবলমাত্র তার মৃত্যু হবে।যদিও এই ব‍্যাপারটা নরকাসুর জানতেন না। একমাত্র তাঁর সমকক্ষ যোদ্ধা কেবল তার পিতা কিংবা বিষ্ণুর অবতার হাতেই তার মৃত্যু হবে।

এই ভাবে দ্রাপর যুগে তা কিন্তু তার পিতা হাতে মৃত্যু হয়।কিন্তু নরকাসুর মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সেটা জানতে পারেনি কারণ তার জন্মের পরেই পৃথিবী কে নিয়ে চলে আসেন। ভগবান রসাতল ছেড়ে চলে আসে।

 ভগবান পৃথিবীকে নিয়ে কিছুকাল বাস করার পর আবার সাগর জল ভেদ করে সমুদ্রের উপর ভেসে উঠলো। তার ফলে পৃথিবীতে অন্ধকার কেটে গেল। এ পৃথিবী আবার ফলে-ফুলে জীবজন্তু তে ভরে উঠলো ।অতল সমুদ্রের থেকে পৃথিবীতে উঠতে দেখে দেবতার জয় ধ্বনি করল ।সে আদিম মানব দম্পতিকে আদেশ করলেন পৃথিবীতে বাস করতে।এই আদি মানব দম্পতি বর্তমানে মানবসমাজের সৃষ্টি করেছিলেন।

বরাহ অবতারের প্রাণিজগতের তৃতীয় স্তর হাজার হাজার বছর এই ভাবে চলে গেল। সমুদ্রের তলদেশে কোন কোন স্থানে পড়ে পড়ে জমাট বেধে উঁচু হয়ে উঠতে লাগলো।সূর্যের প্রচণ্ড তাপে সমুদ্রের জল শোষিত হয়ে ক্রমে ক্রমে সেই পলি পড়ে সেখান থেকে বের হয়ে পড়ল আজকের মাটির পৃথিবী ।এইভাবে উদ্ভব হল মাটির পৃথিবীর। ভাবে আবার হাজার হাজার বছর চলে গেল। একদিন দেখা গেল এই স্থল প্রদেশের জলে । এক প্রাণী বিচরণ করছে ।এর পূর্ব হতে কিছু শুনি চারটা পা, পেছনে একটা লেজ আছে। সারা শরীরে লোমে ঢাকা প্রাণিজগতের প্রাণপুরুষ উপযুক্ত ব্যবহারের জন্যই একটি প্রসারিত দন্ত আছে। এই প্রাণী বরাহ নামে পরিচিত। পূর্বের মত জলের নিচে এই প্রাণী বাস করতে পারবে না।এই প্রানী স্থলে বিচরণ করে। 

এইভাবে স্থলের চারপেয় প্রানীর উদ্ভব হলো।

       🌸সমাপ্ত🌸

   

     সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ঈপ্সিতা দেব

    

     (রেটিং ও রিভিউ দিয়ে মতামত জানান।

     গল্পটি ভালো লাগলে নিজের কালেকশনে রাখুন ও শেয়ার করুন।