STORYMIRROR

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Crime

3  

Apurba Kr Chakrabarty

Tragedy Crime

বংশ রক্ষা১পর্ব

বংশ রক্ষা১পর্ব

17 mins
365

 বকুল ডাঙ্গা বেশ বড় গ্রাম , সদর বর্ধমান থেকে কাটোয়া বরং কাছে। উগ্রক্ষত্রিয় মানুষের বাস বেশী। বাসুদেব দে ,ছোট চাষী। যেমন কৃপন তেমন পরিশ্রমী। বাপের চার বিঘা চাষ জমি ভাগ পেয়েছিল, এখন পৃথক হয়ে বিশ বছরে আরও পাঁচ বিঘা জমি কিনেছে এখন নয় বিঘা চাষ জমি। পনের বিঘা না করে সে ছাড়বে না।তা আগেই যদি মারা যায়,ওর আত্মা বোধহয় মুক্তি পাবে না।ভুত হয়ে ছেলেকে হয়ত বলবে তাপস পরিশ্রম কর আরও খাটাখাটিতে মন দে,জোত জমি পনের বিঘে অন্তত কর! তাপসের বয়স একুশ বাইশ, এক জোড়া গরুর নাঙ্গলের চাষ, নিজেদের জমি ন বিঘায় চাষ আবাদ শেষ হলে, পরের জমিতে নাঙ্গল ভাড়ায় খাটে।

বর্ষার সময় জলে ভিজে রোদে পুড়ে গায়ের রং কেমন তামাটে, কিন্ত গায়ের রং ছোট বেলায় বেশ ফর্সা ছিল। তাই শুধু নয়,রক্ত স্বল্পতার লক্ষ্যন তার স্পষ্ট তবু বাবা মায়ের নজর পড়ে না। গ্রামেরই মাঝের পাড়ার তার বড় বোন ঋনার বিয়ে হয়েছিল । বোন তার চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট।ষোল সতের বছর বয়সে বাবা তার বিয়ে দিয়েছিল গ্রামের ধনী বনেদী বাড়িতে,ভেবেছিল খুব জিতে গেছি। এমন বিয়ে আর কজন বাবা দিতে পারে!

ঋনার সেই কবে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বাড়ির কাজ কর্ম করত। পুরুষদের উচু সাইকেল খাটো ইজের আর ফ্রক পরে সিটে বসে,পাদানি বা প্যাটেল আলতো পায়ে ছোঁয়া লাগিয়ে চালিয়ে,ক্ষেতজমিতে কর্মরত তার বাপ দাদার জন্য দুপুরের সময় জল,খাবার, দিয়ে আসত।রোগাপাতলা দেহ, মুখোরা,দেখে মনে হত নিরীহ,ঋণা একটু দীর্ঘ, মুখ চোখ বেশ ভালো,ফর্সা তবে পুষ্টিকর খাবার অভাবে মলিন শীর্ন ,যৌবনে মেয়েলী গঠন তার বিয়ের সময়ও ঠিক পরিপূর্ণতা ছিল না।তার বিদ্যার দৌড় ফাইভ অবধি। তাপসের শিক্ষার গন্ডি একটু ভালো নাইনে বার দুই ফের মেরে সে গত পাঁচ বছর পড়াশোনা ছেড়ে বাবার সাথে চাষে লেগেছিল।

ঋনার শ্বশুর বাড়ি সচ্ছল বনেদী ঘর ।বাড়িতে চাষবাস থাকলেও,তার শ্বশুর স্বামীরা মাঠে যায় কম।জনমজুর কিষান দিয়ে কাজ সাড়ে। তার শ্বশুর নিতাই সামন্ত বেশ সৌখিন লোক। সেই পঞ্চাশ বাহান্ন সালে গ্রামের স্কুল থেকে ম্যাটিক পাশ করে কলকাতায় আই এ ভর্তি হয়েছিল। পাশ না করুক শহুরে আদব কায়দাটা সে ভোলেনি। বাংলা নয় ,ইংরেজী দৈনিক খবর কাগজ পড়ে।কখন পড়ে, কতক্ষণ পড়ে সেটাই প্রশ্ন! কেউ কেউ মজা করে বলে, নিতাই সামন্ত নাকি ইংরেজী পেপার উল্টো ধরে পড়ে। এটাই তার ফ্যাশন, কিছু বুঝুক আর না বুঝুক ইংরেজী পেপার পড়া সে যুগের কৌলিন্য, এটাই তার উদ্দেশ্য।

একটা হাস্কিং মিলও আছে, বানীতে চলত, ভালো চালু,বড় গ্রামে তখন একটাই হাস্কিং মিল। যাবতীয় গ্রামের চাষীবাসীদের ধান ভানাই হত। সকাল ছটা থেকে রাত দশটা অবধি।মাঝে তিনঘন্টা বন্ধ থাকত, দুপুরের খাবার সময়ে বিরতি। চারটে কর্মচারী কাজের চোটে হিমশিম খেতো। নিতাই ক্যাশে বসত। ইদানিং ছেলে ভানুরাম ক্যাশে বসে মাঝে মাঝেই বাবাকে সাহায্য করত।সে তাপসের বোন ঋনার স্বামী।

এই বাড়ির আসল মালকিন হল, ভানুর মা নারায়ণী। পাড়ার লোকে বলত স্বামী ছেলেকে সে নাকি শাড়ির আঁচলে ভরে ঘুরে বেড়ায়।তার মুখোরা স্বভাব, পাড়ার মানুষ ভয় পেতো। ধনীর ঘরের বৌ এখন গিন্নি, তার একটা বড় গুণ ছিল দান ধ্যান কর্তব্য,তবে সবার জন্য নয়, নিজের স্বার্থ থাকবে সে সব ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ, লোকে তাই বলত। তাপসের যখন রক্ত স্বল্পতার ভাব দেখা দিল, বৌমার দাদাকে তার বাড়িতে ডেকে বাড়ির গরুর দুধ ঘী, হাসের ডিম,পুকুরের টাটকা মাছ অনেক কিছু তাকে বাড়িতে বসিয়ে যত্ন করে জামাই আদরে খাওয়াতো।তখন ঋনার সবে বিয়ে হয়েছিল, তার পুত্র ভানুর সাথে।

বাসুদেব অস্বচ্ছল মেঠো চাষী, শিক্ষা দীক্ষা নেই,চাষ করে পিছু অবধি কাদা।মূর্খ আনকালচার বংশের মেয়ে ঋণা,সেই বৌমার বাবা মা দাদা সবাইকে এমন বনেদী সচ্ছল সৌখিন পরিবারের মালকিন,ছেলের মা হয়ে নারায়ণীর এত খাতির করে কেন! কেনই বা,এত গরীব ঘরের এক অশিক্ষিত কম বয়সের মেয়ের সাথে তার একমাত্র ছেলের বিয়ে দিল! গ্রামের মানুষের মনে এ প্রশ্ন কিন্ত আসত না। ধুরিবাজ নায়ায়নী অনেক মেপেই খেলার দান ফেলেছিল।তার দুই কন্যার বিবাহ হয়েছিল বেশ ভালো ঘরে।সচ্ছল ঘর,সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়েদের বিয়ে ভালোঘরে সক্ষম চাকুরী বা ব্যবসায়ী বর পাওয়া তো স্বাভাবিক!

বড় জামাই সরকারী চাকুরে, কলকাতায় মেয়েকে নিয়ে থাকত।ছোট জামাই একটু দুর গ্রামের ধনী, পাইকারি ধান্য ব্যবসায়ী,আবার এক রাইস মিলের অংশীদার। ছোট জামাই সুধাময় এই গ্রামে মাঝে মাঝেই আসত তার ব্যাবসা ও মিলের কাজে। ভানু ছিল একটু যেন অন্যরকম, বয়স আটাশ । দুই বোন স্বাভাবিক হলেও সেছিল মানসিক ও শারীরিক ভাবে কমজোরী। উচ্চতা পাঁচ ফুটের কম ,আর দেহের তুলনায় মাথাটা ছিল বড়। বামন ঠিক নয়। তবে তেমনই হাবভাব। কথাবার্তা একটু ধীরে ধীরে টেনে বলত। স্পষ্ট কিন্ত কেমন যেন তার অস্বাভাবিক গলার স্বর।ক্লাস টেন অবধি তার পড়াশোনা। পাশ না করুক,হিসাবটা একটু বোঝে,তাই হাস্কিংমিলে ক্যাশে বসত।

পাড়ার মানুষ বলত,ভানু নাকি জড়বুদ্ধির মানুষদের মত,বেশীদিন বাঁচবে না।নারায়ণীর সামনে এসব কথা বললে তাকে ঝাঁটা মেরে বাপের নাম ভুলিয়ে দেবে।তবে নারায়ণী নিজেও ছেলের খামতি জানত। যত বয়স বাড়ছে ততই যেন তার অস্বাভাবিকতা বাড়ছিল। নারায়ণী তিন সন্তানের জন্মের পর পরেই নিজেই জন্ম নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী ব্যাবস্থা করে নিয়েছিল।তাই তার এত সম্পদ ,ভোগ করতে, বংশে বাতি দিতে ছেলের বিয়ের দরকার।ছেলের জন্য বৌ ,গরীবের মেয়ে চাই, দেখতে ভালো হবে, তবে তো তার পরবর্তী প্রজন্মের রূপ হবে! আর বয়স কম চাই,শিক্ষা কম চাই,যাতে তার সাহস রুচীবোধ কম থাকে ,ভয় ভীতি থাকে।

অনেক সে ভেবেচিন্তে বাসুদেবের বড় মেয়ে ঋণাকে এক রকম নিজে যোগাযোগ করে ঘরের বৌ করেছিল। বাসুদেব গরীব কৃপন, ধনী ঘরের কাঙ্গাল, রুচী রূপের ধারধারেনা।আরও দুটো ছোট মেয়ে আছে। মেয়েদের ধনী সচ্ছল ঘরে বিয়েটাই আসল,খাওয়া পরার কখনও অভাব হবে না,আরামে থাকবে।সমাজে প্রতিষ্ঠিত এমন পরিবার তার আদর্শ, তাতে পাত্র একটু দেখতে খারাপ হলে দোষের কী! সোনার আংটি আবার সোজা বাঁকা হয় নাকি! সবই সম দামি।

ঋণাকে শাশুড়ি তার নিজের গহনায় ফুল শয্যার রাতে ভরিয়ে দিয়েছিল। ঋনা অবাক বিষ্ময়ে ভাবছিস এত গহনা সব সোনার! ত্রিশ চল্লিশ ভড়ি তো হবেই। শাশুড়ি নারায়ণী বলেছিল, এসব আমার মানে আজ থেকে তোমার, তুমিই তো এ বাড়ীর ভবিষ্যত প্রজন্মের মা।ঋনার মন খুসীতে ভরে গেছিল, গরীব ঘরের মেয়ে এমন বড় ঘরে বিয়ে ভাবতে পারছিল না। বড় বিল্ডিং বিদ্যুতের আলোতে সারা বাড়ি ঝলমল করছে।সেটা আটের দশকের প্রথম।গ্রামে বিদ্যুত এসেছে তখন দশ বছর।তার বাপের বাড়িতে তখনও বিদ্যুত ছিল না। তাদের মাটকোঠার ঘর। অভাবী গরীব গরীব মনের ঋনার মন হতচকিত।

ছোট দুই ননদ বেশ সুন্দরী আধুনিকা আর বয়সে বেশ বড়।তাদের মুখে বৌদি ডাক শুনে কেমন লজ্জা করে। আবার ননদের বর গুলো তার সাথে রসিকতা করছে ছবি তুলছে,বৌদি বৌদি ডাকে সে তো রীতিমত নার্ভাস বোধ করছিল। নারায়ণী তার ভুলটা ভেঙ্গে দিল। তুমি সম্মানে ওদের চেয়ে বড়। বয়সটা কোন ব্যাপার নয়।এটাই এই বাড়ির রীতি। নিজের সম্মান নিতে শিখবে।

ফুল শয্যার সন্ধের সময় স্বামী তার দিকে মাঝে মাঝে তাকাচ্ছিল মিটমিট করে,কোন কথা বলেনি । তার আত্মীয়স্বজন ঋণাকে নিয়ে মেতে উঠেছিল। নিরীহ ভানু কেমন একা একা বোকার মত একটা চেয়ারে নীরবে বসেছিল। কেমন যেন অনাহুত! অস্বস্তিতে ছিল। ফুল শয্যার রাত,মেয়েদের একটা অন্যরকম আবেগ ভয় আনন্দ অনুভূতি থাকে। যাদের প্রেমে বিয়ে,বরকে চেনে জানে পরিচিত তাদের ব্যাতিক্রম হতেই পারে।কিন্ত এক অপরিচিত পুরুষের সাথে প্রথম রাতটা এক থাকা রীতিমত সংশয় উদ্বেগের।বিশেষত এই ষোল সতের বছর বয়সে।

শাশুড়ি মা নারায়ণী, ঋণাকে ঠিক ফুল শয্যার রাতে ঘরে ঢোকার আগে এক গ্লাস ইষৎ গরম দুধ খেতে দিল। তারপর বলল, "এবার তুমি তোমার ঘরের ঢুকে কপাটের ভিতরের খিল দিয়ে শুতে যাও।ভানু বেচারীর খুব ঘুম আসছিল ও আগেই শুয়ে পড়েছে,হয়ত ঘুমিয়ে গেছে।একটু কম রাতে ঘুমানোর ওর অভ্যাস,আবার খুব ভোড়ে উঠে পরে। হয়ত তখন তোমায় জ্বালাতন করবে" বলে একটু হেসে,ঋনাকে ঘরের দরজা অবধি দিয়ে এল ।রাত তখন প্রায় এগারোটা, মাঘ মাসে বেশ ভালো রাত,অন্তত ঋনার কাছে তো বটেই।

শাশুড়ির কথাই ঠিক স্বামী ভানু ঘুমিয়ে, লেপমুড়ি দিয়ে বড় খাটের এক পাশে পড়ে আছে।ঋনারও বেশ সারাদিন ঝক্কী গেছে, খুব ঘুম আসছিল। এমন নরম গদিযুক্ত বিছানায় সে জীবনে ঘুমোয়নি। বিছানায় শোবার মাত্রই ঘুমিয়ে যায়। সকাল প্রায় আটটা ঘুম থেকে উঠে ভীষণ লজ্জা লাগছিল।স্বামী কখন কোন ভোড়ে ওঠে। তবে মানুষটি দুষ্ট, কথা কম বলে, প্রশ্ন করলে উত্তর দেয়।কিন্ত তার মনে হচ্ছিল তার ঘুমের মধ্যেই স্বামী নিজের সখ মিটিয়েছে। কম বয়স হলেও বড়রা তাকে বিবাহ ফুল শয্যার রাত বিষয়ে একটা ধারনা দিয়েছিল। তার পোষাক পরিচ্ছেদ তেমন খোলা খুলি না করলেও, সে বুঝতে পারছিল সে আর কুমারী নেই।

শাশুড়ি মা তাকে ঘর থেকে বের হতে দেখে একগাল হেসে বলে,"এত বেলা হল উঠতে ,শরীর ঠিক আছে তো বৌমা !"

ঋণা লজ্জায় মুখ নত করে বলে "অনেক বেলা হয়ে গেল,খুব ঘুমিয়ে গেছিলাম মা।"

"ও মা এতে লজ্জার কী আছে! তুমি রাজরানী, যখন খুশী উঠবে । এটা তোমার পূর্ণ স্বাধীনতা , এবাড়িতে বৌ মানে ঝি নয়। মেয়েদের চেয়েও তার আদর বেশী। এবার মা স্নান করে এসো , তারপর কিছু খাবে ।"

দুই ননদ মুখ চাওয়া চাহি করছিল।মা এসব বলে কি! একদিনের মধ্যেই বৌমা বেশী আপন হল! নারায়ণী বুদ্ধিমতী তাই মেয়েদের বলল।"তোরা আমার বেশী আপন, কিন্তু এ সংসারের আমার বৌমা লক্ষী, বড় সম্পদ,তাই আমি এ বাড়ীর গিন্নি হিসাবে ঋনাই আমার বেশী আপন এ বাড়ীর ভবিষ্যত ।"

শাশুড়ির যত্নে ঋনা কেমন সংকোচ বোধকরে, ভালো খাবার তাকে বেশী করে খাওয়ানো, রাতে খীরের মত মিষ্টি দুধ নিজের হাতে খাইয়ে দেয়।

অষ্টমঙ্গালার দিন সে বাপের বাড়ি গেল, শাশুড়ির খুব প্রশংসা শুনে বাড়ির লোক খুশী, মা গোপনে জানতে চায় বরের কথা।লজ্জায় ঋনা বলে ওটা চুপ্পি শয়তান। উপরে ভালোমানুষ,কথা বলে না, আর আমাকে দিন রাতে গোপনে, বলে লজ্জা চুপ করে যায়।

মা বুঝতে পারে। বলে মা সব তো সমান হয় না।ও একটু অন্যরকম,পরে ঠিক হয়ে যাবে। সেই রাতেই কিন্ত ঋণা থাকলেও ভানু তাদের বাড়ি ফিরে এল।শাশুড়ি ঋনাকে বলে দিয়েছিল, রাতে ঘুম না হলে ভানুর সমস্যা হয়।ডাক্তার বলেছেন ঘুমটা যেন ওর নিয়ম মত ঠিক রুটিন মেনে হয়। ওর অন্য কোথাও ঘুম হয় না, তাই বাইরে ভানু কোন দিন রাত কাটায় না। শাশুড়ির কথা অবাধ্য ঋণা নয়।ভানু বাড়িতেই ফিরে আসে ।

একই গ্রামে এক কিমি দুরও নয়,তাই সমস্যা হল না। আর ভানুকে নিয়ে রঙ্গ রসীকতা অষ্টমঙ্গালার দিন ঋনাদের বাড়িতে করতে নিষেধ করেছিল শাশুড়ি। "ওর এসব পছন্দ নয়।রাগলে ও চন্ডাল হয়ে যায়। আমি সামলাতে পারি না।তুমি মা, ওর স্ত্রী,আমি তো কদিন, তুমিই তো ওকে দেখবে।ওকে আগলে রেখো মনে দুঃখ কষ্ট যেন না পায়।" ঋনা শাশুড়ির নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে।একদিন থেকেই ঋনা আর বাপের বাড়ি মন বসে নেই। শক্ত বিছানা মেঝের উপর এইটুকু সংকীর্ণ জায়গা গাদাগাদি দুই ছোট বোনের সাথে তার শোয়া।সারারাত ঘুমই হয়নি।শ্বশুর বাড়ির খাওয়ার মান অনেক ভালো,আর রাতে শোবার আগে খীরের মত গাঢ় বড় গ্লাস ভর্তি দুধের লোভ কী সামলানো যায়! এ বাড়ীতে যা স্বপ্ন।

পরদিন ঋনা শাশুড়ির আদর খেতে শ্বশুর বাড়ি চলে আসে।আর বাবা ভাবে খরচ কমল।তিন মাস পর ঋণা গর্ভে সন্তান এল।শাশুড়ির আনন্দে আর ধরে না। ভানুর কোন হেলদোল নেই।ঋনা ইদানিং ভানুর প্রতি বিরক্ত, যদিও মুখে প্রকাশ করে না।শাশুড়ি মা রাগে এমন কোন কাজ সে করে না।তবে আগে তবু ভানুর সাথে ঋনা কথা বলত,ভানু এক দু কথায় বেরসিক উত্তর দিত।ঋনার অভিমান হয়,চোরের মত আমার ঘুমের মধ্যেই গাদন দিয়ে গর্ভবতী করলে,আর তুমি ভাবী সন্তানের বিষয়ে উদাসীন!

শাশুড়ির আদরে আর পুষ্টিকর খাবারে ঋনার শরীরে যৌবনে পরিপূর্ণতা এসেছিল এই দুই তিন মাসেই,ঋণা খুব সুন্দরী হয়ে ওঠে।আবার শ্বশুরের ঘরে আলমারি ভর্তি বাংলার কালজয়ী লেখকদের গল্প উপন্যাস তার পড়ার খুব ঝোঁক।এই সব গল্প উপন্যাস পড়ে মানসিক ভাবে সে অনেক পরিপূর্ণ হয়েছিল।

এই রাগ ভানুর প্রতি তার কেটেছিল, বাচ্চার জন্মের পর। ঈশ্বর যেন শাশুড়ির মনের কথা শুনল, এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান হল।এর পর,ঋনার আদর শাশুড়ির কাছে যেন দ্বিগুণ বাড়ল। সন্তান কে ভানু আদর করত,ওর মত করে। কিন্তু একদিন রাতে অসুস্থ বাচ্ছা মানিক তখন দেড়বছর সারারাত ঘেন ঘেন করে রাতে কান্নার কারনে ভানুর ঘুম ভেঙ্গে। রেগে চিৎকার চেঁচামেচি করছিল।সন্তানের শরীর খারাপ আর বাবার ঘুম নষ্ট হচ্ছে বলে এই অসহিষ্ণু আচরণে ঋণা তো হতবাক।

নারায়ণী উঠে এসেছিল।ঋণাকে দরজা খুলতে বলে, ঘরে ঢুকে ছেলেকে সামলায়,ভানুকে বলে ঘুমো বাবা আমি মানিক কে আমার ঘরে নিয়ে যাচ্ছি। ঋণাকে নারায়ণী সঙ্গে যেতে বলে। ঘরের কোন অভাব নেই। তবু নিজের ঘরে বৌমা নাতীকে শোয়াল, ঋণাকে বলে বৌমা তুমিও কচি ছেলের মা ঘুমোও , আমি মানিক কে সামলাচ্ছি।তার যেন জাদুর স্পর্শে আদরের নাতি কান্না থামিয়ে ঘুমুল।নিতাই এক ঘরে শুলেও অন্য খাটে ঘুমোচ্ছিল। ঋনার কেমন লজ্জা লাগছিল, অন্য খাট হলেও রাতে যদি তার ঘুমের মধ্যে শাড়ি সড়ে যায়। কিন্ত বলতে কেমন লাগছে। শাশুড়ি যেন তার মনের কথা বুঝতে পারে, বলে দুই বাপ বেটা সমান, ঘুমুল কী মরল,ভানু ভোড়ে ওঠে সকাল সকাল শোয়,আর ওর বাপ রাতকরে শোয় সকাল সাতটার আগে ওঠে না।তার আগেই তোমাকে তুলে দেবো, আরাম করে শোও।

দুচার দিন এভাবেই শোবার পর বলল,বৌমা তুমি বরং ভানুর ঘরে শোবে।রাতের মানিকের ঝক্কী আমি নেবো।তোমরা আরামে নিরিবিলিতে শোবে।

ঋণা বলে এখনও তো মা রাতে বুকের দুধ খায়।

দেড় বছর হল রাতে বুকের দুধ আর দরকার নেই, আমি মানিক সোনাকে গরুর দুধ বা কোটোর দুধ খাইয়ে রাতটা ঠিক ম্যানেজ করব। ভানুও একটু নিরিবিলিতে তোমাকে পাবে।বাচ্চার টেনশনে রাতে তোমারও ঘুম ভালো হয় না শরীরটা ভেঙ্গে গেছে।

ঋণার মনে হয় সত্যিই তার ছেলের জন্য আগের সেই ঘুম আর হয় না।শরীর দুর্বল লাগে।আর মানিক অন্ত ঠাকমার জীবন, নাতীও ঠাকমার বড় নেওটা।

সেইমত ঋনা একটু রাত করেই ছেলেকে বুকের দুধ খাইয়ে, ঠাকমার ঘরে রেখে নিরিবিলি শুতে লাগল। আবার তার ঘুমে ব্যাঘাত হীন সকাল অবধি গভীর নিন্দ্রা ।আর দুদিন পর থেকেই বুঝতে পারছিল স্বামীর ভোড় রাতে তাকে ঘুমুন্ত অবস্থায় সম্ভোগ করে।ও কি এসব তাকে জাগ্রত অবস্থায় করতে লজ্জা পায়! মানসিক কম জোরি!কত শত ভাবে ঋনা,এসব ভানুকে বলার সময় পায় না।

তার ওঠার আগেই হাস্কিং মিলে স্বামী চলে যায়।দুপুরে এসে স্নান খাওয়ার পর একটু বারেন্দায় বসে রেডিও শোনে আপন মনে। একটু সে অন্যরকম মানুষ, নিজ মেজাজে থাকে,শুধু স্ত্রী কেন,মা বাবার সাথেও কথা না বলার মত। কিছু অনিয়ম হলে তবেই তার চেঁচামেচি, তাছাড়া তার গলা শোনাই যায় না।

সেই ফুল শয্যার রাত থেকে শাশুড়ির হাতে যত্নের গরম দুধ ঋনা খেয়ে আসে।কোন বিরতি নেই।সবাই রাতে দুধ খায়, তবে তাকে যেন বেশী বড় গ্লাসে বেশী যত্নের খাঁটি খীরের মত দুধ শাশুড়ি নিজে হাতে পরম যত্নে খাওয়াতো। বলত তুমি মা জ্যান্ত লক্ষী, তোমার পূজো এই ভাবেই করব যতদিন আমি এবাড়ীর গিন্নি। তবেই ঈশ্বরের কৃপা মা লক্ষীর করুনায় সংসারে মঙ্গল হবে।ঋনা ভাবত এমন শাশুড়ি মা সাত জন্ম তপস্যা করে পাওয়া যায়। তার এমন জাদু শাশুড়ির কথা ঋনা সব মেনে নিত। শাশুড়ির ভীষণ রাগী তেজী দুঁদে মহিলা পাড়ার লোকে বলত, কিন্তু নারায়ণী স্বামী সন্তান আর বৌমাকে কি ভাবে বশে রাখতে হয়, ভালোবেসে সেই কৌশল জানতে চাইত না।

বাড়ির সবাই নারায়ণীর কথায় চলে। তাকে অমান্য করা আর বিপদ ডেকে আনা সমান।আর মান্য করলে সব বিপদ থেকেই মুক্তি অন্তত এ বাড়ীতে ,এতদিনে ঋণা জেনে গেছিল ভালোমত। সেদিন রাতে শাশুড়ি গরম দুধের গ্লাস হাতে ঋনাকে ধরিয়ে খেয়ে নিয়ে ঘরে শুতে যেতে বলছিল, গরমের দিন রাত এগার টা বেজে গেছে ,হঠাৎই মানিকের কান্না শুনে নারায়ণী ছুটে গেল এখন নাতি তার বিছানায় একসাথে শোয়।আচমকাই একটা আরশোলা ঊড়ে এসে পড়বি তো পড় তার খীরের মত গরম দুধের গ্লাসে! ঘৃনায় ঋনা রান্নার ঘরে জল বের হবার নালিতে ঢেলে আরও জল ঢেলে দিল।শাশুড়ি যেন বুঝতে না পারে,তা হলে শাশুড়ি তার ভাগের দুধ আবার তাকে খাওয়াবে। এমন আগে সে দেখেছে।

শাশুড়ি মানিককে কোলে তুলে এনেছিল। বলল দুধ খেলে বৌমা! ঋনা হ্যাঁ মা খেয়েছি । তবে তোমার ছেলেকে একটু বুকের দুধ দাও। তারপর শোবে।আমি বাকী কাজ সাড়ি।

সেদিন রাতে হঠাৎই ঋনার ঘুম ভেঙ্গে গেল কেউ তার শাড়ি সড়িয়ে যেন সহবাস করতে তাকে নানা ভাবে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছে।স্বামীর মৃদু নাক ডেকে ঘুমুচ্ছে, ঋণা বেড সুইচ জ্বলে দেখে শ্বশুর মশাই।ঋণা

চমকে ওঠে।বিব্রত নিতাই কি করবে বুঝতে পারে না।

"বাবা আপনি কী করছেন চেঁচিয়ে ওঠে ঋণা ।"

"চুপ চুপ ভানু উঠে যাবে। কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না।"

এই চিৎকারে শাশুড়ি হাজির। আজ তার চোখে মুখে যেন আগুন জ্বলছে, বলে "বৌমা চুপচাপ আমার ঘরে এসো।"

শাশুড়ির কথা অবাধ্য হবার ক্ষমতা তার নেই।পাশের ঘরে গেলে শাশুড়ি স্বস্নেহে বলে,"তুমি আজ রাতের দুধটা খেয়েছিলে? ঠিক বলো!"

"না মা আরশোলা পড়ছিল। তাই খাইনি রান্নার ঘরে জল বের হবার নালিতে ফেলে দি"

"তুমি আমায় মিথ্যা বললে! এটা ঠিক করো নি।"

"কিন্তু মা --

কথা থামিয়ে নারায়ণী বলে "শোন তোমার কৌতুহল হচ্ছে শ্বশুর কেন তোমাকে এই সব করছে তাই তো!এটা চরম গোপনীয়তা ছিল, আমার আর তোমার শ্বশুরের মধ্যেই ।এক পরিচিত আমার ঘনিষ্ঠ ডাক্তারের পরামর্শে তোমাকে রাতে দুধের সাথে নিদিষ্ট মাত্রায় ঘুমের আর যৌন উত্তেজক ড্রাগ মিশিয়ে দি। সব দিন উত্তেজক দি না, তোমার সেদিন গুলো বাচ্চার আমার সম্ভবনা বেশী এমন মাসে পাঁচ ছদিন।মানিক তোমার শ্বশুরের সন্তান।ভানুর শারীরিক সমস্যা আছে,ওর বিবাহিত জীবন, সন্তান কী ভাবে হয় ধারনা নেই।ওর নারীর প্রতিও কোন মোহ নেই। রাতে ঘুমের ওষুধ ছাড়া ঘুম হয় না। আট ন ঘন্টার পর ওঠে, গভীর ঘুমের সময় ওর চেতনা থাকে না।ঘুমের মাঝে হৈচৈ চিৎকারে ঘুম ভাঙ্গলে রেগে ক্ষেপে যায়।যে ঘরে তোমরা রাতে শোও তার দুটো দরজা, একটা বাইরে থেকেই চাবি থাকে ভিতর থেকে লাগানো ব্যবস্থা এখন আর নেই। ঐ দরজার কপাট খুলে তোমার শ্বশুর তোমার অচেতন অবস্থায় এটা করত,আমার সম্মতি ক্রমে।

আমার এত সম্পদ খাবে কে! মেয়েরা অন্য বংশের, আমার শ্বশুরের বংশ শেষ হতে দেবো না,তাই আমার সম্মতি ক্রমে তোমার শ্বশুর একাজ করে।ও রাজী ছিল না। অনেক বুঝিয়ে ওকে রাজী করিয়েছি।আমি আমার স্বামীকে তোমার ভোগে দিয়েছি,এটা আমার কম দুঃখ ত্যাগ নয়। একটা চোখ চোখ নয়, তাই দুটো নাতি আমার চাই, দরকারে দুটো নাতনী এর মাঝে এসে যায় আসবে।"

ঋনার বয়স সবে কুড়ি,বাইরের জগতের ধারনা তার ছিল না,আর তার বাপের বাড়ির মানুষ এই বাড়ির প্রশংসায় পঞ্চমুখ, এরা অনেক উপঢৌকন দেয়,গরীব বৌমার বাড়ির মানুষদের এত সাহায্য করার আর ইজ্জত করার কারণ আজ ঋণা বোঝে। বাড়ির মানুষ তাকে নয়, তার শ্বশুর বাড়ির স্বার্থ দেখবে । আর তার এক সন্তান সে তো শ্বশুরের, হাজার চিন্তা ঋনার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। মুখ নামিয়ে বসেছিল।

পড়াশোনার সুযোগ না পেয়ে সে ক্লাস ফাইভের পর পড়া ছেড়েছিল তার মানে তার মেধা নেই তেমন নয়।

শ্বশুর কেমন লজ্জিত মুখে বসে, টু শব্দ মুখে ছিল না। কিছু বললে নারায়ণীর তাকে ভৎসনা করবে সে জানে।

অনেকক্ষণ সবাই নীরব।নারায়ণী বলল"বৌমা তোমার কিছু বলার আছে !"

"হ্যাঁ আছে। এই ভাবে গোপনে নয়। শ্বশুর মশাইয়ের সাথেই আমার বিয়ে দিতে পারতেন। অনেক মেয়ের তো বয়সে অনেক বড় দ্বিতীয় পক্ষে তৃতীয় পক্ষে বিয়ে হয়,আপনার স্নেহের ছোট সতীন হয়ে থাকতাম।"

"দেখো বৌমা সমাজে একটা মান সম্মান আছে,আমার মেয়ে জামাই আছে,আর ভানুর উপর যেটা অবিচার হতো। "

ঋনা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে,বলে "এই ভাবে কেন আমি কোন সত্যিকারের স্বামী পাবোনা।একজন অস্বাভাবিক আধপাগল,নারীর মনে কামনা বাসনা কিছুই যে জানে না।আর একজন যে আমার সন্তানের পিতা, আমায় অচেতন করে মিলিত হোন,শুধুমাত্র আমাকে গর্ভবতী করতে।সেটাও উনার স্ত্রীর সম্মতি ক্রমে, এটা জীবন!এ জীবনের চেয়ে মরা ভালো।"

নারায়ণী তার কথার গুরুত্ব বোঝে।ভয় পায় যদি সব লিখে আত্মাহত্যা করে!বলে "আমি আমার পরিবারের স্বার্থে তোমার ইচ্ছামত তোমার শ্বশুরকে দিলাম,যেদিন তোমার মনে হবে শ্বশুরকে বলবে। তোমার বাচ্চা যখন তিন মাস গর্ভে আমরা জানতে পারি, ঘুমের ওষুধ বা উত্তেজক রাতে তোমার খাবার দুধে দিতাম না।যাতে বাচ্চার ক্ষতি না হয়। তোমার বাচ্চা আমাদের বংশধর তার দেড়বছর বয়স অবধি রাতে তোমাকে যে দুধে খেতে দিতাম তাতে কোন ঘুমের ওষুধ থাকত না। যাতে তোমার দুধ খেয়ে যেন ভবিষ্যতে কোন সমস্যা না হয়। তোমার সন্তানকে আমরা ভীষণ ভালোবাসি, এ বাড়ীর সব সম্পদ ওর,তুমি মা হিসাবে এটাও একটু ভাবো!"

ঋণা হতাশায়, দুঃখে চোখের জল মুছতে মুছতে বলে, "আমাকে আপনারা মানুষ মনে করেন না,গরু ছাগল আর কী।নিজের স্বার্থে ভালোবাসা ।তারপর ধীরে ধীরে নিজের ঘরের দিকে গেল। নিতাই গিন্নির সামনে যেন সাধুপুরুষ, কিন্তু কুড়ি বছরে,পুত্র বধুর জন্য মনটা চুক চুক করে।

নারায়ণী বলে "ওর সঙ্গে যাও কি বলে দেখো, সেই ভাবে ছক সাজাতে হবে। "

ঋণা যে আপসে রাজী তার দরজা খোলা দেখে বোঝা গেল।কিন্ত এরাতে গার্ড হিসাবে তার স্ত্রী নেই।ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকে কপাট লাগাল।ঋণা মৃদু স্বরে বলে,"আপনি তো আবার সময় বুঝে আসবেন,আমায় শুধু গর্ভবতী করার জন্য,সেই গাবিন করতে গাইগরুকে বুড়ো ষাঁড় দেখানো,তবু ভালো একটু সুখ পাবো সত্যিটা বুঝব।আগের সন্তান মানিক হল গাইগরুকে সেই ইঞ্জেকশন দেওয়ার মত, সুখ পেলাম না,সত্যিটা জানলাম না, মানিককে চুরি করে আমার গর্ভ থেকে বের করলে"

ঋনার মুখে এমন সব বিদঘুটে কথাবার্তা শুনে নিতাই হতবাক,এসব কী বলে রে! অন্ধকারে ঋনাকে নিতাই আবেগঘন স্বরে বলে,"তুমি যদি চাও ছেলের ব্যর্থতা কিছুটা আমি--"

ঋনা কথা থামিয়ে বলে "আস্তে কথা বলুন। আমার স্বামীর ঘুম ভাঙ্গলে আবার অশান্তি।ঘুমন্ত বাঘীনি নয় জেগে থাকা বাহিনীকে সামলাতে পারবেন তো! আর খাটে হয় মেঝেতে আসুন, না হলে খাটের শব্দ হলে আমার স্বামীর আবার ঘুম ভাঙ্গলে বিপদ,কত আমার জ্বালা!"

ঋনার রসীকতা আর ব্যঙ্গ নিতাই হজম করছিল,কিন্ত সত্যিই জাগ্রত উঠতি তেজি বাঘীনির লাস্যময়ীর হানায় বুড়ো বাঘ শারীরিক নাজেহাল বেইজ্জত হয় এদিন বার বার !আর আপনি থেকে তুমি,বাবা থেকে বুড়ো ভাম, একটা অপদার্থ আরও কত কটু কথা! বাল্যের ঋনার মুখরা গুন এরা জানত না। তীব্র ক্ষোভ আর প্রতারণার জ্বালা ঋণাকে বিদ্ধ করছিল,বরং ভানুর প্রতি করুনা হচ্ছিল। কাজ শেষে ঋণা বলল, "বংশধর আরও চাই তো! কালও চলে আসিস বুড়ো, দুঃখিত, সম্মানিত আমার গুনধর বাবা! "

এই দু তিন বছরে ঋনা অনেক স্মার্ট তবে চুপচাপ থাকত। কিন্ত এই সত্য প্রকাশের পর সে মরিয়া। পরিস্থিতির চাপে, সন্তানের মায়া, আর ধন প্রাচুর্য্য গহনার মোহে,সব মেনে নিয়েছিল। যা কিছুই গোপন তিন জনের মধ্যেই ছিল। পাড়া প্রতিবেশীরা যদিও আড়ালে বলত মানিক ভানুর নয়,ভানুর বাবার সন্তান।এমনকী ভানুর বোনদের আপার বিষ্ময় ছিল। তবে বাবাকে সন্দেহ করত না।ভাবত নষ্ট মেয়ে বাইরের পুরুষ আছে।আর দোষ কী! মানিকের মুখটা অবিকল মায়ের মত।তবে ঋনা তো গৃহবন্দী, আর গোপনে নিতাইয়ের ভোজবাজির খেল! তাই নারায়ণী আর নিতাই খুসীমনে জানত, মানিক তাদের বংশধর।

সব কিছু ঋনার কাছে প্রকাশ্যে আসার পর, আটান্ন বছরের নিতাই সামন্তের ঋণার শত ব্যঙ্গ বিদ্রুপ গায়ে লাগেনা।তেপান্ন বছরের স্ত্রীর সাথে পাঁচ বছর আগেই এসবে ইতি। আর গাঢ় অচেতন কালে সতের আঠারো বছরের ঋণাকে তিন চার মাসে, বিশ বারেই কেল্লা ফতে।বংশধরের আগমন!আরও সতর্কতা।তাই দুটো চাই গিন্নির নির্দেশ।ভানু এমন হবে আট নবছর অবধি বোঝা যায়নি।ডাক্তার আশ্বাস দেন , চিকিৎসা চলেছে পনের বছর অবধি।যখন বুঝল,বহু আগেই নারায়ণী তার সব উর্বরতা শেষ করে ফেলেছিল।তবে ছেলেকে শ্রীখন্ডী করে আবার এই গেম নারায়ণীর।

ভাগ্য গুনে নারায়ণীর পুত্র বধু আবার গর্ভবতী হল।তাই নিতাই সুখী না হতাশ বোঝা গেল না। আপাতত তার বিরতি। আবার পুত্র সন্তান!নারায়ণীর মনে এত আনন্দ যেন উভয় ইনিংসে কোন সাধারণ মানের ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছে।

দ্বিতীয় সন্তান তখন ছয় মাস ।একদিন শ্বশুরকে ঘরে ডেকে ঋনা বলে," বুড়ো কী ভয় পেয়ে গেলে!" নিতাইয়ের চোখ নব উৎসাহে চিক চিক করে বলে। "তোমার শরীর সুস্থ স্বাভাবিক তো!"

ঋণা রসীকতা ভরা ব্যঙ্গ হেসে বলে "শাশুড়ি মায়ের বাচ্চা হবার কতদিন পর করতে! যেন ন্যাকা চন্ডী!"

ঋণা অন্যদের সামনে নিতাই কে বাবা,আপনি সম্মান দিয়ে কথা বললেও একা আড়ালে, বুড়ো আর তুমি সম্বোধন করত।নিতাই মেনে নিত।

নারায়ণীর দুই নাতি হয়েছিল তাই আর স্বামীকে আর ভাড়ায় খাটাতে চায় না,ঋণার পরিতৃপ্তির জন্য তার দায় নেই।

নিতাই জানে নারায়ণী সম্মতি ছাড়া ঋনার ঘরে যাওয়া অসম্ভব। তাই বলে শাশুড়িকে বলো। ঋনা ক্ষেপে যায় বলে "ও মাগী তো তোমার কম বয়সে অনেক ভোগ টোগ করেছে ,এই বয়সে ছাড়তেও হিংসা!"

শাশুড়ি পরদিন ঋণাকে বোঝায় "অনেকেই তো বৌমা বিয়ের দুচার বছর পর দুটো বাচ্চা নিয়ে বিধবা হয়।"

"আপনার ছেলে তো বেঁচে আছে, মরে নাই!"

নারায়ণী কোন উত্তর নেই ,একটু ভেবে বলে "তোমার বাবা দাদাদের অনেক সাহায্য করি,সে তোমার জন্য। "

"কেন করেন! আমি করতে বলি! যে বাবা টাকা আর বাড়ি দেখে বিয়ে দেয়, স্বামী কেমন হবে মেয়ের যৌবন তৃপ্ত হবে কিনা ভাবে না।সে বাবা না কষাই! বিনা পণে, আবার আপনাদের কাছে নানা সুবিধা নিতে আমাকে এ বিয়ে না দিয়ে,বরং হাত পা বেঁধে জলে ফেলে দিতে পারত।নিজেরা সব সুখ ভোগ করল,আর আমার বেলা সোনার কলম,কিন্ত কালী নেই,মারো ঝাঁটা।"

নারায়ণী বুঝতে পারে ঋণার ক্ষোভ আক্রোশ আর বিদ্বেষ ।

ফল হয়েছিল, নিতাই আবার গেল রাতে ঋনার ঘরে।ঋনা বলে "দেখ বুড়ো প্রত্যেক দিন আসবি, নাহলে সব কথা পাড়ায় ফাঁস করব,আর সব কথা শাশুড়িকে কেন বলিস !ওর তো রাগ হবেই। বুড়ো বাইশ বছরের আমার মত সুন্দরী মেয়েকে ভোগ করছিস, আবার বিনা পয়সায়।"

তুই তোকারি করে না।এত রাগার কারণ কী! শ্বশুর জানতে চাইলে ঋণা বলে,"এ সব ব্যাপারে শাশুড়িকে পাত্তা দেবে না, কী করবে ও!সে আমি বুঝে নেবো।আমাকে ও কী খুন করবে!"

"না না কী পাগলামী কথা, তুমি আমার দুই নাতি মা, নারায়ণীর কাছে তোমার জীবনের দাম অসীম, আমি জানি, আমার নাতিদের বড় করা ,মানুষ করে তোলা, সব তোমার দায়িত্ব। ভানু তো নামেই বাবা।"

"তোমার নাতি! তাই বটে।বলছ কি করে বেহায়া বুড়ো! তাও একা আমার সামনে!অন্যের সামনে বলো ঠিক আছে।সে তো তোমায় আমিও বাবা বলে ডাকি আপনি বলি।"

নিতাই তর্ক করে না।ঋনার কাছে সবেতেই সে হার

স্বীকার করে নেয়।নারায়ণী ক্রমে বুঝে যাচ্ছিল এক মৌচাকে দুই রানী মৌমাছি থাকে না।চালাক ঋণা এক দিকে স্নেহের চোখে ভানুকে কাছে টেনেছিল।শ্বশুর তো ওর ভৃত্য।আর নাতী গুলো যতই তার নেওটা হোক, ঋণার সন্তান।

ভানু দুহাতে দুই সন্তানের হাত ধরে প্রায়ই বেড়াত গ্রাম্য রাস্তায়,বাজারে চকলেট কিনে দিতো।কথা তেমন বলত না,বড় মানিক তখন আট বছরের ,আর রতন সাড়ে পাঁচ বছরের। দুষ্ট গ্রামের মানুষ মুখ টিপে হাসত। তখন পঁচিশ ছাব্বিশ বছরের যুবতী ঋনা তেষট্টি চৌষট্টি হাই প্রেসার সুগারে জর্জরিত শ্বশুরে মোটেও তৃপ্ত হত না । 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy