Bhattacharya Tuli Indrani

Fantasy

2  

Bhattacharya Tuli Indrani

Fantasy

বইমেলা

বইমেলা

3 mins
423


কিছুই রবে না

ঠাকুমার বাধা নিষেধের বেড়িতে শাপে বর হলো সিপ্রার। বাইরের দস্যুবৃত্তি বন্ধ হওয়ায়, নিজের অজান্তেই নান্দনিক শিল্পের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ল সে। মাথার ওপরে সর্বগুণসম্পন্না মায়ের হাত তো ছিলই। 

বইপড়া, ছবি আঁকা, সেলাই ফোঁড়াই এর সঙ্গে সঙ্গে লেখার দিকেও মন গেল সিপুর। প্রতিদিনের জীবনযাত্রার ওপরে রঙ বুলিয়ে এঁকে ফেলল সে কতগুলো ছোট ছোট ছবি, অক্ষরের পরে অক্ষর সাজিয়ে। কখন যে দাদা দেখে ফেলেছে সেই লুকনো খাতা, জানতেও পারেনি সিপ্রা।

"এই নে সিপু…" দাদার বন্ধু শ্রাবণ এসে দাঁড়াল সিপুর সামনে। তার বাড়ানো হাতে মাসিক পত্রিকা "বাংলা"

"তোমার লেখা বেরিয়েছে, বনাদা?"

"পড়ে দেখ্।"

উল্টে পাল্টে দেখে কোথাও শ্রাবণের নাম দেখতে পায় না সিপ্রা কিন্তু নিজের নাম ছাপার অক্ষরে দেখে অবাক হয়ে যায় সে… আর তার পরেই ছদ্মকোপে ঝাঁপিয়ে পড়ে দাদার ওপরে।

"তুই! তুই আমার খাতা চুরি করে পড়েছিস… কেন?"

"যা তো বেশী লাফাস না। ভাল যেন লাগেনি নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখতে! বনাকে ধন্যবাদ দে, ওই-ই সব ব্যবস্থা করেছে।"

"লিখতে থাক্ সিপু, তোর হাত বেশ ভাল।"

সিপ্রার হাসিতে জ্বলে ওঠে হাজার ওয়াটের বাল্ব।


"দিদি, চিঠি!" সম্বিত ফিরে পায় সিপ্রা দত্ত। ছেলেবেলার রঙিন দিনগুলোতে হারিয়ে গিয়েছিল সে… বিয়ের পরে সময় কাটাবার জন্যে আবার লেখালেখির শুরু করেছিল সিপ্রা।

লেখাপড়ার জগতের গণ্ডিটা ক্রমশই বড় হয়ে উঠছিল তার। এদিক ওদিক থেকে পত্রিকায় লেখার ফরমায়েশ আসে… ভালই লাগে, বাড়িতে অশান্তিও হয় সভা- সমিতিতে যাওয়া নিয়ে… সবকিছু কি মেনে নেওয়া সম্ভব?


চিঠিটা খুলল সিপ্রা। এক প্রকাশনা সংস্থা থেকে তার কাছে একটা উপন্যাস চেয়ে পাঠিয়েছেন, প্রকাশক… আগামী বইমেলায় প্রকাশ করার ইচ্ছে।বই! বই হবে তার? আজ খুব বেশী করে মনে পড়ছে শ্রাবণদার কথা। তার হাত ধরেই ছাপার অক্ষরে নিজের লেখা দেখার সুযোগ। বইমেলা! বাবার সঙ্গে এক আধবার যাওয়া হয়েছিল বইমেলায়… বিয়েই তো হয়ে গেল ছোট বয়সে, তারপর থেকেই বাংলা থেকে অনেক দূরে… বছর- দু'বছরে বাড়ি যাওয়া! কোন বাড়ি? এখন তো আবার বাড়িও দুটো… 

"নারী তোমার ঘর কোথায়?"নিজের উপার্জনে বানাতে না পারলে, নেইই। 

নিজের উপার্জনের টাকায় ফ্ল্যাট কিনেও উপভোগ করতে পারল না শ্বেতা, তার বন্ধু। ব্যাংকের চাকরি, ভাল মাইনে। 

স্বামীর অনীহা কাজে কম্মে। ঠিক আছে, তা ও মেনে নিয়েছিল শ্বেতা। সে যদি কাজ না করে… (কাজ না করে? ঘরের কাজ আবার কাজ না কী?) স্বামীর আশ্রয়ে থাকতে পারে, তার স্বামী কেন তা পারবে না?

কিন্তু শুরু হলো অত্যাচার, টাকা পয়সা কেড়ে নেওয়া, অকথ্য গালিগালাজ… সবশেষে সিদ্ধান্ত মা- ব্যাটার… ফ্ল্যাট লিখে দিতে হবে ছেলের নামে।বেরিয়ে এসেছিল, শ্বেতা। নিজের বাড়িতেই আছে কিন্তু ভাল আছে কী?

বহু বছর পরে, বইমেলায় পদার্পণ… তা ও কী না নিজের বই প্রকাশের অনুষ্ঠানে! সিপ্রা বুঝেই উঠতে পারছে না, সে কী করবে। কোন শাড়ি পরবে, কাকে কাকে ডাকবে?

প্রখ্যাত সাহিত্যিক পরিমল জানার হাতে উদ্বোধন হলো সিপ্রার প্রথম বই, সামাজিক উপন্যাস "কিছুই রবে না"

সম্মানে, আদরে ভেসে গেল সে…

অভিজ্ঞানপত্র হাতে আগে মা'র কাছেই গেল সে… বাবা তো নেই, আর কেইই বা করবে কদর?

২০০৫ এর কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা স্মরণীয় হয়ে রইল লেখক সিপ্রা দত্তের কাছে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy