STORYMIRROR

Himangshu Roy

Horror Thriller

2.6  

Himangshu Roy

Horror Thriller

ভুতুড়ে বন্ধু

ভুতুড়ে বন্ধু

3 mins
7.5K


বাইশ বছর পর নয়ন গ্রামের বাড়িতে ফিরেছে । গ্রামটা যদিও এখন আর গ্রাম নেই ছোটখাট শহরই বলা চলে বড় বড় দোকান, বাড়ি একটা প্লাইউডের কারখানাও খুলছে । আর রাস্তা ঘাট সব পাকা আগের সেই কাচা রাস্তা নেই বললেই চলে। নয়নের মনে পড়ে গেল ছোটবেলার সেই কাচা রাস্তায় সাইকেল চালানোর দিনগুলি , স্মৃতি সবসময় মধুর হয়।

পাশের বাড়ির কাকুকে জিজ্ঞেস করাতে কাকু বলল গ্রামের উত্তর দিকে শ্মশান এর পাশে এখনো গভীর জংগল আছে.....

পরের দিন বিকেলবেলা নয়ন ঘুরতে বের হল, পাকা রাস্তা ছাড়িয়ে কাচা রাস্তার পথ ধরল .. .

জীর্ন পরিত্যক্ত একটা রাস্তা শুকনো পাতা দিয়ে মোড়া , জায়গায় জায়গায় মাকড়সার জাল তার প্রভুত্ব বিস্তার করে আছে । শ্মশানের পাশ দিয়ে নয়ন জংগলাকীর্ণ পথ ধরল, জংগল এত গভীর যে আলো প্রবেশ করেনা বললেই চলে। কোথা থেকে যেন একটা পাখি করুণ সুরে ডাকছে। এই জনপদ বিহীন প্রকৃতির শোভা দেখতে ভালই লাগছিল, নয়নের হঠাত খেয়াল হল বাড়ি ফিরতে হবে তাই বাড়ির পথ ধরল। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় রাস্তাটা ভাল করে খুজে পাচ্ছিল না হঠাত একটা পচা পাতায় পা পিছলে একটা ছোট কুয়োয় পড়ে গেল। মাথায় চোট পাওয়ায় কিছুক্ষন জ্ঞান হারিয়েছিল নয়ন.....জ্ঞান ফিরে আসতেই গর্ত থেকে বেরুবার প্রানপন চেষ্টা করতে লাগল..... শেষমেষ উপর উঠে দেখে সন্ধ্যা হয়েছে...চারিদিক অন্ধকারে ডুবছে.. এইসময় সবচেয়ে বড় ভয় হল রাস্তা হারিয়ে যাওয়ার....

নয়ন আসার সময় লক্ষ্য করেনি ও যে রাস্তা দিয়ে আসছিল সেই রাস্তায় এক জায়গাতে তিনটে রাস্তা একত্রে মিলিত হয়েছে আর তিনটে রাস্তাই একই রকম দেখতে ...

ও যে রাস্তায় যায়, ফিরে আসে আবার তিন রাস্তা যেখানে মিলিত হয়েছে,... হাপিয়ে উঠল নয়ন ......

এমন সময় হঠাত দেখল কে যেন সামনের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে... নয়ন ডাকল... এই যে শুনছেন? কোন রাস্তাটা জংগল থেকে বাইরে যাওয়ার রাস্তা বলতে পারবেন?..

....ভারী গলায় উত্তর আসল 'এখন বাইরে

যাওয়ার রাস্তা পাবে না, পাশেই আমার বাড়ি আসলে আসতে পারো'

উপায়ান্তর না দেখে নয়ন পিছুপিছু চলতে লাগল...

লোকটার হাটাচলা চেনা চেনা লাগছে যেন..

আরে হ্যাঁ! এ তো ভোম্বল, ওর ছোটবেলার বন্ধু.....নয়ন ডাকল ভোম্বল

হ্যাঁ ...... মনে হল যেন না বলতে চেয়েও বলল ভোম্বল,তারপর রাস্তায় আর কোন কথা নেই....থামল গিয়ে একটা কুটিরে, বলল ..... এখানে রাতটা কাটা কালকে সকাল হলেই চলে যাবি আর রাতে এ ঘর থেকে বেরুবি না ..... শেষের কথাগুলি ধমকের মতই শোনালো.....

আর বলেই নিমেষে হাওয়া গেল.....কেমন ছেলে আতিথেয়তার কোন ব্যবস্থা নেই...দু চারটা কথা বল্ল না পর্যন্ত!

...নিজে বিছানা করে শুয়ে পড়ল নয়ন.

সো সো করে বাতাস বইছে এমন সময় কোথা থেকে যেন চাপা গোঙানির আওয়াজ পেল নয়ন পরক্ষনেই কান্না, হাসির, অট্টহাসির

নয়ন চিতকার করে উঠল কে কে ওখানে?

কিন্ত কোন সাড়াশব্দ নেই কিছুক্ষণ পর আবার সেই অট্টহাসি নয়ন ঘামতে লাগল। তারপর আর কোন শব্দ নেই......

হঠাৎ এক পশলা বাতাস বয়ে গেল আর একটা কালো ছায়া যেন নিশব্দে ঢুকল।

নয়ন চোখের ভ্রম মনে করে আকাশের হাবভাব লক্ষ করতে লাগল, আর যেন একটা কালো অবয়ব মনে হল নয়নের, আবার সেই বিকট অট্টনাদ, নয়ন ঘামে ভিজে যেতে লাগল।...

আশেপাশে যেন হাট বসেছে .... সবাই যেন ওকে ধরতে আসছে একসাথে ....জানালা দিয়ে তাকাল নয়ন...চারপাশে হলুদ রঙের বড় বড় আগুনের গোলা যেন ঘুরে বেরাচ্ছে আর এগিয়ে আসছে... সেইসংগে বিকট অট্টহাসি নয়নের দমবন্ধ হয়ে আসতে লাগল.... হঠাত একজোড়া জ্বলন্ত চোখ জানালার সামনে এসে দাড়াল যেন চাইছে ঘরে আসতে কিন্ত অদৃশ্য বাধনের জন্য আসতে পারছে না. চোখের সামনে জ্বলন্ত চোখ সঙ্গে অট্টহাসি ....জ্ঞান হারাল নয়ন.....

উঠে দেখে সকাল হয়েছে, আর ও একটা চিতার ঘরে শুয়ে আছে স্মশানের পাশে ..... বেরিয়ে দেখল চিতায় লেখা স্বর্গীয় ভোম্বল চন্দ্র সরকার!!!!


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror