শৃঙ্খল
শৃঙ্খল


এয়ারভিউ থেকে বিধান মার্কেটের রাস্তা ধরে প্রনব রাস্তার পাশের ফুটপাথ ধরে হাটছে আজকাল এই অটোচালকদের দুইপা নিয়ে গিয়ে ভাড়ার জন্য ঝগড়া করতে ভাল লাগে না তাছাড়া রোজকার জ্যাম তো লেগেই আছে। অত:পর হেটেই রওনা দিল। রাস্তার বাঁদিকে সারি সারি ফোর্ড হুন্ডাই জাইলো সুজুকি মাহিন্দ্রা কোম্পানির সুন্দর সুন্দর গাড়ি পার্ক করানো আর ডানদিকে বাটা খাদিমস এর সুন্দর সুন্দর জুতোর সম্ভার।
প্রনব রাস্তার পাশের বাটার শোরুমের আয়নায় নিজেকে একঝলক দেখে নিল নায়কের মত না হলেও খারাপ দেখতে লাগছে না পরনে নীল শার্ট আর কালো প্যান্ট চোখে সানগ্লাস,প্রনব জামার কলারটা উঁচিয়ে চলতে লাগল।
একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বয়স আন্দাজ পাচ সাত হবে ওর সামনে দিয়ে শব্দ করে লাফাতে লাফাতে যাচ্ছে চুল রুক্ষ শুকনো সারাদেহ ধুলোমাটি দিয়ে ভরতি পরনের জামাগুলি জায়গায় জায়গায় ছেড়া ও তালিমারা । রাস্তার পাশের পাউরুটির দোকানে গিয়ে হাত পাততে কেউ সহানুভূতিশীল একজন পাচটাকার পাঊরুটি হাতে দিল, রুটি নিয়ে ছেলেটি একটুকরো নিজে নিল অপর টুকরো বোনকে দিল আর একটুকরো পকেটে রেখে আবার সামনের দিকে এগিয়ে গেল। প্রনবও এদিকওদিক দেখতে দেখতে চলতে লাগল। বাদ্যযন্ত্রের দোকানটা পেরিয়ে প্রনব সবে বিশ্রামাগারের রাস্তায় পা দিয়েছে তারপর সে যা দেখল তা এইরকম -
একজন মহিলা বয়স আন্দাজ ৩০ ৩৫ হবে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করছে পরনে একটা নোংরা শাড়ি ব্লাউজটা মাঝেমাঝে তালি মারা । মহিলার কোলে পাচসাত মাসের একটা বাচ্চা যে মহিলাটির শুস্কপ্রায় দুগ্ধ পান করার বৃথা প্রচেষ্টা করছে এবং মহিলাটি তার ছেঁড়া আচল দিয়ে শিশুটিকে ঢেকে রেখেছে আর অন্য হাত দিয়ে ভিক্ষা চাইছে যদিও তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই যে তার পা দিয়ে অনর্গল ভাবে রক্ত বেরুচ্ছে যেখানে মাছিরা তাদের আশ্রযস্থল খুঁজে নিয়েছে ।
কোথা থেকে যেন আবার ওই দুই ছেলে মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মহিলাটির কাছে আসল এবং হাসিমুখে পাউরুটির তৃতীয় খন্ড মহিলাটিকে খাইয়ে দিল ও অপরজন জল নিয়ে পরম আদরের সাথে খাইয়ে দিল মহিলার চোখে তখন শ্রাবণের বরষা নেমেছে যে শ্রাবণ সুখের না দুখের বোঝা বড়ই কঠিন।
প্রনবের ইচ্ছা হল ছেলে মেয়ে দুটোকে কিছু কিনে খাইয়ে দেয় আর মহিলাটির জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা করে,কিন্তু পকেটে হাত দিয়ে দেখে একটা লাল রঙের ২০ টাকার নোট
আর একটা ১০ টাকার কয়েন ছাড়া কিছুই নেই, এই টাকা খরচ করলে সে নিজে বাড়ি ফিরতে পারবে না
এই অবস্থায় প্রনবের নিজেকে ঘৃণা হতে লাগল, নিজের ব বিলাস ব্যসনের জন্য সে মনানলে দগ্ধ হতে লাগল মনে হতে লাগল কেউ যেন তাকে বেড়ি পড়িয়ে দিয়েছে
অত:পর কলারটা নিচে নামিয়ে সানগ্লাসটা পকেটে ঢুকিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেল।।।।।