হঠাৎ একদিন
হঠাৎ একদিন


ক্রিং ক্রিং ক্রিং.....
অ্যালার্মের শব্দে ঘুম ভাঙল সুমির , আজকাল তো আর মোরগের ডাক শোনাই যায় না অগত্যা অ্যালার্মের শব্দই ভরসা । সুমির মনে পড়ে গেল
......
বাপের বাড়ির কথা,ওর গ্রামের কথা , স্কুলের সামনেকার বটগাছ আর তেঁতুল গাছটার কথা , ছোটবেলার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওখানে, হয়ত এখন সেই বটগাছ টা নেই তেঁতুলটাও নেই মনে হয় আর।
সেই দিঘিটা সেটা কি এখনো আছে? যেখানে তার প্রথম প্রেমের স্মৃতি আজও অমলিন, দিঘির ধারে জল আনতে গিয়ে প্রেমিকের সাথে বসে গল্প করার মুহুর্তগুলি মনে পড়ল। আচ্ছা দিঘির জলে কি এখনো হাস জলকেলি করে? যেমন আগে করত।সন্ধ্যাবেলা যখন পশ্চিম আকাশ লাল হয়ে যেত, দিঘিতে হাঁসেরা জলকেলি করত, পাখিরা দলে দলে বাসায় ফিরত, সেইসময় সুমি দিঘির ধারের কোনো এক গোপন ঝোপের ধারে অপেক্ষা করত প্রেমিকের..
........ কিন্তু আজকে কেন ওর এসব কথা মনে পড়ছে, বিশ বছরে তো এসব খেয়াল আসে নি?
....টুথপেস্ট আর ব্রাশটা নিয়ে হাত মুখ ধুতে যাচ্ছে সুমি, আজকে শরীরটা যেন বেশি হাল্কা মনে হচ্ছে, যেন হাওয়ায় উড়ছে। আশ্চর্য আশি কেজি ওজন হওয়া সত্ত্বেও এত হাল্কা লাগছে কি করে! যেন কোন যাদুকর এসে যাদুবিদ্যা দিয়ে ওকে হাল্কা করে দিয়েছে।
......বেশ মজা লাগছিল সুমির.. ব্রাশ করছে আর হেটে হেটে বেড়াচ্ছে ....হঠাত আয়নায় চোখ পড়তেই থতমত খেল সুমি আয়নায় ওকে দেখা যাচ্ছে না কেন?
.. হয়ত চশমাটা পড়েনি বলেই এমন হচ্ছে
.......হাত মুখ ধুয়ে বাড়ির চাকরকে ডাকল সুমি "রামু, চা নিয়ে আয় আর কত দেরী করবি"
আশ্চর্য! কোনদিন তো এমন হয় না, প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠার আগেই রামু চা দিয়ে যায় আজ আবার কি হল?
রামু চা নিয়ে না আসায় বিরক্ত হল সুমি , এই চাকরগুলোকে দিয়ে কোন কাজ হয় না, ধুত্তেরি
নীচে নামল সুমি কিন্তু মনে হল না যে সিঁড়ি বেয়ে নামল , মনে হল যেন লাফ মেরে নীচে নামল ও
রমা, বিমল, নন্দন আশ্চর্যকথা কারো কোন উত্তর নেই সব গেল কোথায়?
হঠাত নজরে পড়ল বাড়ির সামনে রাস্তার ধারে সাদা পতাকা, তাহলে কি কেউ মারা গেছে?
-পতাকা অনুসরণ করে চলতে লাগল সুমি আর ভাবতে লাগল কে মারা যেতে পারে..
বাড়ির কারও কোন অসুখ নেই তাহলে,কে?
.... কিন্ত মানুষের মরনের কথা বলা যায় না এইতো সেদিন মল্লিকবাবু হঠাত স্ট্রোক করে মারা গেলেন। অথচ ওনার কোন রোগ ছিল না, পরিমিত খেতেন, জগিং করতেন. .... তবুও......
.........
.......... কিন্তু একি!
......... চিতায় ওটা কার দেহ? ওর মতন দেখতে হুবহু, নন্দন, সুমির ছেলে মড়াটাকে নিয়ে কাদছে সুমি এতক্ষনে বুঝতে পারল...... দীর্ঘশ্বাসের হাওয়ায় সাদা পতাকাটা উড়ছে পতপত করে .https://kagjkalom.blogspot.com/2019/04/blog-post_69.html