লাইব্রেরি
লাইব্রেরি
দুবছর পর দেখা সম্রাট আর সংহিতার । এরমাঝে রাস্তাঘাটে অনেকবার মুখোমুখি হয়েছে কিন্তু সামনাসামনি আসেনি বলেই এড়িয়ে গেছে দুজন দুজনকে ।আজ লাইব্রেরীতে বই তোলার সময় মুখোমুখি হওয়ায় এড়াতে পারল না কেউই।সংহিতাই প্রথম মুখ খুলল-কেমন আছিস?-ভালো তুই-আমিও ভালো। কি করছিস আজকাল?-এই তো গাদা গাদা বই নিয়ে নেট এর প্রিপারেশন করছি।গাদাগাদি বই হাতে নিয়ে মৃদু হাসে সম্রাট।-ওজন লাগছে? চল পড়ার রুমে গিয়ে বসি সংহিতার হাতে ভাস্কর চক্রবর্তীর কবিতার বই আর সম্রাটের হাতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জেটলি,গ্রিফিথের ইলেকট্রোডিনামিক্স আর গোল্ডস্টেইন এর ক্লাসিকাল মেকানিক্স এর বই।ধপ করে বইগুলো পড়ার টেবিলে রাখল সম্রাট।-এসব পড়ে পড়েই চোখে চশমা লাগিয়েছিস বুঝি? জিজ্ঞেস করে সংহিতা-হ্যাঁ ওই আর কি-আচ্ছা আমাকে একটা ব্যাপার বলতো এত পড়ে কি হয়? কীভাবে মানুষ পড়ার উৎসাহ পায়? আমার তো পড়ার বিন্দুমাত্র উৎসাহ জাগে না।- সম্রাট হাসে,বলেতুই জানিস প্রতিটা মানুষ একটি স্বয়ংসম্পূর্ন বই।- কীভাবে?- আলাদা আলাদা বইয়ের মত মানুষের অধ্যায়গুলি অনেকটাই আলাদা।কারো শুধু ভূমিকাই বড় মাঝখানে কয়েকপাতার কয়েকটা ছোটগল্প ,উপসংহারটিও তাড়াতাড়ি শেষ হয়।কারো ভূমিকা লেখার মানুষ নেই ,ভূমিকাই থাকে না বলা চলে ।অথচ তাদের উপসংহারটি নিয়ে একটা আস্ত উপন্যাস লেখা য়েতে পারে।কারো ভূমিকা আর উপসংহারের মাঝের গল্পগুলিই সুন্দর,মনোরম।-তাহলে কি বইয়ের মত মানুষকেও পড়া যায়?-হ্যাঁ যায়।যেমন করে তুই গোটা বই পড়তে পারিস না আর পড়লেও বুঝতে পারিস না তেমনি একটা মানুষকে কেউ সম্পূর্নরুপে পড়তে পারে না,বুঝতে পারে না।তবু অভ্যেসবসত পড়ে যেতে হয়,মানুষ পড়ার মত।-তাহলে তুই মানুষ পড়তে পারিস?-না পারিনা বই,মানুষ কোনোটাকেই আত্মস্থ করতে পারে না মানুষ। পরীক্ষায় প্রশ্ন কঠিন এলে ভুল হয়েই যায় অনেকটা আমার মতো।তুই ভালো করেই জানিস -হ্যাঁ জানি।
সংহিতা কথা ঘোরানোর জন্য বলে-আচ্ছা তুই যদি খাতা হতি তাহলে কি হত?সম্রাট বলে-আমি খাতা হলে তুই,তোরা লিখতি আমার হাতে মুখে,কপালে ,বুকে,পিঠে।সবটুকু পড়তে পারতাম না যদিও তবু কিছু কিছু পড়তাম।হাতে কেউ কিছু লিখে গেলে পড়তাম সবার আগে তারপর কনুই পেট,পায়ের লেখাগুলো পড়তাম।কিছু পড়ে ভালো লাগতো,কিছু লাগতো না।কারন পৃথিবী এমনই একটি দেশ আর মানুষ এমনই একটি খাতা যার সব পৃষ্ঠায় ভালো ,সুন্দর কথাগুলো লেখা থাকে না।তাই বুকের উপর লেখাগুলো পড়তাম।পড়তে কষ্ট হত তাই ঘাড় ব্যাঁকা করে মন দিয়ে পড়তাম।বুকের আশেপাশে যেসব কথাগুলো লেখা থাকে, সে লেখাগুলো খুব সরল আর মজার হয়।সবাই বুঝতে পারে ।কিন্তু এসব প্রশ্ন পরীক্ষায় কোনোদিন আসে না।যদিও বুকের আশেপাশের লেখা পড়তে পড়তেই অনেকের জীবন শেষ হয়।তারপর যদি দেখি যে বুকের লেখাগুলো পড়ে ফেলেছি,তাহলে কপালের লেখাগুলো পড়তাম।এমনিতে কপালের লেখা পড়া যায় না তাই কারুর থেকে একটা আয়না ধার নিতাম। পিঠের লেখাগুলো জেনে নিতাম কারুর কাছ থেকে।অবশ্য পিঠের লেখাগুলো পড়ার ইচ্ছে আমার নেই তেমন।-শুধু পড়তি?-না ,লিখতাম একটু।ভালোকিছুই লিখতাম কারণ কারো গায়ে যদি খারাপ কিছু লিখে যাই ,লেখাটা মোছার দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।আর তুই তো জানিস যে লেখার থেকে লেখা মোছা কত কষ্টের,জটিল।
সংহিতা চুপ করে যায়,ভাবতে থাকেসম্রাট বলে-তুইও একদিন লিখিস। কারো খাতায় ভালো কিছু লিখিস।দেখবি একদিন তোর আমার সবার ভালো কথাগুলি জমা হয়ে পৃথিবী একটি ভালো কথা উপন্যাস হয়ে গেছে।সংহিতা হাসে বলে -বই পড়তে পড়তে পুরো লাইব্রেরি হয়ে গেছিস।একদিন দেখা হলে ট্রিট দিস আজ উঠি।সম্রাট জানে সংহিতাকে আর ট্রিট দেওয়া হবে না। যদিও সম্রাট জানে কয়েকমিনিটের কথোপকথনে সংহিতা ট্রিট পেয়ে গেছে।

