STORYMIRROR

Nityananda Banerjee

Horror Crime

3  

Nityananda Banerjee

Horror Crime

ভোরের সূর্য্য

ভোরের সূর্য্য

4 mins
168

পর্ব সতেরো

তারপরের কথাগুলো স্পষ্ট মনে আছে শশাঙ্কর । একবার দেখলে সব দৃশ্য তার মনে গাঁথা থাকে । এ তো অনলাইনে গল্প উপন্যাস পড়া নয় । মনের মত নয় বলে একটা বাজে মন্তব্য লিখে অন্য গল্পে চলে যাওয়া অথবা সাহিত্য পত্রিকার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে একটা পর্ব পড়েই ঠুনকো মন্তব্য ছুঁড়ে দেওয়া । 

ভালো মন্দ সব কথাই শশাঙ্কর মনে থাকে । একটি অশালীন উক্তি থেকে চিন্তাশীল বাণী যতগুলো সে পড়েছে বা দেখেছে সব হুবহু মনে রেখেছে । 

উকিল সহসা বললেন - আচ্ছা , তোমার বিপাশা নামে কোন মেয়ের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল ?

আমি বললাম - হ্যাঁ, তবে তা আমাকে বাধ্য করে করানো হয়েছিল ।

- কি আমার সুবোধ বালক রে ! ইয়োর অনার ! এই ছেলেটি নিশ্চয় শিশু নয় যে ভয় পেয়ে কোন কাজ করতে বাধ্য হয়েছে । 

তারপর শশাঙ্কর দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন - তোমাকে যদি বলা হয় বাঁচতে চাও তো ( বিচারকের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন ) এই সাহেবকে গুলি করে মার তো ! না মারলে উনি কিন্তু তোমাকেই ফাঁসিতে ঝোলাবেন ।

শশাঙ্ক মুখ নীচু করে দাঁড়িয়ে রইল । উকিল সাহেব উপস্থিত তদন্তকারী পুলিশ অফিসার মিঃ হকের কাছ থেকে পিস্তল এনে শশাঙ্কর হাতে দিতে গিয়ে বললেন - এই নাও , অস্ত্র দিলাম , গুলি করে দাও ওনাকে !

জজ সাহেব চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন ।

- কি হচ্ছে কি এসব ? মিঃ উকিল সাহেব অবান্তর প্রশ্ন করছেন কেন ?

উকিল বললেন - ভয় নেই স্যার । আসামীর যথেষ্ট বয়স হয়েছে। ও জানে কোথায় কি করতে হবে না হবে । আমি এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছি সেদিন বিপাশাকে বাধ্য হয়ে নয় ; নিজের পাশবিক প্রবৃত্তি থেকেই এই রেপের মত কাণ্ড করেছিল । ও সব বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে কেস লঘু করার কৌশল মাত্র । আমি সিওর যে ও সেদিন...

হক সাহেব পিস্তল কোমরে গুঁজে বললেন - আসামী ভীষণ চতুর স্যার । 

শশাঙ্ক মিঃ কুমারকে বলল - জানেন স্যার, পিস্তলটা ছিল খেলনা পিস্তল । আমি দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম। নকল পিস্তল হাতে ধরিয়ে দিয়ে উকিল সাহেবই চতুর কৌশল নিয়েছিলেন যাতে প্রমাণ করা যায় আমি খুন করতে পারি। অবশ্য পিস্তলটা না নিয়েও আমি ফেঁসে গেলাম । উকিল প্রমাণ করে দিলেন বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন থাকলে পিস্তলটা অন্তত হাতে নিতাম । সুতরাং সেদিনও কোন বাধ্যতা ছিল না ।

আগেই বলেছি আদালতে আমার পক্ষে কোন উকিল কথা বলেনি । জজসাহেব আমাকে বলেছিলেন সরকারি সাহায্য নিতে । আমি অস্বীকার করি । কি হবে মিছিমিছি লোক দেখানো উকিল নিয়ে । আমি জানি গাজী টাকা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে । এও বুঝে গিয়েছিলাম গাজী আমার মত অনেক অনেক বেকার ছেলেদের তার দলে টেনেছে । 

জজসাহেব বললেন - এই ছেলেটিই যে ইলেকশন ক্যাম্পেনের জমায়েতে বোমা ছুঁড়েছিল তার কোন প্রমাণ আছে ?

উকিল বললেন - আছে স্যার । অনুমতি পেলে সাক্ষীকে স্ট্যাণ্ডে নিয়ে আসি ।

জজ সাহেব অনুমতি দিলেন । উকিল বাবু যে সাক্ষীকে এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলেন তাকে দেখে আমার মনে হল প্রকাশ্য দিবালোকে জনবহুল আদালতে আমি যেন ভুত দেখছি । 

মিসেস কুমার বললেন - তুমি কা'কে দেখেছিলে যে তোমার ওকে ভুত মনে হয়েছিল ?

- কি বলব ম্যাডাম ! সেদিন নিজের চোখ কানকেও বিশ্বাস করতে পারিনি । উকিল বাবু যাকে সাক্ষী পেশ করলেন সে আর কেউ নয়; আমার বোনের স্বামী শ্যামল - যে কি না মারা গেছে । বোনের থান শাড়ি পরা মলিন মুখটা চোখে ভেসে উঠল ।

অত্যন্ত ব্যাকুল স্বরে মিসেস সঞ্জনা কুমার বললেন - সে কি ? তারপর ? শ্যামল তার বয়ানে কি বলল ?

- ম্যাডাম ! নতুন কিছু বললে তো আজ আমি আপনাদের হাতের রান্না খেতে পারতাম না। যা প্রত্যাশিত ছিল তাই বলেছে।

শ্যামল পরিস্কার জজ সাহেবকে বলে দিল ' স্যার , ওইদিন অর্থাৎ জমায়েতের দিন আমি শশাঙ্ককে একটা থলের মধ্যে বোমা নিয়ে যেতে দেখেছিলাম। ওকে বাধাও দিয়েছিলাম । শোনেনি উল্টে আমাকে প্রাণে মারা হুমকি দিয়ে চলে গিয়েছিল ।

জজ সাহেব বললেন - তুমি কি ওই জমায়েতেও গিয়েছিলে ?

- না স্যার । আমি রাজনৈতিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলি ।

জজসাহেব বললেন - এটা তো গ্রহনযোগ্য প্রমাণ হল না উকিল সাহেব । 

উকিল বললেন - স্যার ওকে দু'একটা প্রশ্ন করতে চাই। 

জজসাহেব সম্মতি দিলে উকিলবাবু শ্যামলকে বললেন - শশাঙ্ক তোমার স্ত্রীর দাদা ?

- আজ্ঞে হ্যাঁ।

- ওর সঙ্গে তোমার কোন শত্রুতা আছে ?

- না ।

- তুমি কি সত্যিই ওকে বোমা মারতে দেখেছিলে ?

গাজীর লোক আদালতে বসেছিল । ওরা শ্যামলকে ইঙ্গিত করতেই শ্যামল বলে দিল - হ্যাঁ ।

উকিল বললেন - আমার আর কিছু বলার নেই স্যার 

শশাঙ্ক মাথা নামিয়ে খাবারের দিকে উদাস মনে চেয়ে রইল ।

মিসেস কুমার বললেন - তারপর ?


( চলবে )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror