ভাসান
ভাসান


দুটো নারীই যোনি বেদনায় চিৎকার করে উঠল।
একজনের চিৎকার লেবার রুমের শার্সি ফুঁড়ে বাইরে বেরুতে পারল না।
অন্যজনের চিৎকার মুখে আঁটা কাপড়ে হারিয়ে গেল।
উন্মুক্ত রাতজাগা আকাশের তলে। কোন এক নির্জন ঝোপের ধারে।
প্রথম নারীটি বেদনার পরিবর্তে পেল, একটা নতুন জীবনের মধুর উপহার।
বিধ্বস্ত স্নায়ূগুলো সান্ত্বনার উপশম মেখে মস্তিস্কে আনন্দ বার্তা পাঠাল। mনেমে এলো শান্তি।
রক্তধারা, চোখের কোণে অশ্রু, মুখের শুকনো লালা সবকিছু ভুলে নারীটি এক অপার আনন্দ আস্বাদনে মেতে উঠল।
সমাজ তাকে ডাকলো "মা" জননী বলে।শত অভ্যর্থনা...হাজার সহানুভূতি অর্জণ করলো।
সর্বোপরি নিজের শরীরের কাছে জিতে যাওয়ার এক পরম আবেশে গরবিনী হয়ে উঠল সেই নারীটি।
অন্য নারীটি তখনো পড়ে রয়েছে ভোরের শিশির মেখে ধরিত্রীর কঠিন বুকে।
অবাধ্য রক্তের ধারা ভিজিয়ে দিয়েছে নারীটির নিম্নাঙ্গের বসন।
কিছু তার শুষে নিয়েছে তৃষ্ণার্ত মাটি।
ধড়ে প্রাণ থাকলেও দাঁড়ানোর কোন ইচ্ছে বেঁচে নেই।
অশ্রুকণাগুলো পথ ভুলে হৃৎপিন্ডের উপর ঝরে পড়তে লাগলো।
মনজুড়ে দুঃখের বর্ষা নেমেছে!!
যোনির যন্ত্রনার থেকে বুকের বেদনাটা তাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে।
সর্বহারার শোকে নিস্তব্ধ, পাষাণ হয়ে গেল।স মাজের বুকে তার আর মাথা তোলার শক্তি নেই।
প্রথমজন তার ভালোবাসার পুরুষটির কাছ থেকে আদরমাখা মিষ্টি একটা চুম্বন পেল।
নারীটির দেহতন্ত্র শীতল আবেশে শিহরিত হয়ে উঠল। আঁখি পেলবে নেমে এলো সুখনিদ্রা।
অন্য নারীটিও ভালবেসে ছিল একটি পুরুষকে। বিশ্বাসের কুন্ডি উজাড় করে দিয়েছিল তার ঢেউখেলা উদ্দাম শরীরের উপর।
...সেই পুরুষটি তার লজ্জা ঢাকার বসনটুকু পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেছে!!
লালসার কামাগ্নিতে পুড়িয়েছে তার ফুলের মত নিষ্পাপ শরীরটা।
বিকৃতি যৌন লালসার শিকার হয়ে নারীটি পড়ে আছে বুকের অবশিষ্ট নিশ্বাস বায়ূর জেরে।
আশা,স্বপ্ন,ভালবাসা এমনকি তার সম্মানটুকুও আজ লুন্ঠিত। বিশ্বাসী পুরুষটির হাতে।
প্রথম নারীটি ছিন্ন যোনিমুলের বেদনাকে অগ্রাহ্য করে নতুন প্রাণ রচনার আনন্দে মেতে উঠল।
বুকের সুধাধারায় চান করাল অমৃতের সন্তানকে।
জিতে গেলেন ঈশ্বর!
মুকুটের উজ্বলতা ছড়িয়ে হেসে উঠল সমাজ।
বেঁচে গেল নারী, পুরুষের আত্মীক মিলন।
ওদিকে ভোরের আলোয় অন্য নারীটির ছিন্ন যোনিদেশ দেখল লালসী পুরুষতান্ত্রিক সমাজ!!
শত তিরস্কার আর বিদ্রুপের কঠিন বাণে অবশিষ্ট স্নায়ুগুলো কর্মক্ষমতা হারিয়ে অবশ হয়ে গেল তার। পড়ে রইল অজ্ঞান দেহটা।
যেমন ভাবে বিসর্জনের পর প্রতিমা ভেসে ওঠে।
ধীরে, ধীরে একদিন সে নিজের অজান্তেই পরিচিতা হয়ে উঠবে সমাজের বুকে।
যদিও বা হাঁটে কোনদিন সে হাজার পুরুষের ভীড়ে পা মিলিয়ে।
তবু কিন্তু সে প্রথম নারীর "মা" এর পরিবর্তে একজন "ধর্ষিতা"র খেতাবকেই আজীবন বয়ে বেড়াবে।