Rima Goswami

Tragedy Action Inspirational

3  

Rima Goswami

Tragedy Action Inspirational

বধূ যখন বেশ্যা পর্ব চার

বধূ যখন বেশ্যা পর্ব চার

14 mins
512


ছিটে বেড়ার আলো আঁধারি ঘরের ফাঁকফোকর দিয়ে গোলে ঢুকছে রোদ্দুরের তীর । পুরোনো শাড়ি কেটে বানানো পর্দা উড়ছে এদিক ওদিক গরম হাওয়ায় । টিনের দরজাটা শিকল দেয়া আছে ভিতর থেকে । রমলার খদ্দেরটি এসেছে তীব্র খিদে নিয়ে । এসেই আর সময় দেয়নি কোন বাক্যালাপের । রমলাকে ছুড়ে ফেলে সে চৌকিটাতে ,তারপর নিজের গেঞ্জি আর পরনের লুঙ্গিটা খুলে ফেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর উপরে ।

এমন সময় বাইরে দরজায় টোকা পরে । রমলাকে খদ্দেরটি ছাড়তে রাজি না এই মুহুর্তে কিন্তু রমলা জানে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে কে ! জোর করে উঠে দরজা খুলে দেয় সে । সামনে দাঁড়িয়ে আছে এরশাদ । অদুল গা নির্লোম শরীর , মোটা কবজি , ঘাড় থেকে গর্দান প্রায় সমান , বিশাল একটা ভুঁড়ির তলায় জড়ানো লুঙ্গিটা । এলাকার মস্তান এরশাদ আর এই কাদারোড বস্তির হুজুর । রত্না ছিলো বাঁধা মেয়ে ওর কিন্তু এখন রত্নার যৌবন শেষ আর সে এখন সবার মাসি । তাই এরশাদের নতুন পছন্দ রমলা । যখন তখন এরশাদ চলে আসে ওর কাছে । ওই দরজার বাইরে দুটো কড়া নেড়ে থেমে যাওয়া মানেই রমলা বুঝে যায় কে এসেছে । ইশারায় খদ্দেরটিকে বেরিয়ে যেতে বলে রমলা , লোকটিও এরশাদকে চেনে তাই চুপচাপ বেরিয়ে আসে ।

রমলার মেয়েটাকে রত্না মাসি সামনের সপ্তাহে এক বাবুর কাছে নথ তোরনি করাবে । রমলার মেয়ে চিনির বয়স বারো , প্রাইমারি স্কুলে ক্লাস ফাইবে পরে মাত্র । রমলা অনেক অনুরোধ করেছিল মাসিকে যাতে আর দুটো বছর যেন মেয়েটাকে দেওয়া হয় । মাসি শোনেনি কথা । এরশাদের খিদে মিটিয়ে ওর কাছেও কথাটা পারে রমলা । এরশাদ বলে , আজ হলেও তোর মেয়েকে পারতে হবে । কাল ও পারতে হবে । ফালতু ক্যাচাল করে লাভ নেই রমলা । দুহাতে কামাবি আর কি চাই ? রমলা বুঝলো না এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না করলেই নয় । এভাবে নিজের মেয়েকে অন্ধকারে টেনে আনতে দেবে না রমলা । উর্যা নিজের মেয়েকে মথুরা বাবুর সাহায্য কোন বড় ইস্কুলে পাঠালো । রত্না মাসি ধমকি দিয়েছিল কিন্তু উর্যা কোন কথাই শোনেনি । উর্যা সব মেয়েদের বোঝাচ্ছে যাতে তারা নিজেদের বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের এভাবে বেশ্যায় রূপায়িত না করে । রমলা এরশাদ চলে যাবার পর উর্যার কাছে যায় । উর্যা একটা তলায় তলায় ভালোই দল বেঁধে ফেলেছে এর মধ্যে ।

মথুরা বাবু নিজের জুয়েলারি সপ থেকে ফিরছেন আজ নিজেই ড্রাইভ করে । মার্কণ্ডেয় আর মাহির বিয়েটা ম্যানেজ করে ফেলেছেন উনি । পারিবারিক কর্তব্য পালন প্রায় শেষ । সতীর চিন্তা মথুরা বাবু করেননা কারণ সতী নিজেরটা খুব ভালোই বোঝে । ছেলেটা অকর্মণ্য হলেও মাহি ওকে সিধা করেই নেবে । এখন সময় সমাজের জন্য কিছু করার । উর্যার মত মেয়েদের জন্য কিছু করার । উর্যার বানানো বিপ্লবী দলকে টাকা দিয়ে সাহায্য তো মথুরা বাবু করছেন এছাড়াও এবার উনি নিজে মাঠে নামতে রাজি । এই গুন্ডা রাজত্ব বাচ্চা মেয়েদের শরীর বিক্রি করবে জোরজবরদস্তি সেটা কিছুতেই হতে পারেনা । নিজেই গাড়ি চালাতে চালাতে শুনশান রাস্তাটা পার হচ্ছিলেন রাত সাড়ে এগারোটা বাজে । কে যেন সামনে দাঁড়িয়ে গেল এসে । জোড়ে ব্রেক কসল মথুরা বাবু , গাড়িটা লোকটার সামনে দাঁড়িয়ে গেল । আজ সন্ধ্যা থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে , আকাশ তারা হীন । চারদিকে নিঝুম অন্ধকার , এলাকাটা যেন একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ । গাড়ি থেকে নেমে এলো মথুরা বাবু । সামনে দাঁড়িয়ে আছে নান্টু আর পলাশ । এরা এখানে কি করছে , মথুরা বাবুর বুক কেঁপে উঠলো । মানে বিদ্রোহের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু হয়ে গেছে । ফিরে গাড়িতে উঠতে যায় মথুরা বাবু , এখান থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পালাতে হবে । পলাশ সামনে এসে হাজির হলো নিমেষে । চুকচুক করে মুখে শব্দ করে বললো , কোথায় যাবেন বাবু ? আপনাকে আর কষ্ট করতে হবে না আমি আছি তো ! একেবারে স্বর্গে পাঠিয়ে দিচ্ছি আপনাকে । এই বলে আর এক মুহূর্ত নষ্ট না করে পলাশ সোজাসুজি একটা চাকু নিয়ে মথুরা বাবুর গলা বরাবর চালিয়ে দিলো । মথুরা বাবুর গলার নলি ফাঁক হয়ে গেল মুহূর্তে আর উনি কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে পড়ে গেলেন । দুবার ছটপট করে স্থির হয়ে গেল শরীরটা ।

পলাশ আর নান্টু অন্ধকারে মিশে গেল দ্রুত । মথুরা বাবুর নিথর দেহ পড়ে রইলো কারো নজরে পড়ার অপেক্ষায় কারণ মৃতদেহ যে কথা বলতে পারে না । পরেরদিন সকালে বডিটা লোকাল পুলিশ উদ্ধার করে , খুনের মোটিভ চুরি মনে করা হয় । নিউজ চ্যানেল , খবরের কাগজ সবেই বড় বড় হেডলাইন .. শহরের নামি স্বর্ণ ব্যবসায়ী লিঙ্ক রোড সংলগ্ন রাস্তায় খুন হয়েছেন । মার্কণ্ডেয় আর মাহি হসপিটাল ,মর্গ ছুটে বেড়াচ্ছে । সতীর এত দিন স্বামীকে নিয়ে হেলদোল ছিলো না তবে আজ মন খারাপ হয়েছে সত্যি ।

খবরটা উর্যার কানে এলো । উর্যা বুঝে গেল এটা সিম্পল খুন আর খুনটা রত্নার তরফ থেকেও করা হতে পারে । নেক্সট টার্গেট কি তবে উর্যা নিজেই ? চক্রব্যূহ কি শুধুই

কুরুক্ষেত্রের মতো যুদ্ধে রচিত হয়েছিল! না এই বিংশ শতাব্দীতেও রচিত হয় অদৃশ্য চক্রব্যূহ ।এই যুদ্ধ সব সময় নজরে আসে না।যে চক্রব্যূহ প্রবেশ করে সেই শুধু বুঝতে পারে কতটা ভয়াবহ অসহায়তা গ্রাস করে সেখানে।

কেউ কেউ প্রাণপণ দিয়ে চক্রব্যূহ কে ভেদ করে বেরিয়ে আসতে চায় কিন্তু পারে না কেউ জয়ী হয়ে বেরিয়ে এসেও মৃত শবের মত জীবন যাপন করে। উর্যা যে বিদ্রোহ আরম্ভ করেছে তাতে এবার সম্মুখ সমরে যুদ্ধ শুরু হবে । যদিও এখনই রচিত হয়ে গেছে চক্রব্যূহ । যার মধ্যে ঢুকে আর বের হতে পারলেন না মথুরা বাবু । উর্যাকে ওনার দোষীদের শাস্তি দিতে লড়াই করতে হবে । থামলে চলবে না , থামার কোন উপায় নেই । গুনগুনকে সেফ রাখতে সক্ষম হয়েছে উর্যা । নিজের জন্য আর সে ভাবে না , অনেক দিন আগেই রূপকথার জগৎ থেকে বাস্তবে মাটিতে আছড়ে পড়েছে সে । রমলার ঘরের দিকে এগিয়ে যায় সে , চিনিকে বাঁচাতে হবে পিশাচ গুলোর হাত থেকে ।

রমলা জানে মেয়েটাকে রক্ষা করা আর হয়ত সম্ভব হবে না । যার জন্য উর্যা সাহস পেয়েছিল সেই মথুরা বাবু আর নেই । কিভাবে উনি নেই হয়ে গেলেন সেটাও বুঝতে পারছে রমলা কিন্তু কিছুই করার নেই তার । এদিকে দুদিন আগেও চিনি কত প্রাণখোলা ছিলো ? সেই মেয়েটা কেমন শুকিয়ে গেছে । চিনি সব বুঝতে পারছে , রাত পেরিয়ে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে । তাই বাস্তব জীবনের ঝড় ঝাপটায় পড়ে চিনি কেমন রুক্ষ শুষ্ক হয়ে যাচ্ছে দিনদিন অথচ মা হয়ে রমলার কিছুই করণীয় নেই। চিনির শরীরটা যে বড্ড ভরভরন্ত। কৈশোরেই যেন তার উঠতি যৌবন , সূউচ্চ টলটলে স্তনদ্বয় ,যেকোনো পুরুষের স্পর্শ করতে ইচ্ছে করবে এমন । কিন্তু মন তো সেই বালিকার , ওকে যখন কোন পুরুষ কামড়ে আঁচড়ে ধরবে মেয়েটা সহ্য করতে পারবে ? রমলার বুক চিরে বেরিয়ে আসে দীর্ঘ নিঃস্বাস । উর্যা এসে দাঁড়িয়েছে কখন সে খেয়াল করে না । একমনে রমলা ঘুমন্ত চিনির মাথাটা কোলে রেখে মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছিল তার নিজের আত্মজার । চিনি রমলার একমাত্র রক্তমাংসের নাড়ি ছেঁড়া সন্তান। সন্তান যত বড়ই হোক মায়ের স্নেহ তো কমে না কোনদিন । উর্যার চোখ দুটো ভিজে যায় রমলার মনের মধ্যে ঝড়কে বুঝতে পেরে । উর্যা এগিয়ে এসে রমলার হাত দুটো ধরে । ওকে দেখে রমলা বলে , তুমি এখানে এসেছ ? উর্যা তুমি চলে যাও ,না হলে আমাদের অবস্থা ও ওরকম হবে মথুরা বাবুর মত । উর্যা রমলার পাশে বসে আর বলে , জানো রমলা ভয় এমন এক জঘন্য অনুভূতি যা মেরুদন্ড নুয়িয়ে দিতে পারে মানুষের ।কবলিত করে রাখতে পারে তার চেতনা আজীবন এবং তাকে ফেলতে পারে আছড়ে মাটিতে । ভয়কে না জয় করতে পারলে আমাদের সাথে আমাদের মেয়েদের জীবন ও এই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে তার পর ওদের পরের প্রজন্মকে ও এই পথই বেছে নিতে হবে । তোমার হাতে চিনির ভবিষ্যত রমলা , তুমি না পারলে কেউ পারবে না ।

উর্যা আর কথা বাড়ায় না , রমলাকে ভাবতে বলে বেরিয়ে আসে ওর ঘর থেকে । রত্নার দুই দালাল পলাশ আর নান্টু দাঁড়িয়ে ছিলো ওদের ঠেকে । উর্যাকে দেখেই সিস দিতে দিতে এগিয়ে এলো পলাশ । অবে ও ছাম্মাক ছাল্লো ! কোমর দুলিয়ে যাচ্ছো কোথায় ! আমিএগিয়ে দেবো নাকি ,"

ঠেকে বসে বিড়ি ফুঁকতে থাকা এরশাদ উর্যাকে একবার মেপে নেয় দুটো চোখ দিয়ে । পলাশ বিশ্রী অঙ্গভঙ্গি করে ওঠে , উর্যা আড়চোখে দিকে একবার তাকায় তবে কিছু না বলেই হনহন করে হাঁটা লাগায় । ওকে কোন উত্তর না দিয়ে পেরিয়ে যেতে দেখে নান্টু বলে যাবে নাকি হে তোমার নাগরের সাথে দেখা করতে ! সে তো স্বর্গে গেছে কাল শুনছি । সোনার কারবাড়ির সাথে ঘষাঘষির করার মজাই আলাদা ভাই ..." উচ্চস্বরে শিস দিয়ে বলে উঠলো পলাশ । কিন্তু মামনি সে তো আর নেই তাই সোনার বদলে চামড়ার লিঙ্গ দিয়েই ঘষাঘষি করতে হবে এখন থেকে । আর হ্যাঁ তোর মেয়ে গুনগুনকে যেথায় রেখেছিস ভালো করেছিস । কিন্তু যখন ওর নথ তোরনি করার সময় আসবে ওকে চুপচাপ নিয়ে চলে আসবি না হলে খবর আছে তোর । রাগে উর্যার রগ দুটো দপ দপ করছে কিন্তু তবুও কিছু না বলে বেরিয়ে আসে ওখান থেকে ।

চিনি বুঝতে পারে এক ভয়ঙ্কর পৌরুষ থাবা তার দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। কিন্তু কি করবে পালালে মাকে ওরা মেরে ফেলবে । আর এখানে থাকলে ওকে রোজ রোজ মরতে হবে । নিয়তি আজব _মেয়েদের শরীরটাও এমন লোভনীয় ভাবে তৈরি করেছে ভগবান !বাপের বয়সী থেকে হাঁটুর বয়সীর চোখের দৃষ্টি দিয়ে চাটতে ছাড়ে না কেও। চিনির মা রমলা ঘুমাচ্ছে অকাতরে , রাত অনেক হয়েছে । সারা পাড়া শুনশান হয়ে আছে । টিনের দরজাটা খুলে বাইরে পা টিপে টিপে বেরিয়ে আসে চিনি । রাস্তার মোড়ে এসে একবার শেষবারের মতো জন্ম থেকে বাস করে আসা এলাকাটাকে চোখ বুলিয়ে নেয় সে । তার পর ছুটতে শুরু করে সর্বস্ব শক্তি সঞ্চয় করে । পালাতে হবে এই এলাকা ছেড়ে , এ শহর ছেড়ে , দরকার হলে পৃথিবী ছেড়ে তবুও মায়ের মতো চিনি রোজ রোজ অত্যাচার সহ্য করবে না । সিগারেটের ছেকা , চুলের মুঠি ধরে মার এসব চিনি মেনে নিতে পারবে না কিছুতেই । চিনি ছুটে চলেছে প্রানপন , পিছনে ধাওয়া করার আপাতত কেউ নেই তবু সে যেন এক ছুটে পৃথিবী পার করে ফেলবে । ক্লান্তিতে বুকের ভিতর যেন কেউ হাতুড়ি পেটাচ্ছে , বুক থেকে হার্ট ফেটে বের হয়ে আসবে মনে হচ্ছে তবুও থাকলে তো চলবে না । থামা মানেই নয় মৃত্যু নয় হেরে যাওয়া । অনেক সময় পর আর চিনি পারছে না শরীরটা টেনে নিয়ে যেতে । দু চোখে অন্ধকার নেমে আসছে যেন ধীরে ধীরে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে ওর দিকে । চিনি পড়ে যায় রাস্তার মধ্যেই । গাড়িটাতে মথুরা বাবুর অন্তিম ক্রিয়া সেরে মার্কণ্ডেয়কে নিয়ে ফিরছিলো মাহি । রাস্তার মধ্যে ওভাবে কাউকে পড়ে যেতে দেখে মাহি ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে । গাড়ি থেকে নেমে আসে মাহি আর মার্কণ্ডেয় । উপুড় হয়ে পড়ে থাকা শরীরটা সোজা করে চমকে ওঠে মাহি । এ তো কাদারোড বস্তির রমলার মেয়ে চিনি ! মার্কণ্ডেয়কে মাহি অনুরোধ করে চিনিকে গাড়িতে তুলে বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে যেতে । মার্কণ্ডেয় অন্য সময় হলে বাকবিতণ্ডা করত নিশ্চিত কিন্তু আজ তার মন ভালো নেই তাই সে কথা না বাড়িয়ে চিনিকে তুলে গাড়িতে ওঠায় । অচেতন ওকে নিয়ে মাহি মথুরা বাবুর বাড়িতে তোলেন । মার্কণ্ডেয়র মা সতী সদ্য স্বামী হারিয়েছেন এর মধ্যে এক বারাঙ্গনার মেয়েকে এভাবে মাহির ঘরে তুলে আনাটা স্বাভাবিক ভাবেই ভালো চোখে দেখলেন না । তবে মুখে কিছু বললেন না সতী । মাহির জন্য যে ঘরটি সতী ব্যাবস্থা করেছেন রাতে থাকার জন্য সে ঘরেই চিনিকে নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিল মার্কণ্ডেয় । এমনিতে মাহি হোস্টেলে থাকে কিন্তু এই ঘটনা ঘটার পর এখন কিছুদিন সে মার্কণ্ডেয়কে সঙ্গ দিতে এই বাড়িতেই থাকবে স্থির করেছে । চিনিকে চেঞ্জ করিয়ে একটা নিজের ঢিলা নাইট সুট পরিয়ে দিলো মাহি । মেয়েটার জ্বর আসছে , রমলার সাথে কি চিনির কিছু হয়েছে ? কেন এভাবে রাস্তায় ছুটছিলো চিনি ? কোন বিপদ ? মাহি বুদ্ধিমতী মেয়ে , সে স্থির করে উর্যার কাছে খবরটা নেবে । আপাতত কাউকে সে জানাবে না যে চিনি তার কাছে আছে । হবু শশুর মশাই মথুরা বাবুর মৃত্যুর পর কেন জানেনা মাহির মনে হচ্ছে খুনটা ওই যৌনপল্লী রিলেটেড । কারণ উনি কোন প্রিসিয়াস গয়না বা স্টোন নিজের সঙ্গে ক্যারি করেননি গতরাতে , জুয়েলারি সপ থেকে ফাঁকা হাতেই বেরিয়ে ছিলেন । হ্যাঁ ড্রাইভার সঙ্গে নেননি যেমনটা উনি মাঝে মাঝেই করতেন । উর্যার কাছে যেতেন উনি আর সেই থেকেই সম্পর্কে একটা বেশ ঘনত্ব এসেছিলো । উর্যার মেয়ে গুনগুনকে ভর্তি করেছিলেন মথুরা বাবু কনভেন্টে । উর্যার এই যে লোকাল গুন্ডা আর ওদের মালিক রত্না মাসির সাথে ঝামেলা শুরু হয়েছে চাইল্ড প্রস্টিটিউশন নিয়ে সেটাতেও মথুরা বাবু উর্যাকে সাহায্য করছিলেন । তার জন্যই কি খুন করে দেওয়া হয় ওনাকে ? এই যে চিনিকে মাহি নিয়ে এলো সঙ্গে করে , এতে কি বিপদ ডেকে আনলো সে নিজে থেকেই ? না মাহির ভয় পেলে চলবে না । চিনি কেন পালিয়ে যাচ্ছিলো সেটা জানলেই সব বোঝা যাবে একে একে । চিনিকে একটা প্যারাসিটামল গুলে চামচে করে খাইয়ে দেয় মাহি । জ্বর বাড়তে দেওয়া যাবে না । সসারাদিনের ক্লান্তি শরীরে আর মনে , মাহির চোখে ঘুম নেমে আসে ।

সকাল থেকেই রমলার ঘরে ঢুকে ঝামেলা শুরু করেছে রত্না আর তার দলবল । একে চিনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না আবার মাসির অত্যাচার , রমলা যেন মুখের কথা ও হারিয়ে ফেলেছে ।

প্রকৃতি এই কঠিন পৃথিবীতে টিকে থাকবার জন্য সবাইকে কিছু না কিছু বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে পাঠায়। মেয়েদের ক্ষমতা আছে এক্সট্রিম লেভেল পর্যন্ত সহ্য করার আর ব্যাঙদেরও তেমনি একটি বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে এই পৃথিবীতে পাঠানো হয় ,আর তা হলো যে কোনো পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে! ধরুন আপনি এক‌টি ব্যাঙকে ফুটন্ত পানি ভর্তি একটি হাঁড়ির ভিতরে ছেড়ে দিলেন, তখন ব্যাঙটি কি করবে জানেন? সে শরীরের সমস্ত শক্তি ব্যবহার করে নিজের শারীরিক তাপমাত্রা ফুটন্ত পানির তাপমাত্রার সমমানে নিয়ে যাবে যেন সে সেই ফুটন্ত পানিতে টিকে থাকতে পারে ! শরীরের সব শক্তি ব্যবহার করবার কারণে একসময় ক্লান্তি এসে ভর করবে তার শরীরে!তখন সে শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হবে! তখন ক্লান্ত শরীরে সে ঠিক করবে, অনেক হয়েছে!এবার এক ঝাঁপ দিয়ে হাঁড়ির বাইরে পড়বো। কিন্তু তখন আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই তার শরীরে,ঝাপ দেবার জন্য! ঠিক তেমন অবস্থা রমলার । কিল চর বা ঘুষি এসব খেয়ে ঠোঁটের কোণে রক্ত জমিয়ে ও সে যখন চিনি কোথায় বলতে পারলো না রত্না পলাশকে অর্ডার দিলো রমলাকে বেঁধে ফেলে রাখতে । প্রচন্ড মারধোর করে রমলাকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে ওর ঝুপরিটা তালা ঝুলিয়ে পলাশ বেরিয়ে গেল চিনিকে খুঁজতে । যে ভাবেই হোক মেয়েটাকে খুঁজতে হবে ওদের ,রত্না মাসি পার্টির কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে রেখেছে । এখন মাল সাপ্লাই না দিলে টাকাতো যাবেই , ওই ড্রাগস পাচারকারী নেতা সাইফুল গুলি করে মেরে ফেলতেও পিছপা হবে না । রত্না রাগে উর্যার ঘরের দিকে যায় । যত নষ্টের গোড়া ওই আপদ , না জানি কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে বিজলি মাসির দয়াতে । আর এখন এই যৌনপল্লীর ভগবান সাজতে চাইছে মেয়ে ! রত্না ভাবে আজ চিনিকে না পেলে এই উর্যাকেই সাইফুলের সামনে পেশ করবে অপরাধী হিসেবে । শালীর গরম কতখানি সেটা বোঝা যাবে তখন । মনে হয়ে ছিল মথুরা বাবুকে শেষ করে দিলে হয়ত কেঁচোর মতো গুটিয়ে যাবে মেয়েটি , তা না হয়ে আরো যেন উগ্র হয়ে গেছে উর্যা । এর খেল খতম করে দেওয়াটাই মনে হয় লাস্ট অপশন । এসব ভাবতে ভাবতে উর্যার ঘরে ঢুকে পড়ে রত্না । চিবিয়ে চিবিয়ে কটা গালমন্দ করে উর্যাকে তারপরে । তাতে খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ করে না উর্যার । শেষে মোক্ষম দাওয়াই টা দেয় । রত্না জানায় উর্যার পূর্ব পরিচয় পত্র জমা দিতে হবে লোকাল পার্টি অফিসে । সরকারের কাছে ওদের ভোটার তালিকা দিতে হবে । একথা শুনে উর্যার চোখে মুখে অস্বস্তি লক্ষ্য করা গেল । রত্না আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে আসে উর্যার ঘর থেকে । পাকা খেলোয়াড় রত্না বুঝে যায় উর্যাকে বধ করার মোক্ষম অস্ত্রটা কি ? উর্যা রত্না চলে যাবার পর চিন্তায় পড়ে যায় , এবার সে কি করবে ? এখনো মথুরা বাবুর আচমকা চলে যাবার ঘা মনে দগদগে । এরই মধ্যে চিনিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । এবার পরিচয় পত্র কি দেবে উর্যা পার্টি অফিসে । পুরোটাই এরশাদ আর রত্না মাসির চাল বোঝা যাচ্ছে তবু কিছু একটা না করলেই নয় । এভাবে আর হাতপা গুটিয়ে বসে থাকা চলে না । মেয়েটা হোস্টেলে আছে ঠিক কথা কিন্তু মথুরা বাবু আর নেই তাই অর্থনৈতিক ভাবে মেয়ের দায়িত্ব এবার উর্যাকেই নিতে হবে । এরই মধ্যে ফোনটা বেজে উঠলো ঝনঝন করে , স্ক্রিনে ফুটে উঠছে মাহি দিদির নাম । উর্যা বাইরে বেরিয়ে আসে পাশে দেখে নেয় তারপর ফোনটা ধরে । মাহি উর্যাকে জানায় রমলার মেয়ে চিনিকে সে গত রাতে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে নিজের কাছে রেখেছে । চিনি এখনো জ্বরের ঘোরে আছে , ভুল বকছে । উর্যাকে মাহি জানতে চায় এবার কি করণীয় ? চিনি কেন পালিয়ে যেতে চাইছিলো ওভাবে ? আর চিনিকে কি মাহি রমলার কাছে দিয়ে আসবে ? উর্যা চিনির খবরটা পেয়ে নিশ্চিন্ত হয় । যাক তার মানে মেয়েটা বিক্রি হওয়া থেকে বাঁচতে পালিয়ে যাচ্ছিল এবং কপাল ভালো যে মাহির হাতে পড়েছে । কিন্তু চিনির খবর যদি রত্না মাসি পায় তা হলে তো খবর আছে । মাহিকে উর্যা অনুরোধ করে কয়েকদিন চিনিকে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতে । আর ওর বিষয়ে কাউকে কোন ইনফরমেশন দেবার প্রয়োজন নেই । ফোনটা রেখে উর্যা ভাবলো একবার গিয়ে রমলাকে খবরটা দিয়ে আসা যাক আবার পরের মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে সে । রমলাকে ঘিরে রেখেছে রত্নার ছেলেরা । এ অবস্থায় চিনির খবর রমলাকে দিতে গেলে , মেয়েটাকে আবার ওরা এই নরকে তুলে আনবে । তার থেকে রমলা চিন্তা করে করুক অন্তত মেয়েটা তো বাঁচবে ! উর্যাকে এবার মাঠে নেমে খেলতে হবে কারণ হতে সময় খুব বেশি নেই । কদিন থেকেই শরীরটা ভাল যাচ্ছে না উর্যার ! মথুরা বাবু মারা যাবার আগের দিনই শেষ পর্যন্ত তার কারণ জানা গেল! উর্যা কর্কট রোগে আক্রান্ত! না , ডাক্তার তার সাথে কোন লুকোচুরি করলেন না! স্পষ্ট ভাবে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার তাকে খুব সংযত স্বরে যে কথাগুলো বলল তার সারমর্ম করলে যা দাঁড়ায় তা হলো উর্যার দিন এখন সীমিত! সে ক্যানসারের শেষ ধাপে আছে! এটাকে ডাক্তারি ভাষায় চতুর্থ ধাপ বলে! সে নাকি আর খুব বেশী হলে সে মাস খানেক বাঁচতে পারে! রোগী এরকম শেষ পর্যায়ে কেন ডাক্তারের কাছে এলো তা নিয়েও উনি বিস্ময় প্রকাশ করেন । উর্যা ডাক্তারকে বলে ছিলো জানেন ডাক্তার বাবু , এই পৃথিবীতে কিছু মানুষ থাকে যাদের ভাগ্য সিল গালা করা থাকে! এরা যতই চেষ্টা করুক এদের ভাগ্যের কোন হের ফের হয় না! আমি সেই গোত্রের এক অভাগী । কিছুদিন ধরেই পেটে ব্যথা অনুভব হতো উর্যার । সে ভেবে ছিলো গ্যাস অম্বলের ফলে হচ্ছে । তারপর একদিন খুব শরীর খারাপ লাগলে বাধ্য হয়েই ডাক্তারের শরণাপন্ন হয় । আর তারপরেই জানা যায় প্যানক্রিয়াটিস ক্যানসার । মথুরা বাবুকে জানানোর আগেই তো উনি মারা গেলেন । এখন যদি হেঁটে চলে বেড়ানোর অবস্থায় থাকতে থাকতে উর্যা এই অত্যাচারের দুর্গকে ভেঙে গুঁড়িয়ে না দিতে পারে ওর মৃত্যুর পর তা হলে এর ফল মেয়েটাকে ভুগতে হবে । রত্না মাসি উর্যার মৃত্যুর পর গুনগুনকে হোস্টেল থেকে বের করে এই পেশায় নিয়োজিত করবে সেটা শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা । গুনগুন কিছু বুঝে উঠবার আগেই কুয়ার অতল গহ্বরে হারিয়ে যাবে । এই অন্ধ কূপেরই ভেতর কেটে যায় তাদের বাকিটা জীবন ওর ! কেঁদে ফেলে উর্যা মেয়ের জন্য ভাবতে ভাবতে । পৃথিবীতে এত এত মানুষের মাঝে কিছু অভাগা মানুষ থাকে যাদের ভাগ্য কখনোই বদলাবার নয়! ঊর্যাও তেমনি একটি অভাগীনি মেয়ে! জন্মের পর মা ছেড়ে চলে গেছে , ঠাকুমার শাসনে বড় হয়ে ওঠে সে । তার পর ঋষির সাথে বিয়ের পর উর্যা ভাবেনি কোনদিন কষ্ট তার জীবনে ফিরে আসতে পারে । অথচ ওকে ভুল প্রমাণ করে ঋষি নিজেই কষ্ট হয়ে ওঠে ওর জীবনে । মেয়ে গুনগুনের জন্মের পর নিজের হাতে ঋষিকে শেষ করে হাতে কিছু সম্বল নিয়ে পালিয়ে আসে উর্যা । পথে শেষ সম্বলটুকু চুরি যায় , শেষ আশা মামাবাড়িতে বুঝে যায় ঠাঁই নেই ।তারপর নিজের শেষ টুকু এই শরীর তাই বিক্রি করে বাঁচতে চায় উর্যা । শেষে শরীরও ওর সাথে বিটরে করে দিলো ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy