STORYMIRROR

Rima Goswami

Tragedy Crime Thriller

3  

Rima Goswami

Tragedy Crime Thriller

বধূ যখন বেশ্যা পর্ব 6

বধূ যখন বেশ্যা পর্ব 6

14 mins
458

ভিতরে আসতে পারি মাহি মা ? সতীর গলা কানে আসে মাহির । চিনির সাথে কথা বলতে বলতে এক অন্য জগতে হারিয়ে গেছিলো মাহি । সতী আন্টির গলা পেয়ে সে বাস্তবে ফিরে এলো । আন্টি প্লিস আসুন ভিতরে । সতী ভিতরে ঢুকে আসে । চিনি এই অজানা ভদ্রমহিলাকে দেখে ভয় পেয়ে মাহির কাছে ঘেঁষে বসে । মাহি ওর ভয়টা বোঝে । মার্কণ্ডেয় এখন ব্যস্ত নিজের বাবার জুয়েলারি ব্যবসা দেখা আর বাবার খুনিদের ধরার চেষ্টা করে । মাহি চিনির দায়িত্ব নিয়েছে বলে সেভাবে এন জি ওর সাথে কাজ করতে পারেনা । মাহি খাটে বসে ছিলো চিনির সাথে । সতী ওদের সামনে রাখা সোফাটাতে বসে । তারপর মাহির যাবতীয় শঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে বলে , আমাকে নেবে মাহি তোমাদের এই অসুরদলনী দলে ? নামে আমি সতী আদতে সারাজীবন সূর্পনখা হয়েই কাটিয়ে দিলাম । কোন ভালো কাজ তো করিনি কোনদিনই । দেখোনা দামি দামি শাড়ি , গয়না এসব নিয়েই পড়ে আছি আজীবন । যাকে ঘিরে আমার সাজ , সেই কখন আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল দুম করে । পড়ে রইলো আমার দামি দামি লাল পেড়ে গরদ , কান পাশা , নথ , সীতাহার । কার জন্য পড়তাম আমি ওগুলো মাহি ? এখন বুঝছি যার জন্য পড়তাম সেই যখন আর নেই তাই ওগুলো সব মূল্যহীন । আমি বলছি না যে বিধবার সাজের অধিকার নেই । আসলে যার জন্য সাজবো তার না থাকাটা আগ্রহহীন করে আমাদের । ভালোবাসতাম মাহি মানুষটাকে , এই বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে সতী নিজের চোখ দুটো মুছে নেয় । মাহি বিছানা থেকে উঠে সতীর কাছে গিয়ে বসে । তারপর বলে , আপনি আমাদের সাথে এই লড়াই লড়বেন ? আঙ্কেল আজ থাকলে সত্যি খুব খুশি হতেন আপনার ডিসিশনে । এদেশে অধিকারের লড়াই খুব শক্ত যে ! আপনি এই লড়াইয়ে যুক্ত করলে নিজেকে , আপনার গায়েও কাদা এসে ছিটবে । এ দেশের জর্জর স্বাস্থ্য পরিষেবা, ক্ষুধার্ত মানুষের মৃত্যু, হাইলাইট হওয়া তো দুরের কথা,নিউজ চ্যানেল অথবা খবরের কাগজে,সামান্য জায়গাটুকু

পায় না। প্রতিনিয়ত হাজারো কৃষক, শ্রমিক, জওয়ান, সাধারণ মানুষের জীবন,, সরকারি গাফিলতির কারণে,, অকালে ঝরে যেতে চলেছে।। এটা অন্ধ মিডিয়া দেখেও দেখে না , বধির সিষ্টেম,, শুনেও শুনতে পায় না। এখন বাঁচতে হলে নিজেকে ময়দানে নামতেই হবে আন্টি । মাথা উঁচু করে বাঁচতে গেলে প্রতিটা মুহূর্ত লড়াই করতে হবে।সব সময় যে আমাদের হয়ে প্রতিবাদ করার জন্য পাশে কেও থাকবে তেমন তো নাও হতে পারে, আমাদের নিজেদেরই মানসিক ভাবে সবরকম প্রতিকূলতার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। না হলে বার বার আমাদের হারতে প্রস্তুত থাকতেই হবে । সতী উঠে যায় চিনির কাছে আর চিনির কপালে চুমু খেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে । চিনি অবাক হয়ে যায় । হাউ হাউ করে কেঁদে ওঠে চিনি এই অপ্রত্যাশিত আদরে । গোধূলি বেলার নরম আলো সাক্ষী থেকে যায় এই মধুর মিলনের । মার্কণ্ডেয় ব্যবসা দেখছে একদিকে অপরদিকে রত্না , সাইফুল এদের পুরো টিমটার ডিটেইল রাখছে । কে কি করে , কি ব্যবসা কত দিন ধরে চলছে সব ইনফরমেশন কালেক্ট করতে থাকে । ওদের ঘাড় দাবিয়ে ওদের ধরতে হলে দরকার পোক্ত প্রমাণের ।

বাবার মার্ডারটা সহজ কোন চুরির উদেশ্য হয়নি । ঝামেলাও হয়েছিল বিস্তর, মার্কণ্ডেয় চায়নি মাহিকে এইসবের মধ্যে জড়াতে, সে বরং চেয়েছিল নিজের বাড়ির থেকেই আপাতত কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও মাহিকে পাঠিয়ে দিতে।সব কিছু মিটে গেলে তার পর না হয় ফিরবে,কিন্তু মাহি রাজি হয়নি । ও চায় সামনে থেকে লড়াই চালিয়ে যেতে ।

এমন কি এ দিনও সে চুপচাপ ছিল হয়তো মনে মনে আসন্ন ঝড় সামলানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল,আর মানসিক অস্থিরতায় ভুগছিল মার্কণ্ডেয় মনে সংশয় জাগছিল চিনি মেয়েটার দায়িত্ব নিয়ে ওরা বিপদ ডেকে আনলো কি ! না আর পিছনে ফিরে দেখে একদম লাভ নেই । মার্কণ্ডেয়র সাথে কেউ দেখা করতে এসেছে বলে তার ম্যানেজার জানায় । মার্কণ্ডেয় ভিসিটরকে নিজের ক্যাবিনে পাঠিয়ে দিতে বলে । আসতে পারি ? বাইরে থেকে সাইফুল আলম চৌধুরীর গলা কানে এলো মার্কণ্ডেয়র । ভিতরে আসুন ... মার্কণ্ডেয় বলে । সাইফুল এখানে কেন এসেছে খুব ভালো করেই সে বুঝতে পারছে । মানে এই গুপ্তচর লাগানোর কথাটা কানে গেছে লোকটার । অনুমতির অপেক্ষা না করেই সাইফুল বসে গেল মার্কণ্ডেয়র সামনে রাখা চেয়ারটাতে । তারপর বিচ্ছিরি হেসে বলল , ক্যা বাবু আপনি এভাবে আমাদের দিকে টিকটিকি লাগলেন কেন ? সোনার ব্যাবসায়ী আপনি । আপনাকে কি কাদা ঘাঁটলে দেখতে ভালো লাগবে ? ওসব বাদ দিয়ে নিজের বাপের ব্যবসা দেখুন কাজে দেবে । মার্কণ্ডেয় বুঝলো এদের কান্ডকারখানা তে উঁকি দেবার দোষে দোষী সাব্যস্ত করে এখন মার্কণ্ডেয়কে মিষ্টি কথায় ধমকাতে এসেছে সাইফুল । মাথাটা গরম হয়ে গেলেও চুপচাপ শুনে নেয় সবটা সে । সাইফুল কথা শেষ করে বেরিয়ে আসে ওখান থেকে । মার্কণ্ডেয় বুঝে যায় সাবধানে খেলতে হবে না হলেই বিপদ । ওদিকে উর্যার কানে এলো চিৎকার চেঁচামেচি । ছুটে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এসে যেটা ও দেখলো তাতে মাথা শূন্য হয়ে যায় ওর । রমলা কুয়ো পাড়ের থামটাতে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে । উর্যা হতচকিত হয়ে ওই খানেই বসে পরে কিছুক্ষণ । এই ভর সন্ধ্যা সময় সবার চোখের সামনে কখন এই কান্ড করলো রমলা ? আদতেও কি সে নিজে মরেছে না ওকে মেরে দিলো রত্না মাসির লোকেরা ? উর্যা উঠে দাঁড়ায় , তারপর একপা একপা করে এগিয়ে যায় রমলার ঝুলন্ত লাশটার দিকে । রত্না মাসি ও এসে পড়ে ঘটনাস্থলে । উর্যা আগুন চোখে রত্নার দিকে তাকিয়ে থাকে । জোর গলায় চিৎকার করে উর্যা বলে , কেন মারলে রমলাকে মাসি ? কেন ? রত্না চোখ মুখ ঘুরিয়ে নাটকের সুরে বলে , এই তুও মেলা বকিস না তো উর্যা । আমি কেন মারবো ওকে ? বেচারার মেয়েটা কোথায় যে পালালো ! সেই দুখেই মরলো বেচারি ।

পোক্ত এলিবাই রেডিই আছে রত্নার । পুলিশ এসে বডি নিয়ে গেল । উর্যা খবরটা মাহিকে দিলো কিন্তু এটাও বলে দিল মাহি যেন কোনভাবেই চিনিকে না বলে কথাটা । আদতে এটা একটা চাল , রত্না রমলাকে ইচ্ছা করে মেরে ফেলেছে । সে চাইছে খবরটা চিনির কান পর্যন্ত পৌঁছাক । তা হলে ঠিক চিনি মায়ের মরা মুখ দেখতে আসবে । আর রত্না এই ফাঁকে ধরে ফেলবে চিনিকে । কিন্তু খেলা খেলতে এখন ঊর্যাও শিখেছে । চুপচাপ দাঁতে দাঁত চেপে রমলার মৃত্যু হজম করে নেয় সে । এদিকে মার্কণ্ডেয় বেশ কিছু তথ্য জোগাড় করতে পেরেছে । সাইফুলের অবৈধ কয়লা খাদানের ব্যবসা , বাচ্চা মেয়েদের পাচার করা থেকে গাঁজা সাপ্লাই সবের হিসাব রক্ষণ করে ফেলেছে মার্কণ্ডেয় । মাহি সব শুনে বেশ অবাক হয়ে যায় । রত্না আদতে সাইফুলের সাথে কাজ করে । বাচ্চা মেয়েদের দুবাই পাচার করে দেয় ওরা । এসব মেয়েদের যৌনদাসী করে রাখা হয় । নানা ধরনের অত্যাচার করে আরবি শেখরা এদের কিনে নিয়ে । সদ্য মা হারা চিনি জানেও না তার মায়ের শরীরটা এখন মর্গে পড়ে আছে । কিন্তু ওকে বাঁচাতে গেলে এখন ওকে কিছু বলা যাবে না । এমনিতে চিনি এখন ভালোই আছে । সতী দেবীর সাথে খুব ভাব হয়ে গেছে ওর । মাহি বুকে পাথর চেপে চুপ থেকে যায় । এখন ওদের প্ল্যান অনুযায়ী টার্গেট রত্না মাসি । ওকে একবার জেলে পুরতে পারলে সাইফুলের দিকে নজর দেওয়া যাবে । আর রত্না পর্যন্ত পৌঁছাতে গেলে ওর ডান ও বা হাত দুটো কাটতে হবে । মানে পলাশ আর নান্টু । নান্টুকে জব্দ করা অনেক সহজ তবে পলাশ ছেলেটি ওর মা রত্নার মতোই ধূর্ত । পলাশ ভীষণ নৃশংস ও বটে যার নমুনা উর্যা সেদিন দেখেওছে সাইফুলের বাড়িতে । তবে মরণকে তো আর উর্যা ভয় পায়না । আজ নয়ত কাল সে আসবেই উর্যার কাছে তাই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সে এই অসুর দমনে । রাগে নিজেকে সামলাতে পারছে না তবুও মার্কণ্ডেয়কে প্রমান জোগাড়ের সময় দিতে অপেক্ষা করতে হবে । ছেলেটা মথুরা বাবুর মৃত্যুর পর আমূল পরিবর্তন করে নিয়েছে নিজেকে । সাইফুলের গাঁজার যে গাড়ি ফুলের বাজারের গাড়ির সাথে মিশে স্টেট বর্ডার পাস করত সেটা কিভাবে যেন পুলিশের হাতে পরে গেছে । নার্কটিক্স ডিপার্টমেন্ট সাইফুলকে সোজাসুজি তাক করতে পারেনি তবে পারতে কতক্ষন ! এই ব্ল্যান্ডার হবার কারণটা হলো নান্টু । সেই নাকি গাঁজা পাচারের খবর লিক করে । ওই ব্যাটাকে তুলে আনা হয় সাইফুলের বাড়িতে । নান্টু বলে এটা অন্য কারো চাল , সে এরকম কোন কাজই করেনি । কেউ শোনে না ওর কথা । পিটিয়ে হত্যা করে নান্টুকে পলাশ আর অন্য ছেলেরা । পলাশ তখনো জানে না আগামীদিনে তার জন্য কি অপেক্ষমাণ । এভাবেই মার্কণ্ডেয়র দাবার চালে রত্নার বা হাত কাটা পড়ে । নেক্সট টার্গেট পলাশ ছিলো । উর্যা ওকে কিছুদিন একটু বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছে । পলাশ বেশ্যার সন্তান ও দালাল হলেও একটু মেয়েবাজ । উর্যাকে ওর এমনিতেই বেশ পছন্দ কিন্তু ওই মেয়ে তো কোনদিন টাকা ছাড়া কাউকে বিছানায় নামতে দেয়না । তাই পলাশের ও কোনদিন উর্যাকে চেখে দেখা হয়নি । রমলার মৃত্যুর পর উর্যা পলাশকে বেশ গুরুত্ব দেয় । মাঝে মাঝে নিজের ঘরে ডেকে লিকার চা ও দেয় । সবমিলিয়ে পলাশ বোঝে যে উর্যা এখন হাতের মুঠোয় । তো সেদিন সন্ধ্যায় অসময়ে বৃষ্টি হওয়াতে পলাশ ঘরেই ছিলো । এর মধ্যে উর্যার ফোন এলো , ওকে নিজের ঘরে আসতে বলছে উর্যা । হাতে চাঁদ পাবার মতো ছুটলো পলাশ । গিয়ে দেখে মোহিনী রূপে সেজে বসে আছে উর্যা । পরনে নেটের মেরুন রাত পোশাক । পলাশ উর্যার দিকে এগিয়ে যায় । এমন সময় আচমকাই জানালা দিয়ে একটা গুলি এসে বিঁধে যায় পলাশের বুকে । হৃদয় ফুটো করে দেয় বুলেট । মুখ দিয়ে ভলকে ভলকে রক্ত বের হয় আর পলাশ চিরতরে থেমে যায় । গুলির শব্দ চারদিকে নিস্তব্ধতা খানখান করে দেয় । উর্যা চিৎকার করে সাহায্য চেয়ে । রত্না এসে আবিষ্কার করে তার একমাত্র ছেলে পলাশ লাশ হয়ে গেছে । উর্যাকে চিৎকার করে রত্না , এটা কে কি ভাবে করলো ? উর্যা ভালোমানুষ সেজে বলে , সে কি করে জানবে এটা কে করলো ? উর্যার পোশাক দেখেই সবাই বুঝতে পারে পলাশ আর উর্যার মধ্যে কি ঘটছিলো এতক্ষন । সবাই ভাবে বাইরে থেকে কেউ বদলা নিতে পলাশকে সুযোগ পেয়ে গুলি করে দিয়েছে । পলাশ একে ক্রিমিনাল তারপরে এভাবে মৃত্যু হয়েছে । কেসটা নিয়ে খুব একটা জলঘোলা হয়না । রত্না প্রাথমিক ভাবে ছেলের এই পরিণতি দেখে ভেঙে যায় । তারপরও নিজের ব্যবসা করতে থাকে । কথাতেই আছে না ঢেঁকি স্বর্গে গিয়েও ধান কোটে ! সন্তান হারিয়ে ও এক মা অন্য মেয়েদের শরীর বিক্রিতে মজে থাকে । রত্না দুদিন ছেলের শোক করলো তারপর আবার নিজের সমূর্তি ধারণ করে ফেললো । মার্কণ্ডেয় আর উর্যা একে একে দুজনকে সরিয়ে রত্নাকে আংশিক দুর্বল করেই দিয়েছিল । কিন্তু সমস্যা হলো আর এক জায়গাতে । মায়ের মৃত্যু সমন্ধে অন্ধকারে থাকা চিনি শুনে ফেলে মাহির আর মার্কণ্ডেয়র কথোপকথন । আর রমলা আর নেই একথা শুনে চিনি আগু পিছু না ভেবেই বেরিয়ে আসে চুপিচুপি মথুরা বাবুর বাড়ি থেকে । একটা ট্যাক্সী ডেকে চিনি বোকার মতো পৌঁছে যায় কাদারোড । এখানেই জয়ের মসৃন পথটা কণ্টকপূর্ণ হয়ে যায় মার্কণ্ডেয় , মাহি আর উর্যার । চিনি ট্যাক্সী থেকে নেমেই ছুটে যাচ্ছিলো উর্যার ঘরের দিকে । এদিকে উর্যার শরীরটা ও বেশ খারাপের দিকে । পেট ফুলে উঠছে , অসহ্য ব্যাথা অনুভব করছে উর্যা । প্যানক্রিয়াটিস ক্যানসার হয়ত আর ওকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে না বেশি দিন । চিনি উর্যার ঘরের বাইরে পৌঁছেই গেছিলো অমনি কে যেন ওর মুখটা চেপে ধরে পিছন থেকে । চিৎকার আর হাত পা ছোড়ার চেষ্টা করা বৃথা হয় । চিনিকে এরশাদ তুলে নিয়ে রত্নার ঘরে ঢোকায় । পলাশ আর নান্টু না থাকায় রত্নাকে এখন এরশাদের উপরেই ভরসা করে চলতে হয় । দুবেলা গোগ্রাসে গেলা থেকে রাতে ঘুম সবই এরশাদ রত্নার কাছেই করে । বিনিময়ে রত্নার হয়ে কাজ করে সে। সাইফুলের সাথে ও এরশাদ কাজ করে কিন্তু কম । এরশাদ পানের গুমটিতে পান নিচ্ছিলো তখনই একজনকে নামতে দেখে সে ট্যাক্সী থেকে । প্রথমে ব্যাপারটা আমল না দিলেও পরে সে লক্ষ করে আগন্তুক চিনি , রমলার মেয়ে । আর মুহূর্ত দেরি না করে চিনির পিছনে ধাওয়া করে সে । আর তার সন্দেহকে সত্যি করে চিনিও এগিয়ে যায় উর্যার ঘরের দিকে । এরশাদ দ্রুত গিয়ে চিনিকে ধরে ফেলে আর রত্নার ঘরে নিয়ে আসে । এরশাদ ঘরে ঢুকেতে রত্না অবাক হয়ে যায় , যে মেয়েটার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল সেই মেয়েটা আজ তারই ডেরাতে ? এরশাদ ক্লোরোফম লাগিয়ে একটা কাপড় দিতে বলে রত্নাকে । রত্না তাড়াতাড়ি একটা রুমালে ক্লোরোফম দিয়ে দেয় । ওটা নাকে চেপে ধরতেই চিনি নিস্তেজ হয়ে যায় । এলিয়ে পড়ে এরশাদের কাঁধে । চিনিকে একটা চাদর ঢাকা দিয়ে পালঙ্কের নীচে শুইয়ে দেয় এরশাদ । রত্না যখন শোনে সবটা এরশাদের কাছে , চতুর লোমরী রত্নার বুঝতে বাকি থাকে না যে উর্যা এই সব কিছুতেই যুক্ত । রাগে গালাগালি করতে থাকে উর্যাকে মনে মনে । এবার প্রথম কাজ সাইফুলের হাতে চিনিকে তুলে দেয়া তারপর উর্যার ও ব্যাবস্থা নিতে বেশিক্ষণ লাগবে না । এদিকে মাহি কিছুক্ষণ চিনিকে চোখের সামনে না পেয়েও চিন্তিত ছিলো না কারণ সতী দেবীর সাথে চিনি অনেকটা সময় কাটায় ইদানিং । কিন্তু বিকালে যখন সতী নিয়ে এসে মাহির কাছে চিনির খোঁজ করে মাহির পায়ের তলায় মাটি সরে যায় । সারাবাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়না চিনিকে তখন লনের দিকের সি সি টিভি ফুটেজ দেখে সিকিউরিটি আধিকারিক বলে মেয়েটি দুপুরের দিকে বেরিয়ে গেছে চুপচাপ । সতী ভীষণ রাগারাগি করে সিকিউরিটি সার্ভিস কর্মীদের উপর । মাহি ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে মার্কণ্ডেয়কে ফোন করে বাড়িতে আসতে বলে । তারপর কি মনে হয় উর্যাকেও ফোন করে । উর্যা সব কিছু শুনে অবাক হয় আর এটাও নিশ্চিত হয় যে এত ক্ষনে চিনি যখন এই বস্তি এসেও উর্যার সামনে আসেনি তারমানেই ও রত্নার হাতে পড়ে গেছে । এই কথা শুনে মাহি কাঁদতে শুরু করে । বারবার সে নিজের গাফিলতির জন্য এটা হয়েছে বলে কাঁদতে থাকে । সতীও বোঝে চিনির সামনে বিশাল একটা বিপদ তবুও মাহিকে শান্ত হতে বলে সে । মাহিকে সতী বোঝায় ভালো ব্যবহার,পারস্পরিক সম্মান দেওয়া নেওয়া, একে অন্যের মধ্যে নিঃস্বার্থভাবে আদান প্রদানের সুন্দর মানসিকতা ছেড়ে কেন যে আবহমানকাল ধরে এহেন জটিলতা, আত্মগরিমা আর ঈর্ষাকে উপজীব্য করে মানুষ কষ্ট পায়, দুঃখ দেয়, কুবার্তা এবং নঙর্থক ভাবনাচিন্তাকে উস্কে দিয়ে অ-বাসযোগ্য করে ফেলে নিজেদের জীবনকে!রাজর্ষি অথবা সুমেধাদের জীবন এই ধরনের সাংসারিক জটিলতায় গোলমাল পাকিয়ে অত্যন্ত দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। কেন যে তবু বড়োরা এই ধরনের অহেতুক জটিলতার নাগপাশ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেননা...! তুমি তো চেষ্টা করেছিলে মাহি । চিনির ভালো থাকার হলে ওকে সবাই মিলে ঠিক উদ্ধার করে নেবো আমরা । এরপর সতী মার্কণ্ডেয়কে ফোন করে , মার্কণ্ডেয় জানায় সে এখন বাড়ির পথেই আছে । সতী ওকে ঘুরে একবার শোরুমের ফ্যাক্টরিতে যেতে বলে । আর এটাও বলে ওখানে পৌঁছে যেন মার্কণ্ডেয় তার মাকে ফোন করে । মার্কণ্ডেয় কথা না বাড়িয়ে ফিরে যায় শোরুমের দিকে । মাহির ফোনটা আসার পর থেকেই অসম্ভব বুক ধড়ফড়ানি আর উত্তেজনায় ঘেমে অস্থির হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল উর্যা । বোঝাই যাচ্ছে কোনভাবে চিনি মায়ের টানে এখান পর্যন্ত এসেছিল কিন্তু তার পর কি হলো ? কোথায় গেল মেয়েটা ? উর্যা নিজের অসুস্থ শরীরটাকে টেনে নিয়ে রত্নার ঘরের বাইরে পর্যন্ত পৌঁছায় । ভিতরে গলা পাওয়া যাচ্ছে এরশাদের । দরজাতে কড়া নাড়ে উর্যা । এত তাড়াতাড়ি নিশ্চই চিনি ওদের হাতে পড়লেও ওকে পাচার করে দেয়নি । এই ঘরের ভেতরেই ওকে রাখা হয়েছে এটা নিশ্চিত উর্যা । দরজা খুলে এরশাদ বাইরে এসে উর্যাকে দেখে । রত্না ও বেরিয়ে আসে বাইরে আর আচমকাই উর্যাকে টেনে ঘরে ঢুকিয়ে নেয় । উর্যা ভেবেছিলো হয়ত রত্না ওকে ঘরে ঢুকতে দিতে চাইবে না কিন্তু এটা পুরো উল্টো ঘটনা হলো । উর্যাকে ঠিলে মাটিতে ফেলে রত্না । মাটিতে পেটের বরাবর পড়ে জন্ত্রনাতে কুঁকড়ে ওঠে উর্যা । তবুও দাঁতে দাঁত চেপে উঠে বসে । এরশাদ ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয় । উর্যা চারদিকে চোখ বুলিয়ে খাটের নিচে চিনিকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পায় ।

রত্না চিবিয়ে চিবিয়ে উর্যাকে বলে -"আমাদের এলাকার কিছু নিয়ম আছে!এগুলো মেনে না চললে তোর কপালে দুঃখ আছে!"

উর্যা কোন না কোন ভাবে চিরকাল কটুক্তি আর কারণে-অকারণে অপমান, অত্যাচার সহ্য করেছে তবে আজ কেন জানেনা ওর মাথাটা রাগে জ্বলে উঠলো ! এদিকে বাইরে আকাশটা যেন আজ অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই থমথমে। যেন এক চাপা উত্তেজনা গজরাচ্ছে ভেতরে। যখন তখন তা বেরিয়ে আসবে। ফেটে পড়বে মাটিতে। মার্কণ্ডেয়র ভেতরটাও এক অদ্ভুত উত্তেজনায় ভরা। যখন তখন তারও ভেতরের উত্তেজনাটা যেন ফেটে বেরিয়ে যাবে, আর আছড়ে পড়বে সব অত্যাচার অনাচারের বিরুদ্ধে । গাড়ি নিয়ে শোরুমের ফ্যাক্টরিতে পৌঁছেই মা সতীকে ফোন করে সে । সতী ওকে ফ্যাক্টরি থেকে অতি ভয়ানক সায়ানাইড আনতে বলে । হাইড্রোজেন সায়ানাইড হচ্ছে একটি বর্ণহীন, অত্যন্ত বিষাক্ত রাসায়নিক যৌগ। এমন গুজবও রটেছে যে, মানুষ সায়ানাইড মুখে দেওয়ার সাথে সাথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, এর স্বাদ কেমন তা কেউ বলতে পারেনি। তা বলার আগেই সে মারা গিয়েছে। এরকম একটা খুবই প্রচলিত গুজব হলো কেউ একজন কলম হাতে ধরেই সায়ানাইডের স্বাদ পরীক্ষা করতে যান, কিন্তু 'S' শব্দটি লেখার পরপরই তিনি মারা যান। 'S' দিয়ে Sour (টক) বা Sweet (মিষ্টি), এমনকি Salty (লবণাক্ত)-ও হতে পারে। আর সোনা নিষ্কাশনের ক্ষেত্রে একটি বহুল ব্যবহৃত উপাদান এই সায়ানাইড । সেই সূত্রে এই মরণ দ্রব্যটি মার্কণ্ডেয়দের কাছে থেকেই থাকে কাজের সূত্রে । মা এখন এটা কেন আনতে বলেছে এই প্রশ্নের উত্তর তো মার্কণ্ডেয়র জানা নেই তবে সে একটা সায়ানাইড এর শিশি নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেয় । বাড়ি ফিরে মাহির উপরে খুব রাগ দেখায় সে । সতী মার্কণ্ডেয়কে ঠান্ডা মাথায় কাজ করতে উপদেশ দেয় । আর সঙ্গে করে ছেলে জিনিসটা এনেছে কি না সেটাও জিজ্ঞাসা করে । মার্কণ্ডেয় শিশিটা মায়ের হাতে দেয় । মাহি জানতে চায় ওটা কি ? সতী বলে এটা সায়ানাইড । রসায়ন বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করা মাহি জানে সায়ানাইড জিনিসটা কতটা মারাত্মক । সহজ কথায় বলা যায়, সায়ানাইড দেহকোষগুলোকে অক্সিজেন থেকে শক্তি উত্‍পাদন করতে বাধা দেয়। সায়ানাইড আয়ন (CN-) মাইটোকন্ড্রিয়ার সাইটোক্রোম সি-তে অবস্থিত লোহার সাথে যুক্ত হয়ে তাকে আটকে রাখে। ফলে সাইটোক্রোম সি অক্সাইডেজ অক্সিজেনে ইলেকট্রন পরিবহণ করতে পারে না। অক্সিজেন ব্যবহার করতে না পারায় মাইটোকন্ড্রিয়াও এটিপি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়। শক্তি উত্‍পাদনে ব্যর্থ হওয়ায় হৃত্‍পিণ্ডের পেশিকোষ আর স্নায়ুকোষ দ্রুত তাদের শক্তি খরচ করে ফেলে আর মারা যেতে শুরু করে। যথেষ্ট পরিমাণ গুরুত্বপূর্ণ কোষ মারা গেলেই মানুষটা সহজেই মারা যাবে। এটা এখন ব্যবসার কাজে থেকে পার্সোনাল কাজে যে ব্যবহৃত হবে সেটা বুদ্ধিমতী মেয়ে মাহি বোঝে । তবে এখন যদি এটা আনা হয়েছে কাউকে মেরে ফেলার জন্য । সতীকে মাহি বলে , যদি এটা আমাদের যুদ্ধে ব্যবহার করতে আনিয়েছেন তো বলে রাখি কারো মৃত্যুর জন্য নির্ভর করে সায়ানাইড কোন অবস্থায় দেহে প্রবেশ করছে। মুখের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করা কঠিন বা তরল সায়ানাইডের তুলনায় প্রশ্বাসের সাথে টেনে নেওয়া সায়ানাইড গ্যাস আরো বেশি মারাত্মক। প্রতি লিটারে ৩ মিলিগ্রামের চেয়ে বেশি সায়ানাইড কয়েক মিলি সেকেন্ডের মধ্যেই একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষকে মেরে ফেলতে পারে। সতী বলে ব্যাস আর কি চাই ? এটা নিজের একটা হ্যান্ডবাগে চালান করো মাহি তারপর সোজা চলে যাও কাদারোড । রত্না যাতে তোমাকেও অপহরণ করে সেটাই আমাদের উদ্দেশ্য । একবার রত্না আমাদের ফাঁদে পা দিলেই ব্যাস সায়ানাইড দিয়ে আমরা কাজ হাসিল করবো । মার্কণ্ডেয়র মাথায় কিছুই ঢোকে না । সে বলে , মা আর মাহি তোমরা তো একটা মেয়েকে সামলে রাখতে পারলে না এবার আরো বিপদ ডেকে আনতে চাইছো ? ওসব বাদ দাও আমি কাদারোড যাচ্ছি তার আগে উর্যা কে একবার ফোন করো মাহি । মাহি মার্কণ্ডেয়কে বোঝায় যে এভাবে চিনিকে উদ্ধার করতে পারবে না সে । তাই মাহিকে নামতেই হবে ফিল্ডে । তবে উর্যাকে একবার ফোন করা যেতেই পারে । উর্যাকে ফোন করে মাহি । ফোনটা বেজে বেজে কেটে যায় । কেউ রিসিভ করে না দেখে মাহি বুঝে যায় ঊর্যাও হয়ত বা বিপদে আছে । মার্কণ্ডেয়কে মাহি বলে নার্কটিক্স ডিপার্টমেন্ট এ খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে রেডি থাকতে । মাহি যাবে এখন রত্নার কাছে ওকে ফাঁদে ফেলতে ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy