অ্যালঝাইমার
অ্যালঝাইমার




হঠাৎ একদিন প্রতুলবাবুকে খুঁজে পাওয়া যায় না। বাড়িতেই থাকেন সবসময় চোখে চোখে,একা তো তাকে কখনও কোথাও যেতে দেওয়া হয় না ! আশপাশের লোকজন কেউ কেউ তাঁকে দেখেছে ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে,কেউ বা বলেছে বাসে উঠতে দেখেছে কিন্তু কোনোভাবেই তাঁকে খুঁজে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত থানা,পুলিশ। ছেলেরা খবর পেয়ে তড়িঘড়ি চলে এসেছে বিদেশ থেকে কিন্তু অনেক ছোটাছুটি করেও বাবার কোনো খবরই পায় না তারা।
ছোট থেকে অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছেন প্রতুলবাবু, অল্পবয়সে বাবা-মার মৃত্যু হওয়ায় কাকার কাছে মানুষ, খাওয়াদাওয়া জুটত কিন্তু লেখাপড়া আর তেমন করা হল না, কাকার অবস্থাও যে তেমন নয়। কতরকম কাজই করেছেন জীবনে। অল্পবয়স থেকেই পয়সা রোজগারের ধান্দায় পথে বেরতে হয় তাঁকে। কখনও কারও গাড়ী ধুয়ে দিয়ে,কখনও কারো মোট বয়ে দিয়ে শেষে এক ইঁটভাঁটায় কাজ নেন তিনি আর আজ নিজেই তিনি ইঁটভাঁটার মালিক। পেটে বিদ্যে না থাকলেও প্রচুর ধনসম্পত্তি করতে পেরেছিলেন আর তাই ঠিক করেছিলেন ছেলেদুটোকে অনেক লেখাপড়া শেখাবেন। বাবার ইচ্ছের অমর্যাদা করেনি দুই ছেলে,দু'জনেই মন দিয়ে লেখাপড়া করে আজ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু সব সুখ সবার কপালে সয় না,তাই সারাজীবনের ঝড়ঝাপটা সামলাতে আজ তিনি অ্যালঝাইমার রোগী। নিজের ঘনিষ্ঠ মানুষজন যাদের রাতদিন দেখেন তাদের ছাড়া অন্য কোনো পরিচিত মানুষকেও এখন আর তিনি চিনতে পারেন না। এমনকি নিজের বাড়ীতেও টয়লেটে যেতে গিয়ে তিনি রান্নাঘরে ঢুকে বসেন,তাই সর্বদাই তাঁকে চোখে চোখে রাখতে হয়। সেদিন ওনার স্ত্রী স্নান সেরে বেরিয়ে আর তাঁকে কোথাও খুঁজে পান না,কোন ফাঁকে বাড়ীর দরজা খোলা পেয়ে বেরিয়ে গেছেন বাইরে,একাকী। আর সেটাই বড় চিন্তা,উনি যে রাস্তা চিনে ফিরতে পারবেন না বা বাড়ীর ঠিকানাও কাউকে বলতে পারবেন না। এদিকে পুলিশে খবর দিয়েও কোনো ফল হল না। চারদিন হয়ে গেল,বাড়ীর সবাই খুব চিন্তিত,কোথায় আছেন বা কি খাচ্ছেন,বা অসুস্থ হয়ে পড়লেন কিনা,তাই আশপাশের হাসপাতালেও খোঁজ নেওয়া চলছে,কিন্তু কোনো খবরই নেই।
পঞ্চম দিনে ভোরবেলায় পুলিশের লোক দরজায় বেল বাজিয়ে ডেকে নিয়ে যায় ওনার ছেলেদের,বেশিদূর নয়,২-৩ কি.মি,হাইওয়েতে পরে থাকা মৃতদেহ সনাক্ত করতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়,ভোরবেলায় রাস্তা পার হতে গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ধাক্কায় গাড়ীর তলায়। প্রতুলবাবুর স্ত্রীর আক্ষেপ,"পুলিশ জীবন্ত মানুষটার সন্ধান দিতে না পারলেও মৃতদেহটার সন্ধান বেশ তাড়াতাড়িই দিয়েছে, হায়রে পোড়া দেশ আমার"।