The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW
The Stamp Paper Scam, Real Story by Jayant Tinaikar, on Telgi's takedown & unveiling the scam of ₹30,000 Cr. READ NOW

arijit bhattacharya

Abstract

2  

arijit bhattacharya

Abstract

অ্যাডিক্ট

অ্যাডিক্ট

13 mins
711


রায়গড় স্টেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসেই আছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য্য l 'দেওয়াসের পিশাচ' আর 'ছত্তিশগড়ের ভাঙাগড়' উপন্যাস লেখার জন্য শুভাশিস এসেছিল রায়গড়ে আর সেখানে এসে পরিচয় রায়গড় এলাকার বিখ্যাত অ্যালুমিনিয়াম খনির মালিক সমিত সিংহ রায়ের সঙ্গে l আচার - আচরণে সমিতবাবু ভালোই, মদ তো ছোঁনই না, নেশাভান একদমই করেন না l শুভাশিস তো রায়গড়ের গ্রীষ্মের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ; যেমন সুন্দর এখানকার প্রকৃতি, তার থেকেও বেশি সুন্দর এখানকার সহজ সরল আদিবাসী মানুষ l সাহিত্যিক বলেছেন ,''বন্যেরা বনে সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে l'' সমিতবাবুও ভালো গান, কবিতা লেখেন l শুভাশিস জেনেছে যে, সমিতবাবুর আসল বাড়ি অশোকনগরে, যার রূপকার ছিলেন বিধানচন্দ্র রায় l সমিত সিংহ রায় যৌবনে যেমন ভালো ক্রিকেট খেলতেন, তেমন ফুটবলেও তিনি মাত করেছেন l মাল্টি- ট্যালেন্টেড লোক l সমিতবাবুর স্ত্রী কেয়াও অপূর্ব সুন্দরী, ব্যক্তিত্বময়ী l রেঁধে খাওয়াতে খুব ভালোবাসেন l দারুন একটা ফুটফুটে মেয়েও আছে সমিতবাবুর ; ক্লাস থ্রী-তে পড়ে l হাজার খুঁজেও সমিতবাবুর চরিত্রে কোনো বাজে দিক খুঁজে পায় না শুভাশিস l যেমন সুন্দর এখানকার শাল-সেগুন অধ্যুষিত অরণ্যের প্রকৃতি , তেমন সুন্দর সমিতবাবুর মন l সমিতবাবু বড়ো রোম্যান্টিক, প্রকৃতিপ্রেমী, ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে এক ঘন্টাও কাটাতে পারেন না l রোজ বিকেলে শুভাশিস সমিতবাবুর সঙ্গে ঘুরতে বেরাতো l একদিন নেট কানেকশন অফ হয়ে গেছিল শুভাশিসের l গরমকাল, ল্যান্ডলাইনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না কোলকাতার পাবলিশার্স -এর সঙ্গে l সমিতবাবু-কে শুভাশিস বলেছিল,''দেখুন না, বড়ো অদ্ভূত সমস্যায় পড়া গেল l'' এর উত্তরে সমিতবাবু চশমাটা নাড়িয়ে মৃদু হেসে বলেছিলেন, ''এ আর এমন কি ! সমস্যা তো এসেছিল আমার জীবনে l ভেবে ভেবে কুলকিনারা করতে পারছিলাম না কি করব !'' উত্তরে মাথা নাড়িয়ে মৃদু হেসেছিল শুভাশিস l কিন্তু, কিছুক্ষণ পর তার মনে হল সমিতবাবুর মতো শান্ত, ধীর - স্থির, ব্যক্তিত্বশালী, দৃঢ়চিত্ত লোকের জীবনে কি'রকম সমস্যা আসতে পারে ! তা ও আবার ছোটখাটো নয়, বড়োসড়ো! ভাবতে বসলো শুভাশিস! না কোনভাবেই বোঝা যাচ্ছে না, সমিতবাবুকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতেই হবে l না জিজ্ঞাসা করে থাকতে পারছে না সে l রাত্তিরে খাওয়াদাওয়ার পর বারান্দায় দাঁড়িয়েছিল শুভাশিস ভট্টাচার্য্য আর সমিত সিংহ রায় l দূরে অন্ধকার আবছা পাহাড় l শালবন থেকে আসছিল মাতাল করে দেওয়া হাওয়া l হাওয়াতে উড়ছিল সমিতবাবুর লম্বা চুল l মৃদু হেঁসে সমিতবাবু বলেছিলেন, ''জানেন কি, রিহ্যাবে আমার একটা, দুটো নয়, সাতটা ট্রিটমেন্ট আছেl আমি একজন রিল্যাপ্স করা অ্যাডিক্টl চার দেওয়ালের ভিতর আমার জীবনের সতেরোটা বছর কাটাতে হয়েছে l আমি একজন য়্যাডিক্ট l হ্যাঁ,আমার জীবনের সতেরোটা বছর কেটেছে রিহ্যাবের চার দেওয়ালের মধ্যে l নষ্ট হয়ে গিয়েছে সতেরোটা বছর l কি করব বলুন আপনি প্রেমে আমাকে যতটা খুশি দেখছেন, আমি বাস্তবে ততটাই দুঃখী l এই প্রেমে ব্যর্থ হওয়া থেকেই আমার মদের নেশা করা শুরুl আর বাড়াবাড়ি দেখে আমার ফরেস্ট অফিসার বাবা যখন সহ্য করতে অপারগ হলেন তখন তিনি আমায় প্রথম রিহ্যাবে পাঠান l কিন্তু কি করব বলুন , আজও আমার মনে পড়ে উদ্ভিন্নযৌবনা স্বরূপা-কে l ''সেই রাতে এক অপূর্ব কাহিনী বলে যাচ্ছিলেন সমিত সিংহ রায়l সাহিত্যিক শুভাশিসের মনে হচ্ছিল, এ কি রূপকথা না বাস্তবl পাহাড়ের কোলে শাল- সেগুনের অরণ্যানী ভেদ করে উঠেছে পূর্ণিমার চাঁদl জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে সমগ্র বিশ্ব চরাচর l থেকে থেকে হেঁকে যাচ্ছে শেয়ালের ঝাঁক l অন্তরমহলে মিষ্টি গলায় রেওয়াজ করে যাচ্ছে সমিতবাবুর মেয়ে অন্বেষা সিংহ রায় l এমনসময় সমিতবাবুর মুখ থেকে শুভাশিস শুনতে পেল সেই অপূর্ব অনুপম কাহিনী, যা সমিতবাবুর নিজের জবানীতেই বিবৃত করা হল l


''সবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছেl সারা অশোকনগর - কল্যাণগড় জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছি আমি l ভয় কাকে বলে আমি জানি না l বেপরোয়া জীবন, রঙিন জীবন, মুক্ত জীবন l ছোটবেলা থেকেই গান-বাজনার ভক্ত আমি l শানুদা - উদিতজি বলতে আমি অজ্ঞান ! বাবা বাড়িতে ওস্তাদ ঠিক করে দিয়েছিলেন l দু'জন ওস্তাদ ছিলেন, একজন তৌসিফ হোসেন, আর একজন প্রকাশ আগরওয়াল (প্রকাশজি) l প্রকাশজি খালি পান চিবোতেন ,আর বলতেন,''বেটা হৌসলা বুলন্দ রাখো l '' আরও বলতেন , ''মস্ত রহো মস্তি মে, আগ লাগে বস্তি মে l '' মহম্মদ তৌসিফের তো রেওয়াজ করার সময় লাল জল ছাড়া চলতই না l খালি একটা গানের কথা মনে পড়ত ,''ও শরাবী ,ক্যা শরাবী l '' আমাদের বাড়ির সামনেই মেয়ে থাকত, তার নাম শিঞ্জিনী চক্রবর্তীl অপূর্ব সুন্দরী l তাকে দেখেই তৌসিফজি গেয়ে উঠত, ''ধূপ মে নিকলা না করো রূপ কী রাণী ....... মস্ত মস্ত ইন আঁখো সে ছলকাওয়া না মদিরা l '' মানে তৌসিফজি শিঞ্জিনীকে ভালোই লাইন মারত, আমার তখন বয়স কম, কিছু বলতেও পারতাম না l তো একদিক থেকে জীবন ভালোই কাটছিল l একদিকে 'মস্ত মস্ত দো নৈন ' আরেকদিকে 'মস্ত রহো মস্তি মে l ' বাবা অলক সিংহ রায় ছিলেন খুব কড়া l একদিন পাড়ার সুরঞ্জনদা জোর করে খাইয়ে দিল লাল জল l মাতাল করে দেওয়া, যৌবনকে তাজা করে দেওয়া হাওয়া বইছিল l প্রেমে পড়লাম স্বরূপা মুখার্জীর l হাওয়া বইছিল জোরে জোরেl আমার বাবা অলক সিংহ রায় একজন দুঁদে ফরেস্ট অফিসার l তো বাবার সাথে গেছিলাম ডুয়ার্সের জঙ্গলে l আর সেখানে পরিচয় স্বরূপা(মুখার্জী ) - র সঙ্গে l গান -বাজনার ভক্ত ছিল স্বরূপা l আমার গানের গলা শুনেই পটে গেছিল l স্বরূপার নিজের গানের গলাও ছিল অপরূপ l ডুয়ার্সের জঙ্গলে একসাথে কতো ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটিয়েছি দু'জনে ! স্বরূপা ছিল ধবধবে ফরসা, গালদুটো ছিল লাল আপেলের মতো, হাসলে গালে টোল পড়ত, দাঁতগুলো ছিল ধবধবে সাদা, স্তন ছিল সূর্যমুখী ফুলের মতো , সুগঠিত l স্বরূপার নিজেরও গানের গলা ছিল সুমিষ্ট , কোকিলকণ্ঠী l ডুয়ার্সের জঙ্গলে একসাথে দু'জনায় বলিউডের কুমার শানু আর অলকা যজ্ঞিকের ডুয়েট গান করেছি l মদ ও খেতাম কিন্তু আসক্ত হয়ে পড়িনি l যাই হোক, স্বরূপার সঙ্গে ভালোই সময় কাটাচ্ছিলাম, আশা ছিল কিছু করে নিজেকে প্রমাণ করতে পারব l কিন্তু, কোথায় কি ! একদিন স্বরূপা হটাৎ করে দেখা করা বন্ধ করে দিল l ফোন করলাম বেশ কয়েকবার, কিন্তু সাড়া দিল না l চলে গেলাম স্বরূপার বাড়ি l কাকিমা (স্বরূপার মা) বললেন যে,''আমার মেয়ে আর তোমার সঙ্গে দেখাও করবে না, কথাও বলবে নাl'' আমি তো তখন চোখে সর্ষেফুল দেখছি, দুকূল আঁধার l স্বরূপাকে ছাড়া আমার একদিন কেন, একঘন্টাও ঠিকমতো কাটত না l চিরকালই আবেগের দিক থেকে ভারসাম্যহীন আমি l ইচ্ছা করছিল, ভদ্রমহিলার গলা টিপে খুন করে ফেলি নিজের হাতে l জোর করে বাড়িতে ঢুকে আপন করে নি-ই স্বরূপাকে l কিন্তু , রাগ পুষে বাবার কোয়ার্টারে ফিরে আসলাম, বাড়ি ফিরে আকন্ঠ মদ্যপান করলাম, মাতাল হয়ে গেলাম l স্বরূপা-র নামে উল্টো পাল্টা গালাগালি দিলাম l রাতের দিকে ফোন করল স্বরূপা l ফোন করে বলল ,আমি নাকি বখাটে ছেলে l ওর বাবা নাকি ভেবেছে আমার কোনো কেরিয়ার নেই l জীবনে কোনো দিনই সুপ্রতিষ্ঠিত হতে পারব না আমি l টাকা - পয়সাও বেশি কামাতে পারব না l আমি তো অবাক, প্রেম করতে আবার টাকা - পয়সা লাগে নাকি ! দুটি হৃদয় ই তো আসল l ভালোবাসা মনে থাকলেই প্রেম আসে l এ কেমন মেয়ে! টাকা -পয়সা দেখে প্রেম করে ! মদ খাওয়া ছিলাম, দু'টো খিস্তি শুনিয়ে দিলাম স্বরূপা-কে l স্বরূপা ফোন কেটে দিল l এবার টানা চার বোতল মদ খেলাম l বাবা বলতেন ,''আগে নিজের পায়ে দাঁড়া, নিজে প্রতিষ্ঠিত হ l '' যত রাগ গিয়ে পড়ল বাবার ওপর l রাতে বাবা কাজ সেরে কোয়ার্টারে ফিরতেই উল্টো-পাল্টা গালি দিলাম l মদের বোতল ছুড়ে মারলাম l অশোকনগর ফিরেই বাবা আমায় ভরে দিল, শিশুনাগ রায়ের 'হেলথ ফাউন্ডেশন ' - এ l মাঝে -মাঝে প্রকাশজি দেখা করতে আসতেন l তখন ফুটফুটে যৌবন আমার ,কাটত চার দেওয়ালের মধ্যেকার অন্ধকারে l শুনতে হত গালি l মাসের পর মাস ধরে পড়ে থাকতাম l বাড়ি থেকে দেখাও করতে আসত না ,ব্যস্ত বাবা খবর নেওয়ার -ও সময় পেতেন না l ট্রিটমেন্ট কাউন্টার - এ আমাকেই বেশি পানিশমেন্ট দেওয়া হতো, কারণে-অকারণে l এককোণায় পড়ে থেকে কাঁদতাম l বাড়ির প্রতি তীব্র রাগ -ক্ষোভ তৈরি এত, এর থেকেও বেশি হতো দুঃখ l স্বরূপা-র কথা মনে পড়ত, মেয়েটা কি স্বার্থপর ! এখন হয়তো অন্যের কোলে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে আরামে ঘুমোচ্ছে l মনের মধ্যে দুঃখের পাহাড় জমা হয়েছিল l তা সত্ত্বেও অন্যের কাছে সেটা প্রকাশ করতাম না l অন্যকে আনন্দ দিতাম, আনন্দে রাখার চেষ্টা করতাম l নাচ-গান, হই- হুল্লোড়- এর মধ্যেই থাকতাম l মাঝে মাঝে জানলার কাছে গেলেই বাড়ির কথা মনে পড়ত, খুব মিস করতাম বাইরের দুনিয়াকে l মনে ছিল দুঃখের পাহাড়, তারাও তো এত শাস্তি পায় না l আমি তো শুধু নেশাটাই করেছি গো l দু'চোখ বেয়ে ঝরত জলের ধারা l স্বরূপার কথা মনে পড়লে কষ্ট হত l হাজার হোক ওকে আমি ভালোবাসতাম l প্রাণসখী ছিল ও আমার l রাগে -দুঃখে মাঝে মাঝে ট্রিটমেন্ট সেন্টার - এর দেওয়ালে ঘুঁসি মেরেছি, রক্ত ঝরেছে হাত থেকে l মাঝে মাঝে মনে হত, গেটম্যানের হাত থেকে চাবিটা ছিনিয়ে নিয়ে দরজা খুলে বাড়ি পালিয়ে যাই l ক্রোধের আগ্নেয়গিরি হয়ে উঠেছিল আমার মস্তিষ্ক l বিচিত্র বিচিত্র সব অনুভুতি জন্মাত l মাঝে মাঝে মনে হত সব হারিয়ে গেছে, শুধু frustration আর depression আবার মাঝে মাঝে, ভীষণ আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হত ! ঐ narcotics anonymous প্রোগ্রামের কিছুই বুঝতাম না, মাঝে মাঝে মনে হত, এ কি শাস্তি ! ভীষণ বাড়ি যেতে ইচ্ছা করত l এইভাবে মনের রাগ বের করতাম l সাত মাস ধরে চার দেওয়ালের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণায় কেটেছে l সাত মাস পর একদিন গর্গদা (গেটম্যান গর্গ ঘোষ) বলল, তোর বাবা তোর্ সাথে দেখা করতে এসেছে l মোটামুটি চলনসই জামাকাপড় পরে গেটের বাইরে গেলাম l দেখ্লাম গেটের বাইরে অফিসার বাবা হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে l আরও অনেকের গার্ডিয়ান এসেছে l সব মেয়েকেই সুন্দর দেখাচ্ছিল l আমি এমনিতেই নারীপ্রেমিক l তাদের মধ্যে একুশ - বাইশ বয়সী মেয়েকে কেনো জানি না, হটাৎ যেন ভালো লাগল l মনে হল, এই নারীর দুটি চোখ স্নেহ-ভালোবাসা -মমত্ব মেশানো l হটাৎই ভালোবাসতে ইচ্ছা হল, ভীষণ ভালোবাসতে ইচ্ছা করল মেয়েটিকে l এমন সময় অফিসে হলুদ টি -শার্ট পরে প্রবেশ করলেন রিহ্যাবের সর্বেসর্বা শিশুনাগ রায় l শিশুনাগদাকে দেখেই বাবা জিজ্ঞাসা করলেন ,''ছেলের কি উন্নতি কিছু হল?'' আমি ভেবেছিলাম, বাবা আমাকে দেখে কাঁদবে,জড়িয়ে ধরবে, কিন্তু পরিবর্তে এ কি ব্যবহার ! কি নিষ্ঠুর ! মানুষ না পাষাণ !! কৌশলী শিশুনাগদা হাসতে হাসতে বললেন ,''তা হয়েছে l হয়েছে একটু আধটু l '' বাবা-র পরের প্রশ্ন আরও জটিল l আমার মনে হল - এ বাবার নিজের কথা নয়, শেখানো বুলি l বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন ,''তাহলে বাবা, তোমাকে এখন সমাজের সমাজের দায়িত্ববান, গ্রহণযোগ্য , উৎপাদনশীল সদস্য কি বলা যেতে পারে ??'', আমার মনে হচ্ছিল, বাবার মুখে একটা সজোরে ঘুঁসি মারি l কিন্তু পেছনে কুট্টু দা, গর্গদা l আমি বোকার মত প্রশ্ন করে বসলাম, ''তাহলে আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে কবে !'' বুঝলাম প্রশ্ন করেই ভুল করেছি l উত্তরে আমার বাবার আর শিশুনাগদার কি হাসি! হাসতে হাসতে শিশুনাগদা বললেন,''সেটা বললে তো তুই তা নিয়ে অবসেসড হয়ে পড়বি l তাছাড়া এখনও তো তুই প্রোগ্রামের কিছুই শিখিস নি l একটা কথা আছে জানবি ,'নো পেইন, নো গেইন '. তুই তোর্ রি-কভারি কর l আমি ,গোবিন্দ দা ,কুট্টু দা,গর্গ দা,বরুণ দা সবাই তোর্ সাথে আছি l চালিয়ে যা l'' বাবা মৃদু হাঁসলেন l আসার সময় ঘুরে দেখি বাবার চোখের কোণায় জল l হতাশ হয়ে ওয়ার্ডে ফিরে এলাম l মনোযোগী হয়ে ক্লাসগুলি করা শুরুকরলাম l এক বছর হওয়ার পর শিশুনাগদা আবার অফিসে ডেকে পাঠালেন l বললেন ,''শোন এখন বাড়িতে তোকে আর নেবে না l কিন্তু, এখন তোর্ ট্রিটমেন্ট শেষ l তুই এখন follow up . ইচ্ছা হলে তুই বাইরে যেতে পারবি, মুক্ত প্রকৃতি উপভোগ করবি l আমাদের সঙ্গে থাকবি, খাবি, ঘুরবি l কোনো চাপ নেই l ওরে পাগলা, তোর্ তো এখন অঢেল স্বাধীনতা l '' শেষমেষ follow up হলাম l তা ও বাবা আর মা 'কে খুব মিস করতাম l রাত্তিরে ঘুমোতে যাবার সময় আর ঘুম থেকে উঠে বাড়ির কথা মনে করে কাঁদতাম l মনে হত , আমার কেউ নেই এ জগতে ! সব অনুভূতি গুলি ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল l এমন সময় আমার হৃদয়হারিণী ঐ মেয়েটির সাথে এফ.এ রুমে আবার দেখা হল l জানতে পারলাম মেয়েটির নাম কেয়া l শিশুনাগদা 'র সাথে ভালোই সময় কাটছিল l মাছ ধরা -খাসির মাংস খাওয়া তো ছিলই l এমন সময় বাবা এসে ডিসচার্জ করে নিয়ে গেলেন l আমাকে বাড়ি ফিরতে দেখেই মা'র কি কান্না ! আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল l বুঝতে পারলাম , আমাকে ছাড়া এই দেড় বছর মায়ের কতোটা দুঃখে -কষ্টে কেটেছে l বাবার তো কোনো অনুভূতিই নেই l লোকটার ওপর ভীষণ ভীষণ রাগ হল l প্রতিজ্ঞা করলাম, আর মদের বোতল আমি ছোঁব না l কিন্তু নেশা করা আমি থামাতে পারলাম না l কেয়ার প্রেমে পাগল ছিলাম আমি , কেয়াকেই বিয়ে করলাম l কিন্তু ,আমার বিয়ে মুখের হয় নি l নেশা আমাকে নাগপাশের মতো জড়িয়ে ছিল l অতিরিক্ত মদের নেশার জন্যই আমার সাধের ফুলশয্যা কন্টকশয্যায় পরিণত হল l ফুলশয্যার রাতেই হয়ে শিশুনাগ রায়ের 'health foundation '- এ ঢুকলাম l আবার ডিটক্স l মাঝে মাঝে ভাবি, মেধা, সৌন্দর্য, বুদ্ধিমত্তা, সুন্দর ব্যবহার, অন্যের আবেগ - অনুভূতির গুরুত্ব দেওয়া,স্মৃতিশক্তি - প্রতিষ্ঠিত হবার সব গুণ ই তো ঈশ্বর আমার মধ্যে দিয়েছিল, তবে কি'সের জন্য আমার এই অবস্থা ! উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করেছিলাম l পাঁচটির মধ্যে চারটি বিষয়ে লেটার মার্কস ছিল l কালীঘাটের হয়ে ফুটবল খেলতাম l কোচ বলেছিলেন, পরে ভারতের টিমে চান্স পাওয়ার প্রতিভা আমার আছে l সে'সব কোথায় গেল ! আমাকে যারা বাজে করেছে , সেই সুরঞ্জনদা,কৃষাণু, তোতা, রাণা, প্রণবদা এরা তো এই সমাজেরই লোক l এখন যে সমাজ আমায় ধিক্কার দিয়েছে , আমাকে ছেঁটে ফেলতে চাইছে , আমার খারাপ হওয়ার পিছনে, আমার 'য়্যাডিক্ট' হয়ে ওঠার পিছনে, তো সেই সমাজই দায়ী l যারা আমায় খারাপ করেছে তারাই তো আজ ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে , আর এখন আমায় সেন্টারে অসহায় দেখে ফুর্তি লুটছে ! সহ্য করা যায় !! আমার বাড়ি অশোকনগরের পাঁচ নম্বরেl একজন আত্মীয় মারফৎ খবর পেলাম, আমার স্ত্রী প্রেগনেন্ট ! আমার তো তখন অস্তব্যস্ত অবস্থা l একদিকে সেন্টারের এতো কষ্ট, আর অপরদিকে আমার নিদারুণ মানসিক কষ্ট ! চোখ দিয়ে জলের ধারা বইছে l শিশুনাগ রায় কি মানুষ ! তারপর একজন মারফৎ খবর পেলাম, আমার মেয়ে হয়েছে l ইস, মেয়ে হয়েছে একবার আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করল না তারা l এতই আমি অমানুষ, এতই আমি ছোটলোক ! হে ঈশ্বর, এর বিচার কবে হবে l আমার মস্তিস্ক বলে উঠল এখন আমার বাড়িতে থাকা উচিত l এইভাবে এখানে থাকা আর উচিত হবে না l কথায় বলে না, অ্যাডিক্টের ''self will '' তীব্র ভাবে কাজ করে l একদিন ফেব্রুয়ারী মাসে কাউকে কিছু না জানিয়ে ছাদ থেকে পালালাম l বাড়ী গিয়ে কেয়ার কোলে দেখতে পেলাম ফুটফুটে এক পরী - কে l নাম শুনলাম অন্বেষা, ওর মা রেখেছে l ইস, এত সুন্দর মেয়ের নাম রাখারও বাবা হয়ে আমার কোনো অধিকার নেই l কাঁদতে শুরুকরলাম l এ কেমন প্রেমময় ঈশ্বর !! না আর না l আর আমি শিশুনাগ রায় আর তার ভাই কিচলু রায়ের ক্রীতদাস হয়ে থাকব না l অন্বেষার মাথায় হাত দিয়ে প্রতিজ্ঞা করলাম, যদি মানুষ হয়ে থাকি, তাহলে এ জীবনে আর মদের বোতল ছোঁব না l অনেকদিন নেশামুক্ত ছিলাম l ভালোভাবে ব্যবসার কাজ নিজের হাতে সামলাচ্ছিলাম l বাবার সাথে সম্পর্ক ভালো করার কোনো চেষ্টা করি নি l কিন্তু, বন্ধুবান্ধবের কাছে, সমাজের কাছে ধীরে ধীরে আগের জায়গা ফিরে পাচ্ছিলাম l এমন সময়ে আলাপ হল ছোটবেলার এক বান্ধবী, মেঘনার সাথে l ভালোভাবেই নেশামুক্ত থাকার স্বাদ পাচ্ছিলাম l মেঘনার সাথে বন্ধুত্ব ক্রমে ঘনিষ্ঠ আবেগমথিত সম্পর্কের রূপ নিল l সেখান থেকে আবার চলে এল নেশা আর সুযোগ পেয়ে গেল শিশুনাগ রায় l আবার ডিটক্স, আবার চার দেওয়াল l অথরিটি শিশুনাগবাবু আর সমগ্র মানাজেমেন্টের রাগ ছিল আমার উপর l একবার ট্রিটমেন্ট সেন্টার থেকে বিজয় নামে একটি ছেলে পালিয়ে যেতেই ম্যানেজমেন্টের যত রাগ গিয়ে পড়ল আমার উপর l গোবিন্দদা তো স্পষ্ট বললেন, আমিই নাকি বিজয়কে মতলব জুগিয়েছি সেন্টার থেকে পালানোর l আমি তো সরাসরি অস্বীকার করলাম, কিন্তু কি করব কেউই মানতে চাইল না l পাইপ দিয়ে প্রচণ্ড পেটানো হল আমাকে l এককোণায় পড়ে থাকতাম, আর কাঁদতাম l

দুঃখের বোঝা আর সইতে পারতাম না l আমি কি মানুষ না অন্য কিছু !অসামাজিক কাজকর্ম যারা করে তারাও তো এতো শাস্তি পায় না। আর আমার অপরাধ কি, শুধু নেশাটাই তো করেছি। আর এখন তো জানতেই পেরেছি অ্যাডিকশন একটা রোগ। রোগীকে শাস্তি দেওয়া উচিত, না তার শুশ্রুষা করা উচিত!

যাই হোক ঈশ্বর পরে এর সুবিচার করে ছিলেন, সে আলাদা গল্প l দু'বছরের মাথায় ঈশ্বর মুখ তুলে চাইলেন, আমার ডিসচার্জ হল l এদিকে অন্বেষা বড়ো হচ্ছে, দেখতে পাচ্ছি না l এই কষ্ট আর কাউকে বোঝানো যাবে না l না, আমি আর সুযোগ দিই নি শিশুনাগকে l রোজ মিটিং করতে শুরু করলাম l মিটিং রুমে আমার উপস্থিতি ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা l আমি জানি, আমার মতো অ্যাডিক্টকে এক এবং একমাত্র মিটিং রুম -ই ভালো রাখতে পারে l ভাগ্যলক্ষ্মী সু প্রসন্ন হল আমার ওপর l হু -হু করে ব্যবসায় উন্নতি হতে লাগল l রায়পুর থেকে অফার এল l অবশেষে বুদ্ধিমত্তা ও পরিশ্রমের জোরে আমি এই জায়গায় পৌঁছলাম l প্রথমে অফার পেলাম জামশেদপুরের টাটা স্টিল প্ল্যান্ট থেকে, তারপর অফার এলো ভিলাই থেকে, তারপর রায়পুর আর তারপর বিলাসপুর . মিটিং রুমে গিয়ে ভরপুর মিটিং করতে লাগলাম . মনে নেশামুক্ত থাকার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো. ভাগ্যলক্ষ্মীর আশীর্বাদ ঝরে পড়লো আমার মাথার ওপর. কেয়াকে বিয়ে করলাম. জীবন ঘুরে গেলো. শিশুনাগদার সাথেও মিটিং রুমে বহুবার দেখা হয়েছে. যথেষ্ট ভালো লোক. কিন্তু উনিও একজন addict . তাই addict এর চারিত্রিক দোষত্রুটি ওনার মধ্যেও বিদ্যমান. শুনেছি উনি বছর তিনেক আগে বিয়ে করেছেন. শেষ হলো সমিতবাবুর জীবনকাহিনী.

বাইরে থেকে ভেসে এলো বনমোরগের ডাক. শুভাশিস বুঝতে পারলো ভোর হচ্ছে. সমিতবাবুকে বিদায় জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো সে. বাইরে পবিত্র ঊষার আলো আঁধারি. দিগন্ত কে রাঙিয়ে উদিত হচ্ছেন সূর্যদেব . বইছে মনকে ফ্রেশ করা পূবালী হাওয়া. দূরে শাল সেগুনের জঙ্গল অপূর্ব. শুভাশিস বুঝতে পারলো জেদ আর অধ্যবসায় থাকলে জীবনের রাতের অন্ধকার কেটে ভোর হবেই. সমিতবাবুর অধ্যবসায় আর পরিশ্রম ছিল. তাই সমিতবাবুর জীবনে সকাল হয়েছে অন্ধকার রজনী কেটে. 

প্রার্থনা করলো শুভাশিস যে যেসব মানুষের জীবনে আছে হতাশা আর ব্যর্থতার অন্ধকার নিশা, তাদের মাথায় যেন পড়ে ঈশ্বরের আশীর্বাদ. প্রত্যেকের জীবনে যেন নেমে আসে এক সুন্দর প্রভাত.



Rate this content
Log in

More bengali story from arijit bhattacharya

Similar bengali story from Abstract