অতীতের অন্ধকার
অতীতের অন্ধকার
মধুরিমার এতো ক্রোধ, এতো অভিমান কোথা থেকে আসে সে নিজে ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা। অপূর্ব তার জন্য কতকিছু করে তবু কেন জানি অকারণে মেজাজ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে হঠাতই। এটা অপূর্বর নজর এড়ায় না বটে তবে নাগালও পায়না। দুটি বছর হয়ে গেলো তারা পরষ্পর ঘর বেঁধেছে। দেখাশোনা করার পর তাদের এই বন্ধন। সংসারে ভালোবাসার সুখ এখনো তাদের কাছে অধরা। আর কবে সুখপাখি ধরা দেবে! তাদের একটি সন্তান এসেও থাকেনি।
এক সন্ধ্যায় কোলের ওপর মাথা নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিলে মধুরিমার চোখ দিয়ে অশ্রুর ফোঁটা টপটপ করে গড়িয়ে পড়ে। অপূর্ব জিগ্যেস করে, "এমন কি হয় মধুরিমা, তোমার ক্রোধ মাঝে মাঝে এতো তীব্র হয় কেনো? তুমি একাকী কাঁদো কেন? আমাকে বলো, আমি তোমার পাশে আছি।"... এর উত্তর সে পায়না।
কখন যে ছোটখাটো মামুলি বিষয় নিয়ে তর্ক বেঁধে যায় তার হদিস এক সেকেণ্ড আগেও কেউ জানতো না। তখন কেউ কাউকে হারাতে পারেনা, কেউ হারতে চায় না। অপূর্ব চুপ করে যায়। যুক্তিতে মধুরিমা যখন পিছিয়ে পড়ে তার জেদ যেন আরো বেশি হয়ে যায়, অপূর্বকে তার কথা মেনে নিতেই হবে। মধুরিমার অন্তরকে কে যেন তাতিয়ে দেয় আর বলে, 'নতিস্বীকার করা অপূর্বকে'। সে আরো বলে, 'সংসারে তুই এতো কিছু করিস্ তবু সেই মনোযোগ তুই পাস না'। অপূর্ব চুপ করে গেলেও তার রাগ পড়তে চায় না।
অধরা সুখের তালাশ করতে গিয়ে দু'জনে ক্রমশ গোমড়া হয়ে ওঠে। হাসিঠাট্টাও আর তেমন হয়না। একদিন তুচ্ছ কারণে মধুরিমা অপূর্বর উপর ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে ফেলে, "তুমি আমার জীবনে কাঁটা হয়ে গেছো, অপূর্ব। আমি কেমন হাঁফিয়ে উঠেছি।" অপূর্ব নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা। একথাটা সে কি সত্যি শুনেছে!! বিরস মুখ করে অপূর্ব বলে, "তুমি ঠিক বলেছো মধুরিমা, একদম ঠিক। হয়তো আমার কোথাও ভুল ছিলো!" অকস্মাৎ ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে মধুরিমা। "আমার অন্ধকার অতীত আমাকে একদণ্ড সুস্থ হয়ে ভাবতে দিচ্ছেনা। সেটা আমাকে নিরন্তর তাড়া করে ফিরছে। আমি খামোখা মেজাজ হারিয়ে যা তা করছি। জানিনা কেন। উঃ, আমি আর পারছিনা।" ভাবতে ভাবতে সে বিছানার ওপর মুখ গুঁজে নিজেকে ফেলে দেয়।