Paula Bhowmik

Tragedy Action Inspirational

3  

Paula Bhowmik

Tragedy Action Inspirational

অন্তরের অন্তস্হলে

অন্তরের অন্তস্হলে

2 mins
321


" নয়ন মেলে দেখ দেখি তুই চেয়ে__দেবতা নাই ঘরে।


তিনি গেছেন যেথায় মাটি ভেঙে করছে চাষা চাষ__

পাথর ভেঙে কাটছে যেথায় পথ, খাটছে বারোমাস।

       রৌদ্রে জলে আছেন সবার সাথে,

       ধুলা তাহার লেগেছে দুই হাতে____"

       

______এই কথাগুলো যে কতখানি সত্য তা আমি আমার জীবন দিয়ে অনুভব করেছি। তাই আমার অবচতন মনের অভিব্যক্তি আমি আমার আঁকায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করি।


সামনে বসে নির্বাক সোনা শুনছে লালজেঠুর প্রতিটি কথা। শুধু শুনছে না, যেন আত্মস্হ করছে।


_______জমিতে চাষ করে যে কৃষক ফসল ফলায়, তার মধ্যেই আমি ঈশ্বরের দর্শন পাই। যে জেলে মাছ ধরে, যে তাঁতী প্রাণের কাপড় জোগায়, যে মজুর পাথর ভাঙে তাদের সকলের মধ্যেই তো ঈশ্বর ছড়িয়ে আছেন। জমিদার বাড়ির নাটমন্দিরের ঘন্টার সুর ছোটোবেলায় আমার মনে সুর জাগিয়ে তুলেছিল। হাতে তুলে নিয়েছিলাম বাঁশী। বাবার সাথে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে করতে যখনই অবকাশ পেয়েছি, সুরের সাগরে ডুব দিয়েছি।


জমিদার ধীরেন্দ্র নাথ রায়ের সাহায্যেই আমার ছবি আঁকার জগতে পদার্পণ। ওনার ভাইপো অরুণদা আঁকা শিখতে শিখতেই আমাকেও যে শেখান কথাটা ওনার কানে গিয়েছিলো। আঁকার সরন্জাম কেনার ক্ষমতা আমাদের ছিলোনা, তাতে কি কয়লা তো ছিলো! একটু সাদা কাগজ হাতে পেলেই আঙুল যেন নিজে থেকেই কিছু আঁকতে চাইতো। অন্য কাজ করলেও ভেতরে ভেতরে সুর আর ছবি তাদের খেলা চালিয়ে যেতো অনুক্ষণ।


১৯৪৭ সালের বহু আগে থেকেই জমিদার পরিবারের সদস্যরা কলকাতার কাশীপুরে নিজেদের তৈরি বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের পর থেকে ঐ জমিদার বাড়ি ফাঁকা রয়ে গেছে। কিন্তু আমার চোখে এখনও ভাসে পাথরের তৈরি সর্বমঙ্গলার মন্দির। আমি মুসলমান এক মিস্ত্রীর ছেলে। দেবতার পূজার প্রচলন আমাদের মধ্যে নেই। কিন্তু দেবীর নামটার কথা ভাবতে গেলে আমি তো কিছুই খারাপ দেখিনা।


শুধু এক মাকেই দেখতে পাই যিনি সকলের মঙ্গল কামনা করেন। প্রত্যেকের হৃদয়েই তাঁর অবস্থান।

শুধু দেখার জন্য মনের গভীরে ডুব দেওয়া চাই।

চিত্রা নদীর বাঁধানো ঘাটে চুপ করে বসে নদীর জল বয়ে যাওয়া দেখতাম। নদীতে নৌকায় করে লোকের যাওয়া আসা দেখতাম। কখনও বাঁশী বাজাতাম আবার কখনও শুধুই ভাবতাম। এক একটা জীবন যেন নদীরই মতন। শুরু যেমন আছে শেষও তেমন আছে। এঁদো পুকুর হয়ে থাকলে চলবে না। বাঁচার মতো বাঁচতে হলে নদীকে বইতে হবে। যদি শ্যাওলা বা পানা এসে রাস্তা রোধ করতে চায় তাহলে বৃষ্টির জন্যে প্রার্থনা করতে হবে। তাতে যদি একটু বেশি বৃষ্টি হয় বন্যা আসে ভয় পেলে চলবেনা। বন্যায় সব পানা ভেসে যাবে। ফসলের মাঠে পলি পড়বে। জমি উর্বর হবে। দেশ আবার সোনার ফসলে ভরে উঠবে।


দীঘির পাড়ের খৈ গাছটার তলে একটা শতরন্জি পাতা হয়েছিলো। বসে কথা বলছিলেন লালজেঠু। সোনা, আর খুকু ছাড়াও কখন যেন তরু, সুলতা, রুকসানা, তহিবুল মিঞা সবাই এসে একে একে বসে পড়েছে পাশেই। এবারে এস. এম. সুলতান তাঁর ঝোলা ব্যাগটা থেকে বের করলেন একটা বাঁশী। আর কোনও কথা না বলে চোখ বন্ধ করে বাজাতে লাগলেন মন কেমন করা অপূর্ব সুন্দর এক সুর। সবাই চুপ, কারো মুখে নেই কোনো শব্দ। অন্তরের অন্তস্হলে মনের অবচেতন যেন সাড়ে জেগে উঠেছে।কেউ কাঁদছে, কেউ হাসছে, কেউ শুধুই চুপ করে অপার শান্তি অনুভব করছে। 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy