Sutanu Sinha

Children Drama

3.9  

Sutanu Sinha

Children Drama

অঙ্কনবাবুর ডাইরী

অঙ্কনবাবুর ডাইরী

13 mins
3.1K


চার বন্ধুর ফাইনাল ক্রিকেট ম্যাচ কালকের । তাই সবাই চলে গেলেও চার বন্ধু খুব মন দিয়ে প্র্যাক্টিস করেই চলছিল নিজেদের মধ্যে । চার বন্ধু মানে টুবাই , রনি , সামীম , আর রুদ্র । ক্রিকেট পাগল চার বন্ধু একটুও সুযোগ ছাড়তে চাই না কাল কের ম্যাচ এর প্র্যাক্টিসে । চার বন্ধুর মধ্যে টুবাই ই সবার বড় ,বয়স ১৫ ।রনি ১৪ আর সামীম আর রুদ্র ১২ । অনেক ক্ষণ ব্যাটিং করছিলো টুবাই , সামীম ও অনবরত বল করে যাচ্ছিলো তাকে । সামীম এর বল বেশ জোরে হয় বলে, টুবাই ওর বলেই প্র্যাক্টিস করতে বেশি পছন্দ করে । লাস্ট বলে সুন্দর একটা কভার ড্রাইভ মারার পর , বেশ মনে মনে কনফিডেন্স পেলো টুবাই । সামীম কে একটু রেস্ট নিতে বলে রুদ্র কে বল করতে বললো টুবাই । টুবাই এমনিতেই টীম এর ক্যাপ্টেন , আর এই ৩ জন এ হলো তার আসল প্লেয়ার ।তাই এদের কে ভালো করে তৈরি রাখা ভীষণ দরকার । রুদ্র একটা বল স্ট্রেইট ড্রাইভ করার পর ব্যাট টা সে তুলে দিলো রনি র হাতে । রনি সব বল স্ট্রেইট ব্যাট এ খেলবি , উইকেট ছুড়ে দিবি না । রনির এই এক বাজে অভ্যাস । খুব ভালো খেলে ছেলেটা , মাঝে মাঝে টুবাই এর থেকেও ভালো খেলে সে । কিন্তু ভীষণ তাড়াহুড়ো করে আউট হয়ে যাই । রনি আসলে টুবাই ছোট ভাই , তার নিজের কাকার ছেলে । তাই টুবাই এর টীম এ রনির গুরুত্ব বিশাল । রনি সবসময় ই টুবাই এর টীম এর ওপেনার । তবে যখন এ টীম এর কেউ রনি কে নিয়েকিছু বলতে যাই , তখন এ যেন কিভাবে রনি রান পেয়ে যাই, আর একাই টীম কে জিতিয়ে দেয় ।এই যেমন এই টুর্নামেন্ট টাতে রনি শুরু তে মোটেই ভালো খেলছিল না । সবাই বলতে সবে শুরু করেছিল , রনি কেন ওপেন করবে , কিন্তু তখন ই সে রান পেয়ে গেলো কোয়াটার ফাইনাল আর সেমিফাইনাল এ , ৬২ আর ৮৩ । সেমিফাইনাল টা তো সে একাই টীম কে জেতালো । সেঞ্চুরি হয়েই যেত একটা ভুল ভাল শট সিলেকশন এ আউট হয়ে গেলো সে । তারপর ফিনিশিং টা টুবাই কেই করতে হলো ।

যাইহোক রুদ্র কে বল করতে বলে , রনি র হাতে ব্যাট টা তুলে দিলো সে । রুদ্র আগের ম্যাচ এ ৪ উইকেট নেয়া বোলার । টুবাই এর যদিও ও সামীম আর রুদ্র এর মধ্যে সামীম এ বেশি ফেভারিট , কিন্তু রুদ্র ভীষণ কার্যকরী বোলার । যখন দরকার তখন উইকেট টা ঠিক ই পেয়ে যাই । রুদ্র প্রথম বল ভীষণ রকমের গুড লেংথ ছিল , রনি তার স্বভাব বশত চালাতে গেলো কিছুটা বীরেন্দ্র শেওয়াগ স্টাইল এ , বল তা ব্যাটের কানা লেগে উইকেট কিপার মানে টুবাই এর মাঠের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে একেবারে বাউন্ডারির বাইরে গিয়ে একটা ড্রপ খেয়ে ঢুকে গেলো অঙ্কন বাবুর সেই পড়ো বাড়িতে ।শুধু মাত্র এই বাড়িটি এড়ানোর জন্যই অনেকেই এই মাঠে প্র্যাক্টিস করতে চাই না ।

এই অঙ্কন বাবু কে নিয়ে অনেক মজাদার গল্প আছে বাজারে । উনি বেঁচে থাকা কালীন নাকি বাচ্ছাদের খুব ভালো বাসতেন । তাই কোনো বাচ্ছা দের পেলে তিনি নাকি না দেখা করে থাকতে পারেন না । এক বার কি একটা করতে এসে হরেন এর ভীষণ জোরে হিসু পেয়ে গেছিলো , কোথায় করবে বুঝতে না পেরে অঙ্কন বাবুর বাগান এ গিয়ে করেছিল । তখন ও পুরোটা করে উঠতে পারেনি হরেন , হঠাৎ ই নাকি সামনে হাজির হয় অঙ্কন বাবু । বলেন সে কি রে আমার বাগান এ এসব করছিস , যা তোর এমন হবে তুই একমাত্র তোর নিজের ঘরের বাথরুম ছাড়া আর কোথাও এসব করতেই পারবি না । হারান এর তো কেঁদে ফেলার জোগাড় , সে সারাক্ষন ই মাঠে মাঠে ঘুরে বেড়াই তার বাবার সাথে , হিসু পেলে সবসময় বাড়ির জন্য দৌড়োনো তার পক্ষে সম্ভব নয় । তা অনেক হাতে পায়ে ধরার পর মায়া হয় অঙ্কন বাবুর, বলেন এই আম গাছ টিতে যেদিন প্রথম ফল হবে , তখন এসে সেটা পেরে খাস , সব ঠিক হয়ে যাবে । তা হারান প্রতিদিন এসে দেখতো গাছে ফল হলো কিনা , কিন্তু ফল আর হতো না , ফলে ততদিন পর্যন্ত তাকে এই ভাবে নিজের বাড়িতে গিয়েএ করতে হতো । অন্য কোথাও এ সে করতে পারতো না । শেষমেশ যখন তার একেবারে পাগল হবার অবস্থা হলো , তখন এক দিন দেখে গাছে ফল হয়েছে ,সে ছুতে গিয়েসেই ফল খাই । তারপর নাকি সে মুক্তি পাই এই অভিশাপ থেকে । গ্রাম এর মধ্যে এই খবর টা চাউর হতে বেশিদিন সময় নেইনি । ফলে বড়রাতো বটেই , ছোট রা ও ভীষণ ভাবে এই জায়গাটিকে এড়িয়ে চলে ।

যাই হোক এসব ভেবে এখন আর কি হবে , এমনিতেই বিকাল ৫ টা হয়ে গেছে, সন্ধেবেলা ওই দিকে যাওয়া টা কতটা ঠিক হবে বুঝতে পারছিলো না তারা । এমন সময় রনি বললো ছোড়দা তুই কি দেখেছিস বলটা ঠিক কোন জায়গায় গেছে ? টুবাই কে রনি ছোড়দা বলেই ডাকে । হ্যা, তা দেখেছি বটে , কিন্তু এতো রাতে আর ওদিকে যেতে হবে না , চল আজ কের মতো গোটাই । রনি টুবাই এর কথা মেনে নিলে ও , রুদ্র মানতে চাইলো না , সবার ছোট হলেও বরাবর ডাকাবুকো রুদ্র । ইনফ্যাক্ট সে অনেকবার অঙ্কন বাবুর গাছ থেকে আম , পেয়ারা পেরে এনেছে , বাকিরা খেতে ভয় পেলেও রুদ্র দিব্যি নিজের পেটপুজো চালিয়ে গেছে । এহেন রুদ্র যে টুবাই এর কথা শুনতে চাইবে না , সেটা সবাই জানতো । রুদ্র বললো , তোদের কিচ্ছু ভাবতে হবে না , আমি যাচ্ছি আনতে । ব্যাপার টা টুবাই এর খুব একটা ভালো লাগলো না । কিন্তু বড়দাদা হিসাবে কিছুতেই সে রুদ্র কে একা ছাড়তে পারলো না । তাই চার জন এ মিলেই গেলো অঙ্কন বাবুর বাড়ি ।বাড়িটাতে টুবাই রা আগে আসেনি , শুধু মাত্রা রুদ্র ছাড়া ।তাই রুদ্র এ ওদের কে পথ দেখিয়ে আনতে থাকলো । বাড়ির সামনে একটা বেশ বড় বাগান আছে । বাড়িটি পড়ো বাড়ি হলেও কিরকম যেন একটা আলাদা সৌন্দর্য্য বহন করে , যা মনে করায় এক কালে বাড়িটি খুবই সুন্দর ছিল । ছোট দের জন্য একটা ছোট পার্ক ও আছে , যেখানে স্লিপ , দোলনা সব এ আছে । টুবাই দের কেন জানিনা বেশ ভালো লাগছিলো বাড়িটা ।হঠাৎ এ রুদ্র র ডাকে সবাই ওর দিকে ফিরে তাকালো । রুদ্র জিজ্ঞেস করছিলো বল টা কোন দিকে এসেছে , এবার সবার সম্বিৎ ফিরলো । তারা যে বল খুঁজতে এখানে এসেছে সেটাই ভুলে গেছিলো । টুবাই বললো এই দরজাটার দিকেই হবে রে রুদ্র , দেখ আমি ওখানটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম, আর রনি এর ব্যাট এর কানাই লেগে এই ঠিক আমার মাথার উপর দিয়ে বলটা এসেছিলো , বলে সে হাত দিয়েমাঠের মধ্যে নিজের দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থান টা দেখাচ্ছিল । রনি বললো চল ছোড়দা দরজা টা খোলা আছে , ভিতর এ গিয়ে দেখি, কাছাকাছি এ কোথাও হবে , কেন জানিনা ভয় জিনিস টা কোনো কারণ এ চার জন এর এ খুব একটা কাজ করছিলো না । টুবাই বললো চল তাহলে । ভিতর গিয়ে বল টাকে প্রথম টুবাই ই দেখতে পেলো । বল কুড়িয়ে নিয়ে চলে আসছিলো সে , হঠাৎ এ পাশে একটা চকচকে ডাইরী মতো কিছু দেখতে পেলো । টুবাই রুদ্র কে বললো ওটা কি রে রুদ্র ? রুদ্র বললো দেখনা কি ডায়েরিমনে হচ্ছে । টুবাই তুলে নিলো ডাইরী টি ।

টুবাই দেখলো ডাইরী টিতে টোটাল চারটি পেজ আছে । প্রথম পেজ টি খুলতেই রনি নাম ভেসে উঠলো , টুবাই অবাক হয়েবললো রনি তোর নাম দেখাছে রে । রনি বললো কই দেখি । রনি ডাইরী টা দেখতেই একটা লেখা ভেসে উঠলো :

"প্রথম বলেই ইয়র্কার ,মারলো ছক্কা চমৎকার ।"

হঠাৎ এ বদলে গেলো পুরো ঘর টা , সবাই দেখতে পেলো একটা বিশাল বড় মাঠ । চারদিক শুধু সবুজ আর সবুজ । সেই মাঠের মধ্যে তখন ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান এর ম্যাচ হচ্ছে । এর পর এ ঘটলো আসল ঘটনা , সবাই দেখতে পেলো , ব্যাট হাতে দাঁড়িয়ে আছে তাদের সবার প্রিয় রনি, আর রানার্স এন্ড এ দাঁড়িয়ে আছে রনির আদর্শ প্লেয়ার বীরেন্দ্র শেওয়াগ ।আর বল করতে আসছে এক সময় এর সবার ত্রাস শোয়েব আখতার । টুবাই , সামীম , আর রুদ্র বসে আছে গ্যালারি তে , পুরো গ্যালারি তখন " রনি ! রনি !" করে চিল্লাছে । আনন্দে প্রায় কেঁদে ফেলার অবস্থা হয়েছিল টুবাই দের । ক্রিকেট নিয়ে গুলে খাওয়া চার বন্ধুর বুঝতে অসুবিধা হলো না মাঠ টা ইডেন গার্ডেন । যার গ্যালারি তে বসে আছে টুবাই , রুদ্র আর শামিম । মাঠের মধ্যে ব্যাট করছে রনি । সব কিছু যেন কিরকম স্বপ্নের মতো লাগছিলো তাদের । কিন্তু এতো ভালো লাগছিলো কিছুতেই এই স্বপ্ন থেকে বেরোতে চাইছিলো না । বীরেন্দ্র শেওয়াগ হঠাৎই এগিয়ে এলো রনির দিকে , বললো "ভয় পেয়ো না , সামনে থেকে খেলো । ", ঘাড় নাড়িয়ে সম্মতি জানালো রনি । ছুতে আসছে শোয়েব আখতার, পুরো গ্যালারি চ্যাঁচাচ্ছে "রনি । রনি ।", ভারতীয় জার্সি পরে অন্য রূপের রনি কে যেন চিনতেই পারছিলো না টুবাই । প্রথম বল দুরন্ত গতিতে ইয়র্কার করলো শোয়েব আখতার, যা সেই যে কোনো ব্যাটসম্যান দের জন্য এ একরকম ত্রাস ছিল , কিন্তু রনি কি অবলীলায়একটা ব্যাট ঘোরালো , অনেকটা ধোনির হেলিকাপ্টার স্টাইল এ , বলটা গিয়ে পড়লো একেবারে ইডেন এর গ্যালারি বাইরে । সবাই মিলে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো , চোখ টা আনন্দের কান্নায় ভোরে গেছিলো , চোখ টা মুছে ভালো করে তাকাতেই চার বন্ধু দেখলো তারা সেই পড়ো বাড়িতেই দাঁড়িয়ে আছে । ইডেন গার্ডেন্স , শোয়েব আখতার, বীরেন্দ্র শেওবাগ সবাই হাওয়া । মন খারাপ করেই ডাইরী পরের পৃষ্টা উল্টালো রনি , এবার দেখালো সামীম এর নাম , রনি বলে উঠলো সামীম তোর নাম দেখাচ্ছে । সামীম বললো কি দেখি , হঠাৎ আর একটি লেখা ভেসে উঠলো :

"প্রথম বলেই কাঁপবে জমিন , আসবে যখন আউটসুইং । "

চার বন্ধু আবার ফিরে এলো সেই সবুজ মাঠে , পার্থক্য শুধু ৩ টি ,

১. এবার ব্যাট করছে রিকি পয়েন্টিং ,মানে ম্যাচ টা ইন্ডিয়া আর অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে হচ্ছে ।

২. এবার রনি নয় ,সরাসরি রিকি পয়েন্টিংকে বল করতে এগিয়ে আসছে আমাদের সামীম ।

৩. গ্যালারি তে এবার রুদ্র , টুবাই এর সাথে রনি ও যোগ দিয়েছে সামীম বল টি দেখতে ।

বল করতে এগিয়ে আসছে সামীম , সামনে দাঁড়িয়ে রিকি পয়েন্টিং যেন হালকা ওভারস্টেপিং করে এগিয়ে আসছে, এ ভাবেই সাধারণত ছয় মারতে অভ্যস্ত পয়েন্টিং ।সামীম দৌড়োতে শুরু করলো , টুবাই , রুদ্র , রনি সবাই চিল্লাছে, "ওও সামীম ।।", ছুটে এসে বেশ জোরের উপর বল টি রাখলো সামীম , অন্ততঃ ১৫০ কিলোমিটার এর উপর জোরে ছুটতে লাগলো বল টা আর তার সাথে যুক্ত হলো সামীম সেই বিখ্যাত আউটসুইং । ব্যাট চালাতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো পয়েন্টিং ,কিন্তু নিজের ব্যাট টিকে পুরোপুরি বল টি থেকে বাঁচাতে পারলো না , হালকা কানায় লেগে বল টি সোজা চলে গেলো উইকেটকিপার এর দস্তানায় ।আনন্দে লাফিয়ে উঠলো সামীম । গ্যালারি তে উল্লসে ফেটে পড়লো টুবাই রা । কিন্তু ঠিক আগের বারের মতোই আবার সবাই হঠাৎ ই ফিরে এলো সেই পুরোনো ঘরে ।

চার জন বুঝতেই পারছিলো না , এসব কি হচ্ছে, কিন্তু ব্যাপার টা এতটাই ভালো লাগছিলো চার বন্ধুর পালিয়ে যেতে ও মন চাইছিলো না । হঠাৎ সামীম বলে উঠলো রুদ্র এবার তোর নাম আসছে । রুদ্র ভয় ভয় এ টুবাই এর দিকে দেখলো , টুবাই বললো দেখ কি লেখা আসছে , রুদ্র লেখা টা পড়তে লাগলো,

"প্রথম বলেই আসল ধার , পরবে যখন ইয়র্কার ।"

আবার বদলে গেলো সব কিছু, ফিরে এলো সেই সবুজ মাঠ , এবার চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম ,বোলিং এন্ড এ রুদ্র , আর ব্যাটসম্যান হলো সব বোলার দের ত্রাস ব্রায়ান লারা । রুদ্র কে দেখে যেন মনে হচ্ছে যেন বেশ টেনশন করছে । তাও দৌড়োতে শুরু করলো সে , স্বভাব মতো বল তা একটু জোরের উপর এ করতে গেছিলো রুদ্র , হাত থেকে হালকা একটু স্লিপ ও করলো বল টা । রুদ্র যেন কোনো ভাবেই চাইছিলো না ইয়র্কার করতে, কারণ ইয়র্কার বলে ব্রায়ান লারা সবসময় ই বেস্ট । কিন্ত বলটা হাত থেকে ফসকে গিয়ে ইয়র্কার ই হয়ে গেলো, কিন্ত অদ্ভুত ব্যাপার বলের স্পিড আর ইয়র্কার এর পজিশন ঠিকঠাক ঠাওর করতে না পেরে ক্লিন বোল্ড হয়ে গেলো লারা । বিস্ময়ই ই চমকে গেলো চার বন্ধু । রুদ্র চিল্লানি র সাথে সাথে পুরো গ্যালারী এ চিল্লাতে লাগলো । এই আনন্দের ঘোর কাটতে না কাটতে আবার তারা ফিরে এলো সেই ঘর এ । এবার ডাইরী শেষ পাতা , রুদ্র বলে উঠলো টুবাই এবার তোর পালা , তোর নাম দেখাচ্ছে । টুবাই উৎসাহ ভরে ডায়েরি টা হাতে নিলো আর লেখা টা পড়তে শুরু করলো ।

"শেষ ওভার এর শেষ বল , মারলো ছক্কা জিতলো দল ।"

টুবাই ভীষণ এক্সসাইটমেন্ট নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলো এবার কি ঘটবে দেখার জন্য । আবার ফিরে এলো সেই সবুজ মাঠ , এবার তো এটা খোদ মুম্বাই এর স্টেডিয়াম , আপল্লুতো হয়েগেলো টুবাই নিজের স্বপ্নের স্টেডিয়াম এ খেলছে দেখে । এটা ও ইন্ডিয়াপাকিস্তান ম্যাচ , স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে পাকিস্থান ৩১৯/৮, আর ইন্ডিয়া ৩১৫/৭। স্টেডিয়াম এর স্কোরবোর্ড তখন জ্বল জ্বল করছে টুবাই ব্যাটিং ৭৮, অনিল কুম্বলে ব্যাটিং ১২ । শেষ ওভার এর শেষ বল । বল করতে আসছে ওয়াসিম আক্রম, ব্যাট করবে টুবাই । ৫ রান বাকি জিততে গেলে , ৪ রান করলে ও ড্র হয়ে যাই । বোলার এন্ড এ ওয়াসিম আক্রম কে ঘিরে প্রায় পুরো পাকিস্তান টীম, এমন সময় অনিল ভাই এগিয়ে এলো টুবাই এর দিকে , বললো বল যেদিকেই যাক ব্যাট চালাবি , চার বা ছয়কিছু একটা চাই শেষ বল এ , না হলে তোর পুরো ম্যাচ এর চেষ্টাটাই মাটিতে যাবে । চুপ চাপ ঘাড় নাড়ালো টুবাই । তারপর ব্যাটিং এন্ড এ গিয়ে মনসংযোগ করতে থাকলো । ছুটে আসছে ওয়াসিম আক্রম, টুবাই এর মতে আক্রম হলো সর্বকালের সেরা বোলার । সচিন তেন্ডুলকর ও নাকি এক সময় আক্রম এর বল ফেস করাকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতো । হালকা একটু ওভারস্টেপিং করলো টুবাই , বল টা ছাড়ার মোমেন্ট টুবাই কি ভাবে যেন বুঝতে পেরে গেছিলো এটা স্লোয়ার আসছে, বল তা ড্রপ খাবার পর মারার জন্য একটু সময় নিলো টুবাই , যখন বল টা পুরোপুরি তার ব্যাট এর গ্রিপ এ এসে গেলো বেশ জোরের উপর শট নিলো টুবাই , বল আকাশ এ , মিড্ অন এর ফিল্ডার এর উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, বাউন্ডারি লাইন এ একটি ফিল্ডার ও দাঁড়িয়ে আছে, ক্যাচ হয়ে যাবে কিনা বুঝতে পারছিলো না টুবাই , এর মধ্যে অনিল ভাই এর গলা শুনতে পেলো যে রান টুবাই রান । দৌড়োতে শুরু করলো টুবাই । প্রায় দম বন্ধ পরিস্তিতি চার বন্ধুর । বল টা প্রায় ফিল্ডার এর হাতে মনে হয় ক্যাচ হয়ে গেলো , না ক্যাচ হলো না , ফিল্ডার এর হাতের অল্প একটু উপর দিয়ে বল টা গিয়ে পড়লো বাউন্ডারি লাইন এর বাইরে । ছক্কা । জিতে গেলো ইন্ডিয়া ,লাফিয়ে উঠলো সবাই । ছুটে এসে অনিল ভাই জড়িয়ে ধরলো টুবাই কে । ৩ বন্ধু লাফিয়ে উঠলো গ্যালারী থেকে , টুবাই শুধু দৌড়োতে লাগলো সারা মাঠ জুড়ে ।কিন্তু ৪ বন্ধুর সমস্ত কল্পনা শেষ গেলো , আবার তারা ফিরে এলো আগের অবস্থায় ।এবার যেন চারজন এই দেখলো সামনে এক জন বৃদ্ধ মানুষ বসে আছে । মুখ টা ভালো করে দেখে বুঝতে বাকি রইলো না সামনে বসে আছেন স্বয়ং অঙ্কনবাবু । চার বন্ধু এমন একটা ঘোরের মধ্যে ছিল ভয় পেতে ও ভুলে গেলো । গোল গোল চোখে লাগলো বৃদ্ধকে । বুড়োহঠাৎ এ হেসে উঠলো বলতে থাকলো , এই প্রথম কেউ একদম ভয়না পেয়ে আমার ডায়েরি শেষ করলো । আমি খুব খুশি হয়েছি ।বল তোদের কি চাই । চার বন্ধু কি বলবে বুঝতে পারছিলো না , টুবাই হঠাৎ যেন আস্তে করে বলে উঠলো , মানে দাদু কালকের ম্যাচ টা ।

শুনে একটু যেন হেসে উঠলো বুড়ো ,তারপর বললো চিন্তা করিস না রে , কাল তোদের এই রনি শতরান করবে , আর রুদ্র কটা উইকেট চাস রে? রুদ্র যেন কোনো উত্তর এ দিতে পারলো না , বললো যা তুই ৫ উইকেট পাবি । এবার সবাই পালা , আমার ঘুম পাচ্ছে।

সবাই মাইল দৌড়োতে শুরু করলাম । বেশ এই পর্যন্তই , মা এর ঝাঁকুনি খেয়ে ঘুম তা যখন ভাঙলো সকাল ৮ টা বেজে গেছে । মানে এতক্ষন যা দেখছিলো টুবাই পুরোটাই স্বপ্ন । টুবাই তাড়াহুড়ো করে রনি , রুদ্র আর সামীম কে ফোন লাগালো । ওরা ও বললো , সবাই এক এ স্বপ্ন দেখেছে কাল রাতে । সকাল ১০ তা থেকে খেলা , তাই দেরি না করে সবাই কে মাঠে আসতে বলে রেডি হয়ে নিলো টুবাই । হালকা ব্রেকফাস্ট করে মাঠে যখন এলো সবাই এসে গেছে । টস করে প্রথম ব্যাট নিলো টুবাই রা । না , অঙ্কনবাবুর কথা মিথ্যা হয়নি ,সেঞ্চুরি করলো রনি । নামতে হলোই না টুবাই কে । আর বোলিং কে অঙ্কনবাবুর কথা মতো এক দিক থেকে রুদ্র কে আক্রমণ এ রাখলো টুবাই , সত্যি ই আজ ৫ উইকেট নিলো সে ।

জিতে গেলো টুবাই রা , সবাই চিল্লাতে লাগলো ট্রিবুট ফর টুবাই , রনি , রুদ্র , সামীম , কিন্তু চার বন্ধু এ মনে মনে বললো আসল ট্রিবুট তো অঙ্কনবাবুর , আমরা তো শুধু তার আশীর্বাদ ধন্য হয়েছিলাম মাত্র ।

এর পর অনেক বার এই মাঠে গেছি , অঙ্কনবাবুর ঘরে ঢুকেছি । কিন্তু ওই ডায়েরি বা অঙ্কন বাবু কারোর ই দেখা মেলেনি । জীবন এ অনেক ডায়েরি পেলে ও ওই ডায়েরি কথা কোনো দিন এ ভুলতে পারবে না ওই চার বন্ধু ।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Children