অলৌকিক প্রশ্নের উত্তর
অলৌকিক প্রশ্নের উত্তর
সেই বিকেলে সুব্রত একা ঘরে বসে ছিল মন মেজাজ খারাপ ! সকালের কলেজের ঘটনা ভেবে ওর মনে হচ্ছিলো যে জীবনটা বৃথা হয়ে গেছে !
ও তো শুধু নিজের প্রেম নিবেদন করছিলো ওর বান্ধবি, সোনালীর, সামনে ! সুন্দরী সোনালী ! ভালোবাসার সোনালী! তাকে পাওয়া ওর জীবনের একমাত্র ধ্যান ও ভাবনা!
তার থেকে যে এমন উত্তর পাবে সেটা আশা করেনি !
সোনালী বলেছিলো, "সুব্রত, তুমি কেন আমাকে এভাবে বিরক্ত করো? আমার শুনতে ভালো লাগে না ! মনে রেখো রোহান আমাকে চায় এবং আমি ওকে বিয়ে করবো নিকট ভবিষ্যতে !"
এটা যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত ! ওর প্রাণের বন্ধু রোহান কে, সোনালী চায় ? এর পর সুব্রত আর কি বলতে পারে ? সব আশা, আখাঙ্কা, ভালোবাসা যেন কর্পূরের মতন উবে যাচ্ছিলো !
তবুও ওর মনে হলো যে একবার রোহনের সঙ্গে কথা বলা উচিত ! সে ও কি সোনালী কে ভালোবাসে? কিন্তু দুই বন্ধু তো এক মেয়েকে চাইতে পারে না ! এর একটা হেস্তনেস্ত হওয়া উচিত!
কিন্তু সেই সকালে, সুব্রত, কলেজে অনেক খোঁজা খোঁজি করবার পর ও রোহান কে পেলো না ! সাধারণত ক্যান্টিন এ তাকে কে পাওয়া যায় তবে ওখানে গিয়ে খবর পেলো যে ওর শরীর খারাপ হওয়াতে বাড়ি দিকে রওনা হয়ে গেছে, আধ ঘন্টা আগে !
বিকেলে, নিজের ঘরে বসে সুব্রত এই নিয়ে আকাশ পাতাল চিন্তা করছিলো ! এও মনে হচ্ছিলো, যে রোহান ওর মোবাইল ফোন কেন রিসিভ করছে না ?
অনেক্ষন কেটে গেছে, হটাৎ ওর দরজায় জোর ধাক্কার আওয়াজ পাওয়াতে তাড়াতাড়ি উঠে সেটা খোলা তে দেখলো, রোহান সামনে দাঁড়িয়ে!
"কি ব্যাপার ? হটাৎ এই সময়? এতো জোরে ধাক্কা দিচ্ছ কেন ? তোমাকে আমি কলেজে কত খুঁজলাম! তুমি মোবাইল ও তুলছো না কেন? "
রোহান কে দেখে মনে হলো ও ক্লান্তি তে ভেঙে পড়ছে ! মুখে কষ্ট ও দুঃখের ছাপ স্পষ্ট !
ধীরে খুব নিম্ন স্বরে বললো, "আমাকে ক্ষমা করো, তোমার কল নিতে পারিনি, এই সময়ে অনেক কিছু হয়ে গেছে ... তোমাকে বলা যায় না ....!"
"এসো, এসো, ভেতরে!" সুব্রত তার হাত ধরে তাকে আহ্বান করলো!
রোহান, ওর হাত ছাড়িয়ে ভেতরে ঢুকলো, তবে বসলো না !
"সুব্রত! খুব বিপদ ! সোনালীর শরীর ভীষণ খারাপ ! ওর হোস্টেল এ তোমার যাওয়া এক্ষণি দরকার!"
"চলো আমরা দুজন বেরিয়ে পড়ি...আমার মোটরসাইকেল নিয়ে নিচ্ছি!"
সুব্রত তাড়াতাড়ি চাবি তুলে নিলো টেবিল থেকে!
"না, তুমি যাও... আমার অন্য কাজ আছে! পরে দেখা হবে!"
এই বলে রোহান আস্তে আস্তে বেরিয়ে গেলো ! ওর হাঁটা, চলা, কথা বলার ধরন, প
ুরো পার্সোনালিটি যেন বদলে গেছে! শরীর খারাপ হলে কেউ এতো বদলে যায় ? বলা মুশকিল !
এ সব চিন্তা দূরে রেখে, সামান্য পরে, সুব্রত সোনালী কে মোবাইল এ কল করলো তবে তাকে পেলো না! আর অগ্রপশ্চাৎ না ভেবে নিজের ঘর বন্ধ করে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত গতি তে বেরিয়ে গেলো !
দশ মিনিটে সুব্রত যখন সোনালীর হোস্টেল এ পৌঁছলো, তখন ও সন্ধ্যা পুরো পুরি হয়নি! মেয়েদের হোস্টেলে ঢুকতে গেলে পারমিশন নিতে হয়! সেটা নিতে একটু সময় লাগলো, তারপর ওর ঘরের সামনে পৌঁছে দেখলো যে দরজা বন্দ নেই, হালকা ভাবে ভেজানো আছে ! ভাবছে ঢুকবে কি না, সেই সময়ে একটা হালকা আওয়াজ শুনে আর দ্বিধা না করে দরজা ঠেলে ঢুকে গেলো !
প্রথমে, প্রায় অন্ধকার ঘরে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না ! পর্দা টানা ও সব আলো নেবানো! কয়েক মূহর্ত পরে যখন সুব্রত ব্যাপার টা বুঝতে পারলো তখন একটা শিহরণ শরীরের মধ্যে দিয়ে চলে গেলো!
দেখছে যে ঘরের মাঝে সিলিং ফ্যানের ওপর দিয়ে দড়ি ঝুলিয়ে খাটের ওপর দাঁড়িয়ে সোনালী নিজের গলায় সেটা বাঁধছে!
মেয়েটা সুসাইড করবার চেষ্টা করছে! কিন্তু কেন?
ভাবার একদম সময় নেই!
"সোনালী, তুমি কি করছো ... থামো ...থামো ..." বলে চিৎকার করে, সুব্রত ভেতরে ছুটে গিয়ে সোনালীর হাত চেপে ধরলো! দড়ি টা টেনে দূরে ফেলে দিলো !
সোনালী প্রথমে সুব্রতর হাত থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করছিলো ... খুব ছটপট করলো , কিন্তু যখন পারলো না তখন নিজেকে এলিয়ে দিয়ে কান্নাএ ভেঙে পড়লো!
" কেন ...কেন...আমাকে বাঁচালে সুব্রত ? আমি মরতে চাই ....!" ওর স্বর রুদ্ধ হয় গেলো ! পুরো শরীর তখন কাঁপছে!
সুব্রত খুব সাবধানে সোনালী কে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে ওকে শান্ত করবার চেষ্টা করছে কিন্তু সে থামছে না !
"কি ব্যপার সোনালী? তোমার কি এমন দুঃখ যে নিজের জীবন নিচ্ছ ? জানো না এটা একটা পাপ ...! তুমি তো সাহসী মেয়ে !
সোনালী অস্পষ্ট ভাবে বললো," তুমি জানো না ? আমার কষ্ট ?"
"কি?" ব্যাপার টা সুব্রতর বোধগম্য হচ্ছিলো না !
সোনালী আবার ভীষণ কাঁদতে লাগলো, "রোহান চলে গেছে ! এই একটু আগে দুপুর বেলায় রাস্তায় এক্সিডেন্ট এ শেষ হয় গেছে ! ও কখনো আমার কাছে ফিরে আসবে না ! আমি বেঁচে কি করবো ? তাকে ছাড়া কিছু নেই ! সে আমার সব !"
সুব্রত আশ্চর্য ভাবে সোনালীর দিকে চেয়ে আছে, " এটা কি করে সম্ভব? এই তো এক ঘন্টা আগে রোহান আমার কাছে এসেছিলো! ও বললো যে তোমার শরীর ভালো নেই! আমাকে তোমার কাছে তাড়াতাড়ি যেতে বললো !
সোনালী ও সুব্রত কে শুনছিলো, ওর চোখে বিস্ময়! দুজনের মনে একই প্রশ্ন! তবে কি রোহানের অশরীরী এসেছিলো সুব্রতর কাছে যাতে সে সোনালী কে বাঁচাতে পারে আন্তহত্যা থেকে ?
এ প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই !"