Amitav Ganguly

Tragedy Fantasy Thriller

3  

Amitav Ganguly

Tragedy Fantasy Thriller

সীমাহীন মহিলা

সীমাহীন মহিলা

9 mins
209


আমি মুম্বাই হোটেল রুম থেকে ১০ তলা ল্যান্ডিংয়ে বেরিয়ে এলাম। নতুন দিল্লী থেকে আমি এই শহরে বেড়াতে এসেছি আমার স্বামী হেনরির সাথে। সে অবশ্য এখানে একটি সরকারী কাজে এসেছে। আজকে আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম কখন সে নিজের অফিস সংক্রান্ত কাজ থেকে ফ্রী হবে, তারপর আমরা আনন্দ করতে বের হতে পারব ।

ল্যান্ডিংয়ে একটি স্বচ্ছ কাঁচের বড় জানালা ছিল যেখান থেকে আরব সাগরের নীল সাদা ঢেউ দেখা যাচ্ছিল। সকালের সূর্য বায়ুমণ্ডল উজ্জ্বল করে তুলছিল। জানালার পাশেই বামদিকের ছিল লিফট এবং নিচে যাবার সিঁড়ি।

আজ সকালের মনোরম দৃশ্য আমার খুশির মেজাজের সাথে জুড়ে গেছে। এই সুখের সূত্রপাত স্বামীর সঙ্গে রাতে আমার আবেগপূর্ণ রোম্যান্স । কিন্তু কোথাও খুঁত রয়ে যাচ্ছে, এরপরও আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলাম। এই আনন্দের পরিবেশে কি সমস্যা আছে?

আমার ক্ষীণ ভাবে মনে পড়ছে পাঁচ মিনিট আগে যখন আমি বাথরুম গিয়েছিলাম তখন একটি সংক্ষিপ্ত 'ব্ল্যাকআউটের' শিকার হয়ে ছিলাম। এছাড়া এখন লক্ষ্য করলাম আমার লম্বা খোলা চুল ভিজে , বাথরুম চপ্পলের মধ্যে আমার পা সিক্ত এবং আমার গোলাপী ড্রেসটি আধ ভিজে। উপরন্তু লিফটের বিপরীতে দেত্তয়ালে ঝুলন্ত আয়নায়ে দেখলাম আমার চোখের 'মাস্কারা' এবং 'ক্রিমসন' লিপস্টিক অক্ষত এবং আমার হালকা 'ফাউন্ডেশন' মেকআপ ও অক্ষত যদিও সেগুলি কিছুটা হালকা হয়ে গেছে। একটু আশ্চর্য লাগলো যখন দেখলাম চুলের লাইনের ঠিক নীচে আমার বাম কপালে একটি গভীর লাল দাগ রয়েছে । তবুও কেন জানি এসবে চিন্তিত হলাম না তখন ভাবনা ছিল আমার অন্তর্বাস পরা, চুল শুকান দরকার এবং ভেজা চপ্পল পরিবর্তন করা উচিত । শেষ পর্যন্ত এসব কিছু না করে আমি যেটি করলাম সেটি হল আমার ল্যান্ডিংয়ে নিয়ে আসা জন্য লিফটের বোতাম টেপা। উদ্দেশ্য ছিল আমি আমার স্বামীর সাথে ব্রেক ফাস্ট খেতে 'গ্রাউন্ড ফ্লোর' রেস্টুরেন্টে যাবো। জানতাম কিছু 'অফিসিয়াল' কাগজপত্র নেবার জন্য হেনরি আগে থেকেই হোটেলের 'লবিতে' নেমে গিয়েছিল।

লিফটের জন্য সামান্য অপেক্ষা করার সময় আমার অস্বস্তিকর অনুভূতি এক অদ্ভুত অনুভূতিতে পরিবর্তিত হল । আমি কিন্তু নিশ্চিত হচ্ছিলাম কিছু স্পষ্টভাবে গণ্ডগোল ছিল এবং সেটি কি কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারলাম। লিফটটি আমার ল্যান্ডিংয়ে উঠে এল, দরজা খুলে গেল, তারপর আমার স্বামী তার 'পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্ট' ডেইজির সাথে বেরিয়ে এসে সোজা আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমি কিছু বলতে গেলাম কিন্তু বুঝতে পারলাম তারা আমাকে দেখেনি যদিও আমি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এরপর অদ্ভুত ভাবে তারা আমার মধ্য দিয়ে এমন ভাবে হেঁটে গেল যেন আমি একটি খোলা জায়গা, যেন আমার কোনো শারীরিক উপস্থিতি নেই।

আমি অবাক হয়ে তাদের থামানোর, ডাকার চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুই হল না। তারা রুমের দিকে গেল; আমার স্বামী অতিরিক্ত চাবি দিয়ে দরজা খুললে এবং ভিতরে ঢুকল।

আমি বেশ হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এই ব্যাপারটি পরখ করা প্রয়োজন; আমি খুঁড়িয়ে দরজার দিকে এগোলাম, কেন জানিনা আমার ডান পা ব্যাথা করছিল, সেই মুহূর্তে রুমের ভেতর থেকে একটি চিৎকার শুনতে পেলাম। এটি ছিল ডেইজির কন্ঠস্বর, সাথে আমার স্বামীর আওয়াজ আমার কানে পৌঁছল। সেকেন্ডের মধ্যে হেনরি রুম থেকে বেরিয়ে এলো , সে বিড়বিড় করছিল, "হে ভগবান… আমাকে সাহায্য কর, এটি কি হল ? মারিযা কি মারা গেছে?"

এই কথা শুনে আমি তার কাছে এগোতে চাইলাম; কি ঘটছে সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব , কিন্তু সে সম্পূর্ণ রূপে আমাকে উপেক্ষা করে, লিফটের বোতাম টিপে ওটা ল্যান্ডিংয়ে উঠে আসতে সময়ে লাগছে দেখে সিঁড়ি দিয়ে নাবতে শুরু করল। আমি তাকে অনুসরণ করলাম না, রুমে যাওয়াই উপযুক্ত মনে হল। উত্তর সেখানে থাকতে পারে।

রুমে ঢুকে দেখি ডেইজি জানালার কাছে সোফায় বসে আছে। তার মুখ ফ্যাকাশে, ডান হাতে মোবাইল ফোন দেখছিল যা লক্ষণীয়ভাবে কাঁপছিল।

আমি বললাম, "ডেইজি, কি ব্যাপার ? হেনরি কেন ব্যস্ত হয়ে নিচে চলে গেল?"

ডেইজি আমার দিকে তাকাল না, আরও বিরক্তিকর, কোনো উত্তর ছিল না, আমি তার মৃদু কান্না শুনতে ও দেখতে পাচ্ছিলাম, তার শরীর কাঁপছে, সে মাঝে মাঝে বাথরুমের দরজার দিকে ভীত চোখে তাকাচ্ছে।

আমি সামান্য ভ্রুকুটি করলাম। অনেক ধরনের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। এখনই শুনলাম আমার স্বামী বলছে আমি মারা গেছি ! আমি ঠিক শুনেছি? এটি কি রকম রসিকতা? আমি বেঁচে আছি এবং ভাল আছি, এখানে দাঁড়িয়ে আছি। নাকি আমি ভাল নেই ?" আমি কখন এই বিড়ম্বনার মুখোমুখি হইনি।

ব্যাপারটি যাচাই করতে হবে। শুরুতে মনে হল রহস্যটি বাথরুমে আছে, তাই, আমি সেখানে ঢুকে গেলাম । সব কিছু অপরিবর্তিত কিন্তু একটি পার্থক্য ছিল। সেটি দেখে তৎক্ষণাৎ আমার শ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে গেল এবং আমার পা দুর্বল হয়ে গেল। আমার ভেতর থেকে একটি চাপা চিৎকার বেরিয়ে এল আমাকে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলাতে হল ।

আমি যা দেখলাম তা বিশ্বাস করতে পারলাম না !

+++++++++++++++

অদ্ভুত ভাবে আমি দেখতে পাচ্ছি নিজেকেই! মানে দেখছি আমার পার্থিব শরীর 'বাথটবের' পাশে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে, আমার মাথা ভিতরে ঝুলে আছে একটি অসম্ভব 'অ্যাঙ্গেলয়ে', আমার ডান হাতটি বাইরে মেঝেতে স্পর্শ করছে এবং আমার আলগা চুল জলে ভাসছে; কল সামান্য খোলা তাই ধীরে ধীরে জল জমছিল এখন উপচে যাচ্ছে । এছাড়া আমার বাম কপালের উপরে গভীর ক্ষত থেকে রক্ত বের হওয়াতে জল লাল রঙে পরিণত হচ্ছে । আমার ডান পা বিশ্রী ভাবে বাঁকানো; এবার বুঝলাম আমি কেন খুঁড়িয়ে চলছি। আরো বুঝলাম আমি যে চপ্পল পরেছিলাম কেন সেটি ভিজে গিয়েছিল।

এছাড়া দেখতে পাচ্ছি তখন আমি একটি সবুজ 'নাইটগাউন' পরেছিলাম কিন্তু এখন তো আমি আমার 'এমব্রয়ডারি' করা গোলাপী পোশাক পরেছি। এই পোশাকটি আমি লক্ষ্য করলাম 'বাথটাবের' পাশের হুকে ঝুলছে। আমার মনে আছে আমি শাওয়ারের পরে এটি পরতে চেয়েছিলাম। আরো দেখলাম বেসিনের আয়নার কাছে রাখা আমার মেক আপ ব্যাগটি খোলা ছিল ও 'মাস্কারা' এবং লিপস্টিক বাইরে রাখা। কখন খুললাম? তারপর তোয়ালে দেখতে পেলাম না, এবার মনে পড়ল বাইরে বেডরুমের মাটিতে সেটি পড়ে আছে। বাথরুম চপ্পল কিন্তু এখানেই ছিল, একপাশে। 

এই সব বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়েছি, তারপর আমি প্রায় অনড় হয়ে গেলাম, মাথা ধরে জুবুথুবু হয়ে বসে পড়লাম মেঝেতে ।

নিজেকে পরখ করার জন্য আমি আমার মুখ, বাহু স্পর্শ করছি, সব স্বাভাবিক লাগছে।

কিন্তু আমার সামনে দুটি অস্বাভাবিক প্রশ্ন ছিল: আমি কি আমার শরীর থেকে বেরিয়ে এসেছি? এরকম কেন হয়েছে?

আমার ক্রমশ উপলব্ধি হচ্ছে এই চলমান শরীর বাস্তব নয়, এটি আমার আত্মা ... যাকে অন্য কেউ দেখতে বা শুনতে বা স্পর্শ করতে পারে না। আমার 'ইথারিয়াল' শরীর আমার সাথে ছিল, কিন্তু আমার শারীরিক দেহ সেই বাথরুমে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিল।

আমার এখন ক্ষীণ ভাবে মনে আসছিল সকালের ঘটনা ক্রম; আমার বিছানা থেকে ওঠার পর আজ সকালে, আমি বাথরুমে গিয়েছিলাম এবং 'বাথটাবের' কল খুলতে গিয়ে আমার পা ভেজা মেঝেতে পিছলে গিয়েছিল, এবং আমি কলের উপর মাথায় আঘাত পেয়ে অর্ধেক শরীর নিয়ে ভিতরে পড়ে গিয়েছিলাম। প্রথমে আমি অজ্ঞান ছিলাম কিন্তু বাথটাবে জল জমে যাওয়ার সাথে সাথে আমি ডুবে যাই এবং আমার জীবন চলে যায়। দুর্ভাগ্যবশত, সেই সময় আমার স্বামী কাজের সুত্রে ডেইজির সঙ্গে দেখা করতে হোটেলের লবিতে নেমে গিয়েছিল। এরপর আমার অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে মৃত্যুর পর আমি আমার 'নাইটগাউন' ছেড়ে গোলাপী পোশাক পরেছিলাম এবং হালকা মেক আপ করেছি। এসব করার কারণ আমি বুঝেছিলাম পরে হয়ত সঠিক ভাবে পোশাক পরার ও তৈরি হবার কোনো সুযোগ পাব না। সমস্যা ছিল সেই সময়ে তোয়ালের অভাবে আমি আমার চুল মুছতে পারিনি এবং আমার ভেজা চপ্পল পড়ে থাকি। অন্তর্বাস পরা সুযোগ ছিল না, সেগুলি তো আমার সুটকেসে ছিল। সেগুলি নিশ্চয়ই পরে পরব। সবটাই কিন্তু বাস্তবের বাইরে হয়েছে এবং হবে।    

+++++++++++++++

এরপর, বাথরুম থেকে বেরিয়ে এসে চারপাশে তাকালাম। সব কিছু একই ছিল, ডেইজি এখন মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছিল।

এই অদৃশ্য অবস্থায় আমি ভাবতে লাগলাম আমার পরবর্তী কি করা উচিত। একটু চিন্তা করে আমি এগিয়ে গিয়ে বিছানার কিনারে বসলাম। কয়েক মিনিটের মধ্যেই শুনলাম আমার স্বামী ফিরছে। হেনরি কে একেবারে বিধ্বস্ত দেখাচ্ছিল। সে রুমে ঢুকে সরাসরি ডেইজির কাছে গেল।

"আপনি কি হোটেলের লোকদের জানিয়েছিলেন?" ডেইজি জিজ্ঞাসা করল ।

"হ্যাঁ, ওরা আসছে তাছাড়া পুলিশ পৌঁছছে," স্বামী বলল। "এটি আমার জন্য একটি প্রচণ্ড ট্র্যাজেডি।" সে ডেইজির পাশে বসে দুঃখে হতাশে মাথা নিচু করে নিল, তার কান্না স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল ।

ডেইজি তার কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিল, বললে, "সাহস হারাবেন না, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। এটি একটি দুর্ঘটনা মাত্র। পুলিশ বুঝতে পারবে। এত চিন্তা করবেন না।"

আমার স্বামী একটু দূরে সরে যাবার চেষ্টা করছিল, উত্তর দিল, "আমি জানি, আমি জানি ডেইজি...এখন কি করব?"

তখন ডেইজি স্বামীর দুই হাত নিজের মধ্যে নিয়ে নিল, "আমি সব সময় আপনার সাথে আছি।"

আমি যখন এই সব দেখছিলাম, তাদের মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক আমার কাছে সত্যিই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। আমি অস্বীকার করতে পারতাম না যে, আমাদের বিয়ের সময় আমি এই বিষয়ে সন্দেহ করেছিলাম; তখন কিন্তু আমার স্বামী সময় জোর দিয়ে বলত সেসব কিছুই নেই।

কিন্তু আজ, যখন আমি তাদের পাশে বসে পর্যবেক্ষণ করছিলাম তখন আমার অনুভূতি ক্রমাগত ভাবে জাগ্রত হচ্ছিল, আমি আমার চোখের জল ধরে রাখতে পারলাম না।

+++++++++++++++

কিছুক্ষণের মধ্যেই হোটেলের কর্মীরা এসে যায় সাথে পুলিশও পৌঁছাল। সব দেখে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছিল আমার মৃত্যু দুর্ঘটনার কারণে হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকতা শেষে শহরের মর্গে আমার লাশ নিয়ে যাওয়া হয়ে।

+++++++++++++++

তিন রাত পরে আমি দিল্লীতে ফিরে এসেছি। আমি কিন্তু নিজের পারলৌকিক জগতের মধ্যে আছি। পোশাক বদলাই নি কিন্তু এবার অন্তর্বাস পরেছি।  

হেনরি ও ফিরেছিল ডেইজি সব সময় তার সঙ্গে ছিল। যদিও আমি মারা গিয়েছিলাম, আমি এই দৈহিক জগতে পুর ভাবে উপস্থিত ছিলাম। আপাত পার্থক্যটি ছিল আমি আমার ইচ্ছায় যে কোনো জায়গায় যেতে পারতাম এবং আমার কোনো শারীরিক চাহিদা ছিল না, যেমন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম…!

+++++++++++++++

দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও দুই সপ্তাহ।

সেই ১৪ মে রাত , সময় ১১ .৩০, আমি আমার স্বামীর সাথে বেডরুমে উপস্থিত ছিলাম। হেনরি অবশ্যই আমার অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন ছিল না। আমি আমার ড্রেসিং টেবিলের সামনে স্টুলে বসে ছিলাম। আমি নিজেকে আয়নায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এবং আমার স্বামীকেও বিছানায় শুয়ে আছে দেখছি। সে ডান হাত দিয়ে চোখ ঢেকে রেখেছে, খুব স্থির হয়ে আছে, আমি তার কষ্ট ভাল ভাবে বুঝতে পারছিলাম ।

কতক্ষণ বসে ওকে দেখছিলাম মনে নেই হঠাৎ ওর মোবাইল বেজে উঠল, এবার আমার অন্তর্দৃষ্টি বলছিল সেটি ডেইজির 'কল' ছিল।

হেনরি কিছু মুহূর্ত মোবাইল শুনল তারপর বলল, "ডেইজি, অনুগ্রহ করে বোঝার চেষ্টা করো, আমি মর্মাহত, 'আপসেট', আমি ঠিক ভাবে চিন্তা করতে পারছি না। প্লীজ, এখন আমার কাছে এস না। আমরা কাল এই বিষয়ে কথা বলব..." তারপর থেমে একটু জোর দিয়ে বলল, "না, না, আমি এই মুহূর্তে তোমাকে বিয়ের করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারব না। আমি আবার বলছি, কাল সকালে এস।"  

হেনরি মোবাইলটি 'ডিসকানেক্ট' করে বিছানায় উঠে বসে তার কপাল চেপে ধরে রইলো কয়েক মিনিট তারপর উঠে রান্নাঘরের দিকে গেল, নিশ্চয়ই জল পান করতে, এরপর বেডরুমের দরজা বন্ধ করে ফিরে এল।

আমি স্থির ভাবে তাকে দেখছিলাম, কিন্তু তখন আমার আবেগ, আমাকে আরো অশান্ত করে দিচ্ছিল।

এই কঠিন সময় আমি এক অদেখা ছায়া হয়ে আমার স্বামীর পাশে ছিলাম। তার মানসিক অস্থিরতা বুঝতে পারছিলাম । সে বিহ্বল ছিল, এই দিনগুলিতে দীর্ঘ সময় ধরে নীরব থাকতো, অনেকবার আমি তাকে ডেইজির উপস্থিতিতে কাঁদতে দেখেছি, সে তাকে শান্ত করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিল, হেনরি মাঝে শান্ত হত পরমুহূর্তে তিক্ততা এবং অসহায়ত্ব তে ডুবে যাচ্ছিল ।

আমরা দুজন নিঃসন্তান দম্পতি ছিলাম, আমাদের কোনো পরিচিত আত্মীয় ছিল না যারা এই গুরুত্বপূর্ণ সময় হেনরি কে সহায়তা করতে পারে ; সে খুব একা ছিল। আমি চেয়েছিলাম সে আমার অনুপস্থিতির দুঃখ কাটিয়ে উঠুক, স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসুক, তার সুখ ফিরে পাক যা আমি তাকে সবসময় জীবিত কালে দিয়েছি। আমি শুধু তাকে সাহায্য করতে চেয়েছি।

কিন্তু আবার, আমার চিন্তা ডেইজির দিকে ছিল। আমি ভাব ছিলাম সে আমার স্বামীর জীবন সহজ করতে পারে কিনা। যদিও স্বামী আমাকে ভালোবাসে, ডেইজির জন্য তার একটি দুর্বলতা আছে। হেনরি সর্বদা এটি অস্বীকার করেছে, তবুও আমি অনুমান করছি ডেইজি পরিবর্তন আনবে। তার প্রেমের সুত্রে আমার স্বামী ওর সাথে বন্ধন করতে পারে; এমনকি ভাবতে পারি তাদের বিয়ে করা উচিত!

কিন্তু তারপর একটি হতাশা জনক চিন্তা আমাকে আঘাত করেছিল। "যদি আমার স্বামী ডেইজি কে পেয়ে যায় তবে সে কি আমাকে সবসময় ভালোবাসবে এবং 'মিস' করবে? একজন স্ত্রী কীভাবে তার স্বামীর অন্য নারীর সঙ্গে বিয়ে মেনে নিতে পারে? এটি ছিল আমার চরম মানসিক নির্যাতন। কিন্তু না, এসব কি ভাবছি? তারপর চোখের জল মুছে দিলাম। আমার এত মন খারাপ করা উচিত হয়নি। আমি আর বেঁচে নেই, আমার স্বামী বিপত্নীক, এখন সে মুক্ত।

+++++++++++++++

অনেক সময়ে কেটে গেল। বেডরুমের বাইরে 'প্যাসেজওয়ের' দেয়াল ঘড়ির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম প্রতি আধ ঘণ্টা অন্তর। আমি সেই স্টুলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকি; হেনরি বিছানায় শুয়ে ছিল, আমি বুঝতে পারি সে অস্থির, সে ঘুমাতে পারেনি।

এরপরই হল সেই ঘটনা!

বন্ধ বেডরুমের দরজার দিকে থেকে হালকা আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি সে দিকে তাকাতে গিয়ে দেখি, ডেইজি দরজা না খুলেই হেঁটে ঢুকছে ! যেমনি আমিও করতে পারি । তার পরেই আমার মাথায় নানা চিন্তা ঘুরপাক খেতে শুরু করল। " ডেইজি কি আর বেঁচে নেই? কিভাবে ঘটল? তার শরীর কি আমার শরীরের মতোই আত্মায় পরিণত হয়েছিল?"

যাই হোক এই ঘটনা সম্পূর্ণ অচিন্তনীয় ছিল।

আমি বুঝেছিলাম সে আমাকে দেখতে পাবে। সে আমার কাছে এলো এবং আমার হাত ধরল। "মারিয়া, আমার প্রিয় বন্ধু...আমি তোমার সাথে যোগ দিয়েছি।"

ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, "কি করে?" আমি হয়ত উত্তর জানতাম।

সে আমার দিকে করুণ চোখে তাকাল। "এটি ঈশ্বরের ইচ্ছা। আমি এখানে আসছিলাম, মাত্র কিছুক্ষণ আগে আমার গাড়ি একটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে , আমার মৃত দেহ এখনও রাস্তায় পড়ে আছে, এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়।"

এ কেমন উপসংহার?

উঠে আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। "হ্যাঁ, ভগবানের কি অদ্ভুত ফয়সালা দেখছ তো ? আমি আমার স্বামীর সাথে থাকতে পারলাম না আর তুমিও তাকে পেলে না, যদিও আমি অনুমান করি তুমি তাকে ভালোবাস এবং চাও।"

ডেইজি অনেক মিনিট স্থির থাকল, তারপর বলল, "এসব আমাদের বোধশক্তির বাইরে। চল আর এই শারীরিক জগত ছেড়ে চলে যাই । হেনরি যেভাবেই চায় সে তার জীবন যাপন করুক...!"

আমরা দুজন তখন হাতে হাত রেখে বাড়ি থেকে বের হলাম। আমাদের জন্য কোনো দরজা খোলার প্রয়োজন ছিল না।

কিন্তু হেনরি, আমার প্রিয় স্বামীর জন্য, সব দরজা খোলা ছিল। সময় হচ্ছে সর্বোত্তম নিরাময়কারী!

END

THIS IS A SAMPLE STORY OF A NEW BENGALI BOOK- "BISWAS KORA JAE NA"! 

Available online on Amazon & Flipkart.


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy