Amitav Ganguly

Drama Romance Fantasy

4.0  

Amitav Ganguly

Drama Romance Fantasy

কেমন ভালবাসা?

কেমন ভালবাসা?

9 mins
327


   

তখন অনেক রাত; শীতকালের কুয়াশার সাদা স্থিরপর্দা সমস্ত কিছুকে হালকাভাবে আবৃত করেছিল; এর জন্য রাস্তার আলো অস্পষ্ট এবং ফ্যাকাশে কমলা আভায় পরিণত; খুব কম লোকই সেই রাতে বেরিয়েছিল। 

গীতি সমরদার এর মেজাজ, রুমের জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরের আবহাওয়া দেখে, খারাপ হয়ে গেল ... ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে ভ্রু কুঁচকে ভাবছিল; সকালে এই অবস্থা নিশ্চয় থাকবে, ঝামেলা করে, বাস ঠেঙিয়ে যখন কলেজ পৌঁছাবে, তখন জিয়ার সাথে ক্লাস এ দেখা হবে, আবার অশান্তি ... ঝগড়া!

সে রাতে গীতি কয়েকদিন আগের বিকেলের পরিবেশ ভুলতে পারছিল না। সেদিন সে এবং জিয়া কলেজ ক্যাফেটেরিয়ায় বসেছিল। তাদের সামনে টেবিলের উপর দুটো কফির মগ পড়ে ছিল, অস্পৃষ্ট। দুজনের কফি পান করার কোন মেজাজে ছিল না; ওরা বিরক্ত মনে একে অপরের সাথে লম্বা বাদানুবাদ করছিল।

শেষে গীতি রাগত স্বরে বলেছিল , "আমি জানি না কেন তুমি আমাকে সব সময় অপমান করো ? ক্লাস রিভিউ পেপারে আমি যে 'গ্রেড' পেয়েছি তা আমার হিসেবে একেবারে ঠিক। এবং তুমি যা 'গ্রেড' পেয়েছ সেটা আমার থেকে বেশি হলেও তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই, কিন্তু তুমি সবার সামনে আমার সাথে নিজেকে তুলনা করে আমাকে নিচে দেখাতে পারো না! এটা খুব অন্যায়ে! এটা তুমি ও বোঝ, আর তুমি সর্বশ্রেষ্ঠ নও।"

জিয়া বোস কয়েক মুহূর্ত তার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, "আমি সত্য কথা বললে তোমার যদি রাগ হয়ে তাহলে কিছূ করবার নেই ... তুমি হয়েত আমার থেকে সুন্দরী... কিন্তু সবাই জানে আমি তোমার থেকে আর সব ব্যাপারে  অনেক ভালো। তর্ক করে লাভ নেই।" 

গীতিকে সেই মুহূর্তে থামানো যাচ্ছিল না, "আগেও তূমি আমাকে অনেক অপমান করেছ ... পরশু তুমি আমাকে ..." সে উত্তেজিত ভাবে বলতে থাকল, জিয়ার তুলনায় ওকে কম আলোতে দেখানো নিয়ে সে বড্ড বেশি বিচলিত।

তারা দুজন সহপাঠী এবং বন্ধু, তবে কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী!  

--------------------

অবশ্য সেদিন, শীতের রাতে, গীতি এসব তুচ্ছ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ রেষারেষি নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিল না। তার চিন্তার বিষয়ে ছিল, চৈতন্য বাগচী, দুজনের ক্লাসের সহপাঠী! সে ছিল কলেজের সবচেয়ের উন্নতম স্পোর্টসম্যান, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি, সুদর্শন এবং যোগ্য পুরুষ। গীতির স্বপ্নের কামনা।

তবে গীতি বুঝেছিল চৈতন্য তার প্রতি আকৃষ্ট নয়ে।

চৈতন্য, জিয়া কে পছন্দ করে এবং কলেজ এর অনেকের ধারণা ছিল এদের দুজনের মধ্যে কিছু মনের লেন-দেন চলছে; যদিও দুজনের মধ্যে কোনও সামঞ্জস্য নেই, জিয়ার চরিত্র ঠিক উল্টো ছিল, তাছাড়া ভিন্ন সামাজিক অবস্থান।  

গীতি, এসব বোঝে না; সে চৈতন্য এর প্রতি আকৃষ্ট, তার বন্ধুত্ব চায়ে ; চৈতন্য তার ভালোবাসা কাম্য; কিন্তু ওকে পাওয়া মুশকিল মনে হয়ে ; যদিও সে হার মানবার পাত্রী নয়ে। 

এখন কি করে জিয়া কে এই সম্পর্ক থেকে সরান যায়ে ? 

এ রাতে গীতি ভাবছিল, "সেই কুৎসিত মেয়ে, জিয়া , কী করেছে , কী আছে , যার ফলে চৈতন্য মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আছে? সে নিশ্চয়ই তাকে সম্মোহিত করেছে! জিয়া কী মোহিনী স্ত্রীলোক? ডাইনি ?"

এছাড়া কীভাবে চৈতন্য গীতিকে এবং তার সৌন্দর্যকে উপেক্ষা করতে পারে?

অনেক মিনিট ধরে সে কল্পনা করছিল জিয়া কোন পথে একজন ডাইনি হিসাবে তার জাদুবিদ্যা, 'যাদুটোনা ', চালায়, ...। 

এই ধরনের চিন্তায় তার মন আচ্ছন্ন ছিল!

কয়েক দিন আগে সে ডাইনিদের সম্পর্কে পড়েছিল এবং বুঝতে পেরেছিল যে তাদের অস্তিত্ব হয়েত রয়েছে। বহু যুগ ধরে বিশ্বের অনেক মানুষ বিশ্বাস করে।  

এই সব ভেবে গীতির চোখ থেকে নীরব অশ্রু বেরিয়ে এল! সে চোখ মুছলো; তাকে কিছু করতে হবে! জিয়া এবং নিজের সব বন্ধুর সামনে সে চিরন্তন পরাজিত থাকতে পারে না! তাকে চৈতন্য এর ভালবাসা পেতে হবে, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

------------------------

গীতি প্রস্তুত হতে শুরু করল! জিয়ার বাড়ি এই মুহূর্তে যেতে হবে ও একটা মিমাংসা করতে হবে; সে কাছাকাছি থাকে।

ভাগ্যক্রমে, গীতির বাবা-মা এবং জিয়ার বাবা শহরের বাইরে চলে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তী কয়েক দিন পর্যন্ত প্রত্যাশিত ছিলেন না!

সেই রাতে, ঘটনাক্রমে গীতি ও জিয়া, উভয়েই নিজ নিজ বাড়িতে একা ছিল। 

গীতি আবার বাইরের অবস্থা যাচাই করল। কুয়াশা দ্রুত ঘন হচ্ছিল, কিন্তু সে ভাবল নিজের 'ব্লক ' থেকে হেঁটে, পাশের 'ব্লক ' এ জিয়ার বাড়িতে যেতে খুব বেশি সময়ে লাগবে না, অসুবিধে হবে না।

প্রধান দরজা লক করে গীতি বেরিয়ে এল। কুয়াশার মৃদু অদ্ভুত গন্ধ তার নাসারন্ধ্রকে আঘাত করছিল; বাতাসে শীতলতা এবং সাদা দুনিয়া, সে সব উপেক্ষা করে বাম দিকে ঘুরল, নিজের 'ব্লক ' ছাড়িয়ে ।

কয়েক মিনিট হাঁটার পর , এলাকা তার খুব পরিচিত ছিল, সে জিয়ার বাড়িতে পৌঁছালো । চারপাশ অন্ধকার , সেই জায়গায় রাস্তার আলোও কাজ করছিল না । হালকা আলোর একমাত্র উৎস , সেটা মূল দরজার পাশের জানালা থেকে আসছে ; জানলা অর্ধেক বন্ধ এবং পর্দা দিয়ে ঢাকা ; কিন্তু এর মধ্যভাগে একটি ফাঁক আছে।

সে জানালা থেকে সরে গিয়ে ঘণ্টা বাজাতে চাইল ; কিন্তু তার আগে ভেতরে একটা-কিছু চোখে পড়েছিল, একটি চলন্ত ছায়া …। নিশ্চয় জিয়া ।

কী মনে করে গীতি পিছিয়ে গিয়ে ফাঁক দিয়ে উঁকি দিল।

প্রথম দিকে সে বুঝতে পারেনি কী হচ্ছে । ঘরে, আধো অন্ধকারে, জিয়া নয়, পরিবর্তে একটি অচেনা মহিলা ছিল। তার পুরো মাথা ও মুখ, একটি কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা, চোখ ছাড়া। সে কাঁধ থেকে গোড়ালি পর্যন্ত একটি আকারহীন গাউন পরেছিল, এটিও পুরোপুরি কালো। মহিলা লক্ষ্যহীনভাবে দ্রুত ঘুরে বেড়াচ্ছিল, যেন কিছূ খুঁজছেন; তারপর নিচু হয়ে একটা বেশ লম্বা কালো সরু বস্তু তুললেন।

গীতি যখন ঠিক করে বস্তুর দিকে লক্ষ করল তখন বুঝতে পারলো এটি একটি লাঠি, সম্ভবত একটি ঝাড়ুর-লাঠি যা ওই মহিলা তুলে নিয়ে বাতাসে অর্থহীনভাবে নাড়াচ্ছিলেন। তারপর হঠাৎ মহিলা জানালার দিকে মুখ ফেরালেন, সেই মুহূর্তে তার মুখমণ্ডল মৃদু আলোতে দৃশ্যমান হয়ে উঠল ; কালো মুখোশ এর মধ্য দিয়ে দুটি জ্বলন্ত চোখ দেখা যাচ্ছে! যে হাতে লাঠি ছিল তাতে ব্যাপকভাবে গভীর লাল রঙ লেগে আছে; রক্ত কী ? তারপর সে একটি ভয়ঙ্কর মেয়েলি চিৎকার শুনতে পেল, মন প্রাণ কেঁপে যায়ে ...। 

সে এক ভয়াবহ দৃশ্য ও আওয়াজ!

মুহূর্তের মধ্যে গীতি হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে জানালার নিচে লুকিয়ে গেল ; এত শীতে তার কপালে ঘাম বেরিয়ে এসেছে ! সে বসে দুর্বল বোধ করলো , তার ঠোঁট শুকিয়ে গেল; হৃদয় বেদনাদায়কভাবে স্পন্দিত হতে শুরু করল ; গীতি কখনো এতটা ভীত বোধ করেনি!

তখন শুধু একটি চিন্তা তার মনের মধ্যে দিয়ে বার বার চলছে, "এ কী অদ্ভুত ঘটনা? এটা কে ? ডাকিনী … যোগিনী... জাদুকরী ! এটা নিশ্চয়ই একটি ডাইনী, আমি অনেক ছবি দেখেছি; কিন্তু জিয়ার ঘরে কি করছে? "

গীতির চিন্তাধারা বেসামাল হয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু একটা ব্যাপার যেন স্পষ্ট হল, "এই মহিলা কী জিয়া নিজেই ...? সে কি সত্যই একজন ডাইনী, খুনী ? তাহলে আমি সঠিক সন্দেহ করেছিলাম ... হে ভগবান ! এবার আমাকে নিশ্চয় মারবে ...!"

গীতির মন বলছে সে যেন তৎক্ষণাৎ স্থান ত্যাগ করে ; সে মরিয়া হয়ে পিছনে তাকাল , উঠে পালানোর পথ খুঁজতে চেষ্টা করল , কিন্তু শরীর, তার পা, যেন নড়ছে না , দেহ দ্রুত দুর্বল, সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে , অনড় হয়ে শুয়ে থাকে, কথা বলতে অক্ষম ... !

তারপর অন্ধকার তাকে গ্রাস করে!

---------------------------

যখন গীতির চোখ খুলল, সে দেখতে পেল বিছানায় শুয়ে ছিল! উজ্জ্বল সোনালী সূর্যের আলো জানালা দিয়ে আসছিল ; একটা শীতল হাওয়া ভেসে উঠল।

এটা পরের দিন সকাল, সে জিয়ার বাড়িতে ছিল।

তারপর দেখল জিয়া খাটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে, মুখে অল্প হাসি। তাকে যথারীতি দেখাচ্ছে।

গীতি উঠতে চেষ্টা করে, বলে , " কাল রাতে ...। "

এক মুহুর্তের জন্য সে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না । তার বিভ্রান্ত মন চিন্তা করার ক্ষমতা যেন বন্ধ করে দিয়েছে! সে চোখ বন্ধ করে বলল, "আমি বুঝতে পারছি না ..."

"আমি তোমাকে বলব?" জিয়া এগিয়ে এলো। " কিন্তু প্রথমে আমাকে বল, কাল রাতে কেন আমার কাছে আসার আগে 'কল ' বা 'এস.এম.এস ' করনি ? তাহলে তোমার জন্য প্রস্তুত থাকতাম। " 

" কাল তোমাকে কী দেখলাম ?"

গীতির হাথ নিজের হতে নিয়ে জিয়া বলল, "আমি বাড়িতে একটি নাটকে পুরো পোশাক পরে রিহার্সাল দিচ্ছিলাম … একজন ডাইনির চরিত্র করছি … যখন হঠাৎ বাইরে একটি অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম । জানালা থেকে বাইরে তাকালাম, দেখলাম তুমি আমার দরজার সামনে মাটিতে শুয়ে ছিলে … অবিলম্বে বাইরে এসে দেখলাম তোমার চোখ বন্ধ, অদ্ভুত গোঙানির শব্দ করছো, মুখে গাঁজলা উঠছিল …। তারপর তুমি একেবারে নিস্তেজ হয়ে গেলে। তখনই ডাক্তার ডাকলাম, তিনি বললেন চিন্তা না করতে, তুমি ঠিক হয়ে যাবে। চৈতন্য রাতেই এসে গিয়েছিলো এবং অনেক সাহায্য করছে।"

"তোমার এখন কেমন লাগছে?" জিয়া, গীতির চুল স্পর্শ করে হাত বুলিয়ে দিল।

"উহু!" গীতি খুব নিচু স্বরে বলল, " আমি একটু ভালো আছি। একটা খূব দরকারী কথা বলতে এসেছিলাম । তোমার ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। এখন আমি জানি না কি করে বলব … ?"

জিয়া উত্তর দিল, " চিন্তা করো না, আমাকে খুলে বল।"  

"আমি চৈতন্যর কথা বলতে এসেছিলাম …। আমি তাকে চাই ... আমি তাকে ভালবাসি ... ।" গীতির চোখ দিয়ে অশ্রু বেরিয়ে এলো । 

জিয়া বেশ কয়েক মুহূর্ত জন্যে গীতির দিকে অপলক তাকিয়ে থাকল, তারপর বলল।

"অবশ্যই তুমি চৈতন্য কে পেতে পারো, সে তোমার , তোমাকে ভালোবাসে। আমার বাবা-মা আমার বিয়ে এতিমধ্যে ঠিক করেছেন, এবং অনুমান কর কার সাথে ... সে হচ্ছে আমার শৈশবের রোমান্স, বিনয় তরফদার! সেই জন্যে আমি তোমাদের মধ্যে আসছি না । তোমরা চুটিয়ে প্রেম কর।"

"কিন্তু...," গীতি একটু আপত্তি করল, "কলেজে সবাই জানে তোমরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসো ...। "

"ভূল জানে ... আমরা দুজনে একটা ছোট্ট 'বুটিক' এর 'বিজনেস' করছিলাম, সেইজন্য আমাদের মেলামেশা খূব বেশি করতে হতো । এখন সেটা বন্ধ হয়ে গেছে।" জিয়া জবাব দিল ।    

"আর তুমি আমার সাথে সবসময়ে এত খারাপ ব্যবহার কেন করো ? আমি তোমার শত্রু?"

"বন্ধুদের মাঝে রেষারেষি হয়ে না? এটা স্বাভাবিক । এর সাথে তোমার প্রেমের কী অসুবিধে? কখনো খোলাখুলি ভাবে চৈতন্য কে নিজের অনুভূতি কথা বলেছো?" 

গীতি চূপ করে শুনছিল, এরকম কখনো করেনি!  

জিয়া এরপর একটু হাসলো, "আমার কথায়ে সন্দেহ করো না ... চৈতন্য জানে তুমি তাকে কতটা ভালবাস।"

গীতি দুর্বলভাবে বিছানা থেকে ওঠার চেষ্টা করল যখন একটি আশ্বস্ত হাত তাকে স্পর্শ করল! চৈতন্য, পাশের ঘর থেকে তখন এসেছিল, সে গীতির কপাল হাথ দিয়ে আলতো ভাবে তাকে শুয়ে দিল । "গীতি চিন্তা করো না," সে মৃদু গভীর কণ্ঠে বলল, "তুমি ভালো আছো ... সবকিছু ঠিক আছে, আমি তোমার।"

গীতি শান্তভাবে চোখ বন্ধ করে বিছানায় পাস ফিরলো ।

সেই মুহূর্তে জিয়া এবং চৈতন্য দুজনেই একে অপরের দিকে তাকাল; মুখে হাসি।  

----------------------

এর পর গীতির জীবনে একটা গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসার লক্ষণ দেখা গেল ।  

সেদিন খবর পেল জিয়ার বিয়ে ভেঙে গেছে, কোন অজানা অসুখের কারণে। সে বিদেশে গেছে চিকিত্‍স্যা করাতে, হয়েত কখনো ফিরবে না । 

সেই অসুস্থতার কারণ কী? কলেজের বন্ধুরা ভাবতে শুরু করে; জিয়া একজন স্বাস্থ্যবান মেয়ে ছিল তবে ইদানীং ওর হাবভাবে অনেক পরিবর্তণ আসছিল, ক্লাসে আসা বন্ধ করে দিয়েছিলো।  

গীতি অপ্রত্যাশিতভাবে আবার সে রাতের অদ্ভুত ঘটনা নিয়ে সন্দেহ শুরু করল।

সেই জিয়ার ঘটনা কী যথাযথভাবে বুঝে ছিল?

জিয়া প্রকৃতপক্ষে কী একজন ডাইনীর অবতার ছিল ? যেটা আধুনিক সমাজ বোঝে না। ডাইনীর অস্তিত্ব সত্য কী মিথ্যা ?

গীতির এবার মনে হচ্ছিল, জিয়ার 'ডাইনির পরিচয়' লুকানোর জন্য মিডিকাল অস্বাভাবিকতার অজুহাত নেওয়া হয়েছে। 

আর চৈতন্য? সে হয়েত আগেই উপলব্ধি করেছিল জিয়ার সেই পরিচয়, সেইজন্যে অদ্ভূত ঘটনা পর জিয়াকে ছেড়ে গীতির কাছে এসেছিল। এটাও বলা মুশকিল, এই অদ্ভূত ঘটনা যদি না হতো তাহলে চৈতন্য কী করত; গীতি কে স্বীকার করত ?

এরপর, কে বলবে এসবে জিয়ার সম্মতি ছিল? কী ছিল না ? জিয়া হয়েত বুঝতো একজন ডাইনী হিসাবে সে চৈতন্য কে বিয়ে করতে পারতো না। জিয়া হয়েত এটাও ভেবেছিল ওর ডাইনি না হবার ব্যাখ্যা, আর চৈতন্য এর গীতিকে ভালোবাসার বিবরণ, গীতি মেনে নেবে যদি গীতি, চৈতন্য কে পায়ে ও তার প্রেমে সফল হয়।   

এসব জটিলতা না বুঝে সরল মনে গীতি, চৈতন্য কে চেয়েছিলো, প্রেমে অন্ধ ছিল, অত:পর সে তাকে পেয়েছিল।  

এবার মোড় এল যখন সেদিন ক্লাস হবার পর চৈতন্য, গীতিকে বলল, "পরের রবিবার আমি এক সপ্তাহের জন্য নৈনিতাল যাচ্ছি...। "

"ভাল খবর। 'এনজয়' করো। তোমার সাথে কে যাচ্ছে?" গীতি প্রশ্ন করল।

চৈতন্য একটু অস্থিরভাবে উত্তর দিল, " তুমি ভীষণ কৌতূহলী ... বাজে প্রশ্ন করো না। ফিরে এসে বলব।"

বারংবার জিজ্ঞেস করবার পর যখন সে মুখ খুলল না তখন গীতি বুঝতে পারলো চৈতন্য কিছূ লুকোচ্ছে।

এরপর, চৈতন্য এর অবর্তমানে গীতি জানতে পারলো সে, রুক্মিণী নামক ক্লাসের এক বান্ধবীর সাথে প্রণয়ঘটিত ব্যাপার চালাচ্ছে এবং ওকে নৈনিতাল নিয়ে গেছে। ওখানে কী হয়েছিল সেটা আন্দাজ করা মুশকিল নয়ে।

এরপর অনেক মেয়েঘটিত কেচ্ছা হয়েছে।

অবশেষে, অনেক অশান্তির পর, গত মাসে চৈতন্য তাকে ছেড়ে চলে গেল।    

যাহোক, গীতি এখন, জিয়া ও চৈতন্য, দুজনের ঝামেলা থেকে মুক্ত। তার জীবনে আর বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি নেই।  

গীতির বাবা-মা ভাল বিয়ের সম্বন্ধ দেখছেন, যেটা হবে 'গ্র্যাজুয়েশন' শেষ হবার পর! 

    


            



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Drama