Apurba Kr Chakrabarty

Horror Fantasy Thriller

4.0  

Apurba Kr Chakrabarty

Horror Fantasy Thriller

অজানা পথে পর্ব ২৩

অজানা পথে পর্ব ২৩

5 mins
275


বিনয় তাকে আইনি ভাবে স্ত্রীর মর্যাদা আর গোপালের মায়ের সম্মান দিলেও সম্ভোগ করতে তাকে বিছানা সঙ্গী করবে না। ময়নার এতে যেন এখন তার যা মনের পরিস্থিতি ও শারীরিক ক্ষত দুর্বলতা সহবাস সংগমে দীর্ঘ একবছর অধিক বিভীষিকা নার্ভাস লাগত। পুরুষের সাথে সহবাস তার অবচেতন মনে এক তীব্র ভীতি সঞ্চার করত।

এই পরিস্থিতিতে মনে হত এ স্বয়ং মা সর্বমঙ্গলার অশেষ কৃপা আর অভির এই উদারতা। মানসিক ভাবে ময়না ছিল ভীষণ দুর্বল। বিনয়ে মন জুগিয়ে তার এই গৃহে থাকা সুনিশ্চিত করাই ছিল একমাত্র লক্ষ্য।তবে গোপালকে সে মনের দিক থেকে সত্যিই ভালবাসত।মা মরা গোপাল, যতই তার দুর্বল শরীর আনাড়ি মাতৃত্ব হোক তার আন্তরিকতা ছিল একশ শতাংশ গোপালের প্রতি দায়বদ্ধ।

এখনও তার যোনির ক্ষতে আড়ষ্টভাবে কাতর ছিল।আজ রাতে বিনয় ছাড়া একা গোপালকে নিয়ে থাকতে খুব নার্ভাস লাগছিল। 

 

ময়নার আর কোন নিরাপদ আশ্রয় নেই।এই ভয়ঙ্কর নির্যাতনের স্মৃতি তাকে এখনও তাড়া বেড়াচ্ছে।এই গৃহে যখন সে একা জেগে থাকার সময়, গা কাঁটা দিত।বিনয় দিনে থাকলেও রাতে পাশের ঘরে কপাটে ঘরের ভিতর থেকে খিল না দিক কপাট বন্ধ করে ঘুমাও।গোপাল তার সাথেই এক বিছানায় শোয়।গোপালের গভীর ঘুম রাতে তাকে তুলে এনে হিসি করালেও তার ঘুম ভাঙ্গেনা।

আজ বিনয় রাতে নেই।ময়নার ঘুম আসছিল না। মৃত গোপালের মায়ের ঘরে তার স্বামীর সাথে হাসি হাসি সুন্দর মুখটা কেমন উজ্জ্বল লাগছে ময়নার দিকে যেন তাকিয়ে কিছু বলতে চায়। দূর্বল শরীরে ময়নার কেমন নার্ভাস ভয় লাগছিল।দুহাত জোড় করে শিবানীর ছবির উদ্দেশ্যে প্রণাম করে চোখ বুজে আর তাকাতে ভয় করছিল।

আজ তার কিছুতেই ঘুম আসছিল না।বাথরুম যাবার বেগ আসছিল তা যেন ক্রমশ অসহ্য লাগছিল। এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঘরের কপাট খুলে বাথরুম যাবার জন্য ভয়ে ভয়ে বের হল। কমন ডাইনিং পেসটা বেশ বড় ,পূর্ব দিক চেপে দুটি পাশাপাশি শোবার ঘর। দক্ষিণ দিকে গ্যারেজ সংলগ্ন, উত্তর দিকে শক্ত পোক্ত গ্রীলের ঘেরা।তার পর উচু প্রাচীর বেষ্টিত ঘর সংলগ্ন বিনয়ের ছোট সখের বাগান, আম কাঁঠাল নারকেল গাছে আঁধার ছায়া ময় দিনের বেলাতেই নিরিবিলি।পশ্চিম দিকে রান্নার ঘর আর বাথরুম টয়লেট।

 মৃদু নাইট ল্যাম্পের আলো কেমন সমস্ত বাড়ির ভিতরটা খাঁ খাঁ করছিল। ময়নার গা টা খুব বাজছিল।যেন কেউ আছে বাথরুম না রান্নার ঘরে ! না উত্তর দিকে বাগানে! ময়নার চোখে ভ্রম না আর কিছু শাড়ি পরা কোন বৌ যেন হন হন করে বাথরুম থেকে বের হয়ে রান্নার ঘরে বন্ধ দরজা ভেদ করে ঢুকে গেল। 

 একটা তীব্র ঠান্ডা দমকা হাওয়া কোন দিক থেকে এসে তার শরীরে ধাক্কা মারল।ময়নার দূর্বল হৃদয় কেমন আনচান করছিল। মাথাটা বন বন করে ঘুরছিল ডাইনিং রুমের মেঝে পড়ে অচেতন হয়ে পড়ল।

ময়নার যখন জ্ঞান ফিরে এল ভোরের আলো ফুটেছে। ময়নার অনুভব করল রাতের বাথরুমের পরিবর্তে মেঝেতেই তার বাথরুমের কর্ম হয়ে গেছে।ভীষণ সে নার্ভাসে আর ভয়ে সে কাপড় ভিজিয়ে ফেলেছিল।রাতের ঘটনা তার আবছা মনে পড়ছিল সবটাই যেন তার ঘোরের মধ্যেই ছিল। একটা অজানা ত্রাস তাকে গ্রাস করেছিল। 

দ্রুত বাথরুমে গিয়ে কাপড় ডিটারজেন্ট পাউডারে জলে নিজের পড়নের অশুচি কাপড় শায়া ব্রাউজ ভিজিয়ে রাখল।পা থেকে মাথা অবধি সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে পরীক্ষার করে স্নান করল। গোপাল অনেক বেলায় ওঠে নগ্ন শরীরে স্নানের পর ভিজে মাথায় চুল গা ঐ ভাবে শোবার ঘরে ঢুকে গামছায় গা মাথা পরিস্কার করে মুছে শুকনো কাচা পরিস্কার পোষাক আসাক পরে দেখল গোপালও এ রাতে বিছানা ভিজিয়ে শুয়ে আছে।

তাড়াতাড়ি গোপালকে বিছানা থেকে নামিয়ে তার গায়ের জামা প্যান্ট খুলে শুকনো জামা প্যান্ট পরাতে পরাতে গোপাল জেগে গেল। বেলা তখন সকাল পাঁচ টা গ্রীষ্মের দিনে বেশ বেলা।গোপাল লাজুক মুখে বলল 

"আমি রাতে বিছানায় হিসি করেছি মা।"


ময়না গোপালের গালে চুম খেয়ে বলল 

"ঠিক আছে বাবা, তোমার তো কোন দোষ নেই আমি তোমাকে রাতে হিসি করাতে পারি নেই।"


"তুমিও খুব ঘুমিয়েছিল মা!"


"হ্যাঁ বাবা। এসব আবার তোমার বাবাকে বলো না।

তাহলে তোমাকে বাবা আমাকে হয়ত বলবেন না তবে তোমার রাতে কষ্ট হয়েছে ভিজে পোষাকে কতক্ষণ শুয়েছিলে বাবার মনে কষ্ট হবে। আমার খুব খারাপ লাগছে বাবা।"

"তুমি ভেবো না, আমি বাবাকে কিছু বলব না।"


গোপাল যেখানে শোয় বিছানার ঐ তলায় অংশে সাবধানতাবশত অয়েল ক্লথ থাকায় ময়না দেখল শুধুমাত্র বিছানার চাদরে ঐ কিছুটা অংশ ভিজে আছে।তোষকে গোপালের হিসিতে ভেজে নেই।

বিছানার চাদরটাও বাথরুমে ডিটারজেন্ট পাউডারে ভিজিয়ে রাখল।একটু বেলায় কাচবে। বিছানার চাদর পাল্টে গোপালকে বসতে বলে গোপালের জন্য গরম দুধে প্রোটিন পাউডার মিশিয়ে গুলে এক গ্লাস ভর্তি এনে খেতে দিল।


শরীরটা আজ ময়নার খুব দুর্বল লাগছিল নিজেও গোপালের মত আজ সকালে দুধ প্রোটিন পাউডার গুলে খেয়ে একটু যেন গায়ে বল পেলো। ময়নার তেমন চায়ের নেশা নেই।চা তাই করল না।

 

গোপাল ঘর থেকে বের হয়ে সোফায় বসল।আজ আর কাজের বৌ আসবে না। ময়নার ইচ্ছাক্রমেই বিনয় তাকে আসতে নিষেধ করে।


ময়না এবার গোপালকে ব্রাশ করিয়ে দিয়ে তার হাত মুখ যত্ন করে জলে ধুইয়ে পরিস্কার করে মুছে দিল।

 অন্যদিন সকালে ব্রাশ না করে জল খায় না।আজ সে ভীষণ দুর্বল নার্ভাস হয়ে পড়েছিল। বিনয় কখন গৃহে আসবে অধীর ভাবে অপেক্ষা করছিল।এবার নিজেও দাঁত ব্রাশ করে ,ধুয়ে মুছে পরিস্কার হল।

মনে মনে ময়না স্থির করল গোপালকে রাতে কথা বলবে না।বিনয়কেও বলবে না।ভাবছিল হয়ত তার গ্যাস অম্বল থেকে ঘোরে কী সব ভুল ভাল দেখে ভয়ে অচেতন হয়ে পড়েছিল। এমন গতরাতেও হয়েছিল। বিনয় বা গোপালকে বলেনি।মনে হচ্ছিল 

গোপালের মা শিবানী তার পাশে বসে ,গোপালকে সে গল্প বলছিল। হঠাৎই তার মাথা ঘুরে বিছানায় পড়ে গেছিল। তারপর গোপাল তাকে ডেকে ডেকে সাড়া না পেয়ে পাশের ঘর থেকে বাবাকে ডেকে এনেছিল। তাদের যত্ন শুশ্রুশায় সে সুস্থ হয়েছিল। 

ময়নার দুঃখে ভয়ে হতাশায় কান্না পাচ্ছিল। যদি বিনয় দা আজ কোন কাজের চাপে ব্যস্ত হয়ে রাতে আগে বাড়ি না আসে! রাতের কথা ভেবে আতঙ্ক লাগছিল।

 

ঘর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার,বাসন ভাজা ,ভিজিয়ে রাখা তার রাতের পরিধান যা নোংরা হয়েছিল একবার আগেই রাতেই একবার জল কাচা করেছিল।এবার ফুটন্ত গরম জল, তার রাতে পড়নের পোষাক যা ডিটারজেন্ট জলে ভিজানো ছিল, ঐ পাত্রে ঢেলে দিল।গোপালের রাতের প্যান্ট জামা বিছানার চাদর গরম জল না ঢেলে কেচে নিল। ডাইনিং হলের উত্তর দিকে দড়িতে শুকনো করতে দিল। তারপর তার গতরাতে পড়নের শাড়ি ব্রাউজ শায়া আলাদা ভাবে অনেক কেচে পরিস্কার করে মনে হল ছাদে গিয়ে রোদে ভাজা ভাজা করে শুকিয়ে শুদ্ধ করি।

গতকাল বিকেলের ঘটনা তার মনে এল। তখন বেলা নটা। রান্না চাপানো হয়নি।একা ছাদে যাবার সাহস হচ্ছিল না।গোপাল ঘরে তার খেলনা মটোর গাড়ি নিয়ে চালানোর নামে স্বশব্দে হাজার মুখের চিৎকারে ব্যস্ত।তার মনের আনন্দে খেলার আর সে ব্যাঘাত ঘটায়নি।

কী অদৃশ্য কারনে বিনয় তাকে ছাদে যেতে নিষেধ করে।গত বিকালে গোপাল ঘুমিয়েছিল তখন একা ময়নার কেমন ভয় ভয় করছিল। একটা শব্দ যেন ছাদের দরজায় হয়েছিল তাই ছাদে যায়। তারপর যা তার যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল আর রাতের আজব ঘটনা বেশ বুঝেছিল এ গৃহে কিছু একটা অলৌকিক শক্তি আছে। 

গোপালের মা বা  তিনি যেই হোন, শামসুর বা তার সৎ মা,নিজের বাবা মা আর সেই বেশ্যাপল্লির সেই নিষ্ঠুর মাসীর চেয়ে লাখ গুনের ভাল।যাই হোক এ ঘর আমার স্বর্গ, এসব কথা নিজের মনে গোপন রাখব গোপাল বা ওর বাবাকে বলব না।

সত্যি বললে কী ভাবে ব্যাপারটা বিনয় দা নেবেন কে জানে।ওর মনে কোন ভ্রম আনব না।যদি ভয়ে মরেও যাই তবু এসব ঘটনা আমি ছাড়া কেউ জানবে না।

শোবার ঘরে একটু ভয়ে ভয়ে শিবানীর ছবির দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে প্রণাম করল।এখন আর তার ছবি দেখে ভয় হচ্ছিল না।তার ছবির উজ্জ্বল ভাব আর তার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হচ্ছিল না।

               ক্রমশ 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror