অজানা পথে( পর্ব - ৩৮ )
অজানা পথে( পর্ব - ৩৮ )
ময়না খেতে শুরু করল।রাতের আহার শেষে বিনয় খাওয়ার শেষে বলল, "যেমন আছে এঁটো বাসন ডাইনিং টেবিলে তেমন থাক।কাল সকালে কাজের বৌ এলে এখন থেকেই এঁটো বাসন ধুতে নিয়ে যাবে।হাত ধুয়ে এবার আমার ঘরে বসবে,মলমটা ক্ষতে লাগাও, ক্ষতস্থান খোলা রেখে আমার ঘরেই কিছুক্ষণ শোবে, মলমটা ক্ষতে একটু ঢুকতে দেবে, শায়াতে ঢাকলে মুছে গেলে কাজ হবে না। আমি গোপালকে নিয়ে পাশের ঘরে আছি।"
ময়নার খুব সংকোচ লাগছিল এত আদর যত্ন আর ভালবাসা কখনও পায়নি।চোখ আনন্দে তার জলে আসছিল। এত মানুষ ভাল হয় তার ধারনা ছিল না।
নির্জন ঘরে একা তার ক্ষতে মলম লাগতে লাগতে কেমন একটা তার অনুভূতি হচ্ছিল।কেউ যেন ঘরে আছে!সারা শরীর কেমন ভয়ে কাঁটা দিচ্ছিল। তার আর এঘরে একা একা থাকার সাহস হচ্ছিল না। একরকম সে দৌড়ানোর মত পাশের ঘরে গিয়ে খুব হাঁপাচ্ছিল।
বিনয় খুব বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করল "কী হল ময়না!"
ময়না কোন উত্তর না দিয়ে খাটের একপাশে বসে মুখ নামিয়ে কেমন থমথমে মুখে তখন হাঁপাচ্ছিল।
বিনয় বুঝল ময়না কোন ভয় পেয়েছে।তার গায়ে হাত দিয়ে সাহস দিয়ে বলল "কী হল ময়না ভয় পেয়েছ!তোমার কী শরীর খারাপ করছে।"
ময়না নত মুখ অগ্র পশ্চাত নাড়িয়ে ইংগিততে হ্যাঁ বলল।
ময়নার শরীর স্পর্শ করে বিনয়ের অনুভব হল এখনও ময়নার জ্বর,শরীর দুর্বল আবার ভয় পেয়ে, কী ভাবে ছুটে এল! পড়ে গেলে বড় বিপদ হত।একেতেই সে দুর্বল অসুস্থ , আবার অস্থানে বড় ক্ষতের আঘাত।
বিনয় বলল,"গোপালকে নিয়ে তোমার একা অসুস্থ শরীরে কষ্ট হবে --"
বিনয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই ভয়ার্ত্ত ময়না বলল, "না না দাদা আমি একা ঘরে শোব না"
কেমন আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে ময়না প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে আবার বলল, "গোপাল আমার ঘরেই শোবে দাদা।"
"আমি তো তাই বলছি।তোমার এত বড় ক্ষত আমি তো জানতাম না, গোপাল ঘুমের মধ্যে যদি আঘাত করে,বিপদ হতে পারে। ভাগ্যিস এই কদিন রাতে ঘুমের ঘোরে আঘাত করেনি! আমি ভাবছি তুমি সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত , আমি গোপালে নিয়ে তোমাকে গার্ড করে বিছানার মাঝে শোব।"
ময়নি আনন্দে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,
"খুব ভাল হবে দাদা, আমিও এ ঘরেই শোবেন!গোপাল আঘাত করবে না।তবে আপনি কদিন এক বিছানায় শুলে আপনার সাহসে,আমার ঘুম ভাল হবে।"
"তোমার কী গোপালকে নিয়ে একা শুতে ভয় করে!তাহলে আমার আবার কবে রাত ডিউটি থাকলে কী করবে!"
"আমার এখন শরীরটা খারাপ করছে দাদা।এ কদিন যদি --"
"সেটা ঠিক আছে।তুমি সুস্থ হও ক্ষতটা সম্পূর্ণ সেড়ে যাক ততদিন আমি এক ঘরেই শোব।আর রাতে ডিউটি আপাতত এ সপ্তাহে নেই।দরকারে কাজের মাসী আমি যখন রাতে থাকব না।ও না হয় সেদিন তোমাদের সাথে এক ঘরে, মেঝে বিছানা করে শোবে।এর জন্য যা টাকা নেয় ওকে দেবো।"
আজ আর মাসী রাতে থাকা নিয়ে ময়না আপত্তি করেনি।সে স্পষ্ট বুঝেছিল এ গৃহে শিবানীর অতৃপ্ত আত্মা থাকে।এ কথা সে বলবে না।বিনয় বিরক্ত হতে পারে, শিবানীর অতৃপ্ত আত্ম রুষ্ট হতে পারে।যা আছে ভাগ্যে।
বিনয়কে তার ঘরে এক বিছানায় শয়ন করার আবদার বা আবেদন করতেও ময়নার খুব ভয় সমীহ করত।সে জানে বিনয় তাকে যতই বলুক গোপালের মা, আমার স্ত্রীর সম্মান দেবো, তবু বিনয়দা তার সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখবে না স্পষ্ট বলেছিল। বহুগামী আমি বেশ্যা আমি ঘৃন্য আমার শরীর দেহ বিনয়দা এক বিছানায় শোবার এই প্রস্তাবে ময়নার মন আনন্দে ভরে ওঠে।
রাতে আজ ময়না বিনয়ের সাহসে ঘুমিয়ে গেছিল। তখন গোপালেরও ঘুম আসেনি বাপ বেটা কত গল্প করছিল।
অনেক রাত বারোটার পর গোপাল ঘুমিয়ে গেছিল।তার অনেক পর বেশী রাত করে বিনয়ের একটু ঘুম ঘুম সবে এসেছে,বেশ বুঝছিল ময়না আগে সমীহ করে তার থেকে একটু দুরে শুয়েছিল। এখন তার কাছে সড়ে এসেছে তাকে ধরে আছে হাতটা ঠান্ডা কাঁপছে।ময়না জেগে আছে বিনয় অনুমান করল।
বিনয় এতক্ষণ গোপালের দিকে মুখ ফিরে আর ময়নার দিকে পিছন ফিরে শুয়েছিল। গোপাল ঘুমোচ্ছিল।বিনয় ময়নার দিকে ঘুরে শুলো। ময়না চোখ বুজে কেমন কাঁপছিল।
বিনয় বলল,কী ময়না কী হল তোমার শরীর খারাপ করছে !
ময়না কোন উত্তর দেয় না, বিনয়ের ভরসায় আরো কাছে এসে বলে,"আমি আপনাকে একটু ধরে শোব দাদা?"
ভয় করছে তোমার! বিনয় দরদী স্বরে জিজ্ঞেস করল।
ক্রমশ


