Arpita Pal

Horror Thriller

3  

Arpita Pal

Horror Thriller

অভিশপ্ত ডায়রি-তৃতীয় পর্ব

অভিশপ্ত ডায়রি-তৃতীয় পর্ব

5 mins
279


রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর তনু ঘুমিয়ে পড়লেও আমার কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বিছানায় শুয়ে বেশ কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করলাম। কিন্তু ঘুমের কোনো দেখা নেই। তার মধ্যে ঘরের ভেতর কেরকম একটা গুমোট গরম। বিছানা ছেড়ে উঠে ঘর থেকে বেড়িয়ে বারান্দার ইজিচেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসলাম। সাথে সাথেই এক মৃদু মন্দ বাতাসে আমার শরীর যেন জুড়িয়ে গেল। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি আকাশে চাঁদটা আজ আকারে একটু বড়ো। তারই জোসৎনার আলো সমস্ত বাড়িটাকে যেন এক রুপোলী পর্দায় ঢেকে দিয়েছে। কোথা থেকে কোনো এক নাম না জানা মিষ্টি ফুলের সুবাস ভেসে আসছে। আবার শুনতে পেলাম এক গাছ থেকে আরেক গাছে পাখি উড়ে যাওয়ার শব্দ। সাথে ঝি ঝি পোকার ডাক। সবকিছু মিলিয়ে রাতের বেলায় প্রকৃতি যে এরকম মায়াবী হয়ে উঠতে পারে তা কখনও জানতে পারিনি। ধীরে ধীরে রাতের এই অপরূপ সৌন্দর্যের নেশায় আমি কেমন যেন আচ্ছন্ন হতে শুরু করলাম। চোখের পাতা ভারি হয়ে আসতে লাগল। হয়তো কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়েও পড়েছিলাম। হঠাৎই কিসের এক শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। মনে হল কেউ যেন খিল খিল করে হাসছে! শব্দটা একবার হয়েই থেমে গেল। এতো রাতে কে হাসবে? বাড়ির সবাইতো ঘুমোচ্ছে। তাহলে? ভাবলাম হয়তো মনের ভুল। অথবা স্বপ্নও দেখে থাকতে পারি। এবার ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়াই ভালো। কতক্ষণ ধরে যে এই বারান্দায় বসে আছি কে জানে। চেয়ার ছেড়ে উঠে ঘরের দিকে এগোতে যাব এমন সময় কি মনে হতে বারান্দার ডান দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। সিঁড়ির ওখানে আবছায়া অন্ধকারে ওটা কে দাঁড়িয়ে আছে? আমি যে ভীতু তা নয়। কিন্তু আমার থেকে প্রায় ১০-১২ হাত দূরে এখন যাকে দেখতে পারছি মনে হল তার চোখ দুটো যেন জ্বলছে! সে যেন আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। কেন ডাকছে সে আমায়? কি চায় সে আমার থেকে? কে এই ছায়ামূর্তি? আমি কি তাকে চিনি? নাকি সে আমায় চেনে? আর কেনই বা এখন আমি এক-পা দু-পা করে এগিয়ে যাচ্ছি? কীসের এক সাদা ধোঁয়া আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদিকে আমি এগিয়ে চলেছি সামনের দিকে। আমার মস্তিষ্ক যত জোরে সম্ভব বিপদের ঘণ্টা ধ্বনি বাজালেও আমার শরীর তাকে ক্রমাগত উপেক্ষা করে যাচ্ছে। মস্তিষ্ক আর শরীরের যুদ্ধের মাঝে আমি যেন এক নীরব দর্শক। এরই মধ্যে আমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে শুরু করেছি। আর আমার সামনে সেই ছায়ামূর্তি হাত দিয়ে আমায় ইশারা করছে এগিয়ে আসার জন্য। এমন সময় হঠাৎই কেউ যেন আমার হাত ধরে টানতেই সামনে ঘুরে দেখি তনু দাঁড়িয়ে আছে। ব্যস! তারপর আর কিছু মনে নেই।

 

পরের দিন সকালে জ্ঞান ফিরতেই এক নরম হাতের ছোঁয়া পেলাম। চোখ খুলে দেখি তনু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তার মুখের দিকে তাকাতেই মনে হল সে যেন অনেক্ষণ ধরে কিছু বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমি অজ্ঞান হয়ে থাকায় সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। এতক্ষণে অপেক্ষার অবসান ঘটেছে। সে আমায় বলতে শুরু করল-

 " এখন কেমন লাগছে তোমার? শরীরে কোথাও কি কোনো কষ্ট হচ্ছে? তাহলে বল আমায়। তোমাকে এই ভাবে দেখতে আর ভালো লাগছে না? "

এই বলে তনু হঠাৎই ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে আবার বলে-

" সুবোধকে বলেছি ডাক্তার ডাকতে। এই এক্ষুণি চলে এল বলে। আচ্ছা কাল রাতে তোমার কি হয়েছিল? মাঝরাতে হঠাৎই আমার ঘুম ভাঙায় চোখ খুলে দেখি তুমি বিছানায় নেই। ঘরের দরজাটাও দেখলাম খোলা। বুঝলাম তুমি বাইরে গেছো। তোমাকে খুঁজতে দরজা দিয়ে বেড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই দেখি তুমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছ। আমি কতবার তোমায় ডাকলাম। কিন্তু তুমি কোনো সাড়াই দিলে না। তখন বাধ্য হয়ে তোমার কাছে গিয়ে হাত ধরে টানতেই তুমি পেছন ঘুরে আমায় দেখলে। তারপরেই অজ্ঞান হয়ে গেলে। কি হয়েছিল একটু বলবে? কেনই বা তুমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছিলে? "

তনুর এই প্রশ্নে কি উত্তর দেব জানি না। কারণ আমি নিজেই এসবের কিছু বুঝতে পারছি না। এখন আমার মাথায় কি অসহ্য যন্ত্রনা করছে। সব কিছু কেমন যেন গুলিয়ে পাকিয়ে যাচ্ছে। এমন সময় বাইরে জুতোর আওয়াজ শোনা গেল। তনু বলল-

 " ঐ মনে হয় ডাক্তার বাবু এসে গেছেন। "

তিনি ঘরে ঢুকে আমায় দেখে বললেন-

 " কি ব্যপার বলুন তো? এর আগে আপনার স্রী আর এখন আপনি। "

এই বলে তিনি বিছানার পাশের চেয়ারটায় বসলেন। তনু আমার পায়ের কাছেই বসেছিল। সুবোধ দাঁড়িয়ে ছিল ডাক্তার বাবুর একটু পেছনে। হরিপদদাকে দেখলাম দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে বেশ অবাক হলাম। তনুর যেদিন শরীর খারাপ হয়েছিল সেদিন হরিপদদার মুখে যেরকম আতঙ্ক দেখেছিলাম আজও ঠিক তেমনি মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন বিড় বিড় করে যাচ্ছে। এদিকে ডাক্তার বাবু আমার উদ্দেশ্যে বললেন-

 " মিঃ বাগচী এই মুহূর্তে আপনি কেরকম feel করছেন? কোথাও কি কোনো problem হচ্ছে? "

আমি মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো খামচে ধরে বললাম-

 " আমার মাথায় খুব যন্ত্রনা করছে। এই যন্ত্রনা আর নেওয়া যাচ্ছে না। "

এই শুনে তিনি কিছু ওষুধ লিখে নিয়ে তনুকে বললেন-

 " মিসেস্ বাগচী আপনি একটু আমার সাথে বাইরে আসুন। কিছু কথা আছে। "

ডাক্তার বাবু আর তনু বাইরের বারান্দায় চলে গেলেন। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তনুকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ডাক্তার বাবু আড়াল হয়ে আছেন। তনু মাঝে মাঝে কিসব বলে যাচ্ছে। তাকে বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। দরজা থেকে চোখ ফেরাতেই একটু চমকে উঠলাম। কখন যে হরিপদদা আমার পায়ের কাছে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে খেয়ালই করিনি। সেরকমই আতঙ্কিত মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে এখন আর সে মুখ দিয়ে কোনো রকম বিড় বিড় করছে না। তার চোখে চোখ পড়তেই সে আমায় বলল-

 " এখান থেকে চলে যান বাবু। আর এক মুহূর্তও এখানে থাকবেন না। ও কাউকে ছাড়বে না। এমনকি আপনাকেও না। আপনি এখান থেকে চলে যান। "

এ কি? হরিপদদা আবারও একই কথা বলছে। কার কথা বলছে? আর কেনই বা বলছে? আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম-

 " কার কথা বলছো তুমি? কে ছাড়বে না? "

আমার এই প্রশ্নে দেখলাম হরিপদদার ডান হাতটা ধীরে ধীরে উঠে সেই হাতের তর্জনী আমারই বিছানার পেছনে কোনো কিছুকে নির্দেশ করছে। আর সেই দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে সে বলছে-

 " ঐ যে দাঁড়িয়ে আছে। সে আপানারই দিকে তাকিয়ে আছে। ও আপনাকে ছাড়বে না। "

তার এই কথা শুনে আমি ধীরে ধীরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম। কিন্তু কোথায় কি? কাউকে তো দেখা যাচ্ছে না। আমি আবার তাকে বললাম-

 " কোথায়? কাউকে তো দেখতে পাচ্ছি না। তুমি কার কথা বলছো? "

সে ঠিক আগের মতোই ঐ ভাবেই বিছানার পেছনে তাকিয়ে বলল-

 " আমি দেখতে পাচ্ছি। ও আপানাকে ছাড়বে না। আপনি চলে যান। চলে যান......"

হরিপদদার এই কথা শুনতে শুনতে আমি যেন এক গভীর নিদ্রায় ডুবে গেলাম।

                                                                      ক্রমাগত...... 


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror