আত্মদর্শন।
আত্মদর্শন।
বাস থেকে নেমে হারুর দোকানে চা খেয়ে বাড়ি ফিরছি। বাস স্ট্যন্ড থেকে আমার বাড়ি বিশেষ দূরে নয়, হেঁটেই যাতায়াত করি। খানিক একবার পর রাস্তার ধারে একটা বাড়ির সামনে জটলা দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম।
কৌতূহলবশে জিজ্ঞেস করলাম--কি হয়েছে দাদা?
-- রবিন দত্ত মারা গেছেন।
-- কি হয়েছিল?
--হার্ট অ্যাটাক। সময় দিল না, একটা ধাক্কাতেই শেষ।
খাটে তোলা হয়ে গেছে, এইবার বেরোবে। ভিড়ের জন্য মানুষটাকে ভাল মত দেখতে পাচ্ছি না। খাট কাঁধে উঠতেই আওয়াজ এল “বল হরি”, আপন মনেই কয়েকবার বলে উঠলাম “হরিবোল”। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বডি দেখে আঁতকে উঠলাম। আরে, খাটের ওপরে শুয়ে থাকা মানুষটাতো আমি। চমকে উঠলাম সামনে তাকিয়ে। কি আশ্চর্য নিজের বাড়ির সামনেই দাঁড়িয়ে রয়েছি। ওইতো আমার বৌ রমলা বাইরে বেরিয়ে এ
সে হাউ হাউ করে কাঁদছে। এ কি করে সম্ভব!
কয়েকটা ঠেলা খেয়ে বাস্তবে ফিরলাম। রমলা তো কাঁদছে না। ঘুম চোখে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল- ঘুমের মধ্যে হরিবোল হরিবোল বলতে বলতে গোঙাচ্ছিলে। ঘন ঘন মড়া নিয়ে শ্মশানে যাওয়ার ফল। ঘুমন্তও হরি ধ্বনি দিচ্ছো।
বেঁচে আছি নিশ্চিত হবার পর অস্ফুট স্বরে বললাম—এবারে আর শববাহক নয় গো নিজেই শব। স্পষ্ট দেখলাম, যাকে কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছে সে অন্য কেউ না আমি। সময় বোধহয় হয়ে এল গো।
--মাঝ রাতে কি যা তা বকছ। নিজেকে নিয়ে কোন স্বপ্ন দেখলে তা অন্যের হয়। পেট গরম হয়েছে। জল খেয়ে পাশ ফিরে শোও।
রমলার তত্ত্বে আস্থা রাখতে পারলাম না। বাঁচার যে বড় সাধ, প্রস্থানের চিত্রনাট্য চাক্ষুষ করতে বড় ভয় হয়। ঘুমোলেই যদি আবার দুঃস্বপ্ন ফিরে আসে এই আশংকায় বাকি রাতটা জেগেই কাটল।