আস্তিক না নাস্তিক?
আস্তিক না নাস্তিক?
সায়ক আর সুমনের মধ্যে মাঝেমধ্যেই বিতর্ক লাগে নানা বিষয় নিয়ে। দুজনেই কলেজ ছাত্র। সেদিন ছিল সোমবার, সবার মতো সায়ক ও সুমনও কলেজে যায়। সেদিন ক্লাস শেষ হতে না হতেই হঠাৎ দুজনের মধ্যে "আস্তিক না নাস্তিক?" এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। পাশ থেকে শুভ বলে ওঠে,"ওফ্! আবার শুরু হলো এদের ঝগড়া! তোরা ঝগড়া না করলে তোদের কি হজম হয়না?" শুনে সুমন বলে ওঠে,"তুই থাম শুভ। এটাকে ঝগড়া বলেনা, এটাকে বিতর্ক বলে। আর বিতর্ক ছাড়া কোনো সমাজ চলতে পারে নাকি?" শুনে শুভ চুপ করে হাসতে থাকে। সায়ক বলে,"আমি আস্তিক। ঈশ্বরই সব। সুমন তোর মধ্যেও যেমন ঈশ্বর আছেন, তেমন আমার মধ্যেও আছেন।" শুনে সুমন তীব্র কণ্ঠে বলে ওঠে," আমি নাস্তিক। আমি ঈশ্বর মানি না। আর যদি ঈশ্বর থাকেনও তাহলে আমাকে দেখা।" "আরে তুই বোকার মতো কথা বলছিস। ঈশ্বরকে উপলব্ধি করতে হয়"- বলে ওঠে সায়ক। শুনে সুমন রেগে যায়, ওদিকে সায়কও রেগে যায়। আর পাশ থেকে মজা নেয় শুভ। সায়ক হঠাৎ রেগে গিয়ে দুবার বেঞ্চ চাপরে দেয়। ওদিকে সুমনও তিনবার বেঞ্চ চাপরে দেয়। এগুলো অনেকক্ষণ ধরে শোনে পারমিতা। তারপর পারমিতা খুব জোরের সাথে বলে ওঠে,"তোরা থাম দুজনে।" বলেই সায়ককে জিজ্ঞাসা করে," তুই নাকি আস্তিক? তাহলে বল আস্তিকের প্রকৃত সংজ্ঞা।" শুনে সায়ক গর্বের সাথে বলে,"হ্যাঁ, আমি আস্তিক। আর যারা ঈশ্বরে বিশ্বাসী, তাদেরকেই আস্তিক বলে।" শুনে পারমিতা মুচকি হাসে। এরপর পারমিতা সুমনকে বলে,"নিজেকে নাস্তিক বলছিস যখন, তাহলে নাস্তিক কাকে বলে,বল্।" সুমন বলে ওঠে,"যারা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী, তারাই নাস্তিক। যেমন- আমি।" পারমিতা বলে,"তোরা পুরনো দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে ভাবছিস কেন? একটু অন্যভাবে ভেবে দেখ। আস্তিক হলো তারাই, যারা নিজেদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। নাস্তিক তারাই যারা নিজেদের অস্তিত্বকে অবিশ্বাস করে। ঈশ্বর আছেন কি নেই সেইসব পরের কথা। আগে তোরা নিজেরা এই জগতে আছিস কিনা অর্থাৎ নিজেদের অস্তিত্ব ভালো কাজের দ্বারা প্রমাণ করতে পারিস কিনা সেটা দেখ। তবেই বোঝা যাবে তোরা আস্তিক নাকি নাস্তিক?" দুজনেই শান্ত হয়ে কথাগুলি উপলব্ধি করল আর বলে উঠলো,"অসাধারণ বলেছিস, পারমিতা।" এরপর থেকে যখনই তাদের মধ্যে বিতর্কের সূচনা হয় তখনই তারা পারমিতার কাছে যায় তার সমাধানের জন্য।