Rita De

Abstract Others

2  

Rita De

Abstract Others

আপাত সত্য - ড . রীতা দে

আপাত সত্য - ড . রীতা দে

4 mins
348



      বসুধা জানালা দিয়ে দেখছে মানে বসুধা ঘরের ঠিক জানালার গা ঘেঁষেই বসে আছে । পেয়ারা গাছের একটা ডাল জানালার ওপর এমনভাবে ঝুঁকে পড়েছে যেন বসুধাকে জিজ্ঞেস করছে - 'কি ব্যাপার , এ' সময়ে ঘরে ? কি, সব ভালো তো ?' সত্যিই পেয়ারা ডালটা জিজ্ঞেস করছে না বসুধা নিজে নিজেই এসব ভাবছে ...

এই সব ভাবতে ভাবতে বসুধার মনে পড়লো , আরে , জানালাকে তো 'গবাক্ষ 'ও বলা হয় ।গবাক্ষ অর্থাৎ গো+অক্ষ = গরুর চোখ ।চোখ তো অবশ্যই। জানালা ঘরের চোখ তো বটেই । চোখ পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে একটা ।চোখ দিয়ে আমরা সারা বিশ্বকে দেখি। এই জানালা দিয়ে আলো , ধুলোবালি, হাওয়া বাতাস হেঁটে চলে ঘুরে ফিরে বেড়ায় । মানুষের বুদ্ধি আর কি । বুদ্ধির মধ্যেই চিন্তার উদ্ভব , আর তা থেকেই জানালার জন্ম । কি মজাটা দেখ , গরু যখন গোয়াল ঘরের জানালা দিয়ে দেখে গরু কি জানে যে সে নিজের চোখের নামের মধ্যে দিয়েই দেখছে ? 

     মানুষ আর গরু দুজনেই প্রকৃতির অংশ ।

দুজনের মধ্যে তফাৎ শুধু বুদ্ধিমত্তার।বুদ্ধিমত্তার কারণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণীদের থেকে স্বতন্ত্র ।কিন্তু দুজনেই জানালা দিয়ে বাইরে থেকে ভেতরে বা ভেতর থেকে বাইরের দিকে দেখে ।আর এই গবাক্ষ বসুধাকে টেনে টেনে নিয়ে গেল গোয়াল ঘরে - গরুরা সেখানে জিরোয় , ঘুমোয় । গরু গ্রামে গঞ্জে মাঠে মাঠে চরতেও যেমন বেরোয় আবার গোয়াল ঘরের জানালা দিয়ে উদগ্রীব হয়ে তাকিয়েও থাকে - কখন বাড়ির লোকজন খাবার দিয়ে যাবে , সন্ধ্যে হলে কখন ধূনো দিয়ে যাবে যাতে তাদের মশা না কামড়ায় ।

আচ্ছা গরুর মন বলে কি কিছু আছে ?

 গবাক্ষ দিয়ে গরুর ঐ যে উদ্গ্রীব চাউনি- ও কিসের প্রতিফলন ? গরুর মাথায় ঘাড়ে পিঠে যখন পরম স্নেহে মানুষ হাত বুলোয় তখন কেমন চোখ বুঁজে আদুরে হয়ে লেজটাকে কেমন চামরের মতো নাড়ে !

         বসুধাও জানালা দিয়ে বাইরে দিকে তাকিয়ে -

 ব্যাকুল বাইরের কোনো এক সীমাহীন ব্যাপ্তিকে আত্মস্থ করার জন্যে,  অথচ তার মনে হচ্ছে ঐ গবাক্ষ বা জানালা যেন তার নিজের ভেতরেই আছে যে জানালা মনের  গভীরে যে বিরাট অসীমের জগৎ আছে সেখানে পৌঁছানোর এক খোলা পথ ।

         এই সব ভাবতে ভাবতে বসুধা গরুটাকে খুঁজতে গিয়ে দেখে যাঃ গরুটাও নেই আর গোয়াল ঘরের গবাক্ষও নেই আর বসুধা বলে মেয়েটাও নেই । তাহলে কি সবটাই ভ্রম ?

         বসুধা আরও এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে ভাবে মানুষ বসুধা গরু জানালা সবই যদি ভ্রম বা illusion হয় তাহলে ইলিউশন- এর তো একটা উৎস আছে । সেই উৎসের সন্ধান করতে করতে খবর পাওয়া গেল এক স্পন্দনের যা সৃষ্টিকর্তার নিজের মধ্যেই উদ্ভূত হয়।

সৃষ্টিকর্তার মধ্যে উদ্ভূত স্পন্দনের পরিপ্রেক্ষিতেই চিন্তার বিস্তারের ফলশ্রুতিই এই বিশ্ব । প্রাণীসকলের অস্তিত্ব শুধুমাত্র চিন্তাপ্রসূত । অথচ আমরা মনে করি যে আমরা সত্যি সত্যিই আছি , আমাদের চলাফেরা ওঠাবসা সবই বাস্তব । বসুধা আর গরুর- দুজনেরই বাস্তব উপস্থিতি থাকলেও আসলে তারা কিন্তু বাস্তবে নেই। বসুধা গরু গবাক্ষ -র উপস্থিতি আপাত বাস্তব । অনেকটা আমাদের স্বপ্নে দেখা ঘটনার মতো । স্বপ্নে আমরা অনেক ঘটনা প্রত্যক্ষ করি ।তখন আমাদের কাছে ঐ ঘটনাগুলো এক্কেবারে সত্যি বা real । আর যেই ঘুম ভেঙ্গে গেল অমনি ঘটনাগুলো উধাও । ঘটনাগুলোর  আর কোনো অস্তিত্বই নেই। সেইরকম একটা ব্যাপার আর কি । এখানে যে স্বপ্নটা দেখছে সে তো মরণশীল প্রাণী । বসুধাও মরণশীল ।মরণশীল প্রাণীর একটা কায়িক দেহ ( physical body) আর আধ্যাত্মিক সত্ত্বা ( spiritual substance) থাকে। স্রষ্টার কোনো দৈহিক অস্তিত্ব নেই ,

যেহেতু তাঁর কোনো অতীত স্মৃতি নেই যেহেতু তাঁর কোনো পূর্ববর্তী কর্ম নেই। তবে স্রষ্টার নিজেরও দ্বৈত সত্ত্বা আছে । একটা হচ্ছে চেতন যা শুদ্ধ বুদ্ধিমত্তা আর দ্বিতীয়টা হল চিন্তন যা বিভ্রান্তমূলক।

আর এই কারণেই প্রতিটি প্রাণীর মধ্যে যদিও তিনি উদ্ভূত হন নি তবুও তাঁর অস্তিত্ব অনুভূত হয় ।বিশুদ্ধ বুদ্ধিমত্তার মধ্যে সুপ্ত চিন্তাই প্রতিটি আকারের উৎপত্তির কারণ । এই শুদ্ধ বুদ্ধিমত্তাই সমগ্র বিশ্বকে ধরে রেখেছে । আরও যে বিশুদ্ধ বুদ্ধিমত্তার উপাদান সকল প্রাণীর মধ্যেই বিরাজমান। কিন্তু তা বিস্মৃতির কারণে এবং শুধুমাত্র দৈহিক আকারের চিন্তার কারণেই তারা সকলেই দৈহিক বা প্রাকৃতিক আকারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ বা স্থিতিশীল হয়ে গেছে ।এমনকি অবয়বহীন ভূতসকলেরও অবয়ব আছে বলে মনে হয় । উপলব্ধকারীর ভ্রমের কারণেই এমনটি ঘটে। 

স্রষ্টা এই ধরনের ভ্রমের অধীন নন । সর্বদাই তাঁর প্রকৃতি আধ্যাত্মিক। আধ্যাত্মিকতাই তাঁর সৃষ্টির সারবস্তু । তাই সৃষ্টির পার্থিবসত্ত্বা বলে কোনো কিছু হয় না । সৃষ্টির বাস্তব আকার প্রকৃত পক্ষে castle in the air , একজনের একান্তই নিজের মনের মায়াময়ী অভিক্ষেপ - কাল্পনিক ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract