আমার স্বপ্নে রবীন্দ্রনাথ
আমার স্বপ্নে রবীন্দ্রনাথ


— কি রে আমাকে চিনতে পারছিস নাকি আমার চলে যাওয়ার এত বছর পরে আমায় ভুলেই গিয়েছিস?
— কি যে বলেন কবিগুরু। আপনাকে কি ভোলা সম্ভব? আপনাকে ভুলে কি বাঁচা যায়? আমার জীবনে হাসি, কান্না, আনন্দ, দুঃখ এমনকি প্রথম প্রেমে পড়া—সব অনুভূতিতেই তো আপনি আমার পাশে আছেন নিজের সৃষ্টির ডালি নিয়ে।
— কি বলছিস রে ছুটকি?
— হ্যাঁ। সত্যি বলছি কবিগুরু। আমি দুঃখ পেলেই শুনি আপনার রচিত গান ‘আমার সকল দুঃখের প্রদীপ’। খুব আনন্দে আমার সঙ্গী হল ‘চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে’। এমনকি দেবব্রত যেদিন প্রথম বলল আমাকে ভালোবাসে, সেদিনও কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে দোতলায় গিয়ে আপনার লেখা গানই গাইলাম ‘প্রেমেরও জোয়ারে, ভাসাবে দোহারে’।
—তাহলে তুই আমাকে ভুলিসনি দেখছি।
—শুধু আমি কেন আমরা কেউই আপনাকে ভুলিনি। আজকাল ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবণ ছাড়াও মাঝে মাঝেই ‘ফেবু’ তে আপনার কত লেখা কত জন পোষ্ট করে জানেন আপনি?
—‘ফেবু’ আবার কি রে ছুটকি? নতুন কোন বই বুঝি?
— না গো কবিগুরু না ‘ফেবু’ হল ‘ফেসবুক’। ওটা মোবইলে ও কম্পিউটারে দেখা যায়। ওখানে লেখাও যায়। আমিও তো ওখানে কত গল্প ও কবিতা লিখি।
—তোদের ওই ফেবু টেবু আমি বুঝবোনা বাপু। তবে তুই যে লিখিস এটা বেশ ভালো কথা।
— ভালো কথা আর কি লিখি এইটুকুই। এই তো সেদিন একটা কবিতা লিখলাম নাম দিলাম ‘আমার মুক্তি’। পরে ভাবলাম কবিতার নামটাও আপনার থেকেই নেওয়া। সেই যে আপনার গান ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’। সাহিত্যের জগৎ চিরকালই আপনার হয়ে থাকবে। সর্বত্র শুধু আপনি বিরাজমান।
—বোকা মেয়ে তোরা আমার লেখা এখনো পড়িস, আমার গান এখনো শুনিস—এইভাবে তোরাই তো আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছিস। তুই লেখা চালিয়ে যা, তবে মনে রাখবি যা মানুষের মনকে তৃপ্ত করে এমন লেখাই প্রকৃত লেখা। আমি চলি।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠল অ্যালার্ম। সাথেই মায়ের গলার আওয়াজ ‘কিরে ছুটকি এবার ওঠ, ছটা বেজে গেল।’ ঘুম ভাঙতেই কানে ভেসে এল ক্লাবের মাইকে বাজছে ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্য সুন্দর।’ মনে পড়ে গেল আজ ২৫শে বৈশাখে কবিগুরুর জন্মদিনে একটি ম্যাগাজিন এ আমার লেখা প্রকাশ অনুষ্ঠানে যেতে হবে। সেখানে কবিগুরুকে নিয়ে নিজের লেখাও পড়তে হবে। কিন্তু ভোরের দেখা স্বপ্নের ঘোর তখনও যেন কাটছিলনা। মনে মনে বললাম ‘সব স্বপ্নই যে মানুষের পূরণ হবে এমন কোন কথা নেই কিন্তু কবিগুরু আপনার সঙ্গে স্বপ্নে কাটানো এই কিছুটা সময় আমার জীবনে অনেক স্বপ্ন পূরণের চেয়েও অনেক বেশি পাওয়া। কবিগুরু আপনার চরণে আমার প্রণাম। হে সত্য সুন্দর আমাদের চারপাশের জগতে আপনি সদাই বিরাজ করুন আর আপনার সৃষ্টির আলোয় আলোকিত ও সমৃদ্ধ হোক আমাদের মনের জগৎ।’
মনে মনে উচ্চারণ করলাম কবিগুরুর উদ্দেশ্যে আমার লেখা কবিতাটি—
জীবনের প্রতিক্ষণে,
একান্তে আর নিভৃত মনে,
অনুভব করি তোমার উপস্থিতি।
দুচোখ মেলি বিশ্বপানে,
অবাক হই তোমার গানে,
আর দেখে তোমার সকল সৃষ্টি।
আজকে নয় সেই শৈশবে,
কি জানি প্রথম কবে,
তোমার আসন পেতেছিলাম অন্তরে।
তোমার সুরে, তোমার গানে,
থাকবে তুমি সদাই প্রাণে,
জানাই প্রণাম আজকের এই ভোরে।