আমাদের দেওঘর যাত্রার অভিজ্ঞতা
আমাদের দেওঘর যাত্রার অভিজ্ঞতা
বিকেল পাঁচটা নাগাদ যশিডিতে নামলাম। রণক্লান্ত চেহারা সকলের। আমার ম্যাও বুড়িটাও (খুব ছোট্ট বেলায় আমার মেয়েকে ম্যাও বলেই ডাকতাম আমি। এখনও মাঝে মাঝে ম্যাও ডাকটা চলে আসে। তখন খুব রেগে যায়। বন্ধুরা শুনে ফেললে কি যে হবে! ) তখন পরম শান্তি তে আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।
যশিডি থেকে অটোয় দেওঘর পৌঁছতে বেশি সময় লাগল না। হোটেল বুক করাই ছিল। হোটেলে উঠেও শ্বশুর /জামাই, লাগল আর একচোট ঝামেলা। বাবার বক্তব্য, "এত খরচ করে হোটেলে ওঠার কি দরকার ছিল? এখানে আমাদের এক আত্মীয় (অনেক দূর সম্পর্কের, আমি তাকে চোখে দেখিনি কোনোদিন) থাকেন । তাঁর বাড়িতে উঠলেই হত।" কর্তামশাই বললেন, "তাহলে বেড়ানো আর হতো না। আত্মীয়ের বাড়ি ঘোরাই হত শুধু। আর আজকে যা ঘটল----" ।কথাটা ইনকমপ্লিট রেখে দিলেন কর্তামশাই। সত্যি, বন্ধুর বাড়িতে থাকলে তাও বেড়ানো যায়। কিন্তু আত্মীয় কুটুমের বাড়িতে থেকে কুটুম্বিতা হয় শুধু , বেড়ানো হয় না। এটা আমিও বিশ্বাস করি।
সন্ধ্যার দিকে বেরোলাম মন্দিরের উদ্দেশ্যে। অনেক ছোটবেলায় বাবা মায়ের সঙ্গে এসেছিলাম এদিকে। সেই সময়ের কিছু কথা আবছা ভাবে ভেসে উঠছে স্মৃতির পটে। একজনের কথা আজও ভুলিনি। দুটো পদ্ম কলির মতো চোখ, আর খুব বড়ো লাল টুকটুকে পাথর বসানো আঙটি পরা হাতের আঙুল আজও ভেসে ওঠে স্মৃতির পটে। তখন ক্লাস থ্রি তে পড়ি। সেপ্টেম্বর মাসে তখন এসেছিলাম এখানে।
দেওঘর ট্যুরিস্ট লজ। একজন বোরখা পরিহিতা মহিলা, যাকে দেখলে আমার বাবা খুব ভয় পেতেন। আর মা খুব রেগে যেতেন। কেন? জাত বা ধর্ম নিয়ে কোনো ছুঁতমার্গ তো ছিলো না আমাদের বাড়ির। তাহলে ওনাকে দেখে বাবা মায়ের এমন আচরণের কারণ! আজও সেটা আমার কাছে স্পষ্ট নয়। ওই ভদ্রমহিলার সাথে অনেক লোকজন ছিল। তাদের মধ্যে দুজন মোটাসোটা মহিলা। দুজনেই বোরখা পরা। তবে এদের মুখ খোলা। বাকি সবাই পুরুষ। ট্যুরিস্ট লজের পুরো দোতলাটা ওদের লোকজনে ভরা ।তার মধ্যে মাত্র দুটি ঘরে ছিলাম আমরা এবং খড়্গপুর আই আই টি কলেজের এক প্রফেসর সস্ত্রীক। একবার ঘুরতে ঘুরতে ওনাদের ঘরের সামনে গিয়ে পড়েছিলাম আমি। ওই ভদ্রমহিলা তখন ঘরে একাই ছিলেন, বোরখা ছাড়াই। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম আমি। একটা তানপুরা নিয়ে মৃদু স্বরে সুর ভাঁজছিলেন উনি। অসম্ভব সুন্দর কন্ঠস্বর আর অগাধ রূপের রাশি। আজও মনে আছে, ওনার পরনে ছিল হলুদ রঙের একটা সিল্কের শাড়ি, আর হাতের আঙুলে সেই বড় লাল পাথরের আঙটি। ওনার চোখে চোখ পড়তেই, আমার দিকে তাকিয়ে কি সুন্দর করে হাসলেন উনি। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, ওই হাসিটার মধ্যে যেন অনেকটা কান্না লুকিয়ে আছে। হ্যাঁ। ছোট থেকেই আমি অন্যরকম। কল্পনার চোখ দিয়ে অনেক কিছু দেখতে পেতাম। সেজন্য স্কুলে সহপাঠীদের কাছে, টিচারদের কাছে হেনস্থার শিকারও হয়েছি বৈকি। তবে যেটা লিখছি সেটা একেবারেই কল্পনা নয়।
যাইহোক, ওই ঘরের সামনে গিয়ে পড়েছি দেখতে পেয়ে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে এসেছিল মা, আর তারপর এক থাপ্পর।
পুরোনো কথা ভাবতে ভাবতে কখন মন্দিরে পৌঁছে গেলাম টের পাইনি। ঢাকের শব্দে। ঘোর কেটে গেল। চারদিকে অজস্র আলো ।আজ নবমী যে।
প্রচুর ভিড়ের মধ্যে নিজেকে মিশিয়ে দিয়ে দর্শন করলাম বাবা বিশ্বনাথের। কর্তামশাইএর হাত ধরে স্পর্শ করলাম ওনাকে। এই লিঙ্গ মূর্তিও দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের এক। পাশেই দূর্গা মন্দির ।একান্ন পীঠের এক পীঠ এই মন্দির। এইখানে এসে লক্ষ্য করলাম,মন্দির চত্বরে কি যেন অনুষ্ঠান হচ্ছে। খুব সুন্দর তালে তালে ঢাক বাজছে। অনুষ্ঠানের জায়গাটা ঘিরে রেখেছে অজস্র মানুষ। কি হচ্ছে ওখানে। সারা মন্দির চত্বর ঘিরে হাত দুয়েক মতো চওড়া লাল সিঁদুরের একটা রেখা টানা হয়েছে। অনেক মহিলা ওই রেখার ওপর মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করে যাচ্ছেন।মন্দিরের অজস্র আলোর মধ্যে হঠাৎ করেই একটা অন্ধকার কোণ আবিস্কার করলাম। আর তখনই চোখে পড়ল, ও কি! কি ওগুলো। অনেক গুলো মোষের মাথা টাল দিয়ে রাখা রয়েছে। দেওঘরের মন্দিরে নবমীর দিন একশো আট মোষ বলি দেওয়া হয়। আমরা না জেনেই চলে এসে তার সাক্ষী হয়ে গেলাম। ওই সুন্দর বাজনা ছিল বলির বাজনা। বলির পর মৃত মোষের ধড় টাকে মন্দির প্রদক্ষিণ করানো হচ্ছে। তাতেই সৃষ্টি হচ্ছে হাত দুয়েক চওড়া ওই দাগ। ওটা রক্তের দাগ। উঃ। মা গো। কি ভয়ানক । মন্দির থেকে বেরোনোর সময়ে মন্দিরের বাইরে এক অন্ধকার কোণে একটা গলা কাটা মোষ ফেলে রেখে দিয়েছে দেখলাম। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেল।
পাঁঠা বলি দিয়ে তার প্রসাদি মাংস খাওয়ার রীতি অনেক জায়গাতেই আছে জানি। কিন্তু মৃত মোষ তো সে কাজে লাগবে না। তাহলে এতগুলো প্রাণী হত্যা কিসের জন্য! শুধুই নিয়ম রক্ষা। নিজের মনের কথা বললাম। কেউ কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
সেদিন রাতে আমরা কেউ আর কিছু খেতে পারলাম না। শুধু মেয়েটাকে সেরেল্যাক গুলে খাইয়ে দিলাম। পরদিন বেরোলাম শহর ঘুরতে। একটা কার বুক করা হয়েছিল। প্রথমেই আমরা গেলাম ত্রিকূট পাহাড়। দেওঘর থেকে দুমকা যাবার পথে পড়ে এটা। শহর থেকে আনুমানিক 10 km. দূরত্ব হবে ।তিন শৃঙ্গ বিশিষ্ট পাহাড় বলে এর নাম ত্রিকূট। এর সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গটা সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 2470 ফিট উঁচু। ত্রিকূট পাহাড়ে পায়ে হেঁটে উঠতে হয়। পাহাড়ের ওপরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে ত্রিকূটাচল মহাদেবের মন্দির ।ভারি সুন্দর পরিবেশ। এছাড়াও আরো কয়েকটা মন্দির রয়েছে। সেসব দেখতে দেখতে ওপরে উঠলাম। একদম টপে উঠতে আর পারিনি। মহাদেবের মন্দির ছাড়িয়ে আরো খানিকটা উপরে উঠে একটা পাথরের চাতালে এসে দাঁড়ালাম আমরা। এইখানে একটা গুহা রয়েছে। মনুষ্য সৃষ্ট নয় এই গুহা।গুহায় থাকেন এক মাতাজী।
চাতালে একজন সন্ন্যাসী বসে ছিলেন। মুন্ডিত মস্তক। পরনে রক্তাম্বর ।ওনার গলায় শোভা পাচ্ছে বেশ মোটা একটা সোনার চেন। লম্বা একটা রূদ্রক্ষের মালাও রয়েছে গলায় ।সেটাও সোনার চেনে গাঁথা এবং রূদ্রক্ষ গুলো সোনা দিয়ে বাঁধানো। দুই হাতের আঙুলে অনেকগুলো আংটি। মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছিলেন। অবাক হয়ে দেখছিলাম ওনাকে। কথা বলা শেষ হতে বললেন, "মাতাজীর ধ্যান ভাঙার সময় হয়েছে। আপনারা দাঁড়ান। দর্শন করে যাবেন।" কর্তামশাই এসব মাতাজী, পিতাজী নিয়ে কিছু বলতে চান না। কিন্তু বাবার এনাদের প্রতি অসীম ভক্তি।
একটু পরে গুহার ভেতর থেকে ডাক এল। আমরা ঢুকলাম। একসাথে দশজন কে ঢোকানো হল। ভেতরটা আরামদায়ক ঠান্ডা। গুহার ভেতরে রয়েছে আর একটা গুহা। সেখান থেকে বেরিয়ে আসন গ্রহণ করলেন মাতাজী । চোখে হাই পাওয়ারের চশমা। ধপধপে ফর্সা রঙের ওপর গেরুয়া রঙের সিল্ক শাড়ি। চমৎকার দেখাচ্ছে ওনাকে গলায় রূদ্রাক্ষ। বাঁচাতে একটা রিষ্টওয়াচ রয়েছে। সবার হাতে একদলা করে শুকনো ক্ষীর দিচ্ছেন, মাতাজীর প্রসাদ। মুখের ভাষা ওনার ইংরাজি। খুব ভক্তিভরে বাবা প্রণাম করলেন ওনাকে। এবং আমার মেয়েকে ওনার কোলে তুলে দিলেন। কর্তামশাই এবং আমার ভাই পছন্দ করেনি ব্যপারটা। যাইহোক, উনি আশীর্বাদ করলেন আমাদের সবাই কে। উনি দেখালেন ওনার লাইব্রেরি। ভেতরের গুহাতে অজস্র বই এর সংগ্রহ। সবই দর্শন শাস্ত্র।
বেরিয়ে এলাম গুহা থেকে। বাইরে এসে শুনলাম, মাতাজী নাকি সারাদিন কোনো আহার গ্রহণ করেন না। শুধুমাত্র রাতে কিছু ফল আর একবাটি ক্ষীর খান। আর মাসে একবার করে লোকলয়ে যান বই সংগ্রহ করতে। বাবা তো ভক্তিতে গদগদ ।কর্তামশাই আর ভাই আবার অন্য কথা বলে। আমিও ভাবছিলাম, সত্যি, এরকম বন জঙ্গলের মধ্যে এ একরকম যেন আত্মগোপন করে থাকা।
ত্রিকূট পাহাড় দেখা শেষ। ড্রাইভার একঘন্টা সময় দিয়েছিল। ঘড়িতে দেখি দুই ঘন্টা হতে চলল। এবার যাব তপোবন ।স্টেশন রোড থেকে একটু দূরেই রয়েছে ক্লক টাওয়ার। এখান থেকে প্রায় 12km. দূরে শহরের উপকন্ঠে রয়েছে তপোবন। বা হোলি পাহাড়। তপোনাথ শিবের মন্দির রয়েছে এখানে। কথিত আছে যে তপোবনের ছোট্ট ভজন গুহায় বালানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ তপস্যা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। এখানকার এক বিশেষ দ্রষ্টব্য হল একটা পাথর, যার মাঝখানে রয়েছে খুব সরু একটা ফাটল। আর এই ফাটলের মধ্যে রয়েছে হনুমানজীর একটা পেন্টিং, রঙিন। চমৎকার ।এমন অসাধ্য কাজ কোন শিল্পীর হাতের সৃষ্টি তা জানা নেই। একটা ছোট্ট কুন্ড রয়েছে এখানে ।লোকের বিশ্বাস, এই কুন্ডের জলে সীতা মা নাকি স্নান করতেন।
রাস্তা মানে একটার পর একটা ছোট বড় পাথর অতিক্রম করে, কোনটার ওপর দিয়ে, কোনটার পাশ দিয়ে, আবার কখনো দুটো পাথরের মাঝখানের এক সংকীর্ণ ফাঁক দিয়ে চলার রাস্তা। মোটা মানুষের পক্ষে খুব মুশকিল। আমি নিজেই আটকে গিয়েছিলাম। একদিক থেকে বাবা আমাকে ঠেলা মারে, অপর দিকে কর্তামশাই হাত ধরে টানে। কি কান্ড করে বেরিয়েছিলাম। একদম শেষে একটা পাথুরে ঢালের সামনে দাঁড়ালাম। আলগা নুড়ি পাথরে ভর্তি। ওর ওপর দিয়েই ভাই চটপট নেমে পড়ল। গাইড মেয়েটাকে তখন কোলে নিয়ে নিয়েছে। কর্তামশাইও দেখি চটপট নেমে যাচ্ছে।এদিকে আমি পড়লাম মহাবিপদে । ঢাল দিয়ে নামতে গিয়ে জুতো স্লিপ করছে। ধপ করে বসে পড়লাম। এবার যে বসে বসেই নেমে পড়ছি। পোষাক গেল ছিঁড়ে। কি কেলেঙ্কারি! একেবারে হুড়মুড়িয়ে নামছি। আর গলা ফাটিয়ে চিৎকার। ফিরে তাকালেন কর্তামশাই। তাড়াতাড়ি করে এসে হাতটা শক্ত করে ধরলেন। উনি বহু জায়গায় ট্রেক করেছেন। তাই এই ঢাল ওনার কাছে কিছুই না। ওনার হাত ধরে, উনি যেভাবে পা ফেলতে বলছেন সেইভাবে পা ফেলে অবশেষে সেই ঢাল পার হলাম। নীচে এসে শান্তি।
দুপুরে হোটেলে ফিরে এক বিপত্তি। একেবারে লাঞ্চ সেরে আমরা ওপরে উঠে এলাম। গরমে, ঘামে একেবারে কি অবস্থা। স্নান করার জন্যে বাথরুমে ঢুকলাম আমি, আর কর্তামশাই গেলেন কালকের ট্যুরের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করতে।মেয়ে ততক্ষণে ঘুমিয়ে কাদা। মিনিট দশেক পরে স্নান সেরে বেরিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই। ওমা। ও তো ঘুমোচ্ছিল। গেল কোথায়! তাহলে কর্তামশাই যখন বেরোচ্ছিলেন, তখন হয়তো জেগে গিয়েছিল। তাই উনি নিয়ে গেছেন ওকে। খানিক পরে কর্তামশাই দেখি একাই ফিরল। জিজ্ঞেস করলাম, "মেয়ে কোথায়? তোমার সাথে ছিলো তো ও।" কর্তামশাই বললেন, "কই না। আমি তো নিয়ে যাইনি" । তখন ভাবছিলাম , হয়তো বাবাদের ঘরে গিয়ে ঢুকেছে। পাশেই বাবাদের ঘর। গেলাম। সেখানেও নেই। কোথায় গেল অতটুকু বাচ্চা? একজন রুম সার্ভিসের লোক কে দেখে জিজ্ঞেস করলাম, কোনো বাচ্চা কে দেখেছে কিনা। ছেলেটা বলল, একটা এত্তটুকু বাচ্চা মা যাব মা যাব করতে করতে সিঁড়ি দিয়ে নামছিল। আমি চিনতে পেরেছিলাম, ও আপনাদের বাচ্চা। আমি বললাম তোর মা তো ওপরে। তা আসেনি?" কর্তামশাই সাংঘাতিক রেগে গেলেন। তুমি চেনো, অথচ একটু ঘরে পৌঁছে দিতে পারলে না! একটা আঠারো মাস বয়সের বাচ্চা কে তুমি রাস্তা দেখাচ্ছো! আমি Complain করবো তোমার নামে"।আমি তো হাউহাউ করে কাঁদছি। এমন সময় দেখি আর একটা রুম সার্ভিস বয়ের কোলে চড়ে তিনি নামছেন ওপর থেকে। ছেলেটা আমাদের দেখে বলল,"আপনার মেয়ে পাঁচতলায় উঠে গেছে। আমাকে দেখে বলল, 'মা যাব' ।এই নিন আপনার বাচ্চা। ওকে তো হোটেলে সবাই চিনে গেছে"।
ওর চেঁচামেচির জন্যেই সবাই ওকে চিনে নিয়েছে। এত চিৎকার করে মেয়েটা। খুশি হলেও মহানন্দে চেঁচিয়ে যাবে। আবার ঘরে ফিরে এলাম সবাই । মেয়েটাকে এবার ঘুম পাড়াতে হবে।