আলাপ
আলাপ
সদ্য একটা প্রাইভেট ব্যাংকে ঢুকেছি। পরীক্ষা দিয়ে। হ্যা, প্রাইভেট ব্যাংকগুলিরও তো পরীক্ষা হয়।
যাই হোক, আমার এক জুনিয়রের সাথে খুব ভাব হয়ে গেলো, নাম কিংশুক। দুজনেই নতুন, দুজনেই পাগল , এক বয়েসী না হলেও বেশ মেন্টাল ম্যাচ হয়ে গেলো। একসাথে গল্প গুজব, বই এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি হতে লাগলো।
তখন আমার বিয়ে হয়নি, বয়ফ্রেন্ডও নেই। অফিসে বেশ সুন্দর সুন্দর দেখতে হ্যান্ডসম ছেলে। দু একজন অল্প অল্প চেষ্টাও করছে। আমি অবশ্য খুব একটা পাত্তা দিইনি কাউকে। শুনেছি মেয়েদের নাকি আগে পাত্তা দিতে নেই চট করে। এর মধ্যে সুবিনয় নামের একজন একটু বেশিই চেষ্টা করছে। দেখতে তো বেশ ভালোই , আমার খারাপ লাগে তা নয়। কিন্তু একটু বেশিই নিরীহ। গোবেচারা টাইপ। কিংশুকও ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিল, বললো ডিম্পলদি, চলো, একটু বাজিয়ে দেখি। অনেকেই বেশ নিরীহ চেহারা দেখায়, কিন্তু আসলে তারা কী সেটা বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল ।
তা বেশ! দুজনে মিলে ঠিক করলাম একসাথে লাঞ্চে যাওয়া যাবে।
পরেরদিন, নিরীহ মুখে আমি এপ্রোচ করলাম, আজ লাঞ্চ আনিনি বাড়ি থেকে, যাবে নাকি? বাবু তো এককথায় রাজি।
তা দুপুর বেলা বেশ একসঙ্গে লাঞ্চে হলো পাশের একটা রেস্টুরেন্টে । কিংশুক অবশ্য আসেনি আমাদের সঙ্গে। কথা মতো আমরা দুজন রেস্টুরেন্ট থেকে বেরোনোর পর সে এসে হাজির।
---অরে ডিম্পলদি, সুবিনয়দা, তোমরা, লাঞ্চ করতে বেরিয়েছিলে?
বোকা বোকা , কিছুই জানিনা, এমন মুখ করে বললাম, হ্যা রে ভাই, আজ বাড়ি থেকে লাঞ্চ আনিনি তো, তাই সুবিনয়কে পাকড়াও করে এনেছি।
কিংশুক সুবিনয়র দিকে তাকিয়ে বললো, তুমিও আনোনি?
--- ইয়ে, মানে, না, আসলে আমিও আনিনি আজ।
---- তোমার যেন সিটের কাছে একটা লাঞ্চের ডাব্বা দেখলাম।
---- ওতে ব্রেকফাস্ট ছিল শুধু
---- কিন্তু তুমি তো কোনোদিন ব্রেকফাস্ট আনোনা।
----তোর কাজ নেই আজ?
কিংশুক মুচকি হেসে অর্থপূর্ণ ভাবে আমার দিকে তাকালো। বললো, চলো, একটু জুস খাওয়া যাক।
সুবিনয় আপত্তি করলো, এই রাস্তার জুস্!!
বললাম চলোই না! একদিন খেলে কিচ্ছু হবে না!
ততক্ষনে দেখে নিয়েছি, জুসের স্টলে একটা সুন্দরী মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
এবার, স্টলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে কিংশুক বললোঃ, কি দারুন মেয়েটা! একটু প্যাঁক দেই! এই সময় ছাতা নিয়ে বেরিয়েছে।
সুবিনয় চোখ পাকালো! রাস্তায় বেরোস কি এই সব করতে!
আমি বললাম, আহা, ও বাচ্চা ছেলে, আর ওতো ঠিকই বলেছে। বৃষ্টি নেই, রোদ নেই, ছাতা হাতে কেন?
কিংশুক ততক্ষনে এগিয়ে গেছে, আমি কাছাকাছি যেতেই বললো, যেন, আজ হেব্বি বৃষ্টি হবে! আমার মন বলছে। কি মেঘ করেছে দেখো!
আমি মুখ টিপে হাসলাম, ছাতাটা স্টলের ওপর রাখা ছিল। মেয়েটা আমাদের কথা কিছু খেয়াল করেছে বলে মনে হলোনা। তার জুস্ খাওয়া হয়ে গেছিলো। টাকা মিটিয়ে, ছাতা না নিয়েই হনহন করে চলে গেলো।
সুবিনয় চোখ পাকালো কিংশুকের দিকে, তারপর ছাতাটা নিয়ে, ম্যাডাম, আপনার ছাতা ফেলে গেলেন তো! বলে তার পেছনে ছুটলো!
এদিকে ওই জুসওয়ালা আবার, বাবুজি, ও হামরা ছাতা হ্যায়, বলে সুবিনয়র পেছনে ছুটলো।
সুবিনয় ফিরে তো জুসওয়ালাকে এই মারে কি সেই মারে !!
বেটা উল্লুক ! লেডিস ছাতা নিয়ে ঘুরছে!
কিরে প্যাক দিবিনা! শেষের কথাগুলো কিংশুককে উদ্দেশ্য করে।
জুসওয়ালা বেচারা বললো যে এটা ওর বৌয়ের ছাতা, সারাবে বলে এনেছিল। শুধু শুধু এখন ওকে কথা শুনতে হচ্ছে!
প্রায় দু সপ্তাহ পর, আমি আর কিংশুক ক্যাফেটেরিয়াতে বসে কফি খাচ্ছি, হটাৎ দেখি সুবিনয়, সাথে সেই মেয়েটা, আমাদের দেখে এগিয়ে এলো। বললো, অরে ডিম্পল, কেমন আছো? একে চিনতে পারছো? এ হলো শুভ্রা, সেই যে সেদিন, জুস্ খেতে গিয়ে আলাপ হয়েছিল।
কিংশুক কানে কানে বললো, কি ধড়িবাজ ছেলে দেখেছো!
যাইহোক, বছরখানেকের মাথায় বিয়ের নেমন্তন্ন পেলাম। বেশ সেজেগুজে গেলাম, সেলফি তুললাম, ফেসবুকে পোস্টও করলাম। কিন্তু কিংশুক বেচারা কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।
আসলে, মুন্নাভাই MBBS দেখে, আমরা , মূলত কিংশুকের আইডিয়া ছিল যে, যদি ছেলেটা মেয়েদের অসম্মান করার প্রতিবাদ করে তবে ছেলেটি ভালো। আর তা না হলে ভেবে দেখতে হবে! কিন্তু ব্যাপারটা যে এরকম হবে তা ভাবেনি! বেচারা!
বছর তিনেক পর, স্মৃতির সরণিতে এ সবের কিছুই আর নেই। নতুন বিয়ে করেছি। ট্রান্সফার নিয়ে বেঙ্গালুরু এসেছি। বরের সাথে বেশ রোমান্স চলছে। হঠাৎ একদিন কিংশুকের ফোন, সুবিনয়দা আর শুভ্রাদির ডিভোর্স হচ্ছে! বললাম, সেকিরে! কেন? বলে কিনা, সুবিনয়দা ভীষণ ড্রিংক করে, আর ড্রিংক করলেই খুব আজে বাজে কথা বলে! শুভ্রাদি বলছিলো, কেন যে ওর সাথে আলাপ হয়েছিল!!