টনটনে কেলেঙ্কারি
টনটনে কেলেঙ্কারি
"সেকি! এখনো একটা স্মার্টফোন নেই ! শুনেছি তো ভালো চাকরি করিস, তা এতো পয়সা করবি কি?"
হুম! আজকাল স্মার্টফোন না থাকলে ওপরের ডায়লগগুলি শুনতেই হয়। হয় তুমি কিপ্টে না হলে ভালো রোজগার নেই!
শেষমেষ কিনেই ফেললাম একটা স্মার্টফোন। সময় কাটানোর বেশ উপযুক্ত জিনিস। তা এই স্মার্টফোনেই দেখছিলাম বিশ্বকাপ ক্রিকেট। লন্ডনে বসে দাদার বিশ্বকাপের কমেন্ট্রি শুনতে শুনতে টনটনে দাদার বনবন করে ছক্কা মারার কথা বেশ মনে করিয়ে দিলো।
মে মাসের গরমের ছুটির দিন। বিশ্বকাপের খেলা, তাও আবার দিন-রাতের ম্যাচ ---ওই সময়কার শ্রেষ্ঠ বিনোদন। সকাল থেকেই মোটামুটি মানসিকভাবে প্রস্তুত।তখন তো পুরো ম্যাচই দেখতাম। ছোটবেলা থেকেই আমি আবার শচীন অনুরাগী।দুপুরবেলা দেখি ছোটোপিসি চলে এসেছে পিসতুতো দিদিকে নিয়ে। খবর না দিয়ে সারপ্রাইস ভিসিট হতো সেকালে। সোনায় সোহাগা যাকে বলে!
আমার দিদিটি আবার আমার থেকে বছর দুয়েকের বড়,সে আবার সৌরভ ভক্ত। এই নিয়ে ওর সাথে আমার বেশ রেষারেষি। যাই হোক,খেলা শুরু, শুরুতে ওপেনার রমেশ আউট। এবার চালু হলো দাদার ঝড়। যেমন দাদা তেমনি রাহুল দ্রাবিড়। তবে দাদার ছক্কাগুলি যেন অনবদ্য। ডেকে ডেকে বলছে বাপী বাড়ি যা!আমার দিদি তো লাফাচ্ছে। ওর সৌরভ এক্কেবারে কাঁপিয়ে দিচ্ছে! তবে সত্যি কথা বলতে কি, আমিও লাফাচ্ছি, হতেই পারে ওর সৌরভ, প্লেয়ার তো আমার দেশের। ওই পারফরমেন্স দেখে ভালো না লেগে থাকায যায়!! শচীন যদিও মাত্র চার রান করে আউট হয়ে গেলো, তাতে কী? সৌরভ তো পেটাচ্ছে!
হঠাৎ দড়াম!
ছিলাম খাটের ওপর বসে, দুই মোটু মোটু বোন লাফাচ্ছিলাম। সেকি আর সহ্য করতে পারে!এক্কেবারে ভেঙে ঢুকে গেছে ভিতর দিকে। মা পিসি সবাই ছুটে এলো। আমি তাও উঠে পড়েছি, দিদি তো আরও মোটু, উঠতে আর পারেনা। শেষে পাশের বাড়ির দাদাকে ডেকে আনা হলো। সে বেচারা কোনোমতে তুলে দাঁড় করালো দিদিকে।
আমার পিঠে ততক্ষনে দু ঘা পড়ে গেছে। মা এখন হায় হায় করছে! বিয়ের খাট, দিলো পাজি মেয়েটা ভেঙে! যেন আমি একাই ভেঙেছি !
কাঁদতে কাঁদতে আড়চোখে দেখলাম, সৌরভ এক বল মাত্র বাকি থাকতে আউট হয়ে গেলো। মা চিৎকার করে উঠলো, "আজ আসুক বাবা, তোমার হচ্ছে!"
(সমাপ্ত)