আগন্তুক
আগন্তুক
আমাদের মধ্যে একটা ধারণা আছে আগন্তুক ব্যক্তি মানেই তারা কুমতলবের অধিকারী। শুভ একটি গ্রামে ঘুরতে যায়। সেখানে ঘুরতে ঘুরতে শুভ গ্রামের মানুষদের মুখে শুনতে পায় সুমনদের পরিবারের দুঃখের কাহিনী। সুমন পড়াশোনা করতে চায় কিন্তু অর্থের অভাবে তা করতে পারে না। তারপর তার দিদির বিয়ে ঠিক হয়েছে। পরিবার বিয়ের টাকা জোগাড় করে উঠতে পারেনি। শুভ সংকট নিরসনে তাদের বাড়ি খুঁজে সেখানে উপস্থিত হয়। শুভ বলে,"ভিতরে আসব?" শুনে সুমনের বাড়ির লোকের মধ্যে একটা অজ্ঞাত ভয় ও কৌতূহল হয়। সুমনের বাবা বলেন,"আসো। কিন্তু কে তুমি?" শুভ উত্তর দেয়,"আমার নাম শুভ দাস। আমি কলকাতায় থাকি।" শুনে তারা বলে ওঠে,"কিন্তু বাবা এখানে কী দরকারে এসেছো?" শুভ বলে,"শুনলাম আমার ভাই পড়াশোনা করতে চায় আর বোনের বিয়ে।" সুমনের বাবা অবাক হয়ে বললেন,"তোমার ভাই পড়াশোনা করতে চায় আর তোমার বোনের বিয়ে তো আমরা কি করব? আচ্ছা তোমার মতলবটা কি বলতো? চুরি করতে এসেছো নাকি? গ্রামের লোক ডাকব?" শুভ শুনে বলে,"কাকু আপনার ছেলে মেয়ে কি আমার ভাই বোন হতে পারে না? আমি ভাইয়ের পড়াশোনা ও বোনের বিয়ের দায়িত্ব নিতে চাই।" সুমনের বাবা বলে ওঠেন,"তোমার মতলব সুবিধার ঠে
কছে না। কেন তুমি আমাদের সহযোগিতা করবে? তোমার স্বার্থ কি বলো? না হলে মোড়ল ডাকবো কিন্তু।" শুভ কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন গ্রামের পরান মন্ডল সুমনদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে তাদের কথোপকথন শোনেন। "কি করছিস রে সুমনের বাপ। শুভ আমাদের মুখার্জিদের বাড়ির আত্মীয়। খুব ভালো ছেলে। ও তোদের দুঃখের কথা শুনে ছুটে এসেছে তোদের সহযোগিতা করতে"- বলেন পরান মন্ডল। শুনে সুমনের বাবা বলে ওঠেন,"ক্ষমা করে দাও বাবা! আমরা তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেতরে এসে বসো বাবা!" "একি বলছেন কাকা। আপনি যা করেছেন তাতে কোনো ভুল নেই। আপনার জায়গায় আমি থাকলেও তাই করতাম। এবার চলুন অনেক কাজ আছে বোনের বিয়ে বলে কথা। সুমন এই নে তোর জন্যে বই খাতা এনেছি। এবার যা স্কুলে যা।"- শুভ বলে। সুমন আনন্দে আত্মহারা হয়ে স্কুলে চলে যায়। এরপর সুমনের বাড়িতে একে একে শাড়ি বিক্রেতা, গহনা গড়ার কারিগর সবাইকে শুভ নিয়ে আসে। সব খরচ শুভ বহন করে। আবার সুমনের বাবার জন্য একটা কাজও ঠিক করে দেয়। এইভাবে আগন্তুক শুভ সুমনদের পরিবারকে বাঁচিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত খুব সাবধানে আগন্তুক ব্যক্তিদের পরখ করে নেওয়া, যাতে শুভর মতো ভালো আগন্তুক ব্যক্তিদের আমরা ভুল না বুঝি।