সাধারণ মেয়ে
সাধারণ মেয়ে


আজ শুনবে এক অতি সাধারণ মেয়ের
জীবনের স্বপ্ন দেখার গল্প।
স্বপ্ন? হ্যাঁ স্বপ্ন দেখতে,
খুব ভালোবাসতো সে।
আকাশ কুসুম স্বপ্ন আর
আকাশ কুসুম কল্পনা।
দুই মিলেমিশে একাকার তার কল্পনায়।
ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতো,
বড়ো হয়ে কতো কি হবে।
কি হতে চাস বড়ো হয়ে?
কেউ জানতে চাইলে কখনও বলতো--
ডাক্তার হবো, কখনও বা ইঞ্জিনিয়ার।
তখন জানতো না নির্মম সত্যিটা,
সাধারণ মেয়ের স্বপ্ন দেখা বারণ যে।
বারো ক্লাসের পর বিয়ে হয়ে যাওয়া--
সাধারণ মেয়ের ভাগ্য।
ঠাকুমা বলতো মেয়েমানুষের
বেশী লেখাপড়া করে কাজ নেই।
একটা পাশ দিলেই হবে।
এবার শ্বশুরঘরে গিয়ে,
সুখে শান্তিতে ঘর সংসার করুক।
গরীব বাবার সাধারণ মেয়ে,
বিয়ে করে গেল শ্বশুরবাড়ি।
দিনরাত প্রাণপাত করে খেটে,
গরীব বাবার বিয়েতে যৌতুক
না দিতে পারার মূল্য চোকাতে হতো তাকে,
তাও সাধারণ মেয়ে স্বপ্ন দেখে,
কোনো দিন নিশ্চয়ই তার দিন ফিরবে।
হবে সে রাজরানী। তারপর?
বছরের পর বছর শুধু মেয়ে বিয়োচ্ছে,
এ কেমন মেয়ে ঘরে এলো বউ হয়ে?
বংশের প্রদীপ চাই, শিবরাত্রির সলতে,
একটা ছেলে চাই যে তাদের।
সাধারণ মেয়ে আবার স্বপ্ন দেখে--
পুত্র সন্তান জন্ম দিয়ে স্বামী সোহাগিনী সে,
কিন্তু এ কোথায় এলো সে?
চতুর্দিকে নিকষ কালো অন্ধকার,
দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার।
তারপর পুরো শরীরটা কি সুন্দর হালকা।
এবার সে পরম শান্তিতে ঘুমোতে পারবে।
কতদিন ভালো করে ঘুমোয়নি।
তবে কি সত্যিই তার দিন ফিরলো?
নিষ্ঠুর সমাজের অত্যাচারে
আজ শেষ হলো সাধারণ মেয়ের
প্রতিনিয়ত জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যাওয়ার,
করুণ জীবনের ইতিবৃত্ত।
আবার শুরু হবে অন্য কোথাও,
অন্য কোনোভাবে,
নতুন করে,
এক সাধারণ মেয়ের গল্প।