Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!
Unlock solutions to your love life challenges, from choosing the right partner to navigating deception and loneliness, with the book "Lust Love & Liberation ". Click here to get your copy!

Rima Goswami

Tragedy Crime

4.0  

Rima Goswami

Tragedy Crime

মুক্তি

মুক্তি

5 mins
248


সেদিন আকাশটা সকাল থেকেই ভার ভার । গুমোট ভাব কাটেনা কিছুতেই । দরদর করে নোনা ঘাম নেমে আসছে তমসার শরীর বেয়ে । মাটির উনুনটা ঘুঁটে আর কয়লার টুকরো দিয়ে সাজাচ্ছিলো তমসা । দরমার বেড়া দিয়ে বানানো একটুকরো ঝুপড়ির সামনে এই একফালি উঠানে উনুনে আঁচ দিয়ে রান্না করে সে । মেয়েটাকে পাড়ার পিসিও থেকে ফোন করেছিল তমসা । তখন থেকেই মনটা ভালো নেই । রাগের মাথায় অতগুলো কথা না বললেই মনে হয় ভালো হত । বারবার কানে বাজছে মেয়ে বর্ষার কথা গুলো .. " মা গো মরা মেয়ের থেকে ডিভোর্সি মেয়ে অনেক সম্মানের "। তমসার তার তার স্বামী রাজুর একটাই মেয়ে বর্ষা । গতবার মেয়ের বিয়ে দিয়েছে রাজু একগলা ধার দেনা করে । এখন যদি সেই মেয়ে ফিরে আসে তবে তমসা কোথায় যায় ? সমাজের কাছে মুখ দেখাবে কি করে সে ? বাড়ি বলতে এই ঘুপচি ঝুপড়ি কোনদিন মিউনিসিপ্যালিটি থেকে এসে উঠিয়ে দেবে । বাপ রাজুর মাস গেলে চার হাজার টাকা রোজগার বিড়ি ফ্যাক্টরিতে মজুরের কাজ ।


তমসা অশিক্ষিত তাই সেভাবে কিছু করতেও পারে না । এদিক ওদিক অনেক দেখেছে কিন্তু কিছুই তেমন রোজগারের পথ পায়নি । একবার একটা জ্যাম জেলি বানাবার কারখানাতে কাজ নিয়েও ছাড়তে বাধ্য হয় তমসা কারণ বুড়ো শাশুড়িকে একা রেখে যেতে পারত না । উনি গত হয়েছেন কয়েকমাস হলো তারপরও আর কিছু কাজের জন্য চেষ্টা করা হয়নি । মেয়েটার বিয়ে হয়ে থেকেই এটা ওটা লেগেই আছে । বর্ষার বিয়ে হলো ভালো ঘরে তবে জামাইয়ের বয়স একটু বেশি । বর্ষা এখন সতেরো আর জামাই চল্লিশ প্রায় , তবে সরকারি চাকুরে বটে । রাজুর বিড়ির কারখানার মালিকের ছেলে রাকেশ , বয়সে রাজুর থেকে এক দুই বছর কম হবে । রাকেশের আগের বৌটা নাকি গলায় ফাঁস দিয়ে মরে পোয়াতি অবস্থায় । তারপর থানা পুলিশ হয়েছিল বটে কিন্তু রাকেশ ছাড়া পায় বেকসুর । কতদিন আর ব্যাটাছেলে একা একা থাকত তাই কয়েক বছর পর আবার বিয়ে করার কথা ভাবে । কিন্ত ভাবলেই বা মেয়ে দিচ্ছে কে রাকেশকে ? বাজারে তার নামে অনেক বদনাম , সে নাকি সাইকো । সেই জন্যই বাবার এক কর্মচারীর মেয়ে বর্ষাকেই বিয়ে করতে বাধ্য হয় রাকেশ । একে বাচ্চা মেয়ে তার উপরে গরিব তাই আগের বউটার মত বেগরবাই করবে না এই বিষয়ে নিশ্চিত ছিল রাকেশ আর তার বাবা ।


সেই মত বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা লুফে নেয় রাজু আর তার বউ তমসা । ওদের কাছে রাকেশ হলো সোনার আংটি , আর কথায় আছে সোনার আংটি আবার ব্যাকা । মেয়েকে ধার করে সাজিয়ে গুছিয়ে বিয়ে দিয়েছিল রাজু আর তমসা । বর্ষার বড্ড ঘৃণা হয়েছিল বাপের বয়সি লোকটাকে বিয়ে করতে তবু ও মেনে নিয়েছিল । বর্ষা ভেবেছিল এই বিয়ে করতে সে বাধ্য নাহলে বাবার চাকরি চলে যাবে আর ওরা পথে বসে যাবে মুহূর্তে । রাকেশ আর বাবার মালিক না শুনতে নিশ্চই পছন্দ করত না । বিয়ে করে শশুড় বাড়ি এসে থেকে বর্ষা অত্যাচারিত হয়ে এসেছে । রাকেশ একজন মানসিক রোগী । দেখে বোঝা যায় না তবে রাকেশের মধ্যে বাস করে এক দ্বৈত সত্বা । প্রথমটা নিখাদ গোবেচারা ভালোমানুষ , যাকে মানুষ অফিসে বা বাজারে দেখে । দ্বিতীয়টা দেখেছিল একদিন রাকেশের প্রথম স্ত্রী আর আজ দেখছে বর্ষা । কোনদিন রাকেশ বর্ষার মুখে গরম চা ছুঁড়ে দেয় , কোনদিন অকারণে সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দেয় । আবার কোনদিন মদ খেয়ে বাড়িতে ঢুকে স্ত্রীর ওপর অত্যাচার শুরু করে রাকেশ । এগুলো নাকি তাকে আনন্দ দেয় । বর্ষার চিৎকার ওর চোখের জল যৌন সুখ দেয় রাকেশকে । প্রথম দিকে বারবার জানিয়েছে বর্ষা মা আর বাবাকে । ওরা বর্ষাকে বুঝিয়েছে ওসব কথা বলতে নেই , রাকেশকে বদলানোর দায় বর্ষার । ভিকারী মা বাবার ক্ষমতা নেই মেয়েকে ডিভোর্স করিয়ে বাড়ি বসিয়ে রাখার ।


মেয়ের শরীরের একাধিক জায়গায় সিগারেটের ছ্যাঁকা ও কালসিটে দাগ দেখেও রাকেশকে কোনদিন কিছুই বলেনি তমসা বা রাজু । কারণ রাজু কিন্তু কোনদিনই রাকেশের শশুড় হতে পারেনি রয়ে গেছে তার বাবার বিড়ির কারখানার এক মজুর মাত্র । আগের রাতে উলঙ্গ করে বর্ষাকে সারারাত এসিটা চিল করে দাঁড় করিয়ে রাখে রাকেশ ভোর পর্যন্ত । দীর্ঘ সময় ধরে অত্যাচারিত বর্ষা কাঁপতে কাঁপতে অজ্ঞান হয়ে যায় একসময় । রাকেশের একটুখানি মায়া হয়নি মেয়েটার উপরে অচেতন বর্ষার সারা শরীরে গলন্ত মোমের ফোঁটা ফেলে আনন্দ নেয় জানোয়ারটা । সংজ্ঞা ফিরে আসার পর শেষবার মায়ের সঙ্গে কথা হয় বর্ষার । মা ফোন করে পিসিও থেকে মেয়ের খোঁজ নিতে , তখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া বর্ষা তার মাকে বলেও যে মৃত মেয়ের থেকে ডিভোর্সি মেয়ে সম্মানের । মা তমসা মেয়েকে আবার বোঝায় তাকে মানিয়ে চলতেই হবে কারণ গরিবের ঘরে ডিভোর্স হয়না ।বেলা এগারোটার দিকে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ফোন এসেছিল পিসিও মালিকের ফোনে । ওর দোকানের ছেলেটা খবর দিয়ে গেল তমসাকে । তমসা ছুটে গিয়ে আবার কলব্যাক করে কিন্তু ফোন ধরেও অপর প্রান্ত থেকে কথা বলেননি কেউ। বিপদ হয়তো জানান দিয়েছিল তখনই। তাই সরাসরি মেয়ের শ্বশুরবাড়িতেই চলে যায় তমসা আর রাজু । কাজের ওখানে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল রাজুর । একবুক ভয় , সন্দেহ নিয়ে এতটা পথ উজিয়ে যখন মেয়ের শ্বশুরবাড়ি তাঁরা পৌঁছেছিল, তখন এক নিমেশের মধ্যেই গোটা পৃথিবীটা অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল তাঁদের সামনে। মেয়ের ঘরের দরজা খুলে দেন রাজুর মালিক থুড়ি বেয়াই। তমসা আর রাজু দেখে খাটের ওপর পড়ে রয়েছে মেয়ের নিথর দেহটা। দেখে স্তম্ভিত হয়ে যায় তাঁরা। স্তম্ভিত, চমকে ওঠার ‘অভিনয়’ টা করেছিল রাকেশ ও তার বাবাও । বাড়ির বউ আত্মহত্যা করেছে... বলে কান্নাকাটিও করেছিল তাঁরা। তমসা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে বারবার কানে ভাসে মেয়ের শেষ কথা গুলো । মেয়েটা এতবড় সিধান্ত নিলো ! রাজু দেখে মেয়ের মুখে শেষবার যে কষ্টটা সে দেখেছিল সেটা এখন আর নেই তার বদলে একটা শান্তি বিরাজ করছে । হয়ত মুক্তির আনন্দ ছেয়ে গেছে বর্ষার মুখ জুড়ে । রোজ রোজ অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নিজেকে নিজেই মুক্তি দিয়েছে মেয়েটা । অসময়ে ছুটি নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে বর্ষা , পিছনে ফেলে গেছে এক ভীরু মা বাবাকে যারা সমাজ ও সামর্থ্যর ভয়ে মেয়ের অপরাধীকে শাস্তি দেবার যোগ্যতা ও রাখে না ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy